মোহ মুক্তির অনন্ত অভিযান

মোহ মুক্তির অনন্ত অভিযান

জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আমরা কখন যে মায়ার অদৃশ্য জালে জড়িয়ে পড়ি, তা অনুধাবন করাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। পার্থিব সুখ, সম্পর্কের টান, মোহ-মায়া ও স্বপ্নের হাতছানি-সব মিলিয়ে এক সোনালি আবরণের নিচে লুকিয়ে থাকে অন্তহীন আসক্তি। এই আসক্তিই আমাদের আত্মার দীপ্তিকে ম্লান করে দেয়, মনকে করে তোলে অস্থির আর চেতনাকে ঘিরে ধরে এক ধোঁয়াটে আবরণ।

যেখানে ইন্দ্রিয় বা পার্থিব সুখ হয় কেবল জীবনের লক্ষ্য, সেখানে আত্মার স্নিগ্ধ শব্দ চাপা পড়ে যায় মোহ ও কোলাহলে। অথচ, যিনি সত্যের অনুসন্ধানী, তিনি জানেন- এই চাহিদা, এই চাওয়া-পাওয়ার খেলা একদিন নিঃশেষ হয়ে যায়। তখন মানুষ খোঁজে এমন এক আশ্রয়, যা অনন্ত, অসীম, অমৃত, যা ক্ষণিকের নয়।

গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন- “তৃষ্ণাই সকল দুঃখের মূল। এই জাগতিক চাওয়া-পাওয়া, এই ক্ষণস্থায়ী সম্পর্কের মোহ আমাদের আত্মাকে ভারাক্রান্ত করে তোলে।”

সূফী সাধকরাও বারবার নফসের (অহং) কবল থেকে মুক্তির কথা বলেছেন- “যতক্ষণ না মানুষ এই আত্মম্ভরিতা ও পার্থিব লিপ্সাকে জয় করতে পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত পরমাত্মার সাথে মিলন সম্ভব নয়।”

ফকির ও ওলীরাও জগৎকে মায়াময় বলে উপলব্ধি করেছেন এবং আত্মার পরিশুদ্ধির উপর জোর দিয়েছেন। ফকির ও ওলীরা বলেন- এই জগৎ একটি নাট্যমঞ্চ, আর আমরা সবাই তার ক্ষণস্থায়ী চরিত্র। কেউ সুখ খুঁজে বেড়ায়, কেউ সাফল্যের পেছনে দৌড়ায়, কিন্তু যিনি নিজেকে জানতে পেরেছেন, তিনি জানেন, সব কিছুতেই লুকিয়ে আছে অনিত্যতার ছায়া।

আত্মা- সে এক সূর্যরশ্মির মতো, যা মেঘে ঢাকা পড়ে যায় আমাদের মোহের কারণে। সেই মেঘ সরিয়ে যদি কেউ নিজের ভিতরের পরম আত্মাকে জাগিয়ে তুলতে, তবে সে দেখবে-তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আলোর এক অনন্ত সমুদ্র। সেই আলোই প্রেম, সেই আলোই পরম শান্তি।

তাই মোহ থেকে মুক্ত হওয়া মানেই অন্ধকার থেকে আলোয় পা রাখা। ধৈর্য, নম্রতা, অনুশীলন, সাহস আর প্রেম- এই চারটি শুদ্ধভাবে পালন করলেই খুলে যায় আধ্যাত্মিক জগতের দ্বার। যেখানে নেই কোনো চাওয়া, নেই কোনো হারানোর ভয়- কেবলই শান্তি, কেবলই সত্য।

– Nishat Wahid

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel