হোমপেজ ধ্যান ও দমের সাধনা মোরাকাবা তথা ধ্যান সাধনা

মোরাকাবা তথা ধ্যান সাধনা

1459

মোরাকাবা তথা ধ্যান সাধনা

“অতঃপর তোমরা দেহে এবং মনে চারি মাসকাল পরিভ্রমণ কর ও জানিয়া রাখ, তোমরা আল্লাহকে হীনবল করিতে পারিবে না এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের লাঞ্ছিত করিয়া থাকেন।” (৯:০২)

“তোমরা তো অবগত হইয়াছ প্রথমবার সৃষ্টি সম্বন্ধে , সুতরাং তোমরা ধ্যান কর না কেন? (৫৬:৬২)।

“অতএব আপনি যখনই অবসর পান, একান্তে ধ্যান করিবেন। এবং আপনর রবের প্রতি মনোনিবেশ করিবেন”। (৯৪ঃ ৭-৮)।

“তোমরা বিনতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক, তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” (৭:৫৫)

“যে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে সে জানিয়া রাখুক, আল্লাহ নিধারিত কাল আসবেই।তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (২৯:০৫)।

“যে কেহ সাধনা করে, সে তো নিজের জন্যই সাধনা করে, আল্লাহ তো বিশ্বজগৎ হইতে অমুখাপেক্ষী। “(২৯:৬)।

“যাহারা আমাদের উদ্দেশ্য সাধনা তথা সংগ্রাম করে, আমরা তাহাদেরকে অবশ্যই আমাদের পথসমূহে পরিচালিত করিব। অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মপরায়নদের সঙ্গে থাকেন।” (২৯:৬৯)।

“হে মানুষ, তুমি তোমার রবের নিকট পৌছা পর্যন্ত কঠোর সাধনা করিয়া থাক, পরে তুমি তোমার রবের সাক্ষাৎ লাভ করিবে।” (৮৪:০৬)।

” আপনি বলুন, আমি তো তোমাদেরকে শুধু একটি উপদেশই দিতেছি আর তাহা হইতেছে এই যে, তোমরা আল্লাহর জন্য দাড়াও (ধ্যানে) প্রথমে জোড়ায় জোড়ায় এবং তাহার পরে একা একা। তোমরা ফারাক করিয়া দেখ তোমাদের সাহেব জিনগ্রস্তের মধ্যে নহেন।নিশ্চয়ই তিনি তো সর্তককারী তোমাদের কঠোর শাস্তি সম্পর্কে।” (৩৪:৪৬)।

“তোমার ইয়াকীন অর্জন হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের কর্ম কর।” (১৫:৯৯)।

“কিন্তু আমি সত্য দ্বারা আঘাত হানি মিথ্যার উপর; ফলে উহা মিথ্যাকে চূর্ণ – বিচূর্ণ করিয়া দেয়, এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হইয়া যায়। দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা যাহা বলিতেছ তাহার জন্য।” (২১:১৮)।

“দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত বা ভুল দেখিতে পাইবে না, তুমি আবার তাকাইয়া দেখ, কোনো ভুল পাও কি? অতঃপর তুমি বার বার গভীরভাবে গবেষণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখ ভুল পাও কি না, ভুল তো তুমি পাবেই না, তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ হয়ে তোমারই কাছে ফিরিয়া আসিবে। (৬৭:৩-৪)।

কোরানের ১৮ নং সুরা হলো ধ্যানসাধনার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।কাহাফ শব্দের অর্থই হল ধ্যান সাধনার গুহা। কোরানিক দর্শন সমগ্র মানব জাতিকে কাহাফের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছে।আর ফিল কাহাফ তথা কাহাফের মধ্যে রব তার রহমতের দরজা খোলে দেয়ার নজীর দেখতে পাই।

আল্লাহর দর্শন পাইতে হইলে, যা লিখিয়াছি পাক জবানে দলিলে, ধরায় রাসুলকে ধরিলে, মাশুক পাবি মোরাকাবায় বসিলে।ধরায় একজন মানুষ ধরিলে, ধ্যান খেয়াল না করিলে, আদমকে মখরুম সেজদা না করিলে, আল্লাহ নাই আদম ছাড়া। পাঠ্যশিক্ষায় সব কি মিলে, প্র্যাক্টিক্যাল না করিলে, মাটির মত খাটি হইয়া, থাকতে হবে ভ্রমন্ডলে। অসীমের স্বরূপ দেখিতে হইলে, ভর্তি হও মন সংযমের স্কুলে। আল্লাহর হাত রাসুলের হাত, পীরের হাত লেখা আছে দলিলে। নিরাকারকে আকার করে, বসে থাক ধ্যান ধরে, স্মরণের গুল্লি ছাড়িলে পড়ে, মুর্শিদের স্বরূপ বস্তু মিলে। পবিত্র যে এই সংসারে বর্জক ধ্যানে সালাত করে, দেখিলে সমন পালায় ডরে, শাহজাহান কয় বেহেস্ত – দোযখের ভয় রাখি না।

আয় কে যাবি সংযমের স্কুলে, খাতা ছাড়া পরীক্ষা হবে, উত্তর পাবি নিরলে। মোরাকাবা ধ্যান করে, সালাত কর আকৃতি ধরে, সমাজ দেখাবার নামাজ পড়িয়া, আল্লাহ কেহ দেখছ নি। গুরুর কালবে কালব মিলাইয়া, রাসুল হইতে তাওয়াজ্জু আনিয়া, সর্বক্ষণ জিকির ধরিয়া, মোরাকাবা ছড়িও না।হুজুরী দীলেতে ডাইক, মোরাকাবায় সালাত কইর, জিন্দা থাকিতে মেরাজ করিও, সমস্যা থাকিবে না তোমার।রাজ হংসের ভাব ধরিয়া, জল ফেলিয়া দুধ খাইলে পরে, জীব ছাড়িয়া পরম ধরিয়া, স্বরূপ ধ্যানে থাকিবে পড়ে।

আল্লাহ আদম ভাগ করিয়া, ফানাতে যাইবে চলিয়া, বর্জকে দীদার করিয়া, পরমআত্মায় মিশো এইবার। সব ছাড়িয়া আস্তানা করিয়া, বসিয়া থাকি সংসার ছাড়িয়া, ধ্যান খেয়ালে ডাকিলে অনন্তরে, দেখা কইর মুর্শিদ দয়া করিয়া।সর্বস্ব যে ত্যাগ করিল, বর্জক ধ্যানে সেইজন রইল, নিজেকে নিজে যে চিনিল, শাস্ত্রীয়জ্ঞানের ঊর্ধ্বে ভাই। শাস্ত্রীয়জ্ঞান দিয়া সব মিলে না, বেলায়েত ছাড়া বর্জক হয় না, এলমে তাসাউফ ছাড়া, এলহাম পায় না। মানুষ ধরে, মানুষের সঙ্গ করে, প্যাক্টিক্যাল করে রূপ নেহারো, হৃদয়ে বর্জক রাখ না। সাধক শাহজাহানের  সঙ্গ হইল, সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে রইল, তাওয়াক্কুতে সময় কাটিল, মুর্শিদের বর্জক ছাড়িল না। নূরের ছবি যে দেখিলো, সব ছাড়িয়া পাগল হইল, সংসার ছাড়িয়া জঙ্গলে গেল, বর্জক ধ্যানে আমারে পাবি। বিবেক জ্ঞান ঠিক রাখিয়া, রূপ নেহারো ধ্যান বসিয়া, কেন ডাক বেহুশ হইয়া, বারে বারে উচ্চস্বরে। ভক্তি বিশ্বাস ঠিক রাখিয়া, গুরুর কর্ম কয়জনে করে, শরিয়ত ঠিক রাখিয়া, বর্জক ধ্যানে সালাত আদায় করিও।

মাটির গড়া নবী যে কহিল এই সংসারে, ছায়া ছিল না নবীর দেইখ কোরান পড়িয়া, হায়াতুল মুরসালীন নবীর রূপ ধর না, সালাত আদায় কইর বর্জক ধ্যানে। উফাতে নবী বিশ্বাস করিয়া, যে মুরীদ হয় না এই সংসারে, হায়াতুল মুরসালীন নবী ধরায় ধরে, বর্জক ধ্যানে থাইকো সর্বদায়। ঈমান আমল ঠিক রাখিয়া, যেমন পড়িল জলিল কাবায় যাইয়া, বর্জক ছাড়া শয়তানি সালাত করিয়া, পাইতে চাও বেহেস্তের চাবি। বক বিড়ালের খাপ ধরিয়া, বসে থাকি ধ্যান ধরিয়া, আমার আমিত্ব গেছি হারাইয়া, ঐ রূপ দেখি নয়নে।

মুখ আছে কথা কয় না, কারো ডাকে সাড়া দেয় না, নারী কড়ি ভালো লাগে না, থাকিতে চায় শুধু ধ্যানের ঘরে। সর্বস্ব যিনি ত্যাগ করিল, বর্জক ধ্যানে সেইজন রহিল, নিজেকে নিজে যিনি চিনিল, শাস্ত্রীয় জ্ঞানের ঊর্ধ্বে ভাই।স্বার্থ শূন্য ভালবাসা, কোনো বিষয়ে নাই লোভ লালসা, মোরাকাবায় থাকে বসিয়া, নির্জনে বসিয়া আছে। সে যদি না চায় ফিরে, থাকিব না আমি অভিমান করিয়া, সে আছে যেথায় থাকুক, মোরাকাবায় বসিয়াছি। সাধক শাহজাহান পাইয়া, সর্বক্ষণ মোরাকাবায় থাকিয়া, জাতে জাত আছি মিশিয়া, পরশের স্পর্শে যোগ মিলাইয়াছি। শাহজাহানের জীবন গেল, পরম আত্মার সন্ধানে রইল,

অলির সঙ্গে ধন্য হইল, থাকে সর্বক্ষণ মুর্শিদের ধ্যানে। সাধক শাহজাহান সব জানিয়া বুঝিয়া, শ্রীরূপে সব সপিয়া, জঙ্গলে বোবা হইয়া রইছে বইয়া, একধ্যানে খেয়ালে দীনরজনী। যোগেতে পিপাসা মিটে, বিয়োগে বাড়ে জ্বালা, যত ভাবি ততডুবি, অন্ত নাই এই পান্থশালা। রুস্তম হইল ভবে কালা, সব কথা বুঝানো যায় না, মুখের কথায় পরাগায়ণ হয় না, শাহজাহান কয় প্যাক্টিক্যালে যাও চলিয়া।শাহজাহান কয় মঙ্গল মিয়া, বিজ্ঞানী বই প্যাক্টিক্যাল করিয়া, আদ্যশক্তি ধর যাইয়া, কন্টকে রাখিয়াছে গিরি। শাহজাহান তাহারে পাইয়া, দেখিয়া চিত্র আকিয়া, হারাইয়া রহিয়াছে ধ্যানে বসিয়া, জগতের গুরুর হাসি দেখিয়া, চাওয়া পাওয়ার আবেক নাহি।

নাম জানি না ভাব ধরি না, মোরাকাবায় সালাত করি না, আদেশমতে কর্ম করি না, কৃপা হবে কেমন করিয়া।শাহজাহানে ধ্যান ধরিয়া চাহিয়া থাকি, দেখিলে প্রাণ জুড়ায় আখি, প্রাণে প্রাণে মাখামাখি, ত্রিতাপ জ্বালা থাকে না। শাহজাহান কয় ও সফিরে, মোরাকাবায় বসিলে পরে, মুশাহেদা পাইবে পরে, ধরার বাকি রইবে না। শাহজাহান কয় শাস্ত্র দেখ না, পিতা ছাড়া সন্তান হয় না। বর্জক বিনে নামাজ নিষেধ, কোরান পড়িয়া দেখ না। শাহজাহান বর্জক ধ্যানে, কাদিঁ বসিয়া বন কানে, আসিবে প্রাণের টানে, আমি জানি কেউ জানে না জগৎ জুড়ে।

শাহজাহান দমের ঘরে ফাঁদ পাতিয়া, বইয়া থাকি ধ্যান ধরিয়া, কেমনে আসে কেমনে যায় চলিয়া, শ্রীচরণ রাখছি প্রাণে। শাহজাহান কয় ভক্তিবিশ্বাস ঠিক করিয়া, রূপ নেহারো নয়নে, মোরাকাবায় থাকিয়া, এলহাম এর বানী রাইখো ধরিয়া। শাহজাহানের এই জীবনে, সময় কাটিল বনকাননে, ধ্যানে দিদার পাইব ভুবনে, বেহেস্ত দোযখের ভয় করি না। সাধক শাহজাহানের সঙ্গ হইল, রাতুল মুক্তা কিনে পথে রইল, তাওয়াকুতে সময় কাটলো, মুর্শিদের বর্জক ছাড়িল না।

(সংযমের সংবিধান কিতাব হতে সংগৃহীত)

– আর এফ রাসেল আহমেদ