একজনের বেয়াদবীর কারণে গোত্রের সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
হযরত জালালুদ্দিন রূমী (রঃ) ছাহেব তদীয় মছনবী শরীফে বলেন, “বেয়াদব মারূমে গাশত আয ফালে রব” -বেয়াদব আল্লাহর রহমত হইতে বঞ্চিত হয়।
বেয়াদব তাহার বেয়াদবীর কারণে যে একাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহা নয়। একজনের বেয়াদবীর কারণে এমন কি একটি গোত্রের সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এমন বহু নজীর কুরআন হাদীছে বর্তমান।
হযরত ঈসা (আঃ) তাঁহার কওমের জন্য আল্লাহতায়ালার নিকট দু’আ করিয়াছিলেন, “হে আমার প্রভু-পরওয়ারদিগার! আমাদের জন্য আসমান হইতে অবতীর্ণ কর খাদ্য-সামগ্রী পূর্ণ খাঞ্চা, যাহা আমাদের পূর্বাপর সকলের জন্য আনন্দের কারণ হইবে এবং তোমার কুদরতের একটি বিশেষ নিদর্শন হইবে। এতদ্ভিন্ন আমাদেরকে সর্ব প্রকার রেজেক দান কর; তুমি সর্বোত্তম রেজেকদানকারী।”
হযরত ঈসা (আঃ) এর প্রার্থনার ফলে আল্লাহতায়ালা আসমান হইতে খাদ্য-সামগ্রীপূর্ণ ডালা অবতীর্ণ করিতে লাগিলেন। তবে একটি শর্তারোপ করিলেন। উম্মতে ঈসায়ীর প্রতি নির্দেশ দিলেন ডালা হইতে পেট পুরিয়া খাইতে, তৃপ্ত হইয়া খাইতে; কিন্তু ডালা হইতে খাদ্য সামগ্রী উঠাইয়া জমা করিতে বা সঞ্চয় করিতে নিষেধ করিলেন। কিছু উম্মত আল্লাহর সে নিষেধ অমান্য করিয়া খাঞ্চা হইতে খাদ্য উঠাইয়া জমা করিল-যাহা ছিল ঘোর বেয়াদবী। ফলে আসমান হইতে খাদ্য-সামগ্রী আসা বন্ধ হইল। কতিপয় বেয়াদব উম্মতের জন্য সমগ্র গোষ্ঠীই আসমানী নেয়ামত হইতে বঞ্চিত হইল।
ঈসা (আঃ) এর উম্মতের মত হযরত মুসা (আঃ) এর উম্মতেরাও বেয়াদবী করিয়াছিল। একদা হযরত মুসা (আঃ) কে তদীয় উম্মতকুলসহ সাইনা উপত্যকার মরুপ্রান্তরে দীর্ঘ দিন বাস করিতে হইয়াছিল। সেখানে খাদ্য দ্রব্যের প্রচন্ড অভাব ছিল। ফসলাদি উৎপন্নের কোন ব্যবস্থা ছিল না। আল্লাহপাক হযরত মুসা (আঃ) এর খাতিরে তাহাদের প্রতি আসমান হইতে মিষ্টি হালুয়া জাতীয় এক প্রকার সুখাদ্য এবং বটের পাখীর গোশত প্রেরণের ব্যবস্থা করিলেন। ফলে বিনা পরিশ্রমে তাহারা আসমানী খাদ্য পাইতে ছিল। কিন্তু কতিপয় উম্মত বেয়াদবী করিল। তাহারা আল্লাহর নেয়ামত তথা আসমানী খাদ্যের প্রতি অবজ্ঞা করিয়া বলিলঃ আমরা রসুন, পেয়াজ, ডাল ইত্যাদি চাই অর্থাৎ মাটি হইতে উৎপন্ন ফসলাদি চাই। এই বেয়াদবীর কারণে আসমান হইতে খাদ্য আসা বন্ধ হইল। পুরা গোত্রই আসমানী খাদ্য হইতে বঞ্চিত হইল এবং তাহাদের উপর চাষাবাদ করিয়া ফসল উৎপাদনের কষ্টের বোঝা অর্পিত হইল।
উপরের কাহিনীদ্বয় হইতে বুঝা যায় যে, বেয়াদবীর কারণে মানুষ দুনিয়াবী জীবনেও আল্লাহর রহমত, বরকত ও নেয়ামত হইতে বঞ্চিত হয়। দুনিয়াবী কল্যাণ লাভের ক্ষেত্রে আদবের গুরুত্ব যখন এত অধিক, সেখানে খোদাতায়ালাকে পাওয়ার ক্ষেত্রে কি রকম আদব রক্ষা করিয়া চলা কর্তব্য-তাহা একবার চিন্তা করিয়া দেখার বিষয়।
সূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তিজ্ঞানের আলোকে- শাহসূফী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের “নসিহত” ১ম খন্ড (বিষয়ঃ আদাবুল মুরীদ)-এর অংশ বিশেষ।