পীরের প্রতি মুরীদের আদব ও করনীয় বিষয়াদির বিবরণ।
কামেল পীরের প্রতি যথার্থ আদব প্রদর্শনার্থে মুরীদের করণীয় বিষয়াদির বিবরণঃ-
‘কামেল পীর’ পাওয়া অতি দুষ্কর। ভাগ্যগুণে কামেল পীর মিলে। আশেক সকল বলেন, “অতি ভাগ্যের জোরে মোর্শেদের বোল”। ভাগ্যগুণে কামেল পীর পাইলে তাঁহার প্রতি আদব প্রদর্শন বা আদব রক্ষার উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর মুরীদের সজাগ দৃষ্টি রাখা একান্তই কর্তব্য।
❖ নিজ পীরের প্রতি এমন বিশ্বাস রাখিবে যে, “পীর ভিন্ন অন্য কেহই আমাকে খোদাতায়ালা পর্যন্ত পৌঁছাইয়া দিতে পারিবে না।” নিজ পীর ভিন্ন আরও অনেক পীর থাকিতে পারে। কিন্তু কখনও তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে না। অর্থাৎ একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা স্বীয় পীর ভিন্ন অন্য কোন দিকে যেন না যায়। তরিকতের পরিভাষায় ইহাকে “তৌহিদে মতলব” বলে। যে মুরীদের “তৌহিদে মতলব” নাই, সে কেবল বিভিন্ন পীরের দরবারে ঘুরিয়া বেড়ায় কিন্তু মাঞ্জিলে মাকছুদে পৌঁছানো তাহার পক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব হয় না।
❖ পীর ধরার মুখ্য উদ্দেশ্যই খোদাতায়ালাকে অনুসন্ধান করা। তাই পীরের নিকট খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞান ব্যতীত অন্য কিছু তলব করিতে নাই। অধিকাংশ মানুষই পীরের নিকট বায়াত হইয়া দুনিয়াকে অনুসন্ধান করে। দুনিয়ার যশ-খ্যাতি, মান-সম্মান, ইজ্জত-হুরমত, ধন-সম্পদ, অর্থ-কড়ি, গাড়ী-বাড়ী ইত্যাদির আশাতেই পীর ধরিয়া থাকে। অথচ তাহারা ভাবিয়া দেখে না যে, পীরে কামেল আল্লাহর পক্ষ হইতে নির্বাচিত হাদী বা পথ প্রদর্শক। দুনিয়ার বন্ধন মুক্ত করিয়া, নাফসের শৃংখল মুক্ত করিয়া তাঁহারা মানবজাতিকে আল্লাহমুখী করিবার জন্যই দুনিয়ায় আসেন। তাঁহাদের নিকট দুনিয়া তলব করার মত বোকামী আর কি হইতে পারে? কাজেই সর্বদাই খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞান বা মারেফত অর্জনের জন্য দেলের মুখকে পীরের দিকে মোতাওয়াজ্জুহ’ রাখিবে। মারেফাতের চেয়ে বড় নেয়ামত আর কি থাকিতে পারে?
❖ সর্বাবস্থায় দেলকে পীরের দিকে রুজু রাখিবে। আল্লাহর পক্ষ হইতে যত রকমের নেয়ামত ও ফয়েজ দুনিয়াতে আসে-তাহা দয়াল নবী (সাঃ) এর পাক দেল’ হইয়া পীরানে পীরদের দেলের অছিলায় আপন পীরের দেল হইয়া মুরীদের দেলে আসে। যেহেতু যাবতীয় ফয়েজ পীরের দেল বাহিত হইয়া মুরীদের দেলে আসে-কাজেই মুরীদকে নিজের দেল পীরের দেলের দিকে সার্বক্ষণিক মুতাওয়াজ্জুহ রাখিতে হয়।
❖ আকাশ হইতে সাগরে এক প্রকার বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টি হওয়ার পূর্বে সাগরের ঝিনুকদের দেলে এলহাম হয়। ঝিনুকসকল সাগরের পানির উপরের স্তরে আসিয়া মুখ খুলিয়া এক বিন্দু বৃষ্টির আশায় আকাশের পানে তাকাইয়া কাঁদিতে থাকে। স্বাতী নক্ষত্র যোগে আকাশ হইতে এক বিন্দু বৃষ্টির পানি-যে ঝিনুকের কান্না আল্লাহর নিকট পছন্দ হয়, তাহার মুখে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ঝিনুকটি মুখ বন্ধ করিয়া সাগরের গভীর তলদেশে ডুব দেয়। সেই ঝিনুকের পেটে মূল্যবান মুক্তা পয়দা হয়। কাজেই যে মুরীদ নিজ দেলে মারেফাতের মুক্তা পয়দা করিবার ইচ্ছা রাখে, তাহার কর্তব্য পীরের দিকে সদা সর্বদা দেলকে মুতাওয়াজ্জুহ রাখা।
❖ পীরের সম্মুখে দন্ডায়মান অবস্থায় পীর ভিন্ন অন্য কোন দিকে তাকাইবে না। কাহারো সাথে পীরের সম্মুখে কথাবার্তা বা গল্পগুজব করিবে না।
❖ পীরের আহবান শোনা মাত্রই হাতের কাজ ফেলিয়া পীরের সমীপে উপস্থিত হইবে। কোন মুরীদ যদি খাইতে বসে এবং তাহার খাবারের লোকমাপূর্ণ হাত যদি তাহার মুখ ও থালার মধ্যখানে থাকে-এমন সময়ও যদি পীরের ডাক পড়ে, তবে তৎক্ষণাৎ খাবার পরিত্যাগ পূর্বক পীরের নিকট উপস্থিত হইবে।
❖ পীর কোন কাজে আদেশ করিলে অত্যন্ত মহব্বতের সাথে তাহা যথা শীঘ্র সম্পন্ন করিবে। একদা আমাকে পীর কেবলাজান হুজুর এনায়েতপুর দরবার শরীফের নিকটস্থ এক বাজার হইতে একটি সদাই (পণ্য) আনিতে আদেশ করিলেন। পীরের হুকুম পালনে এই অধীনের কোন অলসতা ছিল না। আমি দৌড়াইয়া বাজারে যাইয়া সদাই (পণ্য) ক্রয়পূর্বক পুনরায় দৌড়াইয়া পীরের সমীপে হাজির হইলাম। ইহা দৃষ্টে পীর কেবলাজান আমার প্রতি অত্যন্ত প্রীত হইলেন এবং বলিলেন, “বাবা, তুমি কি বাতাসের সাথে চল? এইমাত্র তোমাকে সদাই আনিতে পাঠাইলাম?” আমি নিশ্চুপ মাথা নীচু করিয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম।
❖ কখনও পীরের নির্দেশিত কর্ম করিতে উচিৎ-অনুচিত চিন্তা করিবে না। পীরের আদিষ্ট কর্ম করিতে ভাল-মন্দ চিন্তা করিতে নাই।
❖ খোদাঅন্বেষী মুরীদকে পীরের সান্নিধ্যে থাকিতে হইবে। সান্নিধ্যে বা সাহচর্যে না থাকিলে এই জ্ঞান অর্জন করা যায় না। হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের চার পুত্রের মধ্যে একমাত্র মাসুম কামাল (রঃ) ছাহেব তাঁহার সান্নিধ্যে অধিক সময় থাকিতেন। তাই মুজাদ্দেদ ছাহেবও ইন্তেকালের পূর্বে মাসুম কামাল (রঃ) এর দেল মারেফাতে ভরিয়া দিয়া গেলেন।
❖ পীরের দরবার হইতে বিনা হুকুমে নিজ বাড়িতে বা অন্য কোথাও যাইবে না। পীরের দরবারে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে কোন বাড়ীতে মেহমান হইবে না। অথবা পথিমধ্যে কোথাও অযথা বিলম্ব করিবে না। আমি যখন পীরের দরবারে যাইতাম, যদি পথিমধ্যে রাত্রি হইত, তবুও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোন আত্মীয়ের বাড়ীতে মেহমান হইতাম না।
❖ মুরীদ নফল নামাজে মগ্ন থাকাবস্থায় যদি পীরের ডাক শুনিতে পায়, তবে নামাজ ছাড়িয়া পীরের নিকট হাজির হইবে। “ইছলাহুল মোমেনীন” কিতাবে বর্ণিত আছেঃ একদা হযরত কুতুবুদ্দিন কাকী (রঃ) ছাহেব নফল নামাজে মগ্ন ছিলেন। এমন সময় তাঁহার মোর্শেদ হযরত মঈনুদ্দিন চিন্তী (রঃ) ছাহেব তাঁহাকে ডাকিলেন। ডাক শুনিবামাত্র তিনি মধ্যখানে নামাজ পরিত্যাগ করিয়া মোরশেদের খেদমতে হাজির হইলেন। হযরত খাজা চিন্তী (রঃ) ছাহেব তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাবা, তুমি কি কোন কাজে মশগুল ছিলে?” জবাবে কুতুবুদ্দিন কাকী (রঃ) ছাহেব বলিলেন, “জ্বী হুজুর, আমি নফল নামাজ পড়িতেছিলাম। হুজুরের আহবান শোনামাত্রই নামাজ ছাড়িয়া ছুটিয়া আসিয়াছি।” হযরত চিন্তী (রঃ) ছাহেব বলিলেন, “তুমি ভাল কাজ করিয়াছ। ইহা নফল নামাজ অপেক্ষা উত্তম।”
❖ পীরের তরফ হইতে কোন বস্ত্র বা অন্য কোন দ্রব্য বা পীরের ব্যবহৃত কোন জিনিস তাবারুক হিসাবে পাইলে ইহাকে মহামূল্য রত্ন মনে করিবে এবং তরিকতের উন্নতির স্বার্থে তাহা ব্যবহার করিবে।
❖ নিজ পীরের সম্মুখে কখনও অন্য পীরের প্রশংসা করিবে না। ইহা আদবের খেলাফ। একদা হযরত উমর ফারুক (রাঃ) ছাহেব রাসূলে পাক (সাঃ) এর সম্মুখে হযরত মুসা (আঃ) এর প্রশংসা করিয়াছিলেন। ইহাতে রাসূলে করীম (সাঃ) হযরত উমর ফারুক (রাঃ) ছাহেবের উপরে রাগান্বিত হইয়া বলিয়াছিলেন, “যদি মুসা (আঃ) বর্তমানে জীবিত থাকিতেন, তবে আমার দীন গ্রহণ করিতেন।”
❖ পীরের কোন হুকুম যদি শরীয়তের খেলাফ মনে হয়, তবুও বিনা দ্বিধায় তাহা পালন করিবে। তবেই কল্যাণ। কারণ কামেল পীর যাহা কিছুই করেন না কেন, তাহা এল্হামের নির্দেশে করেন। কাজেই শরীয়তের খেলাফ কোন কর্মই কোন কামেল করিতে পারেন না। যখন বুঝ খুলিবে, তখন বুঝিতে পারিবে। মূল কথা, পীরের আদেশ বিনা দ্বিধায় পালনের ভিতরেই মুরীদের মঙ্গল নিহিত। মহা কবি হাফেজ কি সুন্দরই না বলিয়াছেন,
“ব মায়ে সুজ্জাদা রুংগীকুন গারব পীরে মগা গুয়েদ, কে ছালেক বেখবর না বুয়াদ যে রাহ্ ও রেছমে মঞ্জেল হা।”
অর্থাৎ – “তোমার পীর যদি তোমাকে শরাব দিয়া জায়নামাজ ধুইয়া তদ্ উপরে নামাজ পড়িতে বলেন, তুমি তাহাই কর। কারণ মোকাম মঞ্জিলের পথ তোমার চেয়ে তোমার পীরই ভাল জানেন।”
❖ সর্বাবস্থায় অর্থাৎ চলা-ফেরা, উঠা-বসা, পানাহার, শয়ন-উপবেসন ইত্যাদিতে পীরকে অনুসরণ করিবে। ইহাতে বহু মঙ্গল লুক্কায়িত। আমার পীর কেবলাজান হযরত খাজাবাবা এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেব বলিয়াছেন, “তোমরা পীরের খাছলতে খাছলত” ধর-তবেই ত্রাণ ও শান্তি।”
❖ ‘পীরের সহিত সাক্ষাতান্তে হোজরা’ হইতে বাহির হওয়ার সময় এমন ভাবে প্রস্থান করিবে যেন, পীরের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিতে না হয়।
❖ পীরের কার্যক্রম দেখিয়া মাসলা-মাসায়েল শিখিবে। মাসলা-মাসায়েলের মাপকাঠিতে পীরের কার্যকলাপকে বিচার করিবে না।
❖ মোরাকাবা হালতে বা স্বপ্নযোগে বা কাশফে অলৌকিক কিছু দেখিলে প্রয়োজনে ইহার তাৎপর্য পীরের নিকট হইতে জানিয়া লইবে। কখনও নিজের স্বপ্ন বা কাশফের উপরে নির্ভর করিবে না। যদি কর, তাহা হইলে লাইনচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
❖ স্বপ্নে বা মোরাকাবার মাধ্যমে পীরের তরফ হইতে কোন নেয়ামত পাইলে কখনও পীর ভিন্ন অন্য কাহারও নিকট প্রকাশ করিবে না।
❖ স্বপ্নে, মোরাকাবায় বা দিব্যদৃষ্টিতে পীরের দয়ায় এমন বহু আশ্চর্য তত্ত্ব মুরীদের নিকট প্রকাশ পাইতে পারে যাহা সাধারণ জ্ঞান বা বোঝাবুঝির পরিপন্থী। এমন কোন তত্ত্ব আদৌ কাহারো নিকট প্রকাশ করিবে না। যদি কর, লোকে তাহা না বুঝিতে পারিয়া তোমাদেরকে পাগল বলিবে।
❖ পীরের দরবারে নগ্নপায়ে চলিবে। ইহাই মুরীদের জন্য উত্তম। পীরের নিকট মুরীদ সব সময়ই ভিখারী বা মিসকিন। আর মিসকিনকে মিসকিন হালতেই থাকা উচিৎ। পীরের দায়েরাকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা মুরীদের কর্তব্য।
এখানে জাকেরান সকল আল্লাহর জেকের করে। মনে রাখিবে, পীরের দরবারের ধুলাবালি আশেকানদের চোখের সুরমা। কাজেই পীরের দরবারের ইজ্জতের খাতিরে তথায় জুতা-সেন্ডেল পায়ে না দেওয়াই উত্তম।
❖ মুরীদ স্বপ্নে, মোরাকাবায় বা কাশফে কখনও কখনও আপন পীর ভিন্ন অন্য কোন পীর বা মাশায়েখ হইতে ফয়েজ আসিতে দেখিয়া থাকে। মুরীদের খেয়াল স্বপ্নে দৃষ্ট পীরের দিকে ধাবিত হয়। যেমন কোন মুরীদ হয়তো কাশফে বা স্বপ্নে দেখিল যে হযরত গউস পাক (রঃ) ছাহেব তাহাকে তাইদ-মদদ প্রদান করিতেছেন। ইহার রহস্য বুঝিতে না পারিয়া মুরীদ নিজ পীর হইতে খেয়াল হয়তো হযরত গউস পাক (রঃ) ছাহেবের প্রতি মুতাওয়। জুহ করে। ইহা মুরীদের জন্য পদস্খলনের এক অধ্যায়। ফয়েজ-বরকত, তাইদ-মদদ যেখান হইতেই আসুক না কেন, যে পীর মাশায়েখগণ হইতেই আসুক না কেন-তাহা যে আপন পীর হইতেই আসিতেছে-সেই খেয়াল মুরীদের সব সময়ই রাখা উচিৎ। স্বপ্নে বা কাশফে পূর্ববর্তী যে সাধককেই দেখা যাক না কেন, তাহা মূলতঃ আপন পীরের লতিফার বিকাশ মাত্র। আপন পীরের লতিফা সমূহের কোন কোন লতিফা ঐ রকম পূর্ববর্তী কোন ওলী-আল্লাহর ছুরাতে এমন কি নবীদের ছুরাতেও মুরীদের নিকট দেখা দিতে পারে। কারণ কামেল পীর সকলের সমষ্টি। কামেল পীরের তেত্রিশ (৩৩) কোটি লতিফা আছে। একজন কামেল একই সঙ্গে তেত্রিশ কোটি সাধকের ছুরাতে মুরীদানদেরকে স্বপ্নে বা কাশফে ফয়েজ প্রদান করিতে সক্ষম। ইহাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। আল্লাহ প্রদত্ত বহু ক্ষমতার মধ্যে ইহা সামান্য এক নিদর্শন।
কাজেই মুরীদ স্বপ্নে যে সাধককেই দেখুক না কেন-তাহা মূলতঃ আপন পীরের লতিফার বিকাশ।
❖ খোদাকে পাওয়াই প্রকৃত মুরীদবর্গের একমাত্র কামনা হওয়া উচিত। এই উদ্দেশ্য হাসিল করিতে হইলে মনে খোদাতায়লার প্রেম হাসিল করিতে হইবে। সতত আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকিতে হইবে; এমনভাবে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকিতে হইবে যে আল্লাহ ছাড়া অন্য বিষয়াদির চিন্তা যেন দেলে প্রবেশ করিতে না পারে।
❖ সকল সময় পীরের খেদমতে থাকিয়া মন খোদা প্রেমে উদ্বেলিত করিতে হইবে। সংসর্গই প্রেম সৃষ্টির একমাত্র পথ। কামেল পীরের সংসর্গ ও সান্নিধ্যই আল্লাহতায়ালার প্রেম সৃষ্টির একমাত্র উপায়। কারণ কামেল পীরের চরিত্র আল্লাহপাকের চরিত্রে গঠিত।
মাওলানা রুমী (রঃ) ছাহেব বলিয়াছেন,
“এক যামানে ছহব্বতে বা আউলিয়া, বেহৃতর আয ছাদ সালা তা’আতে বেরিয়া।”
অর্থাৎ-“এক মুহূর্ত কোন কামেলের সংস্পর্শে থাকা একশত বৎসরের নফল বেরিয়া ইবাদতের চেয়ে উত্তম।”
❖ পীরের সান্নিধ্যে থাকিতে হইলে নিজের দেলকে সর্বপ্রকার শয়তানী খেয়াল ও কুপ্রবৃত্তি হইতে সতর্ক ও পবিত্র করিতে হইবে। প্রেমের আকর্ষণ দ্বারা পীরের দেল হইতে খোদাতায়ালার নূর নিজ দেলে লাভ করাই একমাত্র উদ্দেশ্য হইবে। যদি মুরীদ আপন পীরের নিকটে থাকে তবে স্পষ্টতঃ কিংবা ভাবতঃ মহান কামেল পীর কেবলাজান হুজুরের মত লইয়া নিকটে বসিবে। যদি মুরীদ পীরের নিকট হইতে দূরে থাকে, তাহা হইলে, স্বীয় পীর ছাহেবের পাক তাওয়াজ্জুহ সম্মুখে রাখিয়া ফয়েয লইতে হইবে। আপন পীর কেবলাজান ছাহেবের নিকট হইতে মুরীদ দূরে থাকিলে অনেক সময় অন্য কোন কামেল ব্যক্তির সংসর্গে থাকা দুরস্ত আছে, তবে সে ক্ষেত্রে আপন মুর্শিদে কামেলের অনুমতি অবশ্যই লইতে হইবে। আপন মুর্শিদের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোন পীরের বা মুর্শিদের নিকট গমন একান্তই অনুচিত। কারণ মুরীদ বিচার করিতে সক্ষম নহে যে, যে সাধু ব্যক্তির নিকট তিনি গমন করিতেছেন, তিনি প্রকৃতই কামেল কি-না,।
❖ যে সকল ব্যক্তিবর্গ খোদাপ্রেমী নয়; দুনিয়াবী স্বার্থ ও কর্মে সম্পূর্ণ আসক্ত ও যাহাদের দেলে আল্লাহ ভাবনা নাই; এমন ব্যক্তি হইতে সতত দূরে থাকিবে। উহাদের সংসর্গে খোদাতায়ালার অনুগ্রহ জ্যোতি পতন বন্ধ হয়। দেল উজ্জলতা বিহীন হইয়া কালো আবরণে ঢাকিয়া যায়।
❖ আপন মুর্শিদে কামেল ছাহেব ও অন্যান্য ওলী-আল্লাহগণ বা মহাত্মা ব্যক্তির প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি রাখিবে। আপন মুর্শিদে কামেলের নাম পারতপক্ষে উচ্চারণ করিবে না; একান্ত প্রয়োজন হইলে অতীব সম্মানের সহিত উচ্চারণ করিবে। অন্যান্য ওলী-আল্লাহগণের নাম উচ্চারণের সময়ও কদাচ আদবের খেলাফ করিবে না।
❖ খোদা প্রেম শীতল হইতে পারে এমন কোন চিন্তা মুরীদের জন্য অনিষ্টকর। তাই সেই সকল কর্মে আসক্ত ও ঐ সকল চিন্তায় প্রভাবিত ব্যক্তিবর্গ হইতে তালেবের দূরে থাকা উচিত। যাহারা পৃথিবীর সম্পদ অর্জন আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য ও মহব্বত অর্জনের চেয়ে বড় মনে করেন ও সেই অনুযায়ী কর্মে লিপ্ত ও আসক্ত থাকেন, তাহাদের সংসর্গ আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্যের পথের পথিকদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। পূর্ববর্তী কালের মুর্শিদে কামেলগণ দুইটি বিষয় খোদাতালাশীদের জন্য সব চেয়ে বিপদজনক ও ক্ষতিকর মনে করিয়াছেন। এই দুইটি হইলঃ-ধনীদের সংসর্গ এবং আল্লাহতায়ালার পথ বিচ্যুতি হইয়া বিবাহের চিন্তা করা। সাধকের চোখে অন্য কোন প্রবৃত্তিই ইহা হইতে অনিষ্টকর নয়। কারণ এই সকল প্রবৃত্তি আল্লাহতায়ালার প্রেমাগ্নি শীতল করিয়া তালেবের মনকে ভিন্ন ও বিপরীত দিকে নিবদ্ধ করে। ইহাতে আল্লাহতায়ালার প্রতি প্রেমের বদলে দুনিয়ার প্রতি প্রেম বৃদ্ধি পায়।
❖ আল্লাহতায়ালার পথের পথিকদের সব চেয়ে বড় সম্পদ আদব। বেআদব কখনই খোদাতায়ালার প্রেম লাভ করিতে পারিবে না। যে ব্যক্তির আদব নাই, সে ব্যক্তি কখনও আল্লাহতায়ালার রহমত, করুণা ও দয়া কামনা করিতে পারে না। যে ব্যক্তির আদব নাই, সেই ব্যক্তিই শুধু নয়, তাঁহার সঙ্গীগণও আল্লাহপাকের অনুগ্রহ হইতে দূরে নিপতিত হয়। পীরের প্রতি আদব প্রদর্শনের নিমিত্তে পীরের প্রতিটি হুকুম প্রকৃত মুরীদ পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পালন করিবে।
❖ স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজান হুজুরের দরবারে অবস্থান কালে পীর কেবলাজান ছাহেবের সম্মুখে নিয়ম অনুযায়ী বিনীতভাবে খেদমতের বাসনা লইয়া দন্ডায়মান হইবে। তবে এমন সময়ে পীর ছাহেব কেবলাজানের নিকট গমন করিবে না, যখন ইহাতে তিনি কষ্ট পাইতে পারেন বা বিরক্ত হইতে পারেন।
❖ স্বীয় পীর কেবলাজান ছাহেবের নিকটে উপস্থিত হইয়া পীর কেবলাজান হুজুরের বিনা আদেশে কোন কিছু করা এমন কি জেকের-আজকার করাও নিষেধ। স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজানের নিকট দাঁড়াইবার সময়ে এমনভাবে দাঁড়াইবে যাহাতে নিজের ছায়া স্বীয় পীর ছাহেব কেবলার ছায়ার উপর বা তদীয় পরিধেয় বস্ত্রের উপর না পড়ে। পীর ছাহেব কেবলাজান যে স্থানে উপবিষ্ট বা দন্ডায়মান থাকেন তালেব তাহা হইতে উচ্চ স্থানে উপবিষ্ট বা দন্ডায়মান হইবে না।
❖ মুরীদ যখন স্বীয় মুর্শিদ কেবলা ছাহেবের পশ্চাতে অনুগমন করিবে, তাহাকে খেয়াল করিতে হইবে যে পীর কেবলাজান ছাহেবের পদচিহ্নের উপর যেন তদীয় পদ পতিত না হয়। স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজানের ব্যবহৃত কোন বস্ত্র বা বস্তু নিজে ব্যবহার করিবে না। স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজানের ওজু-গোসল করিবার স্থানে মুরীদ ওজু গোসল করিবে না। স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজানের বসিবার স্থানে বা বিছানায়, কিংবা নামাজের মসলায় বা পাটিতে কখনই বসিবে না বা নামাজ পড়িবে না। ঐ সকল স্থান সমূহে যাহাতে কোন অবস্থাতেই মুরীদের পা না লাগে সে দিকে সর্বদা খেয়াল রাখিবে।
❖ পীর কেবলাজান হুজুরের দায়রা বা হোজরা মোবারকের দিকে পিছন করিয়া বা সেই দিকে মুরীদ পা দিয়া বসিবে না, ঐ দিকে থুথু ফেলিবে না। আপন পীর কেবলাজান হুজুরের সম্মুখে মুরীদ কখনও আহার করিবে না। কিন্তু স্বীয় পীর কেবলাজান ছাহেবের আদেশ হইলে মুরীদ ঐরূপ আহার গ্রহণ করিতে পারে।
❖ স্বীয় পীর কেবলাজান হুজুরের কোন কার্যকে মন্দ জানিবে না। মুরীদের জন্য ইহা অপেক্ষা অনিষ্টকর অন্য কোন কিছুই নাই। স্বীয় পীর কেবলাজান ছাহেবের কোন উক্তি বা কর্মের কারণ পরিস্কার না হইলেও মুরীদকে তাহাই সর্বোত্তম জানিতে হইবে কারণ মুর্শিদে কামেল মাকাম-মঞ্জিল ও শরীয়তের খুঁটিনাটি সকল বিষয়ে সর্বোত্তম ভাবে জ্ঞাত। শুধু তাহাই নহে, মুর্শিদে কামেলগণ আল্লাহতায়ালার এলহাম দ্বারা পরিচালিত হইয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ও উপদেশ দান করেন।
❖ পীর হইতে কোন কারামতি দেখিবার ইচ্ছা কোন মুরীদের পোষণ করা উচিত নহে। কারামতি কাফের ও শত্রুদের জন্য, মুমিনদের জন্য নহে। হযরত আবুবকর ছিদ্দিক (রাঃ) হযরত রাসূলে করীম (সঃ) এর সকল আসহাবদিগের মধ্যে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও অগ্রগন্য। তিনি হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) এর নিকট হইতে কোন মোজেজা’ দেখিতে চাহেন নাই। পীরের কারামতি মুরীদ বা তালেব সর্বক্ষণ তাহার দেহের মধ্যে অনুভব করিয়া থাকেন। অতএব সর্বাবস্থায় আদব, ভক্তি ও খেদমতের মাধ্যমে স্বীয় পীর কেবলাজান হুজুরের সন্তুষ্টি ও মহব্বত অর্জনের চেষ্টা করিবে ও সেই চেষ্টাকেই মাঞ্জিলে মাছুদে পৌঁছাইবার চাবিকাঠি জানিবে।
❖ মুরীদ সকল সময়ে নিজেকে অপরাধী ও অপারগ মনে করিবে, তাহা হইলেই পীরের সম্মুখে বিনীতভাব মনে উপস্থিত হইবে। মুরীদ যদি বাস্তবিকই অপারগ ও অক্ষম হয়; তাহা হইলেও পীরের খেদমত ত্যাগ না করিয়া নিজেকে সংশোধন করিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করিবে। এই উপদেশ হযরত আব্দুল্লাহ্ আহরার (রঃ) ছাহেব (যিনি হযরত জামী (রহঃ) এর পীর ছাহেব কেবলা) ও আমাদের তরীকার ইমাম হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেবের আদিষ্ট বাক্য বলিয়া জানিবে।
❖ আপন পীরের নিকট হইতে মুরীদ শরীয়তের পূর্ণ জ্ঞান ও তাৎপর্য শিক্ষা করিবে। কারণ মুর্শিদে কামেলই শরীয়তের পূর্ণ ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও ভেদ অবগত। বিভিন্ন প্রকার কিতাবে লিখিত শরীয়ত সম্পর্কে ব্যাখ্যা অনেক সময় মুরীদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করিতে পারে। তাই শরীয়তের সঠিক দিক নির্দেশনা পীরে কামেলের নিকট শিক্ষা করাই উত্তম। কারণ তিনি স্বয়ং আল্লাহপাকের এলহাম দ্বারা শরীয়তের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
এই স্থানে স্মরণ রাখা কর্তব্যঃ (১) এরাদতের পীর, (২) শিক্ষা-পীর ও (৩) খেলাফতের পীর-এই তিন প্রকারের পীরকেই সমানভাবে সম্মান, ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আদব প্রদর্শন করিতে হইবে।
এরাদতের পীর অর্থাৎ যাঁহার নিকট কেবল মাত্র মুরীদ হওয়া যায়। শিক্ষা-পীর অর্থাৎ যাহার নিকট হইতে মুরীদ ছুলুক” শিক্ষা করেন। খেলাফতের পীর অর্থাৎ যিনি লোকদিগকে শরীয়ত, তরিকত, হকিকত ও মারেফাত জ্ঞান সম্পূর্ণ শিক্ষা দানের পর অন্যকে শিক্ষা দানের নির্দেশ দেন।
তবে কোন ব্যক্তি যদি কোন পীরের নিকট সামান্য শিক্ষা করিয়া এবং শিক্ষা সমাপ্ত না করিয়া অন্য পীরের নিকট হইতে খেলাফত গ্রহণ করে, তবে যে পীর খেলাফত দান করিয়াছেন তাহাকে খেলাফতের পীর বলা যাইবে না এবং ঐ তালেবকেও মুরীদ করার যোগ্য বুঝিতে হইবে না।
ইহা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে শিক্ষা-পীরই মূলতঃ খোদা নির্দেশক। তাই খোদা নির্দেশক পীরের সহিত কোন প্রকার বেয়াদবী হইলে মারেফাত জ্ঞানে বিঘ্ন ঘটে।
❖ মানুষ ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়াবী জীবন মাতাপিতার মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়। মাতা পিতাই মানব শিশুকে লালন-পালন করিয়া বড় করিয়া তোলেন। মাতাপিতার লালন পালনেই শিশু তাহার শৈশব ও কৈশোর অতিক্রম করিয়া যৌবনে পা দেয়। অন্য দিকে পীরের প্রতিপালনে মানুষ চিরস্থায়ী জীবনের সন্ধান পায়। পীরের তাওয়াজ্জুয়ে এত্তেহাদীর বলে মুরীদের মুর্দা দেল জিন্দা হয়, দেল ১৪-ই রাত্রির পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জল হয়। শুধু তাই নয়-পীরের প্রতিপালনে মুরীদ কোটি কোটি নূরের বাল্ব প্রজ্জলিত “তৌহিদে ওজুদী” নামক এক নুরের দেহ প্রাপ্ত হয়-যে দেহের আর মৃত্যু নাই। মুরীদ চির অমরত্ব লাভ করে।
পিতামাতার প্রতি আদব প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন:-
অর্থাৎ-“তোমার প্রতি নির্ধারিত হইয়াছে-ইবাদত করিবে না তাহাকে ব্যতীত; সদাচারণ করিবে পিতামাতার সহিত; তাহাদের একজন কিংবা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছাইলে তাহাদের উদ্দেশ্যে উহ্ শব্দটুকু বলিবে না এবং না তাহাদিগকে ধমক দিবে, বরং কথা বলিবে আদবের সাথে।” (সূরা বনি ইসরাইলঃ আয়াত নং ২৩ ও ২৪)
যে পিতামাতার অছিলায় ক্ষণস্থায়ী জীবন পাওয়া যায় তাহাদের প্রতিই এত অধিক আদব রক্ষা করিয়া চলিতে হয়; আর যে রুহানী পিতার মাধ্যমে মুরীদ চিরস্থায়ী জীবন পায় তাহার প্রতি কিরূপ আদব রক্ষা করিয়া চলা কর্তব্য তাহা চিন্তা করিয়া দেখ।
❖ স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজান হুজুরের দরবারে অবস্থান কালে পীর কেবলাজান ছাহেবের সম্মুখে নিয়ম অনুযায়ী বিনীতভাবে খেদমতের বাসনা লইয়া দন্ডায়মান হইবে। তবে এমন সময়ে পীর ছাহেব কেবলাজানের নিকট গমন করিবে না, যখন ইহাতে তিনি কষ্ট পাইতে পারেন বা বিরক্ত হইতে পারেন।
❖ স্বীয় পীর কেবলাজান ছাহেবের নিকটে উপস্থিত হইয়া পীর কেবলাজান হুজুরের বিনা আদেশে কোন কিছু করা এমন কি জেকের-আজকার করাও নিষেধ। স্বীয় পীর ছাহেব কেবলাজানের নিকট দাঁড়াইবার সময়ে এমনভাবে দাঁড়াইবে যাহাতে নিজের ছায়া স্বীয় পীর ছাহেব কেবলার ছায়ার উপর বা তদীয় পরিধেয় বস্ত্রের উপর না পড়ে। পীর ছাহেব কেবলাজান যে স্থানে উপবিষ্ট বা দন্ডায়মান থাকেন তালেব তাহা হইতে উচ্চ স্থানে উপবিষ্ট বা দন্ডায়মান হইবে না।
টীকা
১। কামেল পীর – পীর ফার্সী শব্দ। ইহার আভিধানিক অর্থ বৃদ্ধ। তরিকতের পরিভাষায় জ্ঞানবৃদ্ধকে পীর বলা হয়। যে সাধক সাধনাবলে সৃষ্টিতত্ত্বজ্ঞান ও স্রষ্টাতত্ত্বজ্ঞানের পূর্ণত্ব অর্জন করিতে সক্ষম হইয়াছেন এবং অন্যকে এই জ্ঞান শিক্ষাদানে পারদর্শী-তিনিই কামেল পীর বলিয়া আখ্যায়িত। আধ্যাত্মিক জগতে দুইটি ইউনিভার্সিটি আছে। যথাঃ (ক) এল্মে হুছুলী এবং (খ) এলেম হুজুরী। উভয় ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নপূর্বক যিনি কামালাতে বেলায়েত ও কামালাতে নবুয়তের সার্টিফিকেট লাভ করিয়াছেন-তিনিই কামেল পীর, তিনিই পূর্ণতাপ্রাপ্ত ও জ্ঞানবৃদ্ধ পথ প্রদর্শক।
২। মুর্শিদের বোল – আধ্যাত্মিক পথ প্রদর্শক বা কামেল পীরের কথা।
৩। মুতাওয়াজ্জুহ – স্বীয় দেলকে কোন নির্দিষ্ট দিকমুখী রাখা।
৪। মারেফাত – খোদার পরিচয় জ্ঞান।
৫। মাশুক – প্রেমাস্পদ বা মাহবুব।
৬। ফয়েয – ঐশিক বর্ষণ।
৭। দেল – কালব।
৮। এলহাম – ঐশিক বিজ্ঞপ্তি।
৯। ওলী – আল্লাহ-আল্লাহর বন্ধু।
১০। তাবাররুক – কামেল পীরের স্পর্শপূত খাদ্যাদী বা ব্যবহৃত বস্তু।
১১। মর্তবা – মর্যাদা।
১২। জিয়াফত – নিমন্ত্রণ, দাওয়াত।
১৩। হালাত – অবস্থা।
১৪। হর – প্রত্যেক।
১৫। খাছলত – স্বভাব, চরিত্র।
১৬। তাছির – প্রভাব।
১৭। হুজরা – সাক্ষাতদানের রূম বা কামরা।
১৮। মাজার – সম্মানিত ব্যক্তি তথা ওলী-আল্লাহগণের সমাধিক্ষেত্র।
১৯। জিয়ারত – দর্শন, সাক্ষাৎ।
২০। মুরাকাবা হালত – ধ্যানমগ্ন অবস্থা।
২১। কাশফ – অন্তরদৃষ্টিতে অবলোকন।
২২। তাঈদ মদদ – সাহায্য।
২৩। ছুরাত – আকৃতি।
২৪। রূহানী – বাতেনী।
২৫। মুর্শিদ – পথ প্রদর্শক।
২৬। তালেব – খোদাঅন্বেষী।
২৭। মুজেজা – পয়গম্বর (আঃ) গণ কর্তৃক সংঘটিত অলৌকিক কর্মকান্ড।
২৮। ছুলুক – আল্লাহপাকের সান্নিধ্য প্রাপ্তির পথে আত্মিক ভ্রমণ দ্বার মাকামসমূহের অবস্থা, বিস্তৃতি এবং অবস্থান পর্যবেক্ষণ করাকে ছুলুক বলে।
২৯। তাজিম – সম্মান প্রদর্শন।
৩০। মুজাদ্দেদ – সংস্কারক।
৩১। কুদরত – ক্ষমতা।
সূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তিজ্ঞানের আলোকে- শাহসূফী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের “নসিহত” ১ম খন্ড (বিষয়ঃ “আদাবুল মুরীদ” এর অংশ বিশেষ)।