বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে আলাউদ্দিন দাদার আগমনের বিবরণ।

দরবার শরীফের আলাউদ্দিন দাদাকে প্রায় সকলেই চিনেন। তিনি এক সময় আজমীর শরীফে খাজা সাহেবের দরবারে ছিলেন। ছয় বছর খেদমত করার পর বাংলা ১৩৬৬ সনের কোন এক রাত্রে তিনি স্বপ্নে দেখেন যে আজমীরের খাজা সাহেব তাকে বলিতেছেন- আমি এখন আটরশিতে আছি। তুমি আটরশি চলিয়া আস। পরদিন তিনি খুব চিন্তা ভাবনার মধ্যে কাটাইলেন। কিন্তু কাউকে কিছুই বলিলেন না।

ঐ দিন রাত্রে আবার স্বপ্নে দেখলেন যে খাজা সাহেব আটরশির পীর সাহেবকে সঙ্গে নিয়া তাহার নিকট আসিলেন। এবং পরিচয় করাইয়া দিয়া বলিলেন যে ইনিই আটরশির পীর সাহেব, তুমি তাড়াতাড়ি আটরশি যাও। সকাল বেলা খাজা সাহেবের নিকট স্বপ্নের বৃত্তান্ত খুলিয়া বলিলেন। শুনিয়া খাদেম সাহেব বলিলেন যে আপনাকে আটরশি যাইতে হইবে।

আগামী দিন আপনাকে বিদায় দিয়া দিব। পরদিন বিদায় নিয়া আজমীর শরীফ হইতে রওনা হইয়া ঢাকা পৌছিলেন। কিন্তু আটরশি কোথায়, কিভাবে যাওয়া যায় তাহার জানা ছিল না। যা হউক লােকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিতে পারিলেন যে সদরপুরের লঞ্চে উঠিলে আটরশি যাওয়া যাবে। সেমতে সদরঘাট হইতে সদপুরের লঞ্চে উঠিলেন।

লঞ্চের কেবিনে বসিয়া আলাপ আলােচনায় জানিতে পারিলেন যে এই কেবিনে আটরশির তিনজন যাত্রী আছেন। তাহারা হইতেছেন হুজুর পাকের ছােট ভাই বা আমাদের ছােট চাচাজান, হুজুর পাকের বাল্য বন্ধু কাজী তাইফুর রহমান এবং কাস্টম সুপারেন্টেডেন্ট আবদুল ওহেদ সরকার। এই লঞ্চে উনাদের পাইয়া উনি কিছু নিশ্চিন্ত হইলেন।

ওনাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে পরিচিত হইলেন এবং এ চারজন দরবার শরীফে আসিয়া কেবলাজান হুজুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। হুজুরপাক আলাউদ্দিন দাদাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, “বাবা অনেক দেরী হইয়া গিয়াছে। আপনার আরাে আগে আসা উচিৎ ছিল। যান বাবা বিশ্রাম করেন।” এই বলে চারজনকে মেহমান খানায় পাঠাইয়া দিলেন। পরের দিন বিকাল বেলা চারজনকেই ডাকাইলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাবা আপনারা কে কি জন্য আসিয়াছেন?” আলাউদ্দিন দাদা বলিলেন, “আমি দারুল ইসলাম” চাইতে আসিয়াছি।

ওয়াহেদ সরকার বলিলেন, “আমি বায়াত হইতে আসিয়াছি।” কাজী সাহেব বলিলেন, “বহুদিন যাবৎ আপনাকে দেখি না, তাই দেখিতে আসিয়াছি।” আর আমাদের চাচা মিয়া বলিলেন, আমি আমার বড় ভাই এর কদমে আসিয়াছি।” সকলের কথা শুনিয়া কেবলাজান হুজুর বলিলেন, “দুই একদিন থাকেন পরে কথা বলিব।” দুই/তিন দিন থাকার পর সরকার সাহেবকে বিদায় করিলেন।

আরও দুই/তিন দিন থাকার পর কাজী সাহেবকে ডাকিলেন। কাজী সাহেব ছিলেন উন্নতমানের একজন রং মিস্ত্রী। তাই খাজা বাবা কাজী সাহেবকে বলিলেন, “আপনিতাে ভাল কাজ জানেন। আপনার হাতের একটি কাজ দরবার শরীফে থাকুক এটাই আমি চাই। আবার কবে আসেন, না আসেন, আমি থাকি না আপনিই থাকেন, কার হায়াত শেষ হইয়া যায় কাহারাে জানা নাই।” এরপর ভিতর বাড়ী হইতে একটি পালঙ্ক খুলিয়া আনিয়া রং করার জন্য তাহাকে দেয়া হইল।

তিনি পালঙ্ক রং করার জন্য কাজ শুরু করিলেন। কাজী সাহেব কিভাবে রং এর কাজ করেন তাহা দেখার জন্য খাজা বাবা আমাকে নির্দেশ দিলেন। হুকুম পাইয়া কাজী সাহেবের নিকট বসিয়া থাকিতাম, কিভাবে কাজ করেন তাহা দেখিতাম। কাজী সাহেব অত্যন্ত মহব্বত ও মনােযােগের সাথে প্রায় এক মাস কাজ করিয়া পালঙ্কটি রং করা শেষ করিলেন। কেবলাজান হুজর কাজের মজুরী হিসাবে কাজী সাহেবকে ১৫০/- (একশত পঞ্চাশ) টাকা দিয়ে বিদায় দিলেন।

হুজুরপাক আলাউদ্দিন দাদাকে দরবার শরীফের দুইটি খেদমত দিলেন। খেদমত দুইটি হইল- হারিকেন মােছা, জ্বালানো ও ঘরে ঘরে পৌছানাে এবং রাত তিনটায় রহমতের সময় বেল বাজানাে। খেদমত যথারীতি চলিতে লাগিল। কিন্তু যখন বার বছর পূর্ণ হইতে একদিন বাকী সেই দিন রাত্রে বেল পিটাইতে গিয়া বেলটিতে একটি আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে তাহা ভাঙ্গিয়া চার টুকরা হইয়া গেল। দেখিয়া তিনি বােকা হইয়া গেলেন।

পরদিন সকাল বেলা কেবলাজান হুজুর যখন বাহিরে আসিলেন তখন তিনি হুজুর পাকের কদমে গিয়া কাদিয়া ঘটনা জানাইলেন। শুনিয়া হুজর পাক বলিলেন, “কি সর্বনাশটা হইল, বার বছরের খেদমত বিনষ্ট হইয়া গেল। যাক আপনাকে খেদমত পরিবর্তন করিয়া দিতেছি আপনি হেড কোয়ার্টারে থাকিবেন এবং যে সব চিঠিপত্র দরবারে আসে সেগুলাের জবাব দিবেন। এই খেদমতের কোন নির্দিষ্ট সময় দিলেন না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আলাউদ্দিন দাদা এই খেদমত করিয়া গিয়াছেন।

সংকলকঃ আলহাজ্জ্ব আব্দুল খালেক।
সূত্রঃ “বিশ্বওলি খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেবের কারামত” নামক বই হতে তুলে ধরা হয়েছে।

→ বিশ্বওলি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ছাহেবের আরও কিছু কারামত

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel