বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতি আদব প্রদর্শন

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতি আদব প্রদর্শন

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতি আদব প্রদর্শন: বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আল্লাহ ও রাসূলের স্বীকৃত দরবার। ইহা বিশ্ব মানবকুলের পবিত্র তীর্থ কেন্দ্র। তােমরা সর্বদাই এই দরবারের পবিত্রতা রক্ষা করিয়া চলিও।

(১) মনে রাখিও, পীরের দরবারের ধুলাবালি আশেকানদের চোখের সুরমা।

(২) দরবারকে সর্বদাই ইজ্জত করিও।

(৩) দরবারের দায়েরার মধ্যে নগ্ন পায়ে চলিও। পীরের দরবারে মুরীদ সবসময়ই গােলাম। গােলামকে গােলাম হিসাবেই থাকা কর্তব্য। তােমরা হয়ত শুনিয়া থাকিবে, হযরত হাসান বছরী (রঃ) ছাহেব যেদিন হযরত বশির হাফি (রঃ) ছাহেবকে তাওয়াজ্জ্বয় প্রয়ােগ করিয়া অলীর দরজায় পৌছাইয়া দেন সেদিন তিনি নগ্নপায়ে ছিলেন। পরের সম্মানার্থে, পীরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনার্থে হযরত বশির হাফি (রঃ) ছাহেব পরবর্তীতে প্রথিতযশা অলী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করা সত্ত্বেও জীবনে কখনও তিনি জুতা, সেন্ডেল পায়ে দেন নাই। পীরের প্রতি উক্তরূপ আদব প্রদর্শন করায় মহান খােদাতায়ালা তাঁহার উপর অতিশয় খুশী হন এবং তাহার মর্যাদা বহুগুণে বাড়াইয়া দেন। পরবর্তীতে তিনি যে সমস্ত পথ দিয়া হাটা-চলা করিতেন, গরু ছাগল, পশু-পাখী তথা কোন জীব-জানােয়ারই তাহার ইজ্জতের খাতিরে সেই পথে মল-মূত্র ত্যাগ করিত না।

(৪) দায়েরায় কোথাও কফ, থুতু ফেলিও না। থুতু ফেলিবার প্রয়ােজন হইলে দায়েরার বাহিরে ফেলিবে। আমার পীরের দরবারের দায়েরাতে। কখনও আমি কফ থুতু ফেলি নাই। অতীব প্রয়ােজন হইলে দায়েরার বাহিরে ফেলিয়াছি, অথবা, নিজ কাপড়ে ফেলিয়াছি; তথাপিও কখনও দায়েরার মধ্যে ফেলি নাই।

(৫) পীরের হুজরার দিকে কফ, থুতু ফেলিও না।

(৬) হুজরার দিকে পা লম্বা করিয়া বসিও না।

(৭) পীরের দরবারে সর্বদাই আল্লাহর ইয়াদে মশগুল থাকিও। শােরগােল করিও না।

(৮) নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় মনে করিও না। অন্যের চেয়ে নিজেকে বড় ভাবাই অহংকার। আর অহংকারই পতনের মূল।

(৯) যাহাকেই দেখ না কেন, তাহাকেই নিজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করিবে। যদি বয়জৈষ্ঠ্যকে দেখ, ভাবিও তিনি তোমার চেয়ে অধিক পরিমান ইবাদত করিয়াছেন, ফলে তােমার চেয়ে অধিক নেকি অর্জন করিতে সক্ষম হইয়াছেন। কাজেই তিনি তােমার চেয়ে উত্তম আর যদি বয়ঃকনিষ্ঠকে দেখ, ভাবিও সে তােমার মত এত অধিক গােনাহ করিবার সময় পায় নাই; তাই সে তােমার চেয়ে উত্তম। তােমাদের দেলকে যদি উক্ত অনুভূতির রংগে রংগিন করিতে পার তবে সর্বদাই তােমাদের উপর আল্লাহর রহমতের বারি বর্ষিতে থাকিবে।

(১০) কাহারাে সাথে খারাপ ব্যবহার করিও না। এই দরবারে বহু অলী-আল্লাহ ঘুরিয়া বেড়ায়। তােমরা তাহাদেরকে চেন না। কাজেই কখন তােমরা কাহার সহিত তিক্ত আচরণ করিবে, ফলে তােমাদের তকদিরে বরাঈ আসিবে। কাজেই ব্যবহারকে সর্বদাই মার্জিত রাখিও।

(১১) তােমরা পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ করিও না। খাজাবাবা কাহাকে কতটুকু ভালবাসেন, তােমরা তাহা জান না। হয়তঃ এমন একজনের সহিত তুমি ঝগড়া করিতেছ-যাহাকে খাজাবাবা তােমার চেয়ে অধিক ভালবাসেন। ফলে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হইবে।

(১২) যতটুকু বা যতখানি খেদমতই কর না কেন, তাহাতে গর্বিত হইও না। আল্লাহপাক অহংকারীকে ভালবাসেন না। সর্বদাই মনে করিও, তােমার খেদমত কবুলিয়তের যােগ্যতা পায় নাই। নিজেকে ছােট ভাবিও, তাহা হইলে আল্লাহ তােমার ইজ্জত বৃদ্ধি করিয়া দিবেন।

(১৩) আল্লাহ রাসূলের দরবার হিসেবে জাকের মঞ্জিলকে তােমরা ভালবাসিও। মনে প্রাণে মহব্বত করিও।

(১৪) প্রকাশ্যে বা গােপনে জাকের মঞ্জিলের কোন রূপ ক্ষতির চেষ্টা করিও না। যদি কর, আল্লাহর কোপানলে পতিত হইবে এমনকি যদি মনে মনেও ক্ষতি করার চিন্তা কর, তাহা হইলেও বিপদগ্রস্ত হইবে।

(১৫) শরীয়তের খেলাফ কোন কাজ দরবারে করিবে না অন্যকেও তাহা করিতে নিষেধ করিবে।

(১৬) বিশ্ব জাকের মঞ্জিল অলী-আল্লাহগণের মজলিশ। এখানে কোনরূপ বেয়াদবী করিও না। বেয়াদবী করিলে দুদিন আগে বা পরে তকদিরে পােকা ধরিবে। শুধু তাই নয়, বেয়াদবীর কারণে বংশানুক্রমে দূর্ভোগ আসিতে পারে। একবার এক লােক সুলতানুল আরেফীন, ছেরাজুস সালেকীন হযরত বায়েজীদ বােস্তামী (রঃ) ছাহেবের সহিত বেয়াদবী করিল। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই সে কুষ্ঠরােগে আক্রান্ত হইল। সেই রােগেই সে মারা গেল। তাহার সন্তানদের মধ্যে বংশানুক্রমে এই কুষ্ঠরােগ সংক্রামিত হইল। এই ঘটনাটি বােস্তামে ব্যাপক লােক-প্রসিদ্ধি লাভ করিল অর্থাৎ যুগের পর যুগ ধরিয়া এই ঘটনা লােকমুখে প্রচার হইতে লাগিল। একদা বােস্তাম নিবাসী এক সাধককে তদীয় মুরীদানেরা জিজ্ঞাসা করিলেন, “হুজুর, অপরাধ করিল একজন। আর ইহার শাস্তি তাহার বংশধরেরা পুরুষানুক্রমে ভােগ করিতেছে। ইহার কারণ কি? উক্ত বুজর্গ উত্তরে বলিলেন, “বাবা, তীরন্দায় যত অধিক শক্তিশালী হন, তাহার তীর তত দূর পর্যন্ত পৌছে।” কাজেই বেয়াদবী করিও না। আদব রক্ষা করিয়া চলিও। মনে রাখিও বেয়াদব আল্লাহর রহমত হইতে বঞ্চিত হয়।

(১৭) নিজেকে সব সময়ই মনে, মুখে ও কাজে নিকষ্ট চিন্তা করিবে। ছােট না হইলে বড় হওয়া যায় না। গাছের শিখরে উঠিতে হইলে নীচ হইতে চেষ্টা করিতে হয়। হযরত আদম (আঃ) মাটির তৈরী হিসেবে নিজেকে নিকষ্ট জানিতেন। তাই আল্লাহতায়ালা তাহার ইজ্জত বাড়াইয়া দিলেন, খলিফা হিসাবে মনােনিত করিলেন। অন্যদিকে শয়তান আগুণের তৈরী বলিয়া নিজেকে বড় মনে করিল, শ্রেষ্ঠ ভাবিল। তাই সে আল্লাহতায়ালার কোপানলে পড়িল, অভিশপ্ত হইল, পবিত্র দরবার হইতে বিতাড়িত হইল।

তােমাদের দেহের মধেও আগুন আছে। সেই আগুনের স্বভাবও আছে তাহা হইল অহংকার। সর্বদাই হুশিয়ার থাকিও, যেন আগুনের স্বভাব তােমাদর উপর প্রভাব ফেলিতে না পারে। তােমরা নিজেদেরকে মাটির মত করিয়া গড়িয়া তুলিও। দেখ, মাটিতে কত রংবেরং-এর চিত্তাকর্ষক ফুল হয়, সুস্বাদু ফল হয়; নিজেদের স্বভাবকে যদি মাটির মত বিনয়ী করিতে পার, তাহা হইলে মাটির তৈরী তােমাদের এই দেহের প্রত্যেক অণুতে কলেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মােহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর ফুল ফুটিবে, খােদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞানরূপ ফল ধরিবে।

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা-পদ্ধতি (পৃষ্ঠা-৪৯,৫০,৫১,৫২) হতে

আরো দেখুন

→ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা-পদ্ধতির সব গুলো অধ্যায়

→ আদাবুল মুরিদের সবগুলা নসিহত একসাথে

→ মাজার জেয়ারতের তাৎপর্য ও নিয়মাবলীঃ

→ দয়াল-নবী (সাঃ) এর খাছ হােব্ব এশক মহব্বতের ফয়েজ।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel