সূরা ফাতেহার ব্যাখ্যা (সূফীতত্ব)।
(১) প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর জন্য (যিনি) বিশেষ মনোজগতের ‘রব’ বা বিশেষ আলেম সমূহের, “রব”।
(২) যিনি “আর রহমান”, “আর রহিম”
(৩) যিনি ধর্মের কালের রাজা।
(৪) (অতএব) আমরা তুমার দ্বাসত্ব করি এবং তুমারই মোস্তানী সাহায্য আমরা চাই।
(৫) আমাদিগকে মোস্তাকিমের পথে পরিচালিত করো।
(৬) তাহাদিগেত পথে তাহাদিগের উপরে তুমি নেয়ামত সান করিয়াছ।
(৭) তাহাদের পথ ব্যতীত যাহাদের উপরে গজব পরিয়াছে এবং সাদা ভ্রান্ত (পথে) রহিয়াছে।
শব্দের অর্থঃ
“আল্ হামদ্” অর্থ = প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা। বিশেষ বা বিশিষ্ট প্রশংসা।
“রব” অর্থ = লালন পালন, রক্ষণাবেক্ষণকারী, সম্যক গুরু।
“আল আলামীন” অর্থ = বিশেষ জগত সমূহ অর্থাত মনোজগতসমূহ। (এখানে বিশেষ ভাবে জিন এবং ইনছানের মনোজগতকে বুঝাইয়াছেন।)
“রাব্বুল আলামীন” অর্থ = দয়ালদাতা, শিক্ষা গুরু যিনি পরোক্ষ ভাবে মুক্তির সর্বজনীন শিক্ষাদাতা। যাহাকে কখনো প্রত্যক্ষভাবে পরম গুরু রূপে চেনা যায় নাই।
“আর রহিম” অর্থাৎ = দয়ালদাতা পরম শিক্ষাগুরু যিনি আত্ন-পরিচয় দান করিয়া প্রত্যক্ষভাবে মূর্ত দয়াল রূপে ভক্তজনকে শিক্ষা- দিক্ষা দান করেন তিনি রহিম। মোমিনের নিকট তিনি রহিমরূপে পরিচিত আর আমানুর নিকট রহমান রূপে।
“ইয়াওমুদ্দীন” অর্থ = বিশেষ প্রকার ধর্মের কাল বা সময়। সুপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার পথে যে- সকল ধর্ম দৃশ্য, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদি রূপে মানব মস্তিষ্কে আগমন করে তাহার প্রত্যেকটির সঙ্গে একটা কাল বা সময় জরিত থাকে ইহাকেই বলা হয় “ইয়াওমঅওদ্দীন” বা ধর্মের কাল।
“দ্বীন” অর্থ = ধর্ম। ইন্দ্রীয় পথে আগমনকারী সকল বিষয় বস্তুকে যেমন ধর্ম বলা হইয়াছে। তেমনই আবার কোনো মহাপুরুষের দেওয়া জীবন বিধানকে ধর্ম বলা হইয়াছে। প্রথমোক্ত অর্থই ইহার ব্যবহার বেশি হইয়াছে।
যাহাকে জীবন বিধান বলা হয়। তাহাও ধর্মরাশির প্রতি আচরণবিধির বর্নণা ব্যতীত অন্য কিছু নয়।
“নাসতাঈন” অর্থ = আমরা মোস্তানী সাহায্য চাই।”
“মোস্তান” অর্থ = মুক্তপ্রাপ্ত মহাপুরুষ যিনি সমস্থ বাধা-বিপত্তি হইতে ভক্তগনকে উদ্ধার, সাহায্য করিয়া থাকেন। আল্লাহর এক নাম মোস্তান। কামেল মুর্শিদের সাহায্য ব্যতীত মানুষ মুক্তি অর্জন করতে পারে না। সে সম্যক গুরুর নিকট মুক্তির সাহায্য পার্থনা করা হয় তাকে মোস্তান বলে।
“মোস্তাকিম” অর্থ = Up right sfncere,honest, persevering firm: ধীর, স্থীর, চঞ্চল, শুদ্ধ, সরল, দৃঢ় এস্তেকামাত হইতে মোস্তাকীম।”
“এস্তেকামাতা” অর্থ = ধীরতা, স্থীরতা, চঞ্চলতা, শুদ্ধতা, সরলতা, দৃঢ়তা ইত্যাদি যিনি এই গুনে গুনী তিনি “মোস্তাকীম” এবং তার অনুসৃত পথ সিরাতল মোস্তাকীম। মানে এই পথ সহজ ও নয় সরল ও নয়।এবং ইহা গভিরভাবে সালাত ও জাকাত কর্ম সম্পাদানের মাধ্যমে ধীরতা ও দৃঢ়তা অবলম্বনের একটি জটিল পথ।
“সিরাতাল মোস্তাকিম” অর্থ = মোহমুক্ত দৃঢ় পথ। যে পথে মন বিষয় মোহে চঞ্চল হইয়া উঠে না। সেইরূপ সাধক ব্যক্তির পথ যনি ধির স্থির হইয়াছেন। তথা মোমিন ব্যক্তির পথ। মোমিন ব্যক্তির নির্দারিত জীবন পদ্ধতি ব্যতীত অন্য সকল প্রকার জীবন পদ্ধতি বক্র পথ।
এক কথায় “সিরাতাল মোস্তাকিম” হলো পরিসিদ্ধ সাধকের মানসিক ভ্রমণ পথ বা কামেল মহাপুরুষের পথ, তথা উচ্চ পর্যায়ের মোমিন ব্যক্তির মানসিক গতিপথ। এহেন মোমিন ব্যক্তির মন হইতে বিষয় মোহ উৎপাটিত হইয়া গিয়াছে। সুতরাং ভালো হক বা মন্দ হক কোনো একটি বিষয়ের প্রতিও তাহার কোনো রূপ চঞ্চলকর আকর্শন নাই। তিনি পরিপূর্ণ ভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ সামাদ নামের এই পরিশুদ্ধ পথ সকল পর্যায়ে সাধকের জন্য একটি মহান আদর্শরূপে উপস্থাপন করা হইয়াছে।
সূরা ফাতেহার সংক্ষিপ্ত একটি বিশ্লেষণঃ
সূরাটির দুইটি অংশ, এক অংশে আল্লাহর পরিচয়, অপর অংশে তার প্রতি আমাদের করনীয় কর্তব্য। প্রথম অংশে আল্লাহর কর্মকান্ডের সরূপ, রব রূপে তার প্রশংসা ও তার মহাত্ব্য এবং তার অবস্থান ব্যক্ত করা হইয়াছে। পরিষেশে কালের উপর তাহার রাজত্ব পরিচালনার কথা ঘোষণা করা হইয়াছে। সুতরাং কালকে জয় করিবার শিক্ষা তাহার শাসনাধীন থাকিয়া তাহা হইতা গ্রহণ করিতে হইবে।
দ্বিতীয় অংশে রহিয়াছে, মুক্তির লক্ষ তার প্রতি আনুগত্য এবং দাসত্বের প্রতিশ্রুতি দানপূর্বক সুপথে চলার অঙ্গিকারে আবদ্ধ থাকিয়া সকল বিষয়াশয়েত নেয়ামত লাভের ঐকান্তিক পর্থনা করা অর্থাৎ চেষ্টা গ্রহণ করা। যেহেতু আগমনকারী বিষয়াদির মধ্যে সাধকের জন্য যেমন রহিয়াছে মুক্তির পথের নেয়ামত তেমনই আসাধকের জন্য রহিয়াছে বিভ্রান্তির গজব বা শাস্তি। সেইহেতু সাধন বলে কালজয়ী হইতে হইবে। সিরাতুল মোস্তাকিমেত শিক্ষা অবলম্বনরূপে গ্রহণ করিয়া ধর্মের কালজয় করিতে না পারিলে কিন্তু না কিছু শাস্তির অংশ গ্রহণ করিতেই হইবে।
অপর পক্ষে ধর্মরাশির কাল জয়ী মহাবীর মাহাপুরুষ হইতে পারিলে নিজের মধ্যেই অবস্থিত পরম সত্যের সকল দ্বারা উদঘঠিত হইবে। রবের গৃহ এই মানব দেহ সর্গীয় নূরে নূরময় হইয়া উঠিবে। এবং আপন সত্ত্বার মধ্যেই মহাপ্রভুর মহাবিকাশ সম্পন্ন হইবে। সূরাটির নামের অর্থ “দ্বার উদঘাটিকা” আমাদের জন্য সার্থক হইয়া উঠিবে।
– মাওলা সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী (রহঃ)