বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে রমজান মাস ব্যাপী ৩০দিনের মহা আয়োজন!

বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফ যা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিমদের তৃর্থস্থান। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব। তিন ১৩৫৪ সনে আপন পীর খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) এর হুকুমে আটরশি গ্রামে এসে “জাকের ক্যাম্প” প্রতিষ্ঠা করেন। এর পরে অনেক কষ্ঠ পরিশ্রম করে সেই ছোট “জাকের ক্যাম্প থেকে” এখন বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের রুপ নিয়েছে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩৮টি দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখানে এসে তরিকার শিক্ষালাভ করেন। আজকের এই প্রতিবেদন সেই “বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরিফে রমজান মাস কিভাবে পরিচালিত হয়” এই বিষয় নিয়ে।

বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পবিত্র রমজান উপলক্ষে অন্যান্য দিনের কার্যক্রমের পাশা-পাশি বিভিন্ন ইসলামিক কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এখানে প্রতিদিনের ন্যায় রাত তিনটা থেকে ইসলামিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। কিন্তু রমজান উপলক্ষে রাত ১.৩০ মিনিট থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের আস-পাশের প্রায় ৫০০ পরিবারের লোকদের খাওয়ার জন্য সেহেরি প্রদান করা হয়। এবং রাত তিনটা থেকে শুরু হয় বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে অবস্থানরত, আগত জাকেরান-আশেকান দের সেহেরি প্রদান করা। সেই সাথে ৩.০০ টা থেকে পবিত্র কোরান তিলাওয়াত, মিলাদ-কিয়াম, দোয়া, রহমতের ফায়েজ, জিকির চলতে থাকে ফজরের আযান পর্যন্ত। আযানের আগেই সাইলেন বাজিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় সেহেরির সময় শেষের কথা এবং সেই সাথে মাইকে রোজা রাখার নিয়ত পড়ানো হয়, যাতে করে সকলে রোজার নিয়ত করতে পারে।

এর পরে হয় ফজরের আযান। আযান শেষে আবার কিছুক্ষন রহমতের ফায়েজ বাতানোর পরে অল্প কিছুক্ষন জিকির করা হয়। জিকির শেষে প্রতিদিনের ন্যায় ফজরের সুন্নাত-ফরজ নামাজ শেষ করে তরিকার বিশেষ অজিফা ফাতেহা শরীফ পাঠ করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত শেষে তরিকার আরেকটি বিশেষ অজিফা খতম শরীফ পাঠ করে মোজাদ্দেদ-আলফেছানি (রহঃ) এর শানে উর্দু গজল গেয়ে শেষ করা হয় ফজরের কার্যক্রম। এর পরে কিছুক্ষন কোরআন তিলাওয়াত করার সময় দেওয়া হয়।

জোহরের আজান দেওয়া হয় ১.১৫ মিনিটে, আজান-নামাজ শেষে তরিকার বিশেষ নিয়মে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া হয়। নামাজ শেষে মোনাজাত করে বিশ্ববাসির শান্তি কামনা এবং আত্মিক সফলতার জন্য দোয়া কামনা করা হয়। মোনাজাত শেষে তরিকার বিশেষ অজিফা দয়াল নবী রাসুলে পাক (সাঃ) এর খাস-হোব্ব এস্ক মহব্বতের ফায়েজ। ফায়েজ শেষে কিছুক্ষন জিকির এবং জিকির শেষে মিলাদ-কিয়াম এবং মোনাজাত শেষ করে জোহরের কর্মকাণ্ড শেষ করা হয়।

আবার শুরু হয় আছরের প্রগ্রাম আছরের নামাজ শেষে তরিকার বিশেষ অজিফা তওবার ফায়েজ। ফায়েজ শেষে কিছুক্ষন জিকির, জিকির শেষে মিলাদ-কিয়াম এবং মোনাজত। মোনাজাত শেষ করে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠা খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) সাহেবের পবিত্র রওজা শরীফ জেয়ারত। এখানে সকল জাকেরান-আসেকান ভায়েরা শরিক হয়। এবং সে সাথে মহিলাদের জন্য পর্দা সহকারে জেয়ারতে স্থান থেকে মহিলারাও জেয়ারতে শরিক হতে পারে, সে জন্য মাইকে জেয়ারত করা হয়।

জেয়ারত শেষে শুরু হয় কোরআন তিলাওয়াত অপর দিকে চলতে থাকে দরবারের আশে-পাশের গ্রামের মানুষের জন্য এবং বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে আগত হাজার হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন। কোরআন তেলাওয়াত শেষ হয় ইফতারের ৫(পাঁচ) মিনিট আগে, এই পাঁচ মিনিট বিশ্ব নবীর শানে কবি নজরুল ইসলাম রচিত “নবী মোর পরশ মনি” নাতে রাসুল (সাঃ) গজলটি গাওয়া হয়। ইফতারের সময় হলে সাইলেন বাজিয়ে আজান দেওয়া হয় আজান শেষে সকলের উদ্দেষ্য ইফতারে দোয়া মাইকে পাঠ করানো হয়। দোয়া শেষে সকলে একত্রে ইফতার শুরু করে।

১০মিনিট ইফতারের বিরতির পরে মাগরিবের নামাজ শেষে তরিকার বিশেষ নিয়মে নফল নামাজ, মোনাজাত শেষে তরিকার বিশেষ অজিফা ফাতেহা শরীফ এবং মোনাজাত। এর পরে তরিকার অজিফা পাঁচ প্রকার ফায়েজ ফায়েজ শেষে কিছুক্ষন জিকির। জিকির শেষে কিছুক্ষন কোরআন তিলাওয়াত। কোরআন তিলাওয়াত শেষে ১০ মিনিট বিশ্ব ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের লিখিত নসিহত শরীফ হতে অংশবিশেষ পাঠ করে শুনানো হয়। নসিহত শরীফ পাঠ শেষে আবার কিছুক্ষন মিলাদ-কিয়াম, মিলাদ কিয়াম শেষে মোনাজাত।

মোনাজাত শেষে সাইলেন বাজানো হয় এশা এবং তারাবীহ সালাতের জন্য। এর পরে এশার আজান এবং এশার আজান শেষে একাধারে নামাজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চলতে থাকে তালিম-তালকিন। তালিম-তালকিনে রমজানে ফজিলত, এবং রোজা, ইফতারি নামাজের নিয়ত, নিয়ম কানুন, ইসলামি শরিয়াহ, হুকুম-আহকাম তরিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষ করে এশারের নামাজ পড়া হয়, পর্যায় কর্মে এশা, তারাবিহ, বিতর নামাজ এবং মোজানাত শেষে তরিকা দেওয়া হয়। বিশ্ব ওলি খাজাবাবা ফরিদপুরীর (কুঃছেঃআঃ) সাহেবের ধারণকৃত উপদেশ নসিহাত এবং তরিকা শেষে কিছু সময় তরিকার ফায়েজ বাতানো হয়। এবং যারা নতুন তরিকা গ্রহন করেন তাদের কে প্রতিজ্ঞা করানো হয়, দয়াল নবীর সত্য তরিকা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ছাড়বেন না এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করবেন, তরিকার অজিফা-কালাম ঠিক-ঠিক মত প্রতিপালন করবেন। যে নামাজ ছেড়ে দিল এবং শরিয়াতের ধার ধারে না সে আমার মুরিদ নয়।

তরিকতের ফায়েজ শেষ করে দয়াল নবী রাসুলে পাক (সাঃ) কে নজরানা দেওয়ার জন্য ৫০০ বার দরুদ শরীফ পাঠ করা হয়। দরুদ শরীফ পাঠ শেষে জাকেরদেরকে বিশ্রামের জন্য সময় দেওয়া হয় রাত তিনটা পর্যন্ত। এই একই নিয়মে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল দরবার শরীফ এবং বনানী পাক দরবার শরিফে রমজান উপলক্ষে উপরক্ত কর্মকাণ্ড ধারাবাহিক ভাবে পালন করা হয়।

সূত্রঃ https://bzmdorbar.blogspot.com/

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel