হোমপেজ শিক্ষণীয় ঘটনা ও বাণী ঋষি আরুণী ও তাঁর পুত্র শ্বেতকেতুর মধ্যে কথোপকথন:

ঋষি আরুণী ও তাঁর পুত্র শ্বেতকেতুর মধ্যে কথোপকথন:

542

ঋষি আরুণী ও তাঁর পুত্র শ্বেতকেতুর মধ্যে কথোপকথন:

উপনিষদে ঋষি আরুণী তাঁর নিজ পুত্র শ্বেতকেতুকে জিজ্ঞাসা করেন:-

“হে পুত্র! দীর্ঘকাল ধরে বেদচর্চা করেছ, পন্ডিত হয়েছ এবং এজন্য কিছু অহংকারও জন্মেছে বটে, কিন্তু যে বিদ্যা অর্জন করলে অজানাকে জানা যায়, অননূভূতকে অনুভব করা যায়, অশ্রুতকে শ্রবণ করা সম্ভব, অচেনাকে চেনা সম্ভব, সে জ্ঞান কি আয়ত্ত করেছ?” শ্বেতকেতু এসব সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তিনি পিতার কাছে সেই জ্ঞানই জানতে চাইলেন যে জ্ঞান দ্বারা সত্তার মূল স্বরূপ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব।

আরুণী তখন বললেন: “অভাব (অনস্তিত্ব) থেকে কখনো ভাবের (অস্তিত্ব) উদ্ভব হতে পারে না। মৌলিক কোন বিশেষ উপাদান হতেই মৌলিক সত্তার উৎপত্তি। মূল বস্তুটি বহু হতে চাইল এবং এমনিভাবেই তাপের সৃষ্টি হলো। তাপ থেকে বাষ্প, বাষ্প হতে সলিল এবং সলিল থেকে মুক্তিকার উদ্ভব হলো। এভাবেই এক হতে বছর উৎপত্তি হলো”।

আরুণী বলেই চলেছেন- “হে বৎস! যেমন সকল নদীর ধারাই সাগরে নিপতিত হয় এবং নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য ভুলে গিয়ে সবার মধ্যে একীভূত হয়ে যায়, আবার বাষ্প হয়ে আকাশে মেঘরূপে উদ্ভিত হয়ে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে অনন্তকাল বয়ে চলে, ঠিক তেমনি আমরাও একই সত্য থেকে উদ্ভুত হয়ে এখানে আত্মবিস্মৃত অবস্থায় পড়ে আছি।

চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে আমরাও পুনরায় সেই সত্যেই প্রত্যাবর্তন করব এবং সেখান থেকে জন্ম জন্মান্তরের মধ্য দিয়ে নতুন জীবনে ফিরে আসব।”

এবারে শ্বেতকেতুন বললেন- “তাতো বুঝলাম, কিন্তু সেই যে অবিনশ্বর সত্তা তাকে কীভাবে প্রত্যক্ষ করি?”

“আরুণী এক পাত্র পানিতে কিছুটা লবণ নিক্ষেপ করে জিজ্ঞাসা করলেন “বৎস! বল দেখি লবণ কোথায় গেল?
কোথাও তুমি আর এই লবণ বস্তুটাকে দেখতে পাবে না। কিন্তু পানি আস্বাদন করে দেখ এর সর্বত্রই লবণের উপস্থিতি দেখতে পাবে।

তদ্রূপ সৎ ও ওভাপ্রোতভাবে সর্বত্র বিরাজিত।

সমগ্ৰ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র সেই সত্যই বিরাজ করছে। সমগ্র সৃষ্টিতেই তাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না, ধ্যানের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। তাই বলি, হে বৎস! তত্ত্বানি। অর্থাৎ তুমিই সে”।

তথ্যসূত্র:
– দিওয়ান ই মুনসুর হাল্লাজ, পৃ: ২৩৭-২৩৮।
– মোস্তাক আহমদ।