সংক্ষিপ্ত ওজিফা (দ্বিতীয় পর্ব)

নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকার শাজরায়ে মােবারক

১। সারওয়ারে কায়েনাত, মােফাখখারে মওজুদাত, হযরত আহমদ মুজতবা, মুহাম্মদ মােস্তফা (দঃ)।

২। আমিরুল মুমেনীন হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রাঃ)।

৩। হযরত ছালমান ফারছী (রাঃ)।

৪। হযরত কাছেম ইবনে মােহাম্মদ বিন আবুবকর সিদ্দীক (রাঃ)।

৫। হযরত জাফর ছাদেক (রাঃ)।

৬। হযরত বায়েজীদ বােস্তামী (কুঃ ছেঃ আঃ)।

৭। হযরত আবুল হােসেন খেরকানী (কুঃ ছেঃ আঃ)।

৮। হযরত আবু আলী ফারমুদী তুসী (কুঃ ছেঃ আঃ)।

৯। হযরত খাজা আবু ইয়াকুব ইউসুফ হামদানী (রঃ)।

১০। হযরত খাজায়ে খাজেগান আব্দুল খালেক আজদেনানী (রঃ)।

১১। হযরত শাহ খাজা মাওলানা আরিফ রেওগিরী (রঃ)।

১২। হযরত খাজা মাহমুদ আনজীর (রঃ)।

১৩। হযরত খাজা শাহ আজীজানে আলী আররামায়তানী (কুঃ ছেঃ আঃ)।

১৪। হযরত খাজা মাওলানা মােহাম্মদ বাবা ছাম্মামী ((কুঃ ছেঃ আঃ)।

১৫। হযরত শাহ আমীর সৈয়দ কালাল (রঃ)।

১৬। শামসুল আরেফিন হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ (রঃ)।

১৭। হযরত আলাউদ্দিন আত্তার (রঃ)।

১৮। হযরত মাওলানা ইয়াকুব চরখী (রঃ)।

১৯। হযরত খাজা ওবায়দুল্লাহ আহরার (রঃ)।

২০। হযরত শাহসূফী জাহেদ ওয়ালী (রঃ)।

২১। হযরত শাহ দরবেশ মােহাম্মদ (রঃ)।

২২। হযরত মাওলানা শাহসূফী খাজেগী এমকাঙ্গী (রঃ)।

২৩। হযরত খাজা মােহাম্মদ বাকীবিল্লাহ (কুঃ ছেঃ আঃ)।

২৪। ইমামে রাব্বানী, কাইউমে জামানী, গাউছে ছামদানী, রাফিউল মাকানী, হযরত শায়খ আহমদ ছিরহিন্দী, মুজাদ্দেদ আলফেসানী (রাঃ) ছাহেব।

২৫। হযরত শেখ সৈয়দ আদম বিন্নরী (কুঃ ছেঃ আঃ)।

২৬। হযরত ছৈয়দ আবদুল্লাহ আকবরাবাদী (রঃ)।

২৭। হযরত মাওলানা শেখ আবদুর রহীম মােহাদ্দেছ দেহলভী (রঃ)।

২৮। হযরত মাওলানা শাহ অলীউল্লাহ মােহাদ্দেছ দেহলভী (কু ছেঃ আঃ)।

২৯। হযরত মাওলানা শাহ আবদুল আজিজ দেহলভী (কুঃ ছেঃ আঃ)।

৩০। হযরত শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী (কুঃ ছেঃ আঃ)।

৩১। হযরত সুফী নুর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রঃ)।

৩২। হযরত মাওলানা শাহসুফী ফাতেহ আলী (কুঃ ছেঃ আঃ)।

৩৩। কুতুবুল এরশাদ হযরত মাওলানা শাহসূফী ওয়াজেদ আলী (রঃ)।

৩৪। আরেফে কামেল, মুর্শিদে মুকাম্মেল, খাজায়েনে রহমত, হযরত খাজা শাহসূফী মুহাম্মদ ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী নকশবন্দী মুজাদ্দেদী (কুঃ ছেঃ আঃ)।

৩৫। আরেফে কামেল, মুর্শিদে মুকাম্মেল, মুজাদ্দেদে জামান, হযরত মাওলানা শাহসূফী হাশমতউল্লাহ নকশবন্দী মুজাদ্দেদী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব।

ধাপঃ ২

হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) পীর কেবলাজান ছাহেব জামালপুর জেলার অন্তর্গত শেরপুর থানার পাকুরিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও সঙ্গতিসম্পন্ন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিশু বয়সেই তিনি মাতৃহারা হন। তাঁহার বাবা শাহ আলীমউদ্দীন ছাহেব এবং তাঁহার দাদী মাতৃহারা এই শিশুকে অপরিসীম ভালবাসা ও স্নেহ দিয়া প্রতিপালন করেন।

তাহার বয়স যখন পাঁচ/ছয় বৎসর তখন নােয়াখালী জেলার সুযােগ্য আলেম ও সূফী মাওলানা শরাফত আলী ছাহেবের নিকট তাঁহার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। জনাব শরাফত আলী ছাহেব অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ভবিষ্যতের এই মহান তাপসকে আরবী ও ফারসী ভাষা শিক্ষা দিতে থাকেন। অত্যন্ত মেধাবী এই বালক অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আরবী এবং ফারসী ভাষা আয়ত্ত করিয়া ফেলেন।

হযরত শাহসুফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) পীর কেবলাজান ছাহেবের বয়স যখন দশ বৎসর, তখন তাঁহার আব্বাজান তাঁহাকে বাংলা ও আসামের সর্বজনবিদিত মহান সূফী সাধক হযরত মাওলানা খাজা শাহসূফী ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেবের পাক দরবার শরীফে লইয়া যান এবং তাঁহার পাক কদমে তাঁহাকে সমর্পণ করেন এবং হযরত এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেবও তাঁহাকে গ্রহণ করেন। তখন হইতেই ভবিষ্যতের এই মহান সূফী সাধকের সাধনার জীবন শুরু হয়।

তিনি এই অল্প বয়স হইতেই তাঁহার পীরের খেদমতে সম্পূর্ণ রূপে আত্মনিয়ােগ করেন। হযরত খাজা এনায়েতপুরী (কুঃ) তাঁহাকে শরীয়ত, তরিকত, হকিকত ও মারেফাতের শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলেন। হযরত শাহসুফী এনায়েতপুরী (কুঃ) হযরত পীর কেবলাজানকে অত্যন্ত স্নেহ করিতেন এবং তিনিও তাঁহার পীরের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করিয়া আনন্দ লাভ করিতেন।

সুদীর্ঘ ত্রিশ বৎসরকাল এইভাবে আপন পীরের খেদমতে থাকাকালে তাহাকে অপরিসীম দুঃখ ও ত্যাগ তিতিক্ষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে হয়। পরবর্তী সময়ে পীরের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁহাকে কিছুকাল কলিকাতায় অবস্থান করিতে হয়। কলিকাতায় তিনি ৬নং হায়াত খান লেনে প্রফেসর সানাউল্লাহ ছাহেবের বাড়ীতে অবস্থান করিতেন। এই সময়ে অধ্যাপক ছাহেবের এক প্রিয় বন্ধু ফরিদপুর নিবাসী জনাব মুহসীন উদ্দিন খান ছাহেবের সঙ্গে হযরত ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) পরিচিত হন।

তখন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও রহস্যময় স্বপ্নের তাবীর (ব্যাখ্যা) করিতে যাইয়া উক্ত মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেবের সঙ্গে তাঁহার বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়। ইহার কিছুদিন পরে তিনি খান ছাহেবকে সঙ্গে লইয়া হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) -এর দরবারে গমন করেন। মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেবও খাজা এনায়েতপুরীর (রঃ) দরবারে আত্মনিবেদন করেন এবং তাহার মুরীদ রূপে গৃহীত হন। ইহার পর জনাব মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেব হযরত ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবকে সঙ্গে লইয়া ফরিদপুরে তাঁহার নিজের বাড়ীতে যান। ক্রমে তাঁহাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরাে গভীরতর হইতে থাকে।

পরবর্তী পর্যায়ে হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) -এর নির্দেশে হযরত ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) তাঁহার ভ্রাতুস্পুত্রীকে জনাব মুহসীন উদ্দীন খান ছাহেবের নিকট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন এবং হযরত খাজা এনায়েতপুরী ছাহেবের পরবর্তী নির্দেশে জনাব মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেব তাঁহার বড় ভাইয়ের কন্যাকে হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের নিকট বিবাহ দেন।

এই ভাবে তাহারা পরস্পর আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের বারাে বছর পরে হযরত ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের সহধর্মিনী ইন্তেকাল করেন। প্রথমা স্ত্রীর জীবদ্দশায় হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) ছাহেবের বাতেনী নির্দেশে হযরত ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) জনাব মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেবের অন্য এক ভাইয়ের মেয়েকে বিবাহ করেন।

সুদীর্ঘ বত্রিশ বছর হযরত পীর কেবলাজানের খেদমত করার পর তিনিও ইন্তেকাল করেন। এইখানে একটি কথা উল্লেখ্য যে, হযরত ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) তাঁহার পীরের নির্দেশ অনুযায়ী। ফরিদপুর জেলায় অবস্থান করিতে থাকেন এবং তরিকায়ে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া প্রচার করিতে থাকেন। হযরত এনায়েতপুরী (রঃ) তাঁহাকে নির্দেশ দেন, “তুমি ফরিদপুরে যাও, ফরিদপুর তােমার দাদা পীর সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রঃ) ছাহেবের দেশ, সেই দেশে তুমি সত্য তরিকা প্রচার করিতে থাক।”

পীরের আদেশ পালন করার জন্য হযরত পীর কেবলাজান ফরিদপুরে আগমন করেন। এবং মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেবদেরই একটি ছােট ঘর লইয়া তথায় অবস্থান করিতে থাকেন এবং সত্য তরিকা প্রচারের কাজ শুরু করেন। যেই ঘরটিতে হযরত পীর কেবলাজান প্রথম বসবাস শুরু করেন, সেই ঘরটির নাম ছিল “জাকের ক্যাম্প”। এই জাকের ক্যাম্পই পরবর্তীকালে প্রসারিত হইয়া “বিশ্ব জাকের মঞ্জিল” নামে পরিচিতি লাভ করে।

বাংলা ১৩৫৪ সন হইতে হযরত পীর কেবলাজান সত্য তরিকা প্রচারের কাজ আরম্ভ করেন। তাহার একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় ও আধ্যাত্মিক আকর্ষণে দলে দলে লােক সত্য তরিকায় দীক্ষিত হইতে থাকে। এইভাবে সুদীর্ঘ ৪৮ বৎসর প্রচারের পর সেই ক্ষুদ্র জাকের ক্যাম্প” বিশ্ব জাকের মঞ্জিল রূপে বর্তমানে সংঘাত সংকুল পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ জাকেরানের একমাত্র আশ্রয়স্থল। এবং তরিকত শিক্ষা কেন্দ্র রূপে গড়িয়া উঠিয়াছে।

ধাপঃ ৩

হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের উপদেশাবলী

(১) পীরের খাসলতে খাসলত ধর, তবেই ত্রাণ ও শান্তি।

(২) প্রত্যেক নিঃশ্বাসে কালব-এর মধ্যে ডুবিয়া থাক, নচেৎ হালাক হইবার ভয় আছে জীবনভর এবাদত করিয়া শেষ নিঃশ্বাসে আল্লাহকে ভুলিয়া মরিলে যাবতীয় এবাদত বিনষ্ট হইয়া যাইবে-বেঈমান হইয়া মরিবে। তাই আল্লাহর প্রিয়সকল ঈমানের সহিত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিবার জন্য আল্লাহর হুজুরে জীবনভর কাঁদিতেন। তােমরা ঈমানের সহিত মরিবার জন্য কতদিন কাঁদিয়াছ? মাতালের মত বেহুশ হইও না হুশিয়ার হও- অমুল্য জীবন আর ফিরিয়া পাইবে না

(৩) একমাত্র ইসলাম ধর্মের ভিতর দিয়াই খােদাপ্রাপ্তিতত্ত্ব হাসিল করা সম্ভব। আর এই কারণেই ইসলাম আল্লাহতায়ালার মনােনীত শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

(৪) যদি পরিপূর্ণ মুসলমান হইতে চাও তবে শরীয়তের যাবতীয় হুকম মানিয়া চল তাহা হইলে মারেফাতের জ্ঞান তােমাদের জন্য সহজ হইবে।

(৫) কোন ব্যক্তি, কোন পীর কিংবা কোন মানুষকে সিজদা করিও না -ইহা আল্লাহর নিষেধ।

(৬) বিশ্ব আত্মার সহিত স্বীয় আত্মার যােগসূত্র স্থাপন প্রতিটি মুসলমানেরই কর্তব্য এবং সেই বিদ্যাই সর্বোৎকৃষ্ট বিদ্যা যাহার দ্বারা আল্লাহতায়ালাকে সনাক্ত করা যায়।

(৭) কামেল পীরের তাওয়াজ্জুহ-এর বলে মুরীদের মুর্দা দিল জিন্দা হইয়া প্রকৃত সত্যকে অনুধাবন করিতে পারে। মুর্দা দিল জিন্দা হইলে ঐ দিলে আল্লাহ ও রাসুলের (দঃ) খাস মহব্বতের ফয়েয ওয়ারেদ হইতে থাকে। তখন মানুষ হুজুরী দিলে নামায আদায় করিতে সক্ষম হয়।

(৮) শুধু মুখে আল্লাহর নাম আর অন্তরে দুনিয়ার চিন্তা এমন নামাযে কোন ফল নাই। তাই রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলেন, নামাযই নয় হুজরী দিল ব্যতীত। সুতরাং নামায পরিবার সময় খেয়ালকে সব দিক হইতে ফিরাইয়া আপন কালবের ভিতর ডুবাইয়া রাখ। যতক্ষণ খেয়াল কালবে থাকিবে, ততক্ষণ আল্লাহকে মনে থাকিবে। যেইমাত্র খেয়াল কালব হইতে বাহির হইয়া যাইবে, তখনি আল্লাহকে ভুলিয়া যাইবে। নামাযের সময় যদি আল্লাহই মনে না থাকে, তবে কাহাকে সিজদা করিতেছ, তাহা চিন্তা করিয়া দেখ। অল্প সময়ের জন্যই তােমরা আল্লাহর হুজুরে দাঁড়াইয়া থাক, সুতরাং এই সামান্য সময়ের জন্য মন ও মুখ এক করিয়া আল্লাহতায়ালার সিজদা কর

(৯) রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর মহব্বতই প্রকৃত ঈমান। রাসুলুল্লাহ (দঃ) এর মহব্বত যাহার অন্তরে যতটুকু তাহার ঈমানও ততটুকু।

(১০) যদি তােমরা আল্লাহ রাসূলের মহব্বত অন্তরে সৃষ্টি করিতে চাও, তবে কামেল পীরের সাহচর্য সন্ধান কর।

(১১) কালব আল্লাতায়ালার ভেদের মহাসমুদ্র এবং এই কালবের মধ্যেই আল্লাতায়ালার নিদর্শনসমূহ লাভ করা যায়। ক্ষুদ্র একটি বটের বীজের মধ্যে যেমন একটি বটগাছ লুকাইয়া থাকে, তেমনি মানব বক্ষস্থিত কাল নামক ক্ষুদ্র একটি মাংসপিন্ডের মধ্যে আল্লাহর ভেদের দফতর লুক্কায়িত। নাফসের কুখাসলতের ফলে মানব বক্ষস্থিত কালব (যাহা স্বচ্ছ) কালাে হইয়া যায়। আলাতায়ালার ভেদের নিদর্শন সমূহ অনুধাবন করিতে হইলে এবং তাঁহার সহিত যােগসূত্র স্থাপন করিতে হইলে কালবকে আয়নার ন্যায় স্বচ্ছ করিতে হইবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাতায়ালার সহিত যােগসূত্র স্থাপন করিতে না পারিবে, ততক্ষণ তােমার আত্মা অতৃপ্ত থাকিবে এবং যখন তাঁহার সহিত যােগসূত্র স্থাপন করিতে পারিবে, তখন তােমার আত্মা এক অনাবিল শান্তির অধিকারী হইবে।

(১২) যেইমাত্র তুমি তােমার ময়লা দিলকে পীরে কামেলের পাক দিলের সহিত মিশাইতে পারিবে, সেই মুহূর্তে তােমার অন্ধকার দিল আলােকিত হইবে এবং আল্লাহর জিকিরে নাচিয়া উঠিবে।

(১৩) মুর্শিদে কামেলের পথই প্রকৃত সত্যের পথ এবং গযব হইতে বাচিবার পথ।

(১৪) আল্লাহকে চিনিবার পথে অনেক দুঃখ ও লােক-নিন্দা সহ্য করিতে হয়।

(১৫) উরস শরীফ’ জামে আম্বিয়া, জামে আওলিয়া ও তামাম পৃথিবীর মুমিন মুসলমানদের বিদেহী আরওয়াহ পাকের উপর সওয়াব রেছানীর মজলিস। উক্ত মজলিসে তােমরা শােরগােল ও বেয়াদবী করিও না। ইহা ওলী-আল্লাহগণের মজলিস। সুতরাং কেহ বেয়াদবী করিলে দুই দিন আগে বা পরে তকদিরে পােকা ধরিবে। তােমরা খােদার অন্বেষণে আসিয়াছ, তাই খেয়াল কালবে ডুবাইয়া আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকো।

(১৬) আল্লাহতায়ালা বলেন, “আল্লাহকে ভয় কর এবং তাহাকে পাইবার জন্য ওসিলা অন্বেষণ কর”। সেই ওসিলাই যামানার কামেল ওলীসকল, যেহেতু তাঁহাদের পাক আত্মার যােগাযােগে বিশ্ব আত্মার সান্নিধ্য লাভ হয়।

(১৭) বর্তমান যামানা অত্যন্ত মুসিবতের যামানা অদূর ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসিবে, যখন মানুষ জলে-স্থলে সবজায়গায় বিপদ ছাড়া আর কিছুই দেখিবে না। আখেরী যামানার গযব হইতে একমাত্র মুমিন লােক ব্যতীত কেহই বাঁচিতে পারিবে না। যদি তােমরা উক্ত গযব হইতে বাঁচিতে চাও, তবে তরিকতের কাজ সঠিকভাবে পালন কর এবং যামানার মুজাদ্দিদের দামনকে শক্তভাবে ধারণ কর।

(১৮) ওলীআল্লাহ সকল একটি জ্বলন্ত লৌহসদৃশ। এক খন্ড লৌহ যেইরূপ আগুনে পুড়িয়া আগুনের রং ধারণ করে, সেইরূপ আল্লাহর ওলীসকল আল্লাতায়ালার নূরের তাজাল্লিতে জ্বলিয়া আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হন।

(১৯) নিশির শেষভাগে সমগ্র সৃষ্টি জগৎ আল্লাতায়ালার দিকে ঘুরে এবং আল্লাতায়ালা এই সময় তাঁহার সৃষ্টির প্রতি রহমতের নজরে তাকান। তাই এই সময়টি অত্যন্ত মূল্যবান।

(২০) হে তামাম দুনিয়ার মুসলমান সকল! অমূল্য জীবন স্বপ্নের মত চলিয়া যাইতেছে। হুশিয়ার হও, নিশির শেষভাগে আল্লাতায়ালাকে ‘ইয়া আল্লাহু, ইয়া রাহমানু, ইয়া রাহীম’ -এই তিন নাম ধরিয়া ডাক। তবেই কল্যাণ সন্দেহ নাই।

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের “সংক্ষিপ্ত ওজিফা” (পৃষ্ঠা: ১১,১২,১৩,১৪,১৫,১৬,১৭,১৮,১৯ ) হতে

» সংক্ষিপ্ত ওজিফা (প্রথম পর্ব)

» সংক্ষিপ্ত ওজিফা (তৃতীয়-শেষ পর্ব)

আরো পড়ুন:

→ সংক্ষিপ্ত ওজিফা সবগুলো পর্ব

→ আদাবুল মুরিদের সবগুলা নসিহত একসাথে

→ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা-পদ্ধতির সব গুলো অধ্যায়

→ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতি আদব প্রদর্শন

→ মাজার জেয়ারতের তাৎপর্য ও নিয়মাবলীঃ

→ ফাতেহা শরীফ, খতম শরীফ এবং রহমত পালনের নিয়মাবলীঃ

→ অছিলা ধরিবার নিয়মঃ

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel