৪ঠা মে, ২০০১ইং: পীরজাদা আলহাজ্ব খাজা মোস্তফা আমির ফয়সল (মেঝো ভাইজান) মোজাদ্দেদী ছাহেবের কণ্ঠে ঐতিহাসিক পবিত্র ভাষণ। স্থানঃ বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, আটরশি, ফরিদপুর।
আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাযিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। পেয়ারে হাজেরিন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আমার প্রিয় জাকের ভাই ও বোনেরা আমাদের আকা, আমাদের ছাহেব, আমাদের দস্তগীর, আমাদের রাহনামা, আমাদের কলিজার বোটা, আমাদের চোখের মনি, বাদশাহে দোজাহান, আফজালে জামানিয়া, মোজাদ্দেদে জামান, ওহীয়ে সুন্নাহ, খাজাবাবা শাহ্সুফী সৈয়দ আল্লামা ফরিদপুরী, আমাদের জানের জান, আমাদের প্রানের প্রাণ, আমাদের দুনিয়ায়, আমাদের আখেরাত, আমাদের জমিদারি, আমাদের বাহাদুরি, আমাদের অহংকার, আমাদের মাথার তাজ, আমাদের মাথার মুকুট, তিনি আমাদেরকে.. যার কোটি কোটি জাকেরানদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে আমাদের বুক ক্ষত-বিক্ষত করেছে, তিনি দারুল বাকায় চলে গেলেন, তিনি পর্দার অন্তরালে চলে গেছেন।
আজ আমাদের শোকের দিন।
আজ আমাদের দুঃখের দিন।
আজ সমস্ত বিশ্ব জাকেরানদের চোখের পানিতে ধরিত্রী প্লাবিত হইতেছে। জাকেরানদের হৃদয় ভাইঙ্গা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। এই ভাঙ্গা হৃদয় কেবলাজান ছাড়া কেইবা জোড়া লাগাবে?
তবে, আমার কেবলাজান পাক জবানে ফরমাইছেন যে, “বাবা আমাকে যে আসনে আল্লাহতায়ালা বসাইছেন রাসূলেপাক (সাঃ) এর পরে কোন ওলিআল্লাহকে এতো বড় আসনে বসানো হয় নাই”।
তিনিই বিশ্বওলি, যিনি বিশ্ব হেদায়েতের জন্য আসছিলেন। তার মত ওলি আর আসে নাই। তার মত ওলি রাসূলেপাক (সাঃ) এর পরে কেয়ামত পর্যন্ত আর আসবে না।
তাই, যেহেতু.. তিনি পর্দার অন্তরালে চলে গেছেন ঠিকই তার রূহানী হাত দিয়া, তার তাওয়াজ্জুর পাখা দিয়া তিনি আমাদের সকল প্রকার দয়া করে দিবেন। আর কেবলাজান একদিন বলছিলেন, আমাদেরকে লক্ষ করে বলছিলেন, “তিনি প্রত্যেক আশেকের সংগে আছেন।
কেবলাজান আমাকে বলছিলেন যে,
“বাবা, আমি তোমাদের কাছে থাকবো না, তোমরা আমাকে দেখবা না, অনেকেই হয়তো আমাকে দেখবে না, কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেখবো, আমি তোমাদের কথা শুনবো”।
তিনি জনম ভইরা পাড়ি দিসেন, তিনি নূরের রওজায়। তিনি আমাদের পাশেই আছেন। তিনি আমাদের দেখতেছেন। আপনারা জন্য চোখের পানি ফেলতেছেন, আপনারা কানতেছেন আমার দয়ালবাবার জন্য।
এই চোখের পানি তিনি দেখতেছেন। আপনারা মনের মকসুদ যেভাবে হোক কেবলাজানের পাক কদমে নিয়ত করবেন। সমস্ত নিয়ত আল্লাহ্ তায়ালা কবুল করবেন। এমন বড় ওলিআল্লাহ জগতে আসে নাই। দয়াল নবীর (সাঃ) পরে কেয়ামত পর্যন্ত আর আসবেও না।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার, আজকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘোষণা দেয়ার জন্য আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা মনোযোগ সহকারে আমার এই ঘোষণা শ্রবণ করেন।
খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান ছাহেবের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার ঘোষণাঃ
“বাংলাদেশ তথা মুসলিম বিশ্বের প্রখ্যাত সূফী সাধক, যুগ শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দেদ, আখেরী মুজাদ্দেদ, রাসূলুল্লাহর মহা সত্য তরিকার পতাকাবাহী লক্ষ কোটি জাকেরানদের কান্ডারী হযরত মাওলানা খাজাবাবা শাহ্সূফী সৈয়দ আল্লামা ফরিদপুরী নকশবন্দী মুজাদ্দেদী কেবলাজান সাহেব গত ১লা মে ২০০১ ইংরেজি ইহকাল ত্যাগ করে দারূল বাকায় তাশরীফ নিয়েছেন। এই মহা মানবের মহা প্রয়ানে লক্ষ কোটি জাকেরানের হৃদয় বেদনার আত্মচিৎকারের দ্বারা মুসলিম বিশ্বের যুগসন্ধিঃক্ষনে এই মহা তাপসের হৃদয় বিদারক বিদায় নিঃসন্দেহে সমগ্র জাতির জন্য এক অপূরনীয় ক্ষতি।
দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি যেমন আধ্যাত্মিক সাধনার সর্ব্বোচ্চ শিখরে আরোহন করেছেন ঠিক তেমনি ভাবে ব্যাপক জাগতিক কর্মকান্ডেও তিনি নিজেকে অনর্গল নিয়োজিত রেখেছেন।
সূফী সাধনার ইতিহাসে যা, ইহা এক সম্পৃর্ণ ভিন্ন মাত্রার সংযোজন। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফ, তিনার প্রতিষ্ঠিত আলীয়া মাদ্রাসা, ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র, জামে মসজিদ কমপ্লেক্স, এবং বিশালায়তন হাসপাতাল এক মহতি কর্মকান্ড তা সাক্ষ্য বহন করে।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আজ পরিণত হয়েছে বিশ্ব মানবের এক মহা মিলন মেলায়।
তাই, আধ্যাত্ব্য জ্ঞান অন্বেষী স্রষ্টা প্রেমে উদ্বেলিত লক্ষ কোটি জাকেরানের জন্য বিশ্ব জাকের মঞ্জিল এক বিশ্বজনীন আধ্যাত্মিক প্লাটফর্ম। যা কিনা যুগ যুগ ধরে নিয়োজিত থাকবে বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী প্রচারের মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের বিজয় সুচিত করতে। এই মহা তাপসের অবর্তমানে, তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার নির্বাচনের বিষয়ে খাজাবাবা ফরিদপুরী আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে এই নির্দেশ প্রদান করেছেন যা আমি তিনার ছোট ছাহেবজাদা পীরজাদা আলহাজ্ব মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী সকল মহলের অবগতির জন্য ঘোষণা করছি হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরীর ওসিহত অনুসারে তিনার জ্যেষ্ঠ ছাহেবজাদা পীরজাদা আলহাজ্ব মাহ্ফুযুল হক মুজাদ্দেদী ছাহেবকে।
তিনিই হবেন বিশ্বওলি হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী কেবলাজান ছাহেবের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার।
তিনি তার পরবর্তী দীক্ষিত হয়ে, আজ থেকে তিনি তার প্রতিনিধি হয়ে, তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে এবং খাজাবাবার মুরীদান, আশেকান, কোটি কোটি মুরীদান, কোটি কোটি আশেকান, ধর্মপ্রান মুসলমান, সমস্ত মানবতা, এখন থেকে আমার বড় ছাহেবজাদা, আমার কেবলাজানের বড় ছাহেবজাদা আলহাজ্ব পীরজাদা বড় মিয়াভাইজান মুজাদ্দেদী ছাহেবের পাক কদমের সাথে আমরা আজকে থেকে.. আজকে থেকে আমরা তিনার পাক কদমের সাথে সকলে সংযুক্ত হলাম। এবং সত্য তরিকার আধ্যাত্মিক এবং জাগতিক বিষয় সংলগ্ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত থেকে সত্যের সন্ধানের প্রতি ভাবনার প্রকাশ ঘটান এবং খাজাবাবার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে হৃদয়কে আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত করেছেন।
আমরা সমস্ত জকেরান, আশেকান ভাইয়েরা আজ শুক্রবার, ৪ঠা মে, এই মহা তাপস বিশ্বওলি কেবলাজান হুজুরের মহাপবিত্র কুলখানি উপলক্ষে সমবেত হয়ে আমরা আমাদের প্রণাধিক প্রিয় এই মহা মানবের পবিত্র রওজা মুবারকে সওয়াব রেসানী করলাম। তবে এই মর্মে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম যে, আমরা তার আধ্যাত্মিক সন্তানেরা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত রাসূলুল্লাহর সত্য তরিকা থেকে নিজেদের বিচ্যুত করব না।
এবং তার মনোনীত আধ্যাত্মিক উত্তরসূরী আমাদের বড় সাহেবজাদা আলহাজ্ব মিয়া ভাইজান মুজাদ্দেদী সাহেবের সাথে নিয়োজিত থেকে, আমরা তার মহতী মিশনে শামীল থাকার মাধ্যমে, খাজাবাবার নেক দয়া ও আল্লাহ রাসূলের সন্তুষ্টির মাধ্যমে জীবন উৎসর্গ করবো।
মিয়া ভাইরা আমার, কেবলাজান হায়াৎকালে আমাকে ডাইকা বলছিলেন.. আমাকে এবং আমার বড় মিয়াভাইজান ছাহেবকে ডাইকা বলছিলেন যে, “বাবা, এই জগৎ থেকে আল্লাহর দরবারে যাওয়ার সময় হইছে। আমার ওপর তোমার দাদা পীর সাহেব হযরত খাজা এনায়েতপুরী, যেই বেলায়েতের ভার, যে হেদায়েতের ভার, যেই বেলায়েতের ভার আমার কাধের উপর রেখে গেছিলেন সেই বেলায়েতের ভার আমি আমার বড় ছেলের কাধের উপর অর্পন করিলাম, তুমি রাজি আছ কিনা?
তখন আমি বলিলাম, খাজাবাবা এর চাইতে সৌভাগ্য আর কি হইতে পারে? এই নেয়ামত তো অন্য কোথাও চইলা যাইতে পারতো। সেই নেয়ামত আপনি জাকের মঞ্জিলে রেখে দিলেন। এর চাইতে সৌভাগ্য আমার জন্য আর কি হইতে পারে বাবা? তবে আপনে দয়া করে আমাদের কাছে কিছুদিন থাকেন।
তারপরও কেবলাজান হুজুর অসুস্থ শরীর নিয়া আমাদের কাছে ছিলেন। আমাদের মনের সান্ত্বনার জন্য। তিনি আমাদের কর্মকান্ড হাতে কলমে আপনাদেরকে আমাদেরকে শিখাইয়া গেছেন।
আমার যেন সেই কর্মকান্ড থেকে বিচ্যুত না হই, আমরা যেন দরবার শরীফকে না ছাড়ি। আমরা যেন মিয়া ভাইজানের হুকুম মোতাবেক সত্য তরিকার সমস্ত কাজ করতে পারি।
কেবলাজান হুজুর রূহানী তাওয়াজ্জু দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করেছিলেন, এই বিশ্বাসের উপরে হযরত মিয়া ভাইজানের হুকুম মোতাবেক কেবলাজান হুজুর ইসলামের বিজয় পতাকা নিয়ে আমরা মাশরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত, সেমাল থেকে জুনুব পর্যন্ত তোমার সত্য তরিকা প্রচার করব। সত্য তরিকা প্রচার করব আমরা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত। এ তরিকা ছাড়বো না। আমরা সবাই জানে মালে সত্য তরিকা প্রচার করবো।
হযরত মিয়া ভাইজানের কদম আমরা ছাড়বো না। আমরা তোমার কদম ছাড়বো না।
বাবার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার মহামান্য মিয়া ভাইজানের কদম আমরা ছাড়বো না। আমরা বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ছাড়বো না। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনার গোলামী আমরা ছাড়বো না এবং তোমার সত্য তরিকার পতাকা লইয়া মিয়া ভাইজানের হুকুম মোতাবেক আমরা মাশরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত সেমাল থেকে জুনুব পর্যন্ত তোমার এই সত্যের পতাকাখানা ইসলামের দাওয়াত দিয়া, সত্য তরিকার দাওয়াত দিয়া, আপনার সত্যের পতাকা নিয়া আমারা রওনা হবো। প্রয়োজনে মিয়া ভাইজানের কদমে জীবন বিলিয়ে দিবো।
নিশ্চয়ই খাজাবাবা আপনাদের দরখাস্ত কবুল করবেন। আল্লাহপাক আপনাদের দরখাস্ত কবুল করবেন। মদীনাওয়ালার রুহু মোবারক থেকে আল্লাহর তরফ থাইকা রহমতের ধারা আপনার উপরে নাযিল হবে।
ভাইয়েরা আমার, আজকে যে ঘোষণা দিলাম এর সাথে কি আপনারা একাত্ব? এর সংগে আপনারা একাত্ব?
খাজাবাবা, যে হুকুম আপনে দিয়া গেছিলেন, যে ওয়াদা আপনে আমাকে ফরমাইছিলেন, আজ আপনার লক্ষ লক্ষ মুরিদদেরকে সাথে নিয়ে আজকেও ওয়াদা করলাম যে, জীবনে কোন দিন আপনার কদম ছাড়বো না।
আর মিয়া ভাইজানের কদম ছাড়বো না।
আমরা আপনার বড় ছাহেবজাদার হুকুম মোতাবেক সত্য তরিকার কাজ আপনি যেভাবে শিক্ষা দিসেন আপনার কদম খেয়াল কইরা আপনার পথ বাতানো মোতাবেক, নিয়ম মোতাবেক আমরা সকলেই তার কাজ করে যাবো। ওয়া আখিরদাওয়ানা আনিলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।