Lalon Sah (আলেক শহর) মোট ৫পর্বের – প্রথম পর্ব
লালন (জন্ম: ১৭৭২ খ্রি. – মৃত্যু: ১৭ অক্টোবর, ১৮৯০ খ্রি.), ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি; যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক।
তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘বাউল-সম্রাট’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
(পর্ব-১) নিম্নে তুলে ধরা হয়েছে
(১) যে জন জ্যান্তে মরে খেলতে পারে
সেই যাবে বেঁচে।
(২) যে জন অনুরাগী হয়, রাগের দেশে রয়
রাগের তালা খুলে সে রূপা দেখতে পায়।
(৩) পাতিয়ে সে ফাঁদের চোয়া
বেহাত বেটা দিচ্ছে খেয়া
লোভের চার খাটায়ে।
(৪) কতো কামী লোভী পরেছে ধরা
চার খাইবার আশে।
(৫) অনুরাগীর করণ, বিধি বিস্মরণ
লীলা নিত্যপুরে রাগের ধারা।
(৬) চাঁদে চাঁদ ঢাকা দেওয়া
চাঁদে দেয় চাঁদের খেওয়া দেওয়া।
(৭) মরিবে এক বেহাত বেটা
হাওয়ায় ফাঁদ পেতেছে।
(৮) সিরাজ সাঁইর হক্কের বচন
জন্মমৃত্যুর ফাঁদরে লালন
এড়াবি তুই কিসে।
(৯) কী বলবো সেই ফাঁদের কথা
কাক মারিতে কামান পাতা
আরম্ভ করেছে।
(১০) স্বরপের ঘরে অটলরূপ বিহারে
চেয়ে দেখ না তোরা,
ফনি মণি জিনি রূপের বাখানি
আছে দুইরূপে একরূপ হল করা।
(১১) দেখলেরে চমৎকার প্রাণ বাঁচা ভার
সেই ফাঁদে যে পরেছে।
(১২) যে জন পঞ্চতত্ত্ব যজে লীলারূপে মজে
সেই জানে রসিক রাগের ধারা।
(১৩) আপনি নিরঞ্জনস মণি
আপনি কুদরতের ধনী।
(১৪) আছে রূপের দরজায়, শ্রীরূপ মহাশয়
রাগের তালাচাবি তাঁর হাতে সদাই।
(১৫) আছে অটলরূপে সাঁই, ভেবে দেখলাম তাই
সেই রূপের নিত্যলীলা নাই।
(১৬) যে জন পঞ্চতত্ত্ব যজে লীলারূপে মজে
সেই জানে রসিক রাগের ধারা।
(১৭) যে জন অনুরাগী হয়, রাগের দেশে রয়
রাগের তালা খুলে সে রূপা দেখতে পায়।
(১৮) অনুরাগীর করণ, বিধি বিস্মরণ
লীলা নিত্যপুরে রাগের ধারা।
(১৯) আছে রূপের দরজায়, শ্রীরূপ মহাশয়
রাগের তালাচাবি তাঁর হাতে সদাই।
(২০) অধীন লালন বলে বিপদ আমার
গুরুচাঁদকে ভুলে।
(২১) সে চাঁদেতে চাঁদের আসন
রেছেছে ঘিরে।
(২২) ভেবে কয় লালন, সে হয় কোনজন
কারে দেখলেন সাঁই নয়ন খুলে।
(২৩) দেখে সেই আজব সুরত
আপনি খুশি হলেন পাকজাত।
(২৪) দেখলো কি স্বপ্ন, হলো সে মগ্ন
কোনরূপ দেখে নিরঞ্জন ভোলে।
(২৫) তোরা দেখ নারে মন দিব্য নজরে।
চারি চাঁদে দিচ্ছে ঝলক মণিকোঠার ঘরে।
(২৬) কেবা তাঁর দোসর, পায় সে খবর
খোদার অঙ্গ কে খণ্ড করিলে।
(২৭) জমিনেতে ফলছে মেওয়া
ঐ চাঁদের সুধা ঝরে।
(২৮) শ্রীরূপ অনুগত যে হবে, তালা চাবি পাবে
লালন বলে অধর ধরেছে তারা।
(২৯) নয়ন চাঁদ প্রসন্ন যাঁর
সকল চাদ দৃষ্ট হয় তার হয়রে।
(৩০) এ কিরে সাঁইয়ের আজব লীলে
আমার বলতে ভয় হয়রে দেলে।
(৩১) হলে সে চাঁদের সাধন
অধর চাঁদ হয় দরশন হয়রে।
(৩২) আবার মরা মরায় সাধন করে
মরা ধরে খায়।
(৩৩) যেতে পথে কামনদীতে
পাড়ি দিতে ত্রিবিনে।
(৩৪) দাই মেরে ফয়তা করে
নাপিত মেরে শুদ্ধ হয়রে।
(৩৫) বাপের জন্ম ছেলে দেখলো
তাতে কি ফল হলো।
(৩৬) কত ধনীর ভারা যাচ্ছে মারা;
পইড়ে নদীর তোড় তুফানে
দেখো পইড়ে নদীর তোড় তুফানে।
(৩৭) উজান তরী যাচ্ছে বেয়ে;
তাঁরাই স্বরূপ সাধন জানে
ওরে তাঁরাই স্বরূপ সাধন জানে।
(৩৮) আমি মনি হারা ফনির মতন;
হারা হলেম দিন নিধনে
আমি হারা হলেম দিন নিধনে।
(৩৯) দেখো দিবারাতি নাই সেখানে;
মনের মানুষ যেখানে
কী সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে।
(৪০) ভবে আশেক যার
লজ্জা কী তাঁর
সে খোঁজে দীনবন্ধুরে।
(৪১) লালন ফকির ভেবে বলে
দেখলাম মরা ভাসে মরার ঘাটে।
(৪২) সে খোঁজে প্রাণভরে;
দীনবন্ধু প্রাণসখা
দেখা দাও মোরে।
(৪৩) শয়নে স্বপনে কভু সে
রুপ ভুলতে নারে।
(৪৪) আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবারাতি নাই সেখানে।
(৪৫) আশেকের ভেদ মাশুক জানে
জানে না আর অন্য জনে।
(৪৬) সদাই থাকে রুপ বদনে;
রুপের মালা হৃদয়ে গেঁথে
ভাসে প্রেমসাগরে।
(৪৭) মরণের ভয় নাইকো তার
রোজ কেয়ামত রোজের মাঝার
মোর্শেদ রুপটি করে সে সার।
(৪৮) তাজমালা সব ফেলে লালন
যায় ভবসিন্ধু পারে।
(৪৯) বেঁজো নারীর ছেলে ম’লো এ কী হলো দায়
মরা ছেলের কান্না দেখে মোল্লাজী ডরায়।
(৫০) ছেলে ম’লো তিন দিন হলো
ছেলের বাবা এসে জন্মাইলো।
(৫১) রসিক সুজন ভাইরে দুইজন
বসে আছ কার আশে,
তোর বাড়িতে অতিথ এল
দুই ছেলে আর এক মেয়ে।
(৫২) কী সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে।
(৫৩) মোল্লা মেরে কাল্লা কাটে
জানাজা পড়ায়।
(৫৪) ঘটে পটে সব জায়গায়
আছে আবার নাই বলা যায়।
(৫৫) ভবের পর এক সতী ছিল
বিপাকে সে মারা গেল,
মরার পেটে গর্ভ হল
এই ছিল তার কপালে।
(৫৬) গাছের ছিলো চার ডাল
হলো হাজার সাল,
এক এক ডাল, কি হাল
ছিলো তাঁর এতোই দূরে।
(৫৭) বাহ্য কাজ ত্যাজ্য করে
নয়ন দুটি রুপের ঘরে
সদাই থাকে রুপনিহারে।
(৫৮) মরা যখন কবরে নেয়
তিনটি সন্তান তার তখন হয়,
তিনজনা তিন দেশেতে যায়
মরা লাশ ফেলে রেখে।
(৫৯) মরার যখন মাংস পচে
তিনজনাতে বসে হাসে,
অন্য লোকে ঘৃনা করে
লালন তুলে নেয় কোলে।
(৬০) মহাসন্ধির উপর ফেরে সে।
মনরে ফের সদাই যার তল্লাশে।
(৬১) চন্দ্র যে প্রকার, উদয় জলের পর
অমনি সে বিরাজে এই মানুষে।
(৬২) অন্ধকারে আর ধন্ধকারে
আর ছিলো কুত্তকারে।
(৬৩) লালন বলে ম’লাম জ্বইলে
ম’লাম আমি নিশিদিনে।
(৬৪) সাঁই আমার অটল পদার্থ
নাইরে তাঁর জরামৃত।
(৬৫) এলাহি আল আলমিন, সিদরাতুল একিন
কুদরতি গাছ পয়দা করে।
(৬৬) শুনি ঘাড়ের উপরে মানুষ
মুর্শিদরূপে রয়েছে।
(৬৭) সত্তর হাজার সাল ধরে
গাছের ‘পরে সাধন করে,
বারিতলায় হুকুম হলো, নসূর ঝরিল
ঝরিয়ে দুনিয়া সৃষ্টি করে।
(৬৮) এইদিন সাঁই ডিম্বুভরে
ভেসেছিলো নৈরাকারে,
লালন বলে হায় কী খেলা, কাদের মাওলা
করেছে লীলা অপার পারে।
(৬৯) স্বরপের ঘরে অটলরূপ বিহারে
চেয়ে দেখ না তোরা।
(৭০) ধরবো বলে এলাম আমি
খুঁজে পাইনে তাঁর দিশে।
(৭১) আমি শুনবো কথা তোমার তরে
তাঁর উপরে কে আছে বসে।
(৭২) আমার জনম গেলো তোমার আশে
তুমি দাও হে দেখা অন্তিমে এসে।
(৭৩) আছে অটলরূপে সাঁই, ভেবে দেখলাম তাই
সেই রূপের নিত্যলীলা নাই।
(৭৪) অধিন লালন ভেবে বলে
পেলাম না তোমার দিশে।
(৭৫) না ছিল আসমান জমিন পবনপানি
সাঁই তখন নিরাকারে।
(৭৬) ফনি মণি জিনি রূপের বাখানি
আছে দুইরূপে একরূপ হল করা।
(৭৭) আব, আতশ, খাক, বাত কিসে গড়ে
বলো গুরু সত্য করে,
হাওয়া পবন এলো কোন কারে
পানির জন্ম হয় কিসে।
(৭৮) যদি জরামৃত হয়, তবে অটল পদ না কয়
ফকির লালন বলে তা কয়জন বোঝে।
(৭৯) যে জন পঞ্চতত্ত্ব যজে লীলারূপে মজে
সেই জানে রসিক রাগের ধারা।
(৮০) রসিক যাঁরা চতুর তাঁরা
তাঁরাই নদীর ধারা চেনে।
(৮১ ) আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবারাতি নাই সেখানে।
(৮২) শ্রীরূপ অনুগত যে হবে, তালা চাবি পাবে
লালন বলে অধর ধরেছে তারা।
(৮৩) নূর টলে হলো নৈরাকার
নিরঞ্জনের স্বপ্ন কী প্রকার।
চলবে….