আল্লাহর জিকিরই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।
পবিত্র কোরআনে জিকির সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন- “আল্লাহর জিকিরই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।” আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন- “তোমরা এমন ভাবে আল্লাহর জিকির করো যেন লোকে তেমাদের পাগল বলে।”
কোরআন আরো বলেছে: ”ওয়ালা জিকরুল্লাহি আকবার” অর্থাৎ, কোরআন বলেছে তথা আল্লাহ বলেছেন- “আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।” (সূরা: আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)
তাহলে এই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন তার স্মরণই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। তাহলে এই স্মরণ কখন কিভাবে করবো? আল্লাহপাক তার জাতি ইবাদত সর্ম্পকে কোরআনূল কারীমে তিনটি ইবাদতের কথা বলেছেন যেমন:- সালাত, তাসবীহ্ ও জিকির। অনেকে আবার ওয়াক্তিয়া সালাতকেই আল্লাহর একমাত্র স্মরণ বা ইবাদত বলে থাকেন। কিন্তু তাহাও আবার মাথার বোঝা ফেলিয়া দেওয়ার মতন করে দায়শারা ভাবে পড়ে থাকেন। ওয়াক্তিয়া সালাত নিদৃষ্ট সময়ের জন্য ফরজ ইবাদত। কিন্তু তাসবীহ, এবং জিকির ও যে কোরআনের ভাষায় ইবাদতের মধ্যে ফরজ তাহা কি কখন ও কোন শরিয়তের মোল্লা-মুন্সি এব্যাপারে তাগিদ দিয়ে থাকেন?
সময় পাইলে অনেকে হয়তো তাহা করিয়া থাকেন এবং তাও আবার উহাকে নফল ইবাদত মনে করে। কোরআনের হুকুমই যদি ফরজ হয় তাহলে আল্লাহ্পাক যেখানে তাসবীহ্ ও জিকিরের হুকুম দিতেছেন,তখন উহাকে কেন অবহেলা বা নফল মনে করা হইবে।
এ ব্যাপারে আল্লাহ্পাক তার কোরআন মাজিদে বলিতেছেন:-
“ইয়া আইয়্যু-হাল্লাজিনা আমানুয-কুরুল্লাহা জিকরন কাশিরাও ওয়া সাব্বিহু-হু-বুকরতাও ওয়া আছিলা।” (সুরা: আহযাব, আয়াত: ৪১-৪২)
“সকাল সন্ধ্যায় তোমরা অত্যাধিক পরিমানে জিকির ও তাসবীহ কর। আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। (সূরা: আনফাল, আয়াত: ৪৫)
“যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্বরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। (সূরা: রা’দ, আয়াত: ২৮)
এখন বলেন দেখি এব্যাপারে তরিকতের কোন পীর ব্যাতিত কোন শরিয়তের মোল্লা-মুন্সি তাহা কি কখনও বলেছেন? অনেকে বলতে পারেন ওয়াক্তিয়া সালাত (যা নামাজ নামে পরিচিত) আল্লাহ্পাকের জিকির ও তাসবীহ নয়? হাঁ অবশ্যই ইহা স্বীকার যোগ্য। কিন্তু ওয়াক্তিয়া সালাত নিদৃষ্ট ও অল্প সময়ে সম্পন্ন হয়। তাহলে এইটা(জিকরন কাশিরা) অর্থাৎ অত্যাধিক জিকির হয়-কিভাবে?
জিকিরের প্রতি আলোকপাত করতে গিয়ে রাসুল (সা.)-এর হাদিস শরিফে ইরশাদ হচ্ছে- “তুমি আল্লাহর জিকির এত অধিক পরিমাণে করো যেন লোকে তোমাকে পাগল বলে।
দলিলঃ
- মুসনাদে ইমাম আহম্মদ, হাদিস নং-১১৬৫৩।
- মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদিস নং-৯২৫।
- সহী ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৮১৭.
- শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৫২৩।
- মুসনাদে আবু ইয়ালা।
- তিবরানী শরীফ।
- আল মস্তাদরাক লিল হাকেম।
রাসুল (সা:) আরও বলেছেন- “যারা দল বেঁধে একত্রে বসে আল্লাহর জিকির করে তাদের ব্যপারে আল্লাহ ফেরেশতাদের কাছে প্রশংসা করেন।
দলিলঃ সহি মুসলিম, হাদিস নং-৬৬১১, খন্ড: ৬, পৃ: ২০৭ ই:ফা:।
এখন কোন কাজ যদি কেউ অহরহ করে তখন মানুষের নিকট তা এক ঘেয়েমি বা বিরক্তিকর মনে হয় তখন মানুষ উক্ত কাজের গভিরতা না মেপে পাগল বলে সম্বোধন করে থাকেন। এখন আল্লাহর জিকিরের বেলাও যদি অধিক পরিমাণে জিকির না করা হয় তাহলে লোকে তাকে পাগল বলিবে কি করে? আবার দেখুন মানুষ যখন ওয়াক্তিয়া সালাত পড়ে তখন নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করে থাকে। এর মধ্যে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মরদুদ শয়তান এসে তার মনকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দুরে সরে নিয়ে বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। এইভাবে নামাজের মধ্যে আল্লাহর স্মরণের পরিবর্তে যদি শয়তানের স্মরণে মন নিয়োজিত থাকে তাহলে সেটা অত্যাধিক আল্লাহর স্মরণ হয় কিভাবে?
অথচ কোরআন বলেছে- “ফাজকুরুনী আজকুর কুম ওয়া ইশকুরু’লি ওয়া’লা তাকফুরুন।” অর্থাৎ, “তোমরা জিকির (স্বরণ) করো আমাকেই, আমি তোমাদেরকে জিকির (স্বরণ) করিবো এবং শোকর করো আমার জন্য এবং তোমরা কুফরি করিও না।” (সুরা: বাকারা, আয়াত-১৫২।
এই আয়াতের ভাবার্থ হলো: তোমরা জিকির করো আধিক্য দ্বারা আমাতে ফানা হইয়া তথা আমাতে মিশে যাইয়া এবং নিজের নিজস্ব বা আমিত্ব হারাইয়া ফেলো, যাহাতে তোমার জিকির দ্বারা আমার জিকির হইয়া যায়। আমার শোকর করো তথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো কিন্তু কুফরী করিও না। তাহলে বিষয়টি দাঁড়ালো যে, আল্লাহকে হাজির নাজির রেখে তার নয়নে নয়ন রেখে তার মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেও এবং নিজেরে বলতে আর কিছু রেখনা সব আল্লাহর করে দাও। যদি এমনটি না হয় তাহলে দ্বিতীয়জন তথা শয়তান এসে মনকে বন জঙ্গলে নিয়ে যাবে আর শত রুপ ধ্যান মনের মধ্যে জাগ্রত করবে তখন হবে কুফরী।
লিখেছেনঃ সবুজ কাদেরী।