আদব, বুদ্ধি, মহব্বত ও সাহসের আলোচনাঃ

আদব, বুদ্ধি, মহব্বত ও সাহসের আলোচনাঃ

খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞান অর্জন চারটি মূল নীতির উপর দন্ডায়মান। যথা-আদব, বুদ্ধি, মহব্বত ও সাহস।

আদবঃ- পীরের হাতে মুরীদকে এমন ভাবে থাকিতে হয় যেমন ধৌতকারীর হাতে মুর্দা থাকে। ধৌতকারীর নিকটে মুর্দা বা শবদেহের যেমন কোন ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকে না, ধৌতকারী মুর্দাকে যেমন ভাবে নাড়ায়, মুর্দা বা শবদেহ সেই ভাবেই নড়ে; তোমরা যাহারা খোদাতায়ালাকে পাইতে চাও, পীরের হাতে তেমনি শবদেহ বা মুর্দার মতই থাক। ইহাই আদব।

পীরের ইচ্ছায় নিজের ইচ্ছাকে বিলীন করিতে হয়। পীর যখন যাহা নির্দেশ দান করেন, কাল বিলম্ব না করিয়া তাহা পালন করিতে হয়। পীরকে ভক্তি শ্রদ্ধা সবচেয়ে বেশী করিতে হয়। কারণ দুনিয়ার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করা গেলেও পীরের ঋণকে পরিশোধ করা যায় না। পীরের তাওয়াজ্জুয়ে এত্তেহাদীর বলেই মুরীদের দেলের কালিমা দূর হয়, সেখানে এসমে জাত ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ জেকের জারী হয়। পীরের দয়াতেই মানুষ তাহার চিরশত্রু, অদম্য জানোয়ার, নাফসে আম্মারাকে মজবুত শৃংখলে আবদ্ধ করিতে পারে। পীরের দয়াতেই মুরীদের দেল হইতে দুনিয়ার মহব্বত দূর হয়। হযরত হাছান বসরী (রঃ) ছাহেব বলেন, “মুহূর্তকালের জন্য দুনিয়ার প্রতি বিরাগ বা বিতৃষ্ণা হাজার বছরের রোজা-নামাজের চাইতে উত্তম।” দুনিয়াকে অবহেলা করার ক্ষমতা অর্জন পীরের দয়া ভিন্ন সম্ভব হয় না। পীরের তাওয়াজ্জুয়ে এত্তেহাদীতে মুরীদ শয়তানের কু-প্ররোচনার হাত হইতে বাঁচিতে পারে। পীরের দয়াতেই মুরীদ চিরস্থায়ী জীবনের সন্ধান পায়, অদৃশ্য জগত অবলোকন করে। । পীরের নেকদৃষ্টিতেই মুরীদ জড় জগত, নূরের জগত ও সিফাতের জগত পার হইয়া খোদাতায়ালার সান্নিধ্য অর্জন করে।

হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব তদীয় ‘মাবদা ওয়া মা’আদ’ নামক কিতাবে বলেন যে, “মহান খোদাতায়ালার রেযা বা সন্তুষ্টিকে পীরের রেযা বা সন্তুষ্টির পশ্চাতে রাখা হইয়াছে। যতক্ষণ না মুরীদ

নিজেকে স্বীয় পীরের সন্তুষ্টির মধ্যে বিলীন করিয়া দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মহান খোদাতায়ালার রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হয় না। মুরীদের সবচেয়ে বড় বিপদ হইল পীরের অসন্তুষ্টি। সব রকমের ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ সম্ভব। কিন্তু পীরের অসন্তুষ্টির কারণে যে ক্ষতি হয়, তাহা পূরণ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। পীরের অসন্তুষ্টি মুরীদের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ। পীরের অসন্তুষ্টিতে মুরীদের দীনি আকিদায় ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং শরীয়তের হুকুম-আহকাম প্রতিপালনে অলসতা আসে; বাতেনী হাল বা উচ্চ মাকাম সমূহে উত্তীর্ণের কোন প্রশ্নই আসে না। পীরের অন্তরে কষ্ট দেওয়ার পরেও যদি মুরীদের মধ্যে কোন প্রকার হালের প্রভাব থাকে, তবে ইহাকে ছলনা মনে করিতে হইবে। কেননা শেষ পর্যন্ত ইহার প্রতিফল খারাপই হয় এবং তাহার পরিণতি ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই নয়।”

কাজেই খোদাপ্রাপ্তির পথে মুরীদকে সর্বদাই পীরের আদব ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখিতে হয়। হযরত মাওলানা রূমী (রঃ) ছাহেব বলেন যে, “বেয়াদব মারূমে গা আজ ফাজলে রাব।” অর্থাৎ বেয়াদব আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। পীরই যেহেতু খোদাপ্রাপ্তির অছিলা, চির হায়াত প্রাপ্তির মাধ্যম, পীরের হক তাই সকলের উপরে রাখিতে হয়; পীরের প্রতি চরম আদব প্রদর্শন করিতে হয়। হযরত জোনায়েদ বোগদাদী (রঃ) ছাহেব তদীয় তাছনিফাতে বলেন,

التَّصَوُّفُ هُوَ الْأَدَبُ

অর্থাৎ-‘আদব রক্ষা করার নামই তাছাউফ।’ আর রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন,

الأَدَبُ خَيْرٌ مِّنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ

অর্থাৎ-‘আদব বা শিষ্টাচার স্বর্ণ ও রৌপ্য হইতেও অধিক মূল্যবান ও শ্রেয়।’ উল্লেখ্য যে, পীরের প্রতি মুরীদের আদব প্রসংগে বিস্তারিত লেখা আছে নসিহতসমূহের প্রথম খন্ড ‘আদাবুল মুরীদ’ নামক পুস্তকে।

বুদ্ধিঃ- খোদা প্রাপ্তির পথে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন। সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধি ছাড়া পীরের ইশারাকে বুঝা যায় না। পীরের ইশারাকে না বুঝিলে খোদাপ্রাপ্তির আশা বৃথা। মারেফাতের ভাষা ইশারাপূর্ণ। কাজেই পীরে কামেল যাহাই বলুন না কেন তাহাই ইশারাপূর্ণ থাকে। ইশারার মর্ম উপলব্ধি করিবার জন্য চাই সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও প্রখর মেধা। আমার পীর কেবলাজান ছাহেব বলেন, “পীরের ইশারা যে বুঝে না, দীন ও দুনিয়া উভয়ই সে খোলা দিয়া খায় অর্থাৎ ইহকাল পরকাল উভয়ই বরবাদ করে।”

এক কামেল পীরের বহু সংখ্যক মুরীদান ছিল। তন্মধ্যে দুই সহোদর ভ্রাতা একত্রে উক্ত পীরের খেদমতে রত ছিল। ভ্রাতাদ্বয়ের মধ্যে ছোট ভাইয়ের প্রতি পীরের স্নেহের দৃষ্টি অন্যান্যদের চেয়ে একটু বেশীই ছিল। ইহা দৃষ্টে হিংসার বশবর্তী হইয়া বড় ভ্রাতা কিছু সংখ্যক পীরভাইকে সংগে করিয়া একদিন পীরের নিকট অভিযোগ করিল। সে বলিল যে, হুজুর তাহার ছোট ভাইকেই বেশী আদর করে, স্নেহ করে। সেদিন পীর ছাহেব অভিযোগকারীদের অভিযোগের কোন জবাব দিলেন না। পরবর্তী দিনে পীর ছাহেব, সহোদর দুই ভাইয়ের জ্যেষ্ঠকে আহবান পূর্বক বলিলেন, “বাবা, আমার উটশালার বড় উটটিকে ছাদের উপরে লইয়া যাও।” জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা পীরের ইশারা না বুঝিয়া পীর ছাহেবকে বরং বলিল, “হুজুর, উট কিভাবে ছাদের উপর উঠিবে?” ইহা শ্রবণে পীর ছাহেব বলিলেন, “বাবা, তাইতো, উটতো ছাদে উঠিতে পারে না। তবে তুমি তোমার ছোট ভাইকে ডাক।” ছোট ভাই আসিলে পীর ছাহেব তাহাকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেন, “বাবা, আমার ঐ উটটিকে তুমি সিড়ি দিয়া বিল্ডিং-এর ছাদে লইয়া যাও।” কনিষ্ঠ ভ্রাতা নির্দেশ পাওয়া মাত্র কাল বিলম্ব না করিয়া উটটিকে রশি ধরিয়া টানিয়া ছাদের উপরে নেওয়ার চেষ্টা করিতে লাগিল। কিন্তু উটতো আর ছাদে উঠে না। মুরীদ উটটিকে উপরে নেওয়ার জন্য টানিতে থাকে। আর উট পিছু হটিবার চেষ্টা করে। এই টানাটানির ভিতর বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরে পীর ছাহেব সেই মুরীদকে ডাকিয়া বলিলেন, “বাবা, উট ছাদে উঠিবে না। তুমি আর চেষ্টা করিও না। তৎপর অভিযোগকারী জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে ডাকিয়া বলিলেন, তোমার কনিষ্ঠ ভাইকে অধিক স্নেহ বা আদর করার ইহাই কারণ।” পরবর্তীতে ভ্রাতাদ্বয়ের কনিষ্ঠ জন আল্লাহর ওলী হইলেন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা পীরের ইশারা না বুঝিয়া বেয়াদবী করিবার কারণে উন্মাদ হইল, ইহকাল পরকাল উভয়ই হারাইল।

মহব্বতঃ- খোদাপ্রাপ্তির এই রাস্তায় পীরকে ভালবাসিতে হয় সবচেয়ে বেশী। নিজের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, পুত্র-পরিজন, ধন-সম্পদ, এমন কি নিজের জীবনের চেয়েও পীরকে বেশী মহব্বত করিতে হয়। পীরের মহব্বত দেলে পয়দা হইলে, আল্লাহ ও রাসূলের মহব্বত দেলে পয়দা হয়। আল্লাহ ও রাসূলের মহব্বত অর্জনের প্রধান শর্তই হইল পীরের মহব্বত অর্জন করা।

সাহসঃ- খোদাপ্রাপ্তির পথে সাহসের একান্ত প্রয়োজন। অদম্য সাহস ব্যতীত পীরের কঠিন কঠিন আদেশ প্রতিপালন সম্ভব নয়। পীর হয়তো তোমাকে নির্দেশ দিলেন, “তুমি অমুক রাস্তা দিয়া যাও। তোমাকে বিদায় দেওয়া হইল।” তুমি রওয়ানা দিলে। কিছুদূর যাইতে না যাইতেই দেখিতে পাইলে যে রাস্তার উপর বসা আছে, বিরাটাকৃতির এক ক্ষুধার্ত বাঘ। তখন তুমি কি করিবে? পীরের নির্দেশমত তুমি যদি সেই পথ দিয়া সম্মুখপানে অগ্রসর হও, তাহা হইলে ইহা নিশ্চিত যে তুমি বাঘের আহারে পরিণত হইবে অর্থাৎ তোমাকে মরিতে হইবে। আর যদি ফেরত আস, তাহা হইলে পীরের নির্দেশকে অমান্য করা হবে। ফলে পীরের তরফ থেকে আগত পরীক্ষায় তুমি অকৃতকার্য হইবে। উদ্দিষ্ট কর্মে তুমি সফলকাম হইতে পারিবে না। এখানে প্রয়োজন সাহস, অসীম সাহসের। মৃত্যুকে নিশ্চিত জানিয়াও সেই পথে অগ্রসর হইতে হইবে। ইহাতে পীরের সন্তুষ্টি অর্জন করিতে পারিবে। পীরের তাওয়াজ্জুয়ে এত্তেহাদীতে পথিমধ্যেই বাঘও তোমাকে পথ ছাড়িয়া দিবে। তোমার জীবন রক্ষা পাইবে। আর পীরের সন্তুষ্টির পশ্চাতে থাকে মহান খোদাতায়ালার সন্তুষ্টি। ফলে খোদাতায়ালাও তোমার উপর রাজী ও খুশী হবেন।

আদব, বুদ্ধি, মহব্বত ও সাহস-এই চার নীতির উপর খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্ব অর্জন নির্ভর করে। চার নীতির মধ্যে মহব্বতের গুরুত্ব সর্বাপেক্ষা বেশী। মহব্বত দুই প্রকার-মহব্বতে সিফাতি ও মহব্বতে জাতি। প্রাথমিক পর্যায়ে মুরীদ পীরকে যে ভালবাসে তাহা মহব্বতে সিফাতি পর্যায়ের ভালবাসা। পীরের উত্তম চরিত্র, সৎগুণাবলী, অমায়িক ব্যবহার; তদুপরি নিশীথে মুরীদের ব্যাথামোচনে খোদাতায়ালার নিকট ক্রন্দন ইত্যাদি দর্শনে মুরীদ পীরকে ভালবাসে, মহব্বত করে। ইহা সিফাতি পর্যায়ের মহব্বত।

কিন্তু মহব্বতে জাতি তাহা নয়। পীরের সুনাম-সুখ্যাতি, গুণাগুণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মধুর বা নিষ্ঠুর আচরণ কোন দিকে দৃষ্টিপাত না করিয়া মুরীদ পীরকে যে মহব্বত করে, তাহাই মহব্বতে জাতি। পীরের প্রতি যে মহব্বত-তাহা যদি জাতি পর্যায়ে না পৌঁছায়, তাহা হইলে খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞান অর্জন মুরীদের পক্ষে সম্ভব নয়। পীরের প্রতি মহব্বত বা প্রেম জাতি পর্যায়ের হইলে খোদাপ্রাপ্তির পথের সকল কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব হয়।

পীর ও মুরীদের খেলা অত্যন্ত কঠিন। মুরীদকে বিপদ সমুদ্রে নিক্ষেপ করিয়া পীর সাগরপারে বসিয়া থাকেন। বিপদের এক ঢেউ-এ মুরীদ তলাইয়া যায়, আর এক ঢেউ-এ ভাসিয়া উঠে। আর তদীয় পীর পারে বসিয়া ইহা অবলোকন করেন। যে মুরীদ ইহা সত্ত্বেও পীরকে ভালবাসে, সেইতো মহব্বতে জাতির অধিকারী। পীর তাহার উপর সন্তুষ্ট হইয়া তাওয়াজ্জুহ প্রয়োগ করেন। ফলে মুরীদের রাবেতা-এ-কালব-ফিশ-শেখ হাছিল হয় যাহা ফানা-ফিশ-শেখের প্রাথমিক পর্যায়। রাবেতা সম্পর্কে নসিহত সমূহের ২য় খন্ড ‘তরিকতের পাঁচ রোকন’ নামক পুস্তকে বিস্তারিত বলা হইয়াছে।

রাবেতা-এ-কালব-ফিশ-শেখ হাছিল হইলে মুরীদ পীরের ছুরাতে মেছালীকে সব সময়ই সম্মুখে পায়। পীরের ছুরাতে মেছালীকে যে মুরীদ ধরিতে পারে, সে না চাইতেই পীরকে সর্বদাই নিকটে পায়। পৃথিবীর যে প্রান্তেই সে অবস্থান করুক না কেন, পীরকে সে তেমনি নিকটে পায় যেমন তোমরা আমার সাথে আমার হুজরায় সাক্ষাত কর। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সবসময়ই সে পীরের তাঈদ-মদদ পায়। আল্লাহ প্রাপ্তিও তাহার জন্য সহজ হয়। তরিকতের রাস্তায় প্রধানতম দুই শত্রু-শয়তান ও নাফস তাহার কোনই ক্ষতি করিতে পারে না। কারণ রাস্তায় প্রতি কদমে সে পীরের তাছাউর বা রাবেতা বা ছুরাতে মেছালীর মাধ্যমে নির্দেশ পায়।

শয়তান বা নাফস সেই পথিককে পথচ্যুত করিবার কোন ফাঁকফোকড়ই আর খুঁজিয়া পায় না। ফলে মুরীদের দেল থেকে যেমন দুনিয়ার মহব্বত দূর হয়, তেমনি নাফস ও শয়তানের প্ররোচনা বা ফেরেব থেকেও সে রক্ষা পায়। ধীরে ধীরে মুরীদের কালবসহ অন্যান্য লতিফা জাগ্রত হয়। মুরীদের লতিফায়ে কালেবও জারী হয়। ৭০,০০০ লতিফা বিশিষ্ট লতিফায়ে কালেবের মাধ্যমে সে সদা আল্লাহর জেকের করিতে থাকে। তৎপর মুরীদ সুলতানুল আজকারের মর্যাদা প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ তেত্রিশ কোটি লতিফার সাহায্যে মহাধুমধামে সে জেকের করিতে থাকে। মুরীদের লতিফা সমূহের সহিত আল্লাহতায়ালার নূরের কানেকশনও সৃষ্টি হয়।

সূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তিজ্ঞানের আলোকে- শাহসূফী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের “নসিহত” ১ম খন্ড (বিষয়ঃ “আদাবুল মুরিদ” এর অংশ বিশেষ)।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel