রাসূল (সাঃ) এর সাথে মেরাজ সংঘটিত হওয়ার বর্ননা।
মেরাজ আরবী শব্দ, যার অর্থ পথ, সিঁড়ি, উর্ধ্বে আরোহণের অবলম্বন, আল্লাহর দীদার ইত্যাদি। প্রচলিত অর্থে হযরত রাসূল পাক সঃ কর্তৃক আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের উদ্দেশ্য উর্ধ্বারোহনকে মেরাজ বলা হয়।
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“পবিত্র ও মহিমাময় আল্লাহ, যিনি তাঁর বিশিষ্ট বান্দাকে তাঁর নিদর্শন দেখাবার জন্য রাতে সফর করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মজিদুল আকসায় (বায়তুল মোকাদ্দেস), যার পরিবেশ তাঁরই আর্শীবাদ পুষ্ট, তিনি (আল্লাহ) তাঁকে তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখালেন। তিনি তো সব শোনেন, সব দেখেন।” (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং ১)।
পবিত্র কুরআনের বর্ণনার পাশাপাশি তাসাউফের জ্ঞান দ্বারা সাধনা করলে বিষয়টি এরুপ দেখা যায় যে, মেরাজের রজনীতে হযরত রাসূল পাক সঃ এর সিনাচাকের মাধ্যমে গভীর প্রেমের আকর্ষণ সৃষ্টি করে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবীবকে সশরীরে বিদ্যুৎ গতিতে ক্বালবের ৭টি স্তর -সুদুর, নশর, শামসি, নূরী, কুরব, মকিম ও নাফসির মাকাম অতিক্রম করে নিজের কাছে তুলে নেন।
অতঃপর আরশুল্লায় আল্লাহ ও হযরত রাসূল পাক সঃ উভয়ে প্রেমালাপে ২৭ বছর অতিবাহিত করেন। তখন হযরত রাসূল পাক সঃ তাঁর জন্য মেরাজ চিরস্থায়ী করার জন্য সালাতকে তোহফা হিসেবে গ্রহণ করেন। মানুষের জীবআত্মা ষড়রিপুর তাড়নামুক্ত হয়ে পরিশুদ্ধি লাভ করলে উর্ধ্বলোকে আরোহণের ক্ষমতা অর্জন করে।
এরুপ পরিশুদ্ধ জীবআত্না পরমাত্মাকে সওয়ারী করে আল্লাহর নৈকট্য ও দর্শন লাভে সক্ষম হয়। জীবাত্মা পরিশুদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও নিজে নিজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না। কেননা এরুপ নৈকট্য লাভের পথ তার জানা নাই। পক্ষান্তরে, পরমাত্মা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে জীবাত্মাকে ঐ পথ চিনিয়ে দিতে সক্ষম। এ জন্য পরমাত্মার ইচ্ছায় জীবআত্না আল্লাহ দর্শনের যোগ্যতা অর্জন করে।
আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে পরমাত্মা সৃষ্টি জগতের সব তথ্য বহন করে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর যাবতীয় সৃষ্টির অস্তিত্ব পরমাত্মার ভিতরে বিরাজমান। প্রকৃতপক্ষে মানুষের পরিশুদ্ধ জীবআত্না তার পরমাত্মার ভিতরে ভ্রমনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রহস্যময় সৃষ্টি জগৎ সম্পর্কে যে কোন বিষয় অবলোকন করতে পারে। জীবআত্নাকে বাহন করে সাধকের মানবাত্মা যখন ছুদুরের মাকাম থেকে নশর, শামছি, কুরব, মকীম এর মাকাম অতিক্রম করে নাফসীর মাকামে গিয়ে আল্লাহর সাথে বিলীন হয়, তখন তার মধ্যে এমন এক শক্তি অর্জিত হয়, যা দ্বারা সে সৃষ্টি জগতের সব কিছু জানতে সক্ষম হয়।
তখন সময়ও সাধকের অধীন হয়ে যায়। তখন সাধকের পক্ষে মুহূর্তের মধ্যে সশরীরে সৃষ্টি জগতের যে কোন স্হানে উপস্থিত হওয়া সম্ভব। সর্বকালে, সর্বযুগে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ধর্ম যারাই পালন করেছেন, নিষ্ঠার সাথে ইবাদত বন্দেগী ও সাধনা কর্মে আত্মনিয়োগ করেছেন তাঁদের মাঝেই এ জাতীয় অলৌকিকত্ব প্রকাশ পেয়েছে। রহমাতুল্লিল আলামীন হযরত রাসূল পাক সঃ এর সহবতে থেকে সাধনা করে সাহাবায়ে কেরাম এ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন।
পরিশেষে একথা বলা যায় যে, রাসূল পাক সঃ সশরীরে মেরাজে গিয়েছিলেন কিনা, এ বিষয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। যে নবীর উম্মতের মধ্যে এরুপ ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি রয়েছেন -ইচ্ছা করলে যিনি সশরীরে যে কোন স্হানে পরিভ্রমণ ও অবস্থান করতে সক্ষম, সে নবীর পক্ষে আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টি জগৎ সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য সশরীরে যে কোন স্হানে ভ্রমণ করা কোন ব্যাপারই নয়।
সূত্র: আল্লাহ কোন পথে।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।