হোমপেজ ইলমে মারেফত কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা

কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা

3732
Advertisement:
IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা

পীর ফার্সি শব্দ, আরবিতে: মুর্শিদ/আউলিয়া। যার অর্থ পথ প্রদর্শক। বাংলা অর্থে পীর শব্দের অর্থ: পথ প্রদর্শনকারী, জ্ঞানের মুরুব্বি, মুসলিম দীক্ষাগুরু, পূণ্যাত্মা, মুসলমান সাধু, মহাপুরুষ।

হাদিস শরীফে আছে:- হুমুল্লাজিনা ইযা-রুয়ু ওয়া উয-কুরুল্লাহা “যাহাকে দেখিলে আল্লাহতায়ালার কথা স্মরণ হয়, মনে ভয় আসে এবং ইবাদত বন্দেগীতে মন বসে, সে-ই প্রকৃত কামেল মুর্শিদ, আউলিয়া বা আল্লাহতায়ালার খাসবান্দা।”

এ অবস্থার মধ্যে বিশুদ্ধ দ্বিনের ওপর থাকা ও সঠিক পথনির্দেশক পাওয়া আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত।

IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

খাজাবাবা ইউনুস আলী এনায়েতপূরী (রহঃ) বলেন- “কামেল পীর পাইতে গেলে আল্লাহর দরবারে অনেক কান্নাকাটি করতে হয় আর অতি ভাগ্যগুনেই কামেল পীরের সন্ধান মেলে।”

যিনি কামেল মোকাম্মেল পীর হইবেন, শরিয়ত ও মারেফতের পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকিতে হইবে। কমপক্ষে শরিয়তের বিধানসমূহ ভালরূপে জানা থাকিবে এবং এলমে লাদুন্নাতে তাঁর পূর্ণ অধিকার থাকিবে। শরিয়তের আদেশ নিষেধ পালন ও তদনুযায়ী কাজ করিবেন। শরিয়ত বিরোধী কাজ হইতে দূরে থাকিবেন। খোদাতায়ালাকে ভয় করিবেন ও মুত্তাকী হইবেন এবং পরহেজগার হইবেন।

কামেল বা মোকাম্মেল পীরের ভিতর তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক।

(১) পীরের নিকট হইতে ছবকসমূহ আয়ত্ত করা।
(২) ফয়েজ হাসিল করা।
(৩) মুরিদদের ভিতর ফয়েজ পৌঁছানোর ক্ষমতা থাকা।

যিনি কামেল হইবেন তিনি লোভ শূন্য হইবেন। কেন না লোভী ব্যক্তি কখনও ফকির হইতে পারে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন:-

“অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।” (সূরা : ইয়াসীন, আয়াত: ২১)

“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” (সূরা : আত-তাওবাহ্, আয়াত: ১১৯)
কামেল পীর অনুসরণের নির্দেশ

পাপ ও শেরেকি গুনাহ হইতে বাঁচিবার জন্য এবং আল্লাহু তায়ালার রেজামন্দি হাছিলের উদ্দেশ্যে মুর্শিদ কামেলের সাহচর্য অনুসন্ধান করা আবশ্যক অথ্যাৎ নাফ্সের কুমন্ত্রণা ও শয়তানের ধোঁকা হইতে বাঁচিবার পথই মুর্শিদে কামেল।

হাদিস শরীফে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এমন এক যুগ তোমাদের মধ্যে আসবে, সে যুগে হাতের ওপর জ্বলন্ত কয়লা রাখার যে কষ্ট তার চেয়ে বেশি কষ্ট হবে ঈমানের ওপর টিকে থাকা।’

কামেল পথপ্রদর্শক সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে বলা হয়েছে:-

“আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন। তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে মত্ত অবস্তায় ছেড়ে দিয়ে রাখেন।” (সূরা : আল আরাফ, আয়াত: ১৮৬)

“স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ আহবান করব, অতঃপর যাদেরকে তাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম হবে না।” (সূরা : বনী-ইসরাঈল, আয়াত: ৭১)

“জেনে রেখো, আল্লাহর ওলিদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (তারাই আল্লাহর ওলি) যারা ঈমান আনে ও তাকওয়া (পরহেজগারি) অবলম্বন করে।” (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৩)

“অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।” (সূরা : ইয়াসীন, আয়াত: ২১)

“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।” (সূরা : আত-তাওবাহ্, আয়াত: ১১৯)

কামেল পীরের বৈশিষ্ট্য:

(ক) যিনি কামেল মোকাম্মেল পীর হবেন, হাদিস, তফছির, ফিকাহ ইত্যাদিতে তাহার জ্ঞান থাকিবে। কমপক্ষে শরীয়তের বিধান সমূহ ভাল রুপে জানা থাকিবে।

(খ) শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন ও তদনুযায়ী কাজ করিবেন। শরীয়ত বিরুদ্দ কাজ হইতে দূরে থাকিবেন। খোদাকে ভয়কারি লোক ও পরহেজগার হইবেন।

(গ) কামেল বা মোকাম্মেল পীরের ভিতর এই তিনটি গুন থাকা একান্ত অবশ্যক –

১. পীরের নিকট হতে ছবক সমূহ আয়ত্ত করা।
২. ফায়েজ হাছিল করা।
৩. মুরিদ দিগকে ফায়েজ পোঁছানোর ক্ষমতা থাকা।

(ঘ) যিনি কামেল হইবেন তিনি লোভ শুন্য হইবেন। কেননা লোভী ব্যক্তি কখনো ফকির হইতে পারেন না।
কত্তলুল জামিল কিতাবে আছে, কামেল পীর হলে বার মাস রোজা রাখিতে হইবে, স্ত্রি হইতে দূরে থাকিতে হইবে, খানা খাইবেনা ও জঙ্গলবাসী হইতে হইবে এই সব শর্ত নহে।

(ঙ) রসুলুল্লাহ (দঃ) এর জামানায় যেমন অজদ, গোলবা, ছকুর ও বেখুদী ইত্যাদি নানা প্রকার জজবা ছিল, কামেল পীরের মুরিদানের মধ্যেও রসুলুল্লাহ (দঃ) এর জামানার ন্যায় মাঝে মাঝে দুই এক জনের ঐ হালাত হইবে।

‘কছদুস সাবীল’ কিতাবে হযরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) খাঁটি পীর চেনার কয়েকটি আলামত লিখেছেন।

(ক) পীরের মধ্যে সাহেবে এলেম বা কোরআন-হাদিসের পর্যাপ্ত এলেম থাকতে হবে। এমন ব্যক্তির যদি পোশাক-আশাক ভালোও হয় আর পর্যাপ্ত এলেম না থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি কামেল পীর হওয়ার উপযুক্ত নন। ইঞ্জিন নিজেই যদি দুর্বল হয়, তাহলে এতগুলো বগি নিয়ে রেলগাড়ি কিভাবে এগোবে?

(খ) শুধু পর্যাপ্ত এলেম থাকলে হবে না, শুধু সুন্নত থাকলে হবে না; বরং ওই পীরের মধ্যে পর্যাপ্ত আমলও থাকতে হবে। লোকদের অনেক ওয়াজ-নসিহত করেন, কিন্তু তাঁর নিজের মধ্যে আমল নেই। নিজে তাহাজ্জুদ পড়েন না, কিন্তু মুরিদদের তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য খুব বলেন, তাহলে ওই ওয়াজের কোনো তাছির হবে না।

(গ) তাঁর মধ্যে এখলাস থাকতে হবে। লোক দেখানোর জন্য তিনি ইবাদত করেন না, বরং তিনি আল্লাহর মুহব্বতে এখলাসের সঙ্গে আমল করেন। আমল করেন কিন্তু এখলাস নেই, মুরিদদের দেখানোর জন্য যে শায়খ খুব নামাজ পড়েন, সে ব্যক্তি কামেল পীর হতে পারেন না। তাঁর ভেতরে এখলাস থাকতে হবে।

(ঘ) তাঁর মধ্যে দুনিয়াবি লোভ থাকবে না। তিনি লোভী হবেন না, পরেরটা পেতে চেষ্টা করবেন না।
তাঁর মধ্যে এমন আখলাক থাকবে, যে আখলাক দ্বারা দ্বিনের ব্যাপারে তাঁর মধ্যে শিথিলতা থাকবে না। হক কথা বলতে কাউকে ভয় করবেন না।

(ঙ) তিনি ভাববেন না যে এই লোক আমার মুরিদ, বড় লোক মানুষ। সুদ-ঘুষ খায়; কিন্তু আমাকে এত হাদিয়া দেয়, তাকে কিভাবে বলব দ্বিনের ব্যাপারে। একজন হক্কানি পীর প্রত্যেককে এসলাহ করবেন, দ্বিনের ব্যাপারে প্রত্যেককে শক্ত কথা বলবেন, কারো মুখের দিকে চেয়ে কথা বলবেন না।

কামেল পীরের কিছু সামাজিক বৈশিষ্ট:

  • তাঁর মধ্যে থাকবে অলৌকিক কারামত।
  • তিনি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক হবেন।
  • তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি বাণী হবে কলব থেকে উদ্ভাসিত।
  • তিনি নামাজসহ ধর্মের সকল আহকামগুলো নিজে পালন করবেন ও অনুসারিদেরকেও করাবেন।
  • তিনি মুছকি হাসবেন, স্বল্পভাষী হবেন।
  • ধৈর্য্যশীল, নিরহঙ্কারী হবেন।
  • অন্যকে কটাক্ষ্য করবেন না।
  • মানুষের প্রতি ভালো ব্যবহার ও আচরণ করবেন।
  • স্ত্রী-সন্তান ও আওলাদবর্গ সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র হবেন।
  • নিজ সন্তান-সন্তুতিকে আধুনিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত করবেন।
  • পরিমিত আহার করবেন, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন থাকবেন।
  • খুশবু ও খেজাব লাগাবেন। মানুষের নালিশ মনোযোগ সহকারে শুনবেন।
  • কারো সঙ্গে রাগ করবেন না, অশোভন বাক্যও উচ্চারণ করবেন না।
  • নিজের পিতা-মাতার যত্ম নেবেন এবং কষ্ট লাঘব করবেন।
  • মানুষের সুখে আনন্দ পাবেন ও দুখে পেরেশান হবেন।
  • এবং গভীর রাতে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকবেন।

ভন্ড পীরের বৈশিষ্ট

একদল নামধারী পীর আছে, তারা ‘আমেল সিফলি’ আমলিয়াতের সাহায্যে জিন-পরী আবদ্ধ করিয়া ও কিছু বইপুস্তক পড়িয়া, পানি পড়া, তাবিজ-কবজ, ঝাড়ফুঁক ও কুফরি কাজের দ্বারা যাদু-টোনা-বান করিয়া উহার সাহায্যে জনসাধারণের (অশিক্ষিত মূর্খ লোকের) নিকট ছদ্মবেশী পীর সাজিয়া রুজির পথ করিয়া থাকে।

আর ভিতরে ভিতরে নানা প্রকার পৈশাচিক কার্য করিয়া থাকে। আর বলিয়া বেড়ায়, রোজা নামাজ কিছু না, এই সকল ইবাদতের কোন আবশ্যক নাই। আমার নিকট মুরিদ হইলে এই সকল ইবাদত করা লাগবে না। এবং এ সম্বন্ধে নানা প্রকার কুতর্ক করিয়া থাকে। ইবাদতের দায় হইতে রক্ষা পাওয়া যাইবে ভাবিয়া, অনেক জাহেল অশিক্ষিত লোক তাহাদের মুরিদ হইয়া থাকে।

কিতাবে উল্লেখ আছে, কেহ যদি বাতাসের ওপর দিয়া উড়িয়া যায়, অগ্নির ভিতরে বসিয়া থাকে বা পানির উপর দিয়া হাঁটিয়া যায়, আর যদি সর্বদা সে শরিয়তের ১টি খেলাফ কার্য করে তবুও তাহাকে বিশ্বাস করিও না।

বর্তমানে আর একদল আলেম ও মৌলভী আছে, তাহারা কয়েক বছর মাদ্রাসায় পড়িয়া রুজির কোন পথ খুঁজিয়া না পাইয়া, অবশেষে কোন রাস্তা গতি না পাইয়া, একটা ঘর ভাড়া করে খানকা শরীফ নাম দিয়া, তাসাউফের দুই একটি কথা শিক্ষা নিয়া পীর সাজিয়া থাকে এবং পাগড়ি জোব্বা পড়ে বেশভুসা পড়িয়া বলিয়া বেড়ায়, আমি কামেল মুর্শিদ, কামেলপীর।

মাওলানা জালালউদ্দীন রুমি (রহঃ) বলেন: “তুমি যদি কোন আল্লাহর অলির নিকট বায়েত হও, তবে ৪০ দিবস তাঁর নির্দেশিত ওয়াজিফা আমল কর এবং নিজেকে তাঁর নিকট শপে দাও। যদি তুমি এ সময়ের মধ্যে আল্লাহর নূর (আল্লাহকে) দেখতে না পাও তবে দৌড়ে পালাও।”

মোট কথা যে সকল পীরেরা জজ্‌বা চিনে না বা যে সকল পীরের মুরিদের মধ্যে জজ্‌বা মোটেই দেখিতে পাওয়া যায় না, তাহাদের হইতে দূরে থাকা কতর্ব্য, কেন না তাহারা নাকেচ পীর ও বাতিল পীর।

পীর-মুর্শিদ প্রশঙ্গে আরো কিছু দলিল ভিত্তিক পোস্ট নিচে দেয়া হলো:

* পীর-মুর্শিদ ধরতে হবে এই প্রশঙ্গে কোরআনের অসংখ্য দলিল।
* মহিলাদের বায়াত হওয়ার দলিল
* খোদা প্রাপ্তির জন্য মুর্শিদ শর্ত
* কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
* কোরআনে কি পীর ধরার কথা উল্লেখ আছে? দলিল সহ তুলে ধরা হলো।
* ফানার জন্য পীরের প্রয়ােজন : সংক্ষিপ্ত আলোচনা
* পীর ওলিগণ শাফায়াত করিতে পারিবেন কিনা? তাহার দলিল।
* রাবেতার যােগ্য পীরের পরিচয়ঃ
* ফানা ও বাকা সিদ্ধ ওলীই প্রকৃত কামেল পীরঃ
* কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
* হুজুরী কালব বা কালবের একাগ্রতা অর্জনে মুর্শিদে কামেলের ভুমিকা

তথ্য সূত্র:

› প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস, মোস্তফাগঞ্জ মাদরাসা ও খতিব, তাঁতীবাজার মাদরাসা মসজিদ, ঢাকা।
› https://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2018/02/02/597002
› http://kutubbaghdarbar.org.bd/
› https://www.facebook.com/sristir.nigur.rohosso/posts/439071783099854/
› মুফতি আব্দুল্লাহ বিক্রমপুরী
› ‘কছদুস সাবীল’ কিতাবে হযরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)