ফানার মূল তিনটি স্তরের আলোচনাঃ
পীরের তাওয়াজ্জুহ এত্তেহাদীর প্রয়োগে মুরীদের রূহ তদীয় দৈহিক খাঁচা হইতে বাহির হইয়া ঊর্ধ্বদিকে গমন করে। তৎপর ফানার মূল তিনটি স্তর অতিক্রম করিয়া খোদাতায়ালার জাতের সান্নিধ্য লাভ করে।
স্তর তিনটি হইলঃ-
ফানা-ফিশ-শেখ।
ফানা-ফির-রাসূল ও
ফানাফিল্লাহ্।
ফানা-ফিশ-শেখঃ ইহা রাবেতা-এ-কালব-ফিশ-শেখের চূড়ান্ত পর্যায়। ফানা আরবী শব্দ-যাহার অর্থ বিলুপ্ত বা লয় হওয়া। ফানা-ফিশ-শেখের অর্থ আপন পীরের সত্তায় বিলুপ্ত হওয়া। ফানার জন্য মহব্বতে জাতি অত্যাবশ্যক। মহব্বতে জাতি পয়দা হইলে মুরীদ পীরের যে ছুরাতে মেছালীকে সর্বত্রই দেখিতে পায়, পীরের সেই ছুরাত বা রাবেতা তাহাকে পথ প্রদর্শন করিয়া জড় জগত পার করাইয়া নূরের জগতে পৌঁছায়। মুরীদের রূহ সিফাতে এরাদতের পর্দার নিকটে আসিয়া এরাদতের পর্দার মাধ্যমে জাত আহাদিয়াতের’ ফয়েজ লাভ করে।
আহাদিয়াতের ফয়েজ জাত হইতে সিফাতের পর্দা দিয়া রাসূলে পাক (সাঃ) এর দেলের যোগাযোগে পীরের দেল হইয়া মুরীদের দেলে আসে এবং দেল হইতে সমস্ত শরীরের উপর পড়ে। এই মাকামকে জাত আহাদিয়াতের মাকাম বলা হয়। যদিও এই আহাদিয়াত প্রকৃত নয়। প্রকৃত আহাদিয়াত মুরীদ শেষোক্ত মাকামে প্রাপ্ত হয়। এই জাত আহাদিয়াতের মাকামে ছালেক বা মুরীদের ফানা-ফিশ-শেখ সম্পূর্ণ রূপে সিদ্ধ হয় যাহা শুরু হইয়াছিল রাবেতা-এ-কালব-ফিশ-শেখের মাধ্যমে। এখানে আসিলে মুরীদের কালব পীরের কালবে, মুরীদের লতিফায়ে রূহ পীরের লতিফায়ে রূহে, মুরীদের লতিফায়ে ছের পীরের ছেরে মিলিত হয়। এইরূপ মুরীদের দশ লতিফাই পীরের দশ লতিফার সহিত মিলিত হয়।
মুরীদের লতিফায়ে কালেব, পীরের লতিফায়ে কালেবের সহিত; মুরীদের ৩৩ কোটি লতিফাই পীরের ৩৩ কোটি লতিফায় বিলুপ্ত হয়। ইহা ছাড়াও মুরীদের রূহের ছয় ছুরাত-ছুরাতে অছলী, ছুরাতে মেছালী, ছুরাতে রূহানী, ছুরাতে জেছমানী, ছুরাতে জাহেরী, ছুরাতে বাতেনী পীরের ছয় ছুরাতে বিলুপ্ত হয়। মুরীদের হায়াতে ওহাদানী, হকিকতে ওহাদানী, খেয়াল খেয়ালে, নজর, বরজখ, সবই পীরের হায়াতে ওহাদানী, হকিকতে ওহাদানী, খেয়াল খেয়ালে, নজর ও বরজখের সহিত বিলুপ্ত বা ফানা হয়। মুরীদ নিজেকে সম্পূর্ণ ভুলিয়া যায়। পীরের রূহকে মুরীদ আপন রূহ মনে করে। ইহাই ফানা-ফিশ-শেখের মাকাম।
ফানা-ফির-রাসূলঃ– ইহার পরে আসে ফানা-ফির-রাসূলের পর্যায়। এই অবস্থায় জাত আহাদিয়াতের ফয়েজ লইতে হইলে মাঝখানে থাকে শুধু রাসূলে-পাক (সাঃ)। এই অবস্থায় আহাদিয়াতের ফয়েজ বা নূর পবিত্র জাত হইতে রাসূলে পাক (সাঃ) এর দেল হইয়া পীরের সত্ত্বায় বিলুপ্ত মুরীদের দেলে আসিয়া পড়ে। ধীরে ধীরে নূরের পতন বৃদ্ধি পাইতে থাকে। এক পর্যায়ে নূর এত বেশী পরিমানে পড়িতে থাকে যে মুরীদ রাসূলে-পাক (সাঃ) ভিন্ন নিজের বলিয়া জানা পীরের রূহকেও ভুলিয়া যায়। ধীরে ধীরে বেলায়েতে ছোগরা বা মা’ইয়াতের মাকামে প্রবেশ করে। বেলায়েতে ছোগরা আল্লাহপাকের আসমা ও সিফাতের প্রতিবিম্বের দায়েরা। এখানে সিফাতে এজাফিয়া ও সিফাতে হাকীকীর নূর একত্রিত হইয়া নূরের এমনই এক মহাসমুদ্র তৈরী করে; যাহার কোন কুল কিনারা নাই। বেলায়েতে ছোগরার দায়েরাই ফানা-ফির-রাসূলের মাকাম। এখানে পীরের রূহ রাসূলে পাক (সাঃ) এর রূহে বিলুপ্ত হয়। মুরীদ পূর্বেই পীরের রূহে বিলুপ্ত থাকে। ফলে সমুদয় নূরই রাসূলে করীম (সাঃ) এর রূহের উপর পড়ে। রাসূলে-পাক (সাঃ) এর আত্মায় বিলুপ্ত হইলেও মুরীদের এক প্রকার চৈতন্য গুণ থাকে, সেই গুণের মাধ্যমে এই মোকামে সে এক অনাবিল শান্তি অনুভব করে। ইহার পরে আসে ফানা-ফিল্লাহর দায়েরা।
‘ফানাফিল্লাহ’-এর বিভিন্ন স্তরের আলোচনাঃ
ফানা-ফিল্লাহঃ- ফানা-ফিল্লাহর আভিধানিক অর্থ আল্লাহতে বিলুপ্তি। ইহার ভাবগত অর্থ হইল নিজ সত্ত্বার প্রতি অণু-পরমাণুতে আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করা। ফানাফিল্লাহর বেশ কয়েকটি স্তর আছে।
- বেলায়েতে ছোগরার স্তরে ফানা।
- আকরাবিয়াতের স্তরে ফানা।
- কাওছের দায়েরা বা স্তরে ফানা।
- বেলায়েতে উলিয়ার স্তরে ফানা।
- কামালাতে নবুওতের স্তরে ফানা। এবং
- সর্বশেষে আসমা, সিফাত, শান, শয়ুনাত ও ইতেবারে সমুদয় পর্দা উন্মোচিত অবস্থায় আল্লাহর জাতে ফানা।
উরুজ ও ছায়েরের মূল উদ্দেশ্যই খোদাতায়ালার মারেফাত বা পরিচয় বা নৈকট্য লাভ করা। ফানার বিভিন্ন স্তর থাকায় মারেফাত বা খোদাতায়ালার সান্নিধ্যেরও বিভিন্ন স্তর আছে। যিনি ফানার সর্বশেষ স্তরে পৌঁছাইতে পারেন, যদিও তথায় পৌঁছানো অতিশয় কঠিন, তিনি খোদাতায়ালার পরিপূর্ণ পরিচয় লাভ করেন।
বেলায়েতে ছোগরার স্তরে ফানাঃ– ইহা আল্লাহপাকের আসমা ও সিফাতের প্রতিবিম্বের মাকাম। মূল নূরের চেয়ে প্রতিবিম্বের তীব্রতা বেশী হওয়ায় এই দায়েরাতে ছালেকের হুশ জ্ঞান থাকে না। স্বাভাবিক জ্ঞান-বিবেক নূরের প্রখরতায় লোপ পায়। এই দায়েরাতে নবী করীম (সাঃ) এর রূহে বিলুপ্ত ছালেকের উপর ছয় দিক বা দশ দিক হইতে নূরের এমনি প্রবাহ আসিতে থাকে যে, মুরীদ সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ডকে সেই নূরে নিমজ্জিত দেখে, এমন কি নিজেকেও সেই নূরে হারাইয়া ফেলে। ছালেকের নিকট শুধু নূরই নূর দৃষ্ট হয়। এই অবস্থাতে ছালেক শরীয়ত বিরোধী বহু কথাই বলিয়া ফেলে, যাহাকে কুফ্রে তরিকত বলে। এই অবস্থাতে ছালেকের না থাকে আহার-বিহারের খেয়াল, না থাকে পোশাক-পরিচ্ছদের খেয়াল। এই ফানা মূলতঃ আল্লাহর আসমা ও সিফাতের প্রতিবিম্বিত নূরে ফানা। এই ফানায় যে মারেফাত বা খোদাতায়ালার পরিচয় পাওয়া যায়, তাহা ফানার উচ্চ স্তরসমূহের মারেফাতের নিকট ধর্তব্যই নয়। এই দায়েরায় প্রাপ্ত মারেফাতকে হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব, “মতরূহ ফিত্ তরীক”-অর্থাৎ মারেফাতের রাস্তায় ফেলিয়া দেওয়া খড়কুটা বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।
আকরাবিয়াতের স্তরে ফানাঃ- আকরাবিয়াত বেলায়েতে কোবরার প্রথম দায়েরা। ইহা আসমা ও সিফাত সমূহের স্থান। আল্লাহ বলিতে জাত ও সিফাতের সম্মিলিত অবস্থাকে বুঝায়। সিফাত ও জাতের মাঝখানে আরও দুইটি অবস্থা আছে। তাহা হইল শান’ ও ইতেবার’। জাত যেমন পৃথক অস্তিত্বধারী, সিফাতে হাকীকীও তেমন পৃথক অস্তিত্বধারী। কিন্তু শান বা ইতেবারের পৃথক কোন অস্তিত্ব নাই। ইহা জাতেরই অন্তভুক্ত। আকরাবিয়াত সিফাতে হাকীকীর দায়েরা। সিফাতে হাকীকী হইল হায়াত, এলেম, কুদরত, এরাদত, সামাওয়াত, বাছারাত, কালাম ও তাকবীন। প্রত্যেকটি সিফাতই পৃথক পৃথকভাবে অস্তিত্বধারী। সিফাতের এই আটটি বিশাল বিশাল জগত অতিক্রম না করিলে খোদাতায়ালার জাতের সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব নয়। এই দায়েরাতে ছালেকের নিকট মনে হয় যে, আকরাবিয়াতের ফয়েজ খোদাতায়ালার যে জাত ছালেকের জান রগ হইতেও নিকটবর্তী, সেই জাত হইতে বেলায়েতে কোবরার প্রথম দায়েরা আসমা ও সিফাত দিয়া ছালেকের রূহ হইয়া নাফস ও তথা হইতে সারা শরীরে পড়ে। এই দায়েরায় ছালেকের মনে হয় যে, আকরাবিয়াতের ফয়েজান ইষৎ নীলিম পর্দা হইতে বাহির হইয়া সমুদয় জগতকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিতেছে। ছালেকের রূহ সিফাতে এরাদতে বিলীন হয়। ছালেকের জীবন সিফাতে হায়াতে, জ্ঞান-বিবেক সিফাতে এলেমে, ছালেকের ক্ষমতা সিফাতে কুদরতে, শ্রবণ শক্তি সিফাতে সামাওয়াতে, দর্শন শক্তি সিফাতে বাছারাতে, কথন শক্তি সিফাতে কালামে এবং সৃজন শক্তি সিফাতে তাকবীনে বিলীন হয়। অর্থাৎ প্রতিবিম্বজাত যে গুণসমূহ আমানত স্বরূপ ছালেককে দেওয়া হইয়াছে, তাহা স্ব-স্ব মূলে বিলুপ্ত হয়। খোদাপ্রদত্ত আমানত যাহা ছালেক নিজের বলিয়া মনে করিত, তাহা ফেরত দেওয়া এই দায়েরাতে সংঘটিত হয়। ছালেকের নিজস্ব বলিয়া আর কিছুই থাকে না। সে শূন্য হয়। এই দায়েরাতে নূরের পতন অত্যন্ত অধিক হয়। এখানে না থাকে পীরের রাবেতা বা তাছাউর, না থাকে রাসূলে পাক (সাঃ) এর তাছাউর; চতুর্দিকে শুধু খোদাই খোদা দৃষ্ট হয়। এই ফানাও প্রকৃত ফানা ফিল্লাহ নয়। ইহা আসমা ও সিফাতের নূরে ফানা। প্রকৃত ফানা হয় কাওছের দায়েরাতে।
কাওছের দায়েরাতে ফানাঃ- আকরাবিয়াত হইতে কাওছের দায়েরার মধ্যবর্তী মহব্বতে আওয়াল ও মহব্বতে ছানী নামক বিশাল বিশাল দুইটি দায়েরা আছে। ছালেকের রূহ সিফাতে এরাদতে (আকরাবিয়াতের মাকামে) বিলুপ্ত হওয়ায় সেখান হইতে ঊর্ধ্বে মুরীদের আত্মার কায়া বা রূহে বেমেছালীর ছুরাত অগ্রসর হয়। এই রূহে বেমেছালীর ছুরাত পূর্বে উল্লিখিত নীলিম পর্দাকে ভেদ করিয়া উপরে গমন করে এবং এক অনাদী অনন্ত জ্যোতির্ময় প্রান্তরে প্রবেশ করে। প্রান্তরের প্রথম ভাগ মহব্বতে আওয়াল এবং দ্বিতীয় ভাগ মহব্বতে ছানী। এই দুই দায়েরাকে মহব্বতের দায়েরা বলা হয়। এখানে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও পরিচ্ছন্ন নূর ছালেকের নাফসের উপর পতিত হয় এবং ছালেকের নাফস খোদা প্রেমে এমনই মাতোয়ারা হয় যে নিজের উপর ‘আমি’ শব্দ প্রয়োগ করিতেও সে লজ্জাবোধ করে। এখান হইতে ছালেকের রূহে বেমেছালীর ছুরাত বা আত্মার কায়া কাওছে আসিয়া উপনীত হয়। এই দায়েরা মূলতঃ নাম, গুণ ও শানাদির আসলের মূলের মূল স্থান। এই কাওছকে অর্ধ দায়েরা ধরা হয়। বাকী অর্ধেক মূল জাতকে ধরা হয়। ফলে দুই কাওছ বা ধনু লইয়া এক দায়েরা পূর্ণ হয়। কাওছের মাকামে ছালেকের আত্মার কায়া বিদ্যুতের চেয়ে অধিক বেগে জাতে বিলুপ্ত হয়। এখানে আসিয়া ছালেকের আমানত ফেরত প্রদান পূরাপুরিভাবে সম্পন্ন হয়। এখানে না থাকে প্রেম, না থাকে প্রেমিক; না থাকে উপাস্য, না থাকে উপাসক; সবই একেতে (আল্লাহতে) লয় হয়। ইহাই প্রকৃত ফানা-ফিল্লাহ বা আল্লাহতে বিলুপ্তি।
বাকা বিল্লাহঃ উল্লিখিত ফানার পরে আল্লাহপাক ছালেককে এক প্রকার চৈতন্য গুণ প্রদান করেন। এই চেতন গুণের সাহায্যে ছালেক নিজেকে সৃষ্ট হিসাবে বুঝিতে পারে। পরক্ষণেই তাইনে আওয়ালে আসিয়া খোদাতায়ালার প্রকার বিহীন এক প্রকার সূক্ষ্মজ্যোতি দেখিতে পায়, যাহা সমুদয় সৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করিয়া আছে। এই জ্যোতিকেই জাতি নূর হিসাবে ছালেক বুঝিতে পারে। এই দায়েরাতে ছালেক স্রষ্টাকে স্রষ্টা, সৃষ্টিকে সৃষ্ট হিসাবে পার্থক্য করিবার মত জ্ঞান প্রাপ্ত হয়। ইহাই বাকাবিল্লাহ। কাওছের মাকামে যে ফানা উল্লেখ করা হইল তাহা সাধারণ অর্থে প্রকৃত ফানা। বিশেষ অর্থে প্রকৃত ফানা সংঘটিত হয় সর্বশেষ মাকাম হোব্বে ছেরফা ও মাবুদিয়াতে ছেরফার দায়েরায়। যেখানে না থাকে সিফাতের পর্দা, না থাকে শান, শয়ুনাত বা ইতেবারের পর্দা। কাওছের মাকাম হইতে ঊর্ধ্বে যাহা গমন করে তাহা হইল ছালেকের ‘ওজুদ মাওহুব লাহু’ নামক এক খোদাপ্রদত্ত শরীর।
বেলায়েতে উলিয়ার দায়েরাতে ফানাঃ- এই দায়েরাতে ছালেকের উপর জাত মিশ্রিত সিফাতি ফয়েজ পতিত হয়। এই ফয়েজে ছালেকের দেহের আগুন, পানি ও বায়ুর স্তর পাক হয়। দেহের উল্লিখিত তিন লতিফা খোদাতায়ালার জাত মিশ্রিত সিফাতি নূরে ফানা প্রাপ্ত হয়।
কামালাতে নবুয়তের দায়েরাতে ফানাঃ- এই দায়েরাতে খোদাতায়ালার জাতি নূরের দায়েমী তাজাল্লীতে ছালেকের দেহের মাটির স্তর পাক হয়। এই স্তরে আসিলে ছালেকের সমুদয় সত্ত্বাই পবিত্র হয়। খোদাতায়ালার জাতি নূরের দায়েমী তাজাল্লীতে দেহের আগুণ, পানি, বায়ু ও মাটির স্তর ফানা প্রাপ্ত হয়।
জাতে ফানাঃ- এখান হইতে ছালেকের “ওজুদ মাওহুব লাহু’ কামালাতের অবশিষ্ট দুই দায়েরা, হকিকতে এলাহিয়া ও হকিকতে আম্বিয়ার দায়েরাসমূহ অতিক্রম করিয়া, সর্বশেষ দায়েরা হোব্বে ছেরফা ও মাবুদিয়াতে ছেরফায় উপনীত হইয়া তথা হইতে ওজুদ মাওহুব লাহুর কুওতে নজরীয়ার মাধ্যমে খোদাতায়ালার প্রকার বিহীন জাতে বিলুপ্ত হয়। এখান থেকে আর উপরে অগ্রসর হইতে পারে না। জাত অভিমুখে তাকাইয়া থাকিয়া এক অনাবিল শান্তি প্রাপ্ত হয়, যে শান্তি বর্ণনাতীত। ইহাই প্রকৃত ফানা ফিল্লাহ। এখান হইতে আল্লাহপাক যাহাদেরকে ইচ্ছা করেন, হেদায়েতের দায়িত্ব প্রদান পূর্বক দুনিয়ায় পাঠাইয়া দেন। এই সাধক বর্গই ওলীয়ে কামেল হিসাবে পরিচিত। ইহারা বেলায়েতে নবুয়ত ও কামালাতে নবুয়তের সম্পদে সম্পদশালী।
এই সকল সাধক বর্গের দেল এবং দেহ উভয়ই পাক। দেহের প্রত্যেক অণু-পরমাণুতে খোদাতায়ালার পবিত্র জাতি নূরের ফয়েজ অবিরাম প্রবাহিত হয়। ফলে এমন সাধকের সমগ্র অজুদ বা অস্তিত্বই যেন খোদাতায়ালার জাতি নূরের এক মনোমুগ্ধকর পিন্ডে পরিণত হয়। অন্তর দৃষ্টি সম্পন্ন যে কোন ব্যক্তির নিকট উল্লিখিত সাধক বা ওলীয়ে কামেলকে তুর পাহাড়ে দৃষ্ট হযরত মুসা (আঃ) এর নূর প্রজ্জলিত বৃক্ষের মত মনে হয়। ফলে তাহাকে দেখা মাত্রই খোদাতায়ালার কথা স্মরণ হবে। এই কারণেই ওলীয়ে কামেলের সংগ এবং রাবেতা-উভয়ই ইবাদত তুল্য। হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব মকতুবাদ শরীফের প্রথম খন্ডের (৮৭ নং) মকতুবে বলেন, “ঐ ব্যক্তির কত যে সৌভাগ্য যাহাকে ওলীয়ে কামেলগণ কবুল করেন। তদুপরি যদি ভালবাসেন এবং নৈকট্য প্রদান করেন, তাহা যে কতই উচ্চ মর্তবা তাহা-বলাই বাহুল্য। যেহেতু ইহারা ঐ সম্প্রদায় যাহাদের সংগে উপবেশনকারীগণ বদব্য হয় না।”
সূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তিজ্ঞানের আলোকে- শাহসূফী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের “নসিহত” ১২তম খন্ড (বিষয়ঃ “ফানা ও বাকা” এর অংশ বিশেষ)।