খাজাবাবা ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত (মুহাররম) : পর্ব-২

খোদাপ্রাপ্তি জ্ঞানের আলোকে শাহ্সুফি হযরত ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের
লিখিত নসিহত শরীফের ৯ম খন্ডের “মুহাররম” ১২-১৪ পৃষ্ঠার আলোচনা।

পর্ব-২ (পৃষ্ঠা: ১২-১৪) আলোচনা:
হযরত আলী (কঃ) এর শাহাদাতের পরে হযরত হাসান (রাঃ) মাত্র কয়েকমাস খেলাফতের অধিকারী ছিলেন।হযরত আলী (কঃ) এর শাহাদাতের পর মোয়াবিয়া নিজেকে সমস্ত মুসলিম জাহানের খলিফা বলিয়া ঘোষণা করিলেন ও কুফা আক্রোমন করিলেন। হযরত হাসান (রাঃ) সবেমাত্র সিংহাসনে আরোহন করিয়াছেন। তিনিও খেলাফত রক্ষার জন্য মোয়াবিয়ার বিরুদ্ধে সৈন্য বাহিনী প্রেরন করিলেন। মুদাইন নামক এক স্থানে উভয় বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হইবার পূর্বে হযরত হাসান (রাঃ) এর রাজধানী কুফায় মোয়াবিয়ার পক্ষ হইতে গুজব রটাইয়া দেওয়া হইল যে ঈমাম বাহিনীর সেনাপতি কায়েস যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত ও নিহত হইয়াছেন। ইহাতে কুফী সৈন্যদের মধ্যে বিশৃংখোলা দেখা দিল।

তাহারা তাহাদের নিজ খলিফা হযরত হাসান ( রাঃ) এর তাবু লুন্ঠন করিল,এমন কি তাহাকে বন্দী করিয়া মোয়াবিয়ার হস্তে সমর্পনের আয়োজন করিতে লাগিলে। সদ্য রাজ্যভার গ্রহন করা ঈমাম হাসান (রাঃ) এই ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত হইলেন। বুজিতে পারিলেন চতুর্দিকে শুধু প্রতারনা। ইতিমধ্যে মোয়াবিয়া সন্ধি স্থাপনের প্রস্তাব দিলেন। তিনি বলিলেন, বংশের মর্যাদার দিক দিয়ে ইমাম হাসান ( রাঃ) – ই খেলাফতের প্রকৃত অধিকারী হইবার কথা — কিন্তু বর্তমানে সারা মুসলিম সামাজ্যে যে বিশৃঙ্খলা বিরাজমান – তাহা সমাধানের জন্য যে দৃঢ়তা প্রয়োজন, তাহা যদি ইমাম সাহেবের মধ্যে থাকিত, তাহা হইলে তিনি নিজেই তাহার নিকট বায়াত হইতেন। ইমাম সাহেব যেন খেলাফতের দাবি ত্যাগ করেন। খেলাফত ব্যতীত আর সকল কিছুই তিনি পাইবেন। হযরত ইমাম হাসান ( রাঃ)ছাহেব শান্তি ফিরাইয়া আনিবার খাতিরে সন্ধির প্রস্তাব গ্রহন করিলেন।

এক শর্তে যে, মোয়াবিয়া তাহার জীবন দশা পর্যন্ত খলিফা থাকিবেন। মোয়াবিয়ার মৃত্যুর পর হযরত হোসেন (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হইবেন। মোয়াবিয়া এই প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। ইমাম সাহেবদের জীবন যাত্রা নির্বাহের জন্য খোরাসান প্রদেশেন রাজস্ব তাহাদের জন্য বরাদ্দ করা হইল।খেলাফতের দাবী ত্যাগ করিয়া ইমাম সাহেবগন কুফা হইতে মদিনায় আবার ফিরিয়া আসিলেন। মদিনার মুসলমানগন নবীর দৌহিত্রকে খলিফা হিসেবে দেখিতে না পাইয়া আপসোস করিতে লাগিলেন এবং ইমাম ছাহেব (রাঃ) কে নবী করিম (সাঃ) এর আধ্যাত্বিত প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহন করিয়া ইমামের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করিলেন।

কিন্তু ইমাম হাসান (রাঃ) হযরত রাসুলে করিম (সাঃ) এর বংশীয় হিসেবে যে সম্মান ও জনগণের শ্রদ্ধা পাইয়া আসিতেছিলেন,মোয়াবিয়া তাহাতে সন্ত্রস্ত ছিল। হযরত আলী ( কঃ) রাসূলে কারিম ( সাঃ) এর জামাতা হিসেবে যে সম্মান পাইয়া আসিতেছিল তাহাই ছিল মূলত মোয়াবিয়ার ঈশ্বার কারন। হযরত আলী ( কঃ) খেলাফত গ্রহন করিবার পর হইতেই তাই মোয়াবিয়া দামস্কের মসজিদে খুতবা পাঠ করিবার সময়ে খলিফার সমালোচনা করিতেন।

ইমাম হাসান ( রাঃ) যদিও সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করিয়া কুফা হইতে মদিনায় গমন করেন; মদিনাবাসী তাহাকে যে সম্মান প্রদর্শন করেন ইহাতে মোয়াবিয়ার শংকা বাড়িয়া যায়।তাই খেলাফতের দাবিতে যাহাতে নবী বংশের কেহ আর না আসিতে পারে; তাই মোয়াবিয়া কূট চালের আশ্রয় গ্রহন করে। হযরত ইমাম হাসান (রাঃ) কে আততায়ী দ্বারা বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। মুসলিম সমাজের এই দুঃখজনক পরিস্থিতিতে হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) একা হইয়া পড়িলেন। কিন্তু এই অবস্থা প্রতিকারের সৈন্যবল বা অর্থবল তাহার ছিল না।

মুসলিম খেলাফত তখন মিশরের পশ্চিম সীমানা হইতে পারশ্যদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বিশাল সম্রাজ্যের বিপুল অর্থ ও জনবল সবই মোয়াবিয়া বা তাদেন অনুগতদের অধীন। তাহাদের সর্তক দৃষ্টির আড়ালে কোন রুপ বিদ্রোহও দুঃসাধ্য। এতদাসত্বেও মোয়াবিয়া সকল সময়েই ইমাম হোসেন (রাঃ) এর উপর প্রখর দৃষ্টি রাখিতে লাগিলেন। তিনি তাহার শেষ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তর করিতে লাগিলেন, যাহাতে নবী করিম (সাঃ) এর কনিষ্ঠ দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) কেও খেলাফতের দাবি হইতে বিচ্যুত করিয়া নিজ পুত্র এজিদকে সিংহাসনে বসানো যায়। মোয়াবিয়া বুজিতে পারিলেন যে,তাহার তাহার পুত্রের খেলাফত প্রাপ্তির বিরুদ্ধে যদি কখনও কোন দাবি উত্থাপিত হয় বা সতস্ত্র যুদ্ধ হয়, তাহা হইবে হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) কে কেন্দ্র করিয়া।

হযরত হাসান (রাঃ) এর সহিত সম্পাদিত সন্ধির খেলাপ করিয়া মোয়াবিয়া নিজ পুত্র এজিদকে যুবরাজ এবং তার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তার জীবদ্দশাতেই ঘোষণা দান করেন; যাহাতে এজিদের সিংহাসন প্রাপ্তিতে বিঘ্ন না ঘটে।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel