হোমপেজ মসনবী শরীফ মসনবী শরীফ পর্ব-৪ : মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহ:)

মসনবী শরীফ পর্ব-৪ : মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহ:)

395

[বাংলা এই ভাবানুবাদ বরিশাল থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে প্রকাশিত। এই দুর্লভ সংস্করণটি সরবরাহ করেছেন সুহৃদ (ব্যাংকার) নাঈমুল আহসান সাহেব।  সম্পাদক – কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন]

মসনবী শরীফ পর্ব-৪

“নকদে হালে খেশেরাগার পায়ে বারেম,
হাম জে দুনিয়া হাম জে উকবা বর খুরেম।”

অর্থ: মাওলানা বলেন, যদি আমি আমার বর্তমান অবস্থার কথা মনে করিয়া চিন্তা-ভাবনা করিতে থাকি, তবে আমি দুনিয়া ও আখেরাত হইতে উপকৃত হইতে পারিব।

“ইঁ হাকিকাত রা শোনো আজ গোশে দেল,
তা বিরুঁ আই বে কুল্লি জে আবো গেল।”

অর্থ: মাওলানা বলেন, এই ঘটনার হাকিকত অন্তঃকরণের কর্ণ দিয়া মনোযোগ সহকারে শুনো, তাহা হইলে তুমি তোমার জেঁছমানি (দৈহিক) কু-কাজ হইতে রেহাই পাইবে।

“ফাহমে গেরদারিদ ও জাঁরা রাহ দেহিদ,
বাদে আজাঁ আজ শওকে পা দররাহে নাহিদ।”

অর্থ: মাওলানা বলেন, মনের খেয়াল নিবিষ্ট করিয়া উৎসাহ সহকারে মনোযোগ দিয়া অনুধাবন করিতে চেষ্টা করো। অর্থাৎ, এই ঘটনা মনোযোগ সহকারে শুনিয়া ইহার অর্থ অনুধাবন করিয়া নিজের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করিয়া উহার প্রতিকারের চেষ্টায় লাগিয়া যাও।

“বুদ শাহে দর জমানে পেশে আজ ইঁ,
মুলকে দুনিয়া বুদাশ ও মুলকে দীন।”

অর্থ: মাওলানা ঘটনা বর্ণনা করিতেছেন যে, আমাদের পয়গম্বর (দঃ)-এর জামানার পূর্বে এক বাদশাহ ছিলেন। তিনি যেমন দুনিয়ার বাদশাহ ছিলেন, সেইরূপ ধর্মেরও বাদশাহ ছিলেন।

“ইত্তেফাকান শাহ রোজে শোদ ছওয়ার,
বা আখওয়াছে খেশ আজ বহারে শেকার।”

অর্থ: ঘটনাক্রমে বাদশাহ একদিন নিজ বন্ধু-বান্ধব নিয়া ঘোড়ায় সওয়ার হইয়া শিকার করিতে বাহির হইলেন।

“বাহারে ছায়েদে মী শোদ উ-বর কোহো দাস্ত,
নাগাহানে দর দামে ইশ্কে উ-ছায়েদে গাস্ত।”

অর্থ: শিকার করিতে যাইয়া একটি পাহাড়ের উপর চড়িলেন। হঠাৎ তিনি ইশকের জালে আবদ্ধ হইয়া পড়িলেন।

“এক কানিজাক দিদ উ-বর শাহে রাহ,
শোদ গোলাম আঁ কানিজাক জানে শাহ।”

অর্থ: বাদশাহ তাহার পথে এক সুন্দরী লাবণ্যময়ী দাসীকে দেখিতে পাইলেন এবং দাসীর প্রেমে বাদশাহর মন আবদ্ধ হইল। বাদশাহ উক্ত দাসীর আশেক হইয়া পড়িলেন।

“মোরগে জানাশ দর কাফছ চুঁ দর তপিদ,
দাদে মাল ও আঁ কানিজাকরা খরিদ।”

অর্থ: যেমন পাখি খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ অবস্থায় পেরেশান থাকে, সেইরূপে বাদশাহর প্রাণ দাসীর জন্য ছটফট করিতে লাগিল এবং দাসীকে খরিদ করিয়া লইলেন।

“চু খরিদ উরাও বর খোরদারে শোদ,
আঁ কারিজাক আজ কাজা বিমার শোদ।”

অর্থ: যখন খরিদ করিয়া দাসী থেকে স্বাদ গ্রহণ করিতে আরম্ভ করিলেন, তখন খোদার মর্জিতে উক্ত দাসী রোগাক্রান্ত হইয়া পড়িল।

“আঁ একে খার দাস্ত পালা নশ নাবুদ,
ইয়াফত পালান গরগে খাররা দর রেবুদ।”

অর্থ: এক ব্যক্তি, তাহার গাধা আছে; কিন্তু সওয়ার হইবার পালং নাই। যখন পালং মিলিল, তখন গাধাকে নেকড়ে বাঘে বধ করিয়া নিয়া গেল।

“কুজাহ বুদাম আব মী না আমদ বদস্ত,
আবরা চুঁ ইয়াফত খোদ কুজাহ শিকান্ত।”

অর্থ: এক ব্যক্তির পানি পান করার পিয়ালা ছিল। কিন্তু পানি পাইতেছিল না। যখন পানি পাইল, তখন পিয়ালা ভাঙ্গিয়া গেল।

ভাব: উপরোক্ত দৃষ্টান্তদ্বয় দ্বারা বুঝা যায়, এই পৃথিবীতে কাহারো মনোবাসনা পূর্ণ হয় না।

“শাহ তবিবানে জমায়া করদাজ চুপ ও বাস্ত,
গোফতে জান হর দো দর দস্তে শুমাস্ত।”

অর্থ: বাদশাহ চতুর্দিক হইতে বিজ্ঞ হেকিম ও ডাক্তার তলব করাইয়া একত্রিত করিলেন এবং বলিলেন, আমাদের উভয়ের প্রাণ তোমাদের হাতে। অর্থাৎ, আমার এবং দাসীর প্রাণ বাঁচা না-বাঁচা তোমাদের চেষ্টার উপর নির্ভর করে।

“জানে মান ছহলাস্ত জানে জানাম উস্ত,
দরদে মান্দো খাস্তাম দর মানামে উস্ত।”

অর্থ: বাদশাহ বলেন, আমার প্রাণের মূল্য কিছুই নহে, প্রকৃতপক্ষে আমার প্রাণের প্রাণ ঐ দাসী-ই। যেমন নাকি আমি রোগ এবং দাসী ঔষধ।

“হরকে দরমানে করদ মর জানে মরা,
বুরাদ গঞ্জো দোরবো মর জানে মরা।”

অর্খ: যে ব্যক্তি আমার প্রাণকে সুস্থ করিয়া দিতে পারিবে, তাহাকে আমার মুক্তার ভাণ্ডার দান করিয়া দিব। (বাদশাহর প্রাণ সুস্থ করা অর্থ দাসীকে রোগমুক্ত করিয়া দেওয়া)

“জুমলা গোফতান্দাশ কে জানে বাজি কুনেম,
ফাহম গেরদারেম ও আম্বাজী কুনেম।”

অর্থ: সমস্ত ডাক্তার ও হেকিমগণ একত্রিতভাবে উত্তর করিলেন, আমরা প্রাণপণে চেষ্টা করিয়া ইহার চিকিৎসা করিব। প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে যথাসাধ্য জ্ঞানের বিনিময় করিয়া একত্রিতভাবে চিকিৎসা করিব।

“হরি একে আজ মা মছীহ আলমিস্ত,
হর আলমরা দর কাফেফ মা মরহামীস্ত।”

অর্থ: হেকিমরা বলিলেন, আমরা প্রত্যেকেই এই যুগের মসীহ। অর্থাৎ, বিজ্ঞ ডাক্তার। প্রত্যেক রোগেরই ঔষধ আমাদের নিকট আছে।

“গারখোদা খাহাদ না গোফতান্দ আজ বাতার,
পাছ খোদাবনামুদ শানে ইজ্জে বশার।”

অর্থ: কিন্তু হেকিমেরা নিজেদের অহংকারের দরুণ খোদার নাম স্মরণ করে নাই, অর্থাৎ ইনশায়াআল্লা বলে নাই। খোদাতায়ালা তাহাদের চেষ্টা ব্যর্থ করিয়া দিয়াছেন। তাহারা অপারগ হইয়া ফিরিয়া গেল।

“তরকে ইছতেছ না মুরাদাম কাছ ওয়াতিস্ত,
নায়ে হামী গোফতানকে আরেজে হালিস্ত।”

অর্থ: ইনশায়াল্লাহ না বলার দরুণ তাহাদের কঠিন অন্তঃকরণ প্রমাণিত হইয়াছে। শুধু মুখ হইতে বলা আর না বলা যাহা ধরা যায় না, সেইভাবে হয় নাই।

মসনবী শরীফ
মূল: মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহ:)
অনুবাদক: এ, বি, এম, আবদুল মান্নান
মুমতাজুল মোহদ্দেসীন, কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা।

সূত্রঃ https://mishukifti.wordpress.com/

→ মসনবী শরীফ সবগুলো পর্ব