তিন প্রকার মুরীদের পরিচয়ঃ
মুরীদ তিন প্রকারঃ দেলী, মালী ও রছমি।
মুরীদে দেলীঃ মুরীদে দেলী ঐ মুরীদকে বলা হয়, যে খোদাতায়ালাকে পাওয়ার পথে নিজের দেলকে সদাসর্বদা নিযুক্ত রাখে। আপন পীর ছাহেব কেবলাজান তাহাকে যে কর্ম ও ইবাদতের নির্দেশ দান করেন, মুরীদ সেই নির্দেশই সর্বতোভাবে প্রতিপালনে নিয়োজিত থাকে। সেই নির্দেশিত কর্মের প্রতি কখনই উদাসীনতা বা অবহেলা প্রদর্শন করে না। আপন পীরের প্রতি ভয় ও ভক্তি সর্বদা তাহার দেলের মধ্যে বিরাজিত থাকে। কোন মন্দ কর্ম সম্মুখে আসিলে পীরের ভয় তাহাকে ঐ কর্ম হইতে নিরস্ত রাখে। আপন পীরের প্রতি ভক্তি এমন প্রবল থাকে যে, তাহার খেদমত করায় নিজেকে চরিতার্থ মনে করিয়া তাহাতে সন্তুষ্ট থাকে। তাহার এই অবস্থা উদ্দেশ্য সাধনের পথে প্রধান অবলম্বন চিন্তা করে। এই রূপ মুরীদকে যোগ্য ও প্রকৃত মুরীদ বলে।
মুরীদে মালীঃ মুরীদে মালী ঐ মুরীদগণকে বলে, যাহারা পীরের দরবারে প্রচুর আর্থিক খেদমত করে অথচ পীরের নির্দেশিত নিয়মে ইবাদত বন্দেগী নিত্য ও রীতিমত করিতে সততই ত্রুটি করিয়া থাকে। যদিও ঐ মুরীদ’ এক সময়ে মন নিবিষ্ট করিয়া নির্দেশিত পথে কার্য পালনে রত হয়, অপর সময়ই আবার পরিত্যাগ করে। আপন পীরের ভয় তাহাদের মনের মধ্যে অতি অল্প থাকে। আপন পীরের নির্দেশিত পথে নিত্য ইবাদতের আদেশ পালনের অক্ষমতা সম্বন্ধে তাহারা পীরের নিকট বিভিন্ন কারণ দর্শাইয়া তাঁহাকে সম্মত করাইতে চেষ্টা করে। এই রূপ মুরীদগণও পীর হইতে কিছু উপকার প্রাপ্ত হয়। উহাদের মুরীদ হওয়া একেবারে নিস্ফল হয় না।
মুরীদে রছমিঃ মুরীদে রছমি ঐ মুরীদগণকে বলে যাহারা পীর ছাহেবের অবস্থাদি দেখিয়া মনে ভক্তি মহব্বত না করিলেও অপরের দেখাদেখি মুরীদ হয়। আপন পীরের আদেশ পালনে উহাদিগকে কখনই তৎপর দেখা যায় না। বরং কেহ কেহ দ্বিতীয় বার পীরের সহিত সাক্ষাত করারও চেষ্টা করে না। তাহারা মনে করে যে, “যাহার পীর নাই তাহার পীর শয়তান, সুতরাং পীর ধরা নিতান্ত আবশ্যক, পীর ধরিলেই উদ্ধার পাওয়া যায়। তাঁহার নিকট সবসময় যাওয়া আসার কোন প্রয়োজন নাই।” এই বিবেচনা করিয়া কোন প্রকারে কাহারও নিকট মুরীদ হইতে পারিলেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইয়া গিয়াছে বলিয়া মনে করে। পীরের নির্দেশিত পথে নিয়োজিত থাকিবার কোন প্রয়োজন তাহারা অনুভব করে না। ইহাদিগকে কেবল নামের মুরীদ বলিয়া জানিতে হইবে।
সূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তিজ্ঞানের আলোকে- শাহসূফী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের “নসিহত” ১ম খন্ড (বিষয়ঃ “আদাবুল মুরীদ” এর অংশ বিশেষ)।