আপন পীরের হক অন্য সকলের হকের চাইতে অধিক।

আপন পীরের হক অন্য সকলের হকের চাইতে অধিক।

পীরের প্রতি মুরীদের আদব প্রসংগে তরিকতের ইমাম হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ) ছাহেব তাঁহার মান্দা ওয়া মা’আদ পুস্তিকাতে বলেন, “পীরের হক অন্য সকলের হকের চাইতে অধিক। বরং বলা যায় যে, পীরের হকের সাথে অন্য কাহারো হকের তুলনাই হইতে পারে না। আল্লাহর অনুগ্রহরাজী ও তাহার রাসূল (সাঃ) এর এহসানের পরেই পীরের হকের দরজা; বরং সকলেরই হাকীকী পীরতো স্বয়ং রাসূলে পাক (সাঃ)। যদিও জাহেরী জন্ম মাতাপিতার মাধ্যমে হইয়া থাকে কিন্তু প্রকৃত জন্ম পীরের সাথে সংশ্লিষ্ট। বাহ্যিক জন্মের হায়াততো মাত্র কিছুদিনের জন্য। কিন্তু প্রকৃত জন্মের হায়াত চিরস্থায়ী। পীরতো তিনিই, যিনি মুরীদের বাতেনী অপবিত্রতা পরিস্কারকারী।

“যে অপবিত্রতা কালব ও রূহের মধ্যে অবস্থান করে, তাহা পীর কর্তৃকই অপসারিত হয়। তিনিই খোদাতালাশীর আত্মাকে পরিস্কার করেন। কোন মুরীদকে তাওয়াজ্জুহ দেওয়ার সময় অনুভূত হয় যে, মুরীদের বাতেনী অপবিত্রতা সমূহ পীরের উপরও মলিনতার প্রভাব ফেলে এবং পীরের মধ্যেও উহা বহুক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। পীরই একমাত্র ব্যক্তি, যাহার অছিলায়’ মানুষ মহিমান্বিত আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায়, যাহা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট। পীরের অছিলাতেই নাফসে আম্মারা-যাহা সৃষ্টিগতভাবে কলুষিত, তাহা পবিত্রতা হাছিল করে; পরিশুদ্ধ হয় এবং আম্মারা বা কলুষতা হইতে প্রশান্তির মাকামে উপনীত হয় এবং সৃষ্টিগত কুফরী হইতে হাকীকী বা প্রকৃত ইসলামে সমুন্নত হয়।” যেমন কবির ভাষায়-

“ইহাদের ব্যাখ্যা যদি করি আজীবন, সমাপ্ত হবে না তার ব্যাখ্যা কদাচন।”

তিনি আরও বলেন, “বস্তুতঃ যদি কোন পীর কোন মুরীদকে গ্রহণ করেন, তবে মুরীদের উচিৎ ইহাকে নিজের সৌভাগ্য মনে করা। অপরপক্ষে, কোন পীর যদি কোন মুরীদকে প্রত্যাখ্যান করেন, মুরীদের উচিৎ ইহাকে নিজের দুর্ভাগ্য মনে করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি পীরের সন্তুষ্টির আড়ালে নিহিত আছে। অতএব মুরীদ যে পর্যন্ত পীরের সন্তুষ্টির মধ্যে নিমজ্জিত না হইবে, সেই পর্যন্ত আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করিতে পারিবে না। পীরকে কষ্ট প্রদানের মধ্যেই মুরীদের বিপদ। ইহা ব্যতীত অন্য যে কোন ভুল-ত্রুটি হউক না কেন, তাহার প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব কিন্তু পীরকে ব্যথা দেওয়ার কোন প্রতিকার নাই। পীরের অসন্তুষ্টিই মুরীদের দুর্ভাগ্যের কারণ।”

পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফের আলোচনা এবং তরিকতের মাশায়েখ বর্গের বাণী থেকে খোদানির্দেশক পীর ও মোর্শেদের মর্যাদা এবং পীরের প্রতি মুরীদের আদব রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে নিশ্চয় তোমরা উপলব্ধি করিতে পারিয়াছ।

কাজেই, হে জাকেরান সকল! তোমরা যদি খোদাতায়ালাকে পাইতে চাও, খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞান বা সর্বোৎকৃষ্ট নেয়ামতের অধিকারী যদি হইতে চাও, তবে প্রতি পদক্ষেপে আদব রক্ষা করিয়া চল। পীরের ইচ্ছাতে নিজের ইচ্ছাকে বিলীন কর। পীরের যে কোন নির্দেশ যথাযথ পালন কর। পীরের হুকুমের মধ্যে নিজের বিবেক খাটাইবে না; ভাল মন্দ চিন্তা করিও না। হযরত মুসা (আঃ) যদি হযরত খিজির (আঃ) এর কর্মের ভাল-মন্দ চিন্তা না করিতেন, তাহা হইলে যে উদ্দেশ্যে আল্লাহপাক তাঁহাকে খিজির (আঃ) এর নিকট প্রেরণ করিয়াছিলেন তাহা হযরত মুসা (আঃ) এর সিদ্ধ হইত। কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত “মুসা-খিজির কাহিনী” পীরের প্রতি মুরীদের আদব রক্ষার বা আদব প্রদর্শনের উজ্জল দৃষ্টান্ত। মনে রাখিও, আদবের বিন্দু পরিমাণ খেলাফ হইলে খোদাপ্রাপ্তিজ্ঞান অর্জন করিতে পারিবে না। আদবের সাথে সাথে পীরকে ভালবাস, মহব্বত কর। পীরের ইশারা বুঝিবার চেষ্টা কর। পীরের যে কোন হুকুম পালনের জন্য অদম্য সাহস রাখ। আমি দু’আ করি, এই পথে চলিতে আল্লাহপাক তোমাদিগকে আদব দেন, বুদ্ধি দেন, মহব্বত দেন, সাহস দেন, ভক্তি দেন, শক্তি দেন। আমীন!

সূত্রঃ খোদাপ্রাপ্তিজ্ঞানের আলোকে- শাহসূফী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেবের “নসিহত” ১ম খন্ড (বিষয়ঃ ‘আদাবুল মুরীদ’-এর অংশ বিশেষ)।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel