ওলিগনের ওফাতে শোকের আহাযারী নয়!

ওলিগনের ওফাতে শোকের আহাযারী নয়!

ওলিগণের বিদায়লগ্নে শোকের আহাযারী নয়, সত্যের ঢংকা বাজাও এবং আনন্দ সংগীত গাও।

কোরানের ৮৯ নং সুরা আল ফাজরের ২৭-৩০ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন:- “ইয়া আইয়াতুহান নাফসুল মুতমাইন্নাহ, ইরজিই ইলা রাববিকি রাদিয়াতামমারদিইয়াহ, ফাদখুলি ফি ইবাদি, ওয়াদখুলি জান্নাতি।”

অনুবাদ: হে পরিতৃপ্ত নফস, তোমার রবের দিকে ফিরে আস, (তুমি) পরিতৃপ্ত তাঁর (আল্লাহর) সন্তোষ হতে, প্রবেশ কর আমার দাসদের মধ্যে এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।

কোরানের ২৩ নং সুরার পহেলা আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- “ক্বাদ আফ লাহাল মুমিনুন।”

অনুবাদ: অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম।

কোরানের ১০ নং সুরা ইউনুসের ৬২-৬৪ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- “আলা ইন্না আউলিইয়া আল্লাহি লাখাউফুন আলাইহিম ওয়া লাহুম ইয়াহযানূন।”

অনুবাদ: জানিয়া রাখ! আল্লাহর বন্ধুদের তথা আউলিয়াদের তথা অলিগণের কোন ভয় নাই, এবং তাঁহারা দুঃখিতও হইবে না।

“আল্লাজীনা আমানু ওয়া কানূ ইয়াত্তাকূন”

অনুবাদ: যাহারা ঈমানদার, তাঁহারা তাকওয়া করে।

“লাহুমুল বুশরা ফিল হাইয়া- তিদ্দুনইয়া ওয়া ফিল আখিরাহ; লা তাবদীলা লিকালিমাতিল্লাহ; জালিকা হুঅল ফাউযুলআজীম।”

অনুবাদ: তাহাদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া এবং আখিরাতে, আল্লাহর বানীর কোন পরিবর্তন নাই; উহাই মহাসাফল্য।

ব্যাখ্যা:
আমরা কোরানিক দর্শন আলোকে জানতে পারলাম অলিগণ তথা আউলিয়াগণ ভয়মুক্ত, দুঃখমুক্ত, চিন্তামুক্ত, রহমতপ্রাপ্ত, নিয়ামত প্রাপ্ত, কল্যাণপ্রাপ্ত, ফজলপ্রাপ্ত, নূরপ্রাপ্ত, কাউসারপ্রাপ্ত, রেজেক প্রাপ্ত, অমর ও মৃতুঞ্জয়ী। আমরা আরো কোরানিক দর্শন আলোকে জানতে পারলাম পরিতৃপ্ত নফস তথা মুমিনগণও সফলকাম তথা বিজয়ী, ভয় ও চিন্তামুক্ত। অলিগণ এবং মুমিনগণ মৃত্যুর পূর্বেই মৃত্যুর স্বাদ করেছেন, তাঁদের আর মরণ নাই, তারা শরিয়াতের বিধান লক্ষাথে দেহ রাখেন।

কারণ অলিআল্লাদের সম্মানিত দেহ মোবারক মাটির জন্য ভক্ষণ করা হারাম। তাই মহানবী ইরশাদ করেন:- “মুতু কাবলা আন্তা মুতু” অর্থাৎ মরার আগেই মরে যাও। যাদের নফস মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছেন কোরানিক দর্শন আলোকে তাদেরকে মুমিন অথবা অলি-আউলিয়া বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

এবং যারা আল্লাহর রাস্তায় মরার আগে মরে গেছে, কোরানিক দর্শন তাদের মৃত বলতে সাবধান করেছেন। যদি কেউ মৃত বলে মনে মনে চিন্তা করে, তাহলে তিনি আল্লাহর বিধান অনুসারে কাফির হিসাবে সাবিত হবেন। আমরা কোরানিক দর্শন অনুসারে জানি কিয়ামত হয় নফসে লাউয়ামাহর উপর তথা সংগ্রামরত নফসের উপর। কোরানিক দর্শন আলোকে প্রশান্ত নফসের উপরই রবের আদেশ রূহ উদ্ভাসিত হয়।

সুতরাং যারা মারা যাবার আগেই মারা গেছেন, যারা নিজেদের জানাজা নিজেরাই সম্পন্ন করেছেন, যারা সাধনার মারফত আপন পবিত্র নফসের উপর রূহ উদ্ভাসিত করেছেন, যারা রবকে ডাকলে আপন রব ডাকের জবাব দেন, যারা রহমতপ্রাপ্ত হয়েছেন, সাধারণ আমানু, ইনসান ও নাস পর্যায়ের মানুষগণ তাদের উপর জানাযা নামাজ পড়া চরম বেয়াদবী এবং আদবের বরখেলাফ। কারণ যিনি রহমত প্রাপ্ত হয়েছেন তাঁর জন্য কোনো দোয়া নয়, বরং রহমত প্রাপ্ত অলি – আউলিয়ার নিকট থেকে মস্তানি সাহায্য নিতে হয়।

মৃত মানুষের (নাস, ইনসান ও আমানু) জন্য জানাযা পড়তে হয়, অর্থাৎ যারা প্রাকৃতিক নিয়মে মৃত্যুবরণ করেন তাদের উপর জানাযা কার্যসম্পাদন করবেন মুমিন ও আউলিয়াগণ। মুমিন ও আলিয়াগণ আপন রবের ইচ্ছা অনুযায়ী পর্দা গ্রহণ করলে তথা সম্মানিত দেহ মোবারক রাখলে, তাদের উপর সাধারণ মানুষ জানাযা পড়া বেয়াদবি এবং অন্যায়। আর যারা ধনদাস, মজুদদার, এতিম মিসকীনদের হক মরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, মহানবী সাঃ তাদের জানাযা করতে নিষেধ করেছেন, কারণ তারা জাহান্নামি।

অলি-আউলিয়া ও মুমিনগণ বিদায় নিলে তাদের জন্য কোনো আহাজারি করা যাবে না, দুঃখ অথবা শোক প্রকাশ করা যাবে না, ঐদিন আমানুদের জন্য রহমতের দিন। সুতরাং সাধারণ মানুষ যেন অলি আউলিয়াদের ও মুমিনদের মৃত বলে ধারনা করে কাফের যেন না হয়, সেই কারণে অলি- আউলিয়া কেরামের পর্দাগ্রহণের সময় সত্যের ঢংকা বাজানো আবশ্যিক কর্তব্য, সংখ বাজানো ও আনন্দ সংগীত গাওয়া, আমানুদের উপর ওয়াজিব। সালীনতার সহিত অলি আউলিয়া ও মুমিনগণের সম্মানিত দেহ মোবারক ফুল শয্যায় রাখা, আশে পাশে আদর গোলাপ জল ছিটানো, ধুপকাটি জ্বালানো, বোখার জ্বালানো উত্তম।

অলিআল্লাহদের কালাম, সামা – কাওয়ালী, মারফতি, মুর্শিদি কালাম পাঠ করা, অলিআল্লাহদের নিকট থেকে তাওয়াজ্জু পাওয়ার বরকতে। কারণ আল্লাহর অলি যেখানে অবস্থান করেন সেখানেই আল্লাহ রহমত নাজিল করেন। আল্লাহ তার অলির মাধ্যমেই কেতাব, রেজেক, হেদায়েত ও রূহ ফুৎকার করেন।

সুতরাং অলিআল্লাহগণ পর্দা নিলে তাদের সম্মানিত দেহ মোবারক তাজিমের সহিত রওয়াজা মোবারকে রাখতে হবে, কোনো রকম বেয়াদবি যাতে না হয়, কারণ আল্লাহর অলি সাথে বেয়াদবি হলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না এবং নিজেই যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আল্লাহর অলির সমাধিস্থল রহমত প্রাপ্তির স্থান।

অলির জানাযা পড়া সাধারণ মানুষের জন্য হারাম।মৃত মানুষ মারা গেলে তাকে ধর্মের বিধি মোতাবেক কার্যসম্পাদন করতে হবে। অলিআল্লাহ পর্দা নিলে সত্যের ঢংকা বাজাও, নাস, ইনসান, ও আমানু মারা গেলে জানাযা কার্যসম্পাদন করে কবরে রাখা কর্তব্য।

– আর এফ রাসেল আহমেদ

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel