জন্মান্তরবাদের স্বরূপ:
কোরানের ২ নং সুরা বাকারার ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন:- “কেমন করিয়া কফুরি করো আল্লাহর সাথে? এবং তোমরা ছিলে মৃত। সুতরাং তোমাদেরকে জীবিত করিয়াছেন। তারপর তোমাদের মৃত্যুদান করিবেন। তারপর তোমাদেরকে জীবিত করিবেন। তারপর তাহার দিকে প্রত্যাবর্তন তথা ফিরিয়া আসা।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে প্রথমেই ‘তোমরা মৃত ছিলে’ বলার আগে এবং শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এবং অর্থটি হলো মানবের অতীত জীবনের ইঙ্গিত বহন করা। সেখানে থেকে তিনি তোমাদেরকে জীবনদান করলেন। তারপর তোমাদের মৃত্যু ঘটনাটি দান করেন। তারপর তোমাদেরকে জীবনদান করেন। তারপর তাহার দিকে প্রত্যাবর্তন কর। এই “তারপর” শব্দটি তিন তিনটিবার উল্লেখ করে জম্ম মৃত্যুর পুনরাবৃত্তির ইঙ্গিত দিতেছেন। সুরা মূলকের দুই নন্বর আয়াতেও বলা হয়েছে যে, মানুষকে পরীক্ষা করার জন্যই আল্লাহ জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং জম্মটা যতটুকু রহস্যপূর্ণ মৃত্যুটাও সেই রকম রহস্যপূর্ণ। (
গবেষক: কোরানুল মজিদ হুবুহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যাঃ ১১১পৃষ্ঠা: কালান্দার মাওলানা জাহাঙ্গীর আঃ)।
প্রতিটি মানুষ কিন্তু মনের অজান্তেই নিজেই নিজের তকদীর সৃষ্টি করে। প্রতিটি মানুষের নফস এর সাধ্য অনুসারে শুদ্ধিকর্ম করে ক্রমবিকাশের মাধ্যমে মুক্তির দিকে এগিয়ে যাবে ইহাই আল্লাহর রহস্যময় মনোনীত বিধান। এই বিধানকে গায়ের জোড়ে খন্ডন করা যায় না, বরং ধ্যানসাধনার দায়েমি সালাতের এত্তেবায়ে মুহবতে ডুব দিয়ে বিধান ভঙ্গ না করে ঊর্ধ্বে ওঠা যায়। যে নফস যে রকম চিন্তাভাবনা করে তাহা তাহার উপরেই জমা থাকে এবং যারা খান্নাসের গোলামি করে মোহমায়ার আকৃষ্ট হয়ে উহাকে মাথার মধ্যে জমা করে রাখে উহা সেই নফসেরই জন্য পুর্নজম্মের বীজ হয়ে থাকে সৃষ্টির মধ্যে আটকিয়ে রাখে। পুর্নজম্মবাদ তথা কেয়ামতের আসল রহস্যটি যারা বুঝতে পারেন নি তাদেরই বা কী দোষ দিতে যাব? কারণ সবই তো আল্লাহর লীলাখেলা।
(৩৬৯ পৃষ্ঠা: কোরানুল মজিদ হুবুহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা: কালান্দার মাওলানা জাহাঙ্গীর আঃ)।
কোরানের ১৮ নং সুরা আল কাহাফের ৪৮ ও ৪৯ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন:
ওয়া (এবং) উরিদু (তাহাদেরকে সামনাসামনি করা হইল, তাহা প্রকাশ করা হইল) আলা (উপর) রাববিকা (তোমার রবের) সাফফান (কাতার, সারি) লাকাদ (নিশ্চয়-ই, নিঃসন্দেহে) জিতুমুনা (তোমরা আমাদের কাছে আসিয়াছ) কামা (যেমন) খালাকনাকুম (তোমাদেরকে আমরা সৃষ্টি করিয়াছিলাম) আওওয়ালা (প্রথম) মাররাতিন (একবার) বাল (বরং) জাআমতুম (তোমরা বলিয়াছিলে) আললান (যে কখনোই না) নাজআলা (আমরা করিব, আমরা বানাইবো) লাকুম (তোমাদের জন্য) মাওইদান (ওয়াদার সময়, অঙ্গীকারের সময়)।
এবং তাহাদেরকে সামনে আনা হইল তোমার রবের উপর সারিবদ্ধভাবে। নিশ্চয়ই তোমরা আমাদের কাছে আসিয়াছ যেমন প্রথমবার তোমাদেরকে আমরা সৃষ্টি করিয়াছিলাম। বরং তোমরা ভাবিয়াছিলে যে কখনোই আমরা হাজির করিব না তোমাদের জন্য ওয়াদার সময়। [আয়াত-৪৯]
ওয়া (এবং) উদিয়া (উপস্থিত করা হইবে) কিতাবু (কিতাব, আমলনামা) ফাতারাল (সুতরাং তুমি দেখিবে) মুজরিমিনা (পাপী, অপরাধীদেরকে) মুসফিকিনা (ভয়কারীগণ) মিমমা (তাহা হইতে) ফিহি (ইহার মধ্যে) ওয়া (এবং) ইয়াকুলুনা (তাহারা বলিবে) ইয়াওয়াইলাতানা (হায় দুর্ভাগ্য আমাদের) মালি (কেমন) হাজাল (এই) কিতাবি (কিতাব, আমলনামা) লা (না) ইয়ুগাদিরু (ছাড়ে, বাদ দেয়) সাগিরাতান (ছোট) ওয়া (এবং) লা (না) কাবিরাতান (বড়) ইললা (কিন্তু) আহসাহা (তাহা গুনিয়া রাখা, তাহা লিপিবদ্ধ করিয়া রাখা) ওয়া (এবং) ওয়াজাদু (তাহারা পাইবে) মা (যাহা) আমিলু (আমল করিয়াছে) হাদিরান (উপস্থিত, সামনাসামনি) ওয়া (এবং) লা (না) ইয়াজলিমু (জুলুম করা) রাব্বুকা (তোমার রব) আহাদান (কাহাকেও)।
এবং উপস্থিত করা হইবে কেতাব [আমলনামা তথা কর্মফল] সুতরাং তুমি দেখিবে দোষীদেরকে ভীত তাহা হইতে ইহার মধ্যে এবং তাহারা বলিবে হায় সর্বনাশ আমাদের, কেমন এই কেতাব [আমলনামা তথা কর্মফল], ছাড়ে না ছোট এবং না বড়[-কে] গণনা করিয়ে রাখা ব্যতীত। এবং তাহারা তাইবে যাহা আমল করিয়াছে [উহাকে] সামনাসামনি। এবং জুলুম করিবেন না তোমার রব কাহাকেও।
ব্যাখ্যা
এই দুটি আয়াতের প্রথমটিতে বলা হয়েছে যে, তোমার প্রতিপালক সারিবদ্ধ অবস্থায় তাদের সবাইকে হাজির করবেন। মৃত্যু নামক ঘটনাটি ঘটার পর প্রতিটি নফস তথা মানুষের দুনিয়ার জাগতিক জীবনের সর্বপ্রকার কর্মগুলো পরিষ্কার ধরা পড়ে। মৃত্যু-ঘটনা ঘটবার আগের জীবনটিকে এখানে প্রথমবারের জীবন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেইসঙ্গে বলে দেওয়া হলো যে, তোমার রবের নিকট তোমাদেরকে আবার হাজির করা হবে।
মানুষ মনে করতে চায় যে, মৃত্যু নামক ঘটনাটি ঘটে যাবার পর আবার তাদেরকে কেমন করে আনায়ন করা হবে। প্রতিটি মানুষেরই স্থূল দেহটির মূলে যে সূক্ষ্ম দেহটি অবস্থান করে সেই সূক্ষ্ম দেহটি শুক্রকীটের মধ্যে দিয়ে আনা হয়ে থাকে। শুক্রকীট এর মধ্যে যে দেহটি অবস্থান করে উহা এত সূক্ষ্ম দেহ যে চর্ম চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এই অতি সূক্ষ্ম দেহটিকে স্থূল দেহে রূপান্তর করার পর আপন আপন রবের নিকট দাঁড় করানো হয়।
শুক্রকীটে অবস্থান করা সূক্ষ্ম দেহটি ধারণ করার পর হতে নফসের ভালো-মন্দ বুঝবার জাগরণটি না আসা পর্যন্ত পূণরায় রবের নিকট দাঁড় করানো হয় না। তাই বলা হয়েছে, প্রথম তোমাদেরকে সৃষ্টি করার পর যেভাবে তোমাদেরকে রবের নিকট আনায়ন করা হয়েছিল, পুনরায় তোমাদেরকে সেইভাবেই তোমাদের রবের নিকট আনবার ব্যবস্থাটি করা হচ্ছে।
কিন্তু মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটার আগে তোমরা মনে করেছিলে যে, মরে যাওয়ার পর পুনরায় আর আসতে হবে না।
কাঁঠালের বীজ, আমের আঁটি এবং বটবৃক্ষের বীজগুলো দেখতে কেমন করে মনে হতে পারে যে কাঁঠাল গাছটি ক্ষুদ্র বিচির ভেতরে অতীব সূক্ষ্মরুপে কাঁঠাল গাছের সব রকম গুনাগুন নিয়ে লুকিয়ে আছে? আমের আঁটিটি দেখে কেমন করে মনে হতে পারে যে, এই ছোট্ট আঁটিটির ভেতরে বড় আমগাছটির সবরকম গুনাগুন নিয়ে লুকিয়ে আছে?
তারপর সূক্ষ্ম একটি বটবৃক্ষের বীজের ভেতর কেমন করে বিরাট বিশাল একটি বট বৃক্ষের সব রকম গুনাগুন নিয়ে লুকিয়ে থাকতে পারে?
ইহা সহজে বিশ্বাসের আওতায় আসতে চায় না।
চোখে দেখা যায় না যে, শুক্রকীটের অভ্যন্তরে একটি বিরাট মানবদেহে লুকিয়ে আছে।
ইহাও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বৈক? মৃত্যু একটি ঘটনা মাত্র কিন্তু ধ্বংস নয়। সুতরাং, মৃত্যু ঘটনা দ্বারা একটি নফস তথা একটি প্রাণ ধ্বংস হয়ে যায় না বরং কর্মফল অনুযায়ী রূপান্তর ঘটে। তাই বলা হয়েছে, পরবর্তী জীবনের আমলনামাগুলো [এখানে আমলনামাকেও কেতাব বলা হয়েছে] প্রতিটি মানুষের তথা প্রতিটি নফসের নিকট পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হবে এবং পরবর্তী জীবনটি কেমন হতে যাচ্ছে তা পূর্ববর্তী জীবনের আমলনামার উপর ভিত্তি করে দেহ ধারন করে দাড় করানো হবে এবং এই আমলনামাগুলোর মধ্যে এমন সব ছোট ছোট এবং বড় বড় বিষয় তুলে ধরা হবে যা দেখে প্রতিটি নফস আতঙ্কিত হয়ে পড়বে, ভয়-ভীতিতে অবাক বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে পড়বে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সেই নফসগুলো তথা মানুষগুলো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে যখন দেখতে পাবে যে, তাদের ছোট-বড় সব রকম আমলগুলো মোটেও সন্তোষজনক নয় বলে আপন রবের নিকট গৃহীত হয় নাই। পূর্ববর্তী জীবনের আমলগুলোর উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী জীবনটা দাঁড় করানো হবে। ইহাই পূর্ববর্তী জীবনের সীমিত স্বাধীন ইচ্ছা শক্তিগুলোর কর্মফল তথা আমলনামা।
এই বিষয়ে আপন রব সামান্য এদিক সেদিকও করেন না তথা জুলুম করা হয় না। আপন রবের কখনোই কোনো অবস্থাতেই কারো সঙ্গে জুলুম করার প্রশ্নটিই অবান্তর, বরং আপন আপন কর্মফল তথা আমলনামার উপরেই ভিত্তি করে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করানোর কথাটি বলা হয়েছে।
কেউ কেউ আবার নফসকে দাঁড় করানোর পরিবর্তে রুহকে দাঁড় করিয়ে ফেলেন। রুহকে যেখানে দাঁড় করানো হয় সেখানে ফেরেশতাদেরকেও ওই একই সারিতে দাঁড় করানোর কথাটি বলা হয়েছে। রুহ যেখানে নাজেল করা হয় সেখানে ফেরেশতাদেরকেও নাজেল করার কথাটা অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু এই আয়াত দুটিতে রুহ এবং ফেরেশতার কথাটি বলা হয়নি তথা উল্লেখ করা হয় নাই এবং উল্লেখ করার প্রশ্ন উঠতে পারে না।
কারণ, ভালো-মন্দের আমলনামাগুলো নফসের উপর বর্তায়, রুহপর উপর নহে। নফসের উপরে আমলনামাগুলো বর্তায় বলে রুহ আর ফেরেশতার কথাটি আসা অবান্তর। সুতরাং, যে যা সীমিত স্বাধীনতার জীবনে উপার্জন করে সে তাই তাহার আপন আপন রব হতে পেয়ে থাকে। পরিবেশের সবচেয়ে বেশি অবাক হই তখনই যখন দেখি বাংলার বাউল সম্রাট লালন শাহের গানের মধ্যে এই গভীর রহস্য কথাগুলো কী সুন্দর ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
(৪৩৭,৩৮,৩৯ পৃষ্ঠা: কোরানুল মজিদ হুবুহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা)
কোরানের ২২ নং সুরা হজের ০৫ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন:- “হে মানুষেরা, পুনরুত্থান (পূর্নজন্ম)সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দহের মধ্যে (পতিত হও) সুতরাং নিশ্চয়ই আমরা (আল্লাহ) মাটি হইতে আমরা(আল্লাহ) তোমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছি ইহার পর শুক্র হইতে ইহার পর রক্তপিন্ড হইতে, ইহার পর মাংসপিণ্ড হইতে পরিপূর্ণ আকৃতি (দিয়া) এবং পূর্ণ আকার নহে, আমরা(আল্লাহ) সত্য স্পষ্ট করি তোমাদের জন্য এবং জরায়ুগুলির মধ্যে আমরা (আল্লাহ) স্থায়ী করি যেমন নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা (আল্লাহ) চাই, ইহার পর আমরা(আল্লাহ) তোমাদেরকে বাহির করি শিশু(রূপে) ইহার পর তোমরা যেন যৌবনে পৌছাইয়া যাও এবং তোমাদের মধ্য হইতে কাহাকেও আগেই মৃত্যু দেওয়া হয় এবং তোমাদের মধ্য হইতে কাহাকেও দুর্দশাগ্রস্ত বয়সের দিকে (লইয়া যাওয়া হয়) যেন সব কিছু জানিয়া লইবার পরেও কিছুমাত্র (আগের মতো) জ্ঞান থাকে না এবং তুমি দেখিতেছ শুষ্ক জমিনের উপর যখন আমরা পানি বর্ষণ করি(তখন) তাহা সতেজ হয়, এবং (উহা) ফুলিয়া উঠে এবং সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উদগত করে (এবং) সুদৃশ্য(রচনা করে)।”
ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ কোনো বিশেষ শ্রেণীকে বলছেন না, বরং সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে উপদেশের ভাষায় আল্লাহ বলছেন যে মারা যাবার পর আবার তোমাদেরকে ওঠানো হবে। এই ওঠানোটি বলতে আল্লাহ কী বোঝাতে চেয়েছেন? একইরূপে ওঠানো হবে, নাকি অন্যরূপে ওঠানো হবে? মানুষ কি কখনও একইরূপ সব সময় ধারণ করতে পারে, না পারে না? কারণ শিশুটি যখন বড় হয় তখন আর সেই বড় হবার মধ্যে শিশুরূপটি থাকে না তথা হারিয়ে যায়। প্রশ্ন আসে, ইহা কি মানবদেহের পরিবর্তন নাকি জীবাত্মার পরিবর্তন? অবশ্য দেহের বিভিন্ন অবস্থায় একটি মানুষ বিভিন্ন রকম পরিচয় বহন করে।কারণ দেহটি একটি নিদিষ্ট স্থানে এসে থমকে যায় না। শিশু দেহটি বালকরূপ ধারণ করে। বালকরূপটি পূর্ণবয়স্ক যুবকের রূপ ধারণ করে। তারপর প্রৌঢ়, তারপর বৃদ্ধ , তারপর অনেক বৃদ্ধ এবং তারপরেও যদি বেঁচে থাকে তা হলে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। একটি দেহ প্রতিনিয়তই যে পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হয়ে চলছে সে রকম কি জীবাত্মাটিরও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে না? মানবদেহটি কি একটি জীবাত্মার পরিচয় বহন করার একটি স্বতঃসিদ্ধ সত্য, নাকি অবস্থান থেকে অবস্থানে এর পরিবর্তন? দেহের একেক রকম অবস্থানে জীবাত্মাটি কি একেক রকম বাস্তব অভিনয় করে চলছে?
হিন্দুধর্মের অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে উপদেশগুলো অর্জুনকে দিয়েছেন তার মধ্যে একটা উপদেশ হলো, ‘হে অর্জুন, মানুষ যেমন পুরনো পোশাক ফেলে দিয়ে নতুন পোশাক ধারণ করে সেই রকম আত্মাও পুরনো দেহ ফেলে দিয়ে নতুন দেহ ধারণ করে’ তা হলে আমরা অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশে এই কথাটুকু জানতে পারলাম যে, দেহ পূর্বজম্মের কর্মফল ভোগ করার একটি পোশাকমাত্র। দেহকে একটি নিছক পোশাকমাত্র বলে অর্জুনকে যে উপদেশ দেওয়া হয়েছে সেই পোশাকটিকে আত্মার অংশ বলা হয় নি, বরং মানুষ যে রকম জীর্ণ পোশাক ফেলে দিয়ে নতুন পোশাক পরিধান করে সে রকম আত্মাও বার বার দেহ নামক পোশাকটি ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন হলো, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কি অর্জুনকে বিরাট ভুল শিক্ষা দিয়ে গেলেন, নাকি কোরান- এর জীবন- মৃত্যুর রহস্যটির কথাই বলে গেলেন?
কোরান- হাদিসের জম্ম মৃত্যুর রহস্যের জ্ঞানটি কি ইসলাম ধর্মের গবেষকেরা সঠিকভাবে তুলতে পেরেছেন, নাকি পারেন নাই? কারণ এই জম্ম- মৃত্যুর প্রশ্নে ইসলাম গবেষকদের ব্যাখ্যায় সম্পূর্ণরূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশের বিপরীত ভাবধারাটি ফুটে ওঠে। জম্ম- মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে দুরকম সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ফলটি কি আমরা আশা করতে পারি? কারণ আজ যদি আমি (অধম লিখক) হিন্দুর ঘরে জম্মগ্রহণ করতাম এবং বেদ- গীতা- র গবেষণা চালিয়ে যেতাম তা হলে আমার অবস্থানটি কোথায় থাকত? তা হলে হিন্দুর ঘরে জম্মগ্রহণ করে হিন্দুধর্মের উপর গবেষণা করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হতাম উহা কি আমার জম্মের আগেই তকদীর দিয়ে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে? যেখানে একবারই জম্মগ্রহণ করতে হবে সেখানে আমার এই অবস্থানটির জন্য আমি কাকে দায়ী করব?
এখানে অনুমানের গুলমারা বিদ্যা দিয়ে যে তেন ব্যাখ্যা দিয়ে একটা কিছু বলা যেতে পারে, কিন্তু যেখানে একবারই আমাকে জম্মগ্রহণ করতে হবে এবং তাও হিন্দুর ঘরে, তা হলে পুনর্জন্মবাদটিকে মেনে নিলে এই কথা কি বলা যায় না যে জম্মই আমার আজন্ম মহাপাপ? এই আয়াতে কেবলমাত্র মুসলমানকে বলা হচ্ছে না, বরং সমগ্র মানবজাতিকে লক্ষ্য করে উপদেশটি দেওয়া হয়েছে এবং প্রথমেই বলা হয়েছে যে পুনরুত্থান সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে কি সন্দেহের অবকাশ আছে? এই পুনরুত্থান বলতে কি সেই কবে- কখন- কতদিন আমাদেরকে কবরে অবস্থান করতে হবে? ইস্রাফিল নামক ফেরেশতার শিঙা ফুৎকার দেবার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সব উঠে দাঁড়ব, নাকি মৃত্যু – ঘটনা- নামক ‘ সাআত’- নামক কেয়ামতটির কথা এখানে বলা হয়েছে?
এ আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষকে তৈরি করা হয়েছে প্রথমে মাটি হতে, তারপর বীর্য হতে, তারপর রক্তপিণ্ড হতে, তারপর মাংসপিন্ড হতে এবং তারপর পরিপূর্ণ মানবাকৃতির শিশুরূপে, তারপর রয়সের হেরফেরে মৃত্যু – ঘটনার কথাটি, তারপর শুষ্ক ভূমিতে বৃষ্টিবর্ষণ করে সেই ভূমিতে সতেজ করা হয় এবং নানা প্রকার উদ্ভিদের আগমন ঘটে এবং পরে পরিপূর্ণ একটি সুদৃশ্য রচনা করে।এতগুলো কথার দ্বারা আল্লাহ আমাদেরকে কী বোঝাতে চেয়েছেন? দুনিয়ার জীবনটা কি নিছক একটা মায়া, নাকি একটা ভীতি, নাকি একটি মেরাকাবার ধ্যানসাধনায় মশগুল থেকে আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভ করা?
আমার মতো অতি ক্ষুদ্র ইসলাম গবেষক বড় বড় ইসলাম – গবেষকদেরকে মাত্র একটি প্রশ্নই করতে চাই আর সেই প্রশ্নটি হলোঃ আজ যদি আপনারা হিন্দুর ঘরে জম্মগ্রহণ করতেন এবং ধর্ম- গবেষণায় নিয়োজিত থাকতেন তা হলে আপনাদের ধর্ম- গবেষণার অবস্থানটি কোথায় থাকত? বুকে হাত রেখে একদম নিরপেক্ষ হয়ে অধম লিখকের এই একটিমাত্র প্রশ্নের উত্তরটি দেবেন কি?
(৬১৫-১৬-১৭পৃষ্টাঃ কোরানুল মজিদ হুবুহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা: কালান্দার মাওলানা জাহাঙ্গীর আঃ)
– আর এফ রাসেল আহমেদ