ফানাফিল্লাহ অর্থ আল্লাহতে বিলুপ্তি। ফানাহ একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক অবস্থা, যে অবস্থায় সূফীসাধক আধ্যাত্মিক উন্নতির এক চরম পর্যায়ে আরােহণ করিয়া পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার অস্তিতের সহিত নিজের সর্বস্ব বিলীন করিয়া দেন।
ফানার পর্যায়ে সাধকের ব্যক্তিগত সত্তা বলিয়া কিছুই থাকে না। যেহেতু তাঁহার সমস্ত অজুদ (অস্তিত)ই তখন আল্লাহতে বিলীন, এই অবস্থায় সাধকের ইচ্ছা আল্লাহতায়ালারই ইচ্ছা এবং তাহার সমগ্র অবস্থা আল্লাহতায়ালার ইচ্ছারই প্রতিফলন মাত্র।
তাই হযরত রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, “আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নফল এবাদতের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভের জন্য অগ্রসর হয়, যতক্ষণ না আমি তাহাকে ভালবাসি। যখন আমি। তাহাকে ভালবাসি, আমি তাহার কর্ণ হই, যা দ্বারা সে শ্রবণ করে এবং তাহার চক্ষু হই, যা দ্বারা সে দর্শন করে এবং তাহার জিহ্বা হই, যা দ্বারা সে কথা বলে।”
ফানার তিনটি পর্যায় রহিয়াছে। প্রথমে আধ্যাত্মজ্ঞান শিক্ষার্থী সূফী সাধক বা পীরের সহিত, দ্বিতীয় পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর সহিত এবং তৃতীয় পর্যায়ে আল্লাহতায়ালার সহিত ফানা হইয়া থাকেন। তৃতীয় পর্যায়টি ফানার সর্বশেষ মাকাম।
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের সহিত সাধকের অস্তিত্বের বিলুপ্তির দুইটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দিক আছে। ফানার মাকামে আল্লাহর সাথে কোন ধরণের দ্বিত্ব
অবস্থাই সাধক অনুধাবন করেন না। ফানার পরবতী অবস্থাটি তাসাউফের পরিভাষায় বাকা বলা হয়।
এই অবস্থাতে সূফীসাধক আল্লাহতে স্থায়িত্ব লাভ করিয়া থাকেন। এই অবস্থাটি আধ্যাত্মিক পর্যায়সমূহের সর্বোচ্চ মাকাম। বাকা’র পর্যায়ে সাধক সকল প্রকার আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসার সঠিক জবাব পাইয়া থাকেন এবং সকল প্রকার আধ্যাত্মিক অনিশ্চয়তা হইতে পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ থাকেন।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের “সংক্ষিপ্ত ওজিফা” হতে।