হোমপেজ আত্ম সচেতনতা হাকিকতে জান্নাত ও জান্নামের রহস্য।

হাকিকতে জান্নাত ও জান্নামের রহস্য।

1807

হাকিকতে জান্নাত ও জান্নামের রহস্য।

জান্নাত শব্দটি কোরানিক টার্ম। জান্নাত শব্দের ফারসি ও উর্দু পরিভাষা হলো বেহেশত। জান্নাত শব্দের সংস্কৃত পরিভাষা হলো স্বর্গ। জান্নাত শব্দের বাংলা পরিভাষা হলো শান্তিময় আবেশ। কোরানিক দর্শন জান্নাত শব্দটি দিয়ে কখনো বাগান অথবা উদ্যান বুঝিয়েছে, আবার কখনো স্বর্গ বুঝিয়েছে, আবার কখনো নাজাত তথা মুক্তি বুঝিয়েছে। জান্নাত একটি, এই জান্নাতের স্তর হলো আটটি। জাহান্নাম একটি, এই জাহান্নামের দরজা হলো সাতটি।

এই জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থান কোথায়? এই জান্নাত এবং জাহান্নামের অবস্থান জিন এবং মানুষের আপন নফসের মধ্যে অবস্থিত। মানুষের নফসের বাহিরে জান্নাত এবং জাহান্নাম নেই। যিনি জান্নাতি তার নফস ইল্লিনে অবস্থান করেন, যিনি জাহান্নামি তার নফস সিজ্জিনে অবস্থান করেন। নফসই জান্নাত এবং জাহান্নামের সুখ- দু:খ ভোগ করে। জান্নাত ভোগ, জাহান্নাম ভোগ। উভয়ই ভোগ। সংগ্রামরত নফসের উপর কিয়ামত হলে নফস জান্নাত প্রাপ্ত হয়। আপন নফসের নিম্নমুখী গতিই হলো জাহান্নাম, আপন নফসের ঊর্ধ্বমুখী গতিই হলো জান্নাত।

আপন অস্তিত্বের প্রকাশ ও বিকাশের ধারাকে বলা হয় জান্নাত এবং জাহান্নাম।

যার জন্য জান্নাত সবকিছুই জান্নাত, আর যার জন্য জাহান্নাম তার জন্য সবকিছুই জাহান্নাম। মানুষ জাহান্নামে যাবে না, বরং তারা জাহান্নামে বর্তমানে রয়েছে। একমাত্র মুমিন, মুত্তাকি, মুহসিনিন, সাবেরিন ও মুসল্লি বর্তমানে জান্নাতে রয়েছে। কারণ দেহের বাহিরে নফস তথা প্রাণ নেই। এই নফসের বাহিরে জান্নাত জাহান্নাম নেই। যারা কল্পনা করে জান্নাত আকাশে অবস্থান করে, অবশ্যই জান্নাত মনের আকাশে অবস্থান করে।

যার কোনো প্রকার চাওয়া (আরজু) পাওয়ার আকাঙক্ষা (তামান্না) থাকে না তাকেই পরিতৃপ্ত বলা হয়। এই পরিতৃপ্ত নফস তথা প্রাণকে কোরানিক দর্শন জান্নাতে প্রবেশ করার শর্ত দিয়েছে। সরলতা ও সততা ব্যতীত জান্নাত প্রবেশ লাভ করা যাবে না। শিশুর মতো সরলতা না থাকলে জান্নাতে দ্বার উদঘাটন করা সম্ভব নয়। তাই সাধক বলেন- “আপনিই খোলবে বেহেস্তের দ্বার সত্য মুমিন হবে যারা।” এই নফসের মধ্যে জাহান্নামে দ্বার বন্ধ হলে জান্নাতের দ্বার খোলবে।

“সেই জান্নাত লাভের প্রয়াসে যাহা প্রশস্তায় আকাশ ও পৃথিবীর মত” (সুরা হাদিদ ৫৭:২১ নং আয়াতঃ অনুবাদ: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

মন্তব্য: উপমার সাহায্য অথবা রূপকতার আশ্রয় নিয়ে জান্নাতের প্রশস্তাতা বর্ণনা করা হয়েছে। জান্নাতের দৈর্ঘ্য ও প্রশস্ততা হলো আসমান ও জমিন ব্যাপ্তির ন্যায়। পৃথিবী তথা জমিনকে রূপকার্থে বলা হয় দেহ, আর চিত্তাকাশকে বলা হয় রূপকার্থে আকাশ তথা মহাশূন্যে। পা হতে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক হলো জান্নাত ও জাহান্নামের পরিধি। সাহাবিরা মহানবি সাঃ কে প্রশ্ন করেছিলে, জান্নাতের প্রশস্তায় যদি আসমান জমিনের ন্যায় ব্যাপ্ত হয়, তাহলে জাহান্নামের অবস্থান কোথায়?

তখন হুজুরপাক সাঃ সাথে সাথে ইরশাদ ফরমালেন দিন আসলে রাত কোথায় মিলে যায়? অন্ধকার ভেদ করে আলোতে আসতে হয়। যার জন্য জান্নাত তার সবকিছুই জান্নাত যার জন্য জাহান্নাম তার জন্য সবকিছুই জাহান্নাম। সুতরাং মানুষের আপন অস্তিত্বই জানান দেয় কে জান্নাতি আর কে জাহান্নামি, আর কে দুই অবস্থা হতে মুক্ত। আমরা সুরা আল ওয়াকিয়া তিন দলের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই, ডানপন্থীদল তথা জান্নাতি দল, বামপন্থীদল তথা জাহান্নামী দল। অগ্রগামি দল তথা জান্নাত ও জাহান্নামের দুই অবস্থা হতে মুক্তদল।

এই তিন গুণসম্পন্ন পোশাকের মানুষই বর্তমান পৃথিবীতে বিচরণশীল। তুমি দেখতে আমার মতো এটাই সবচেয়ে বড় ধোঁকা। দুজাহানের জ্ঞান না থাকলে এই দুইটি বিষয় মূল্যায়ণ করা সম্ভবপর নয়। জান্নাতের আসল রূপটি আল্লাহর অলিরাও জেনেশুনে বলেন না। হয় তো সমাজ গ্রহণ করে নেবে না। তারাও অনেক সময় রূপকতার আশ্রয় নেন।

যেমন মহানবি রূপকতার আশ্রয় নিয়ে বুঝিয়েছেন। সুতরাং বলতে চাই জান্নাতের সুখ আপন হৃদয় দ্বারাই উপলব্ধি করতে হয়, আবার জাহান্নামের যাতনা আপন চিত্তকেই জ্বলায়। নিহ্নবে চিত্তদাহ হতে থাকে। জাহান্নামিরা ভোগে নিমজ্জিত, জান্নাতিরা সুখভোগে প্রশান্ত। নাজাতিরা উপভোগের আনন্দে লীলাময় ও পরিতৃপ্ত। সুতরাং ভোগের সুখ সাময়িক, উপভোগের আনন্দ চিরস্থায়ী।

– আর এফ রাসেল আহমেদ