হোমপেজ আধ্যাত্মিক প্রশ্ন ও উত্তর তাসাউফ বা সুফিবাদ

তাসাউফ বা সুফিবাদ

তাসাউফ বা সুফিবাদ

আত্ত্বশুদ্ধি, আত্ত্ব ত্যাগ ও অহংবোধ বিসর্জনের মাধ্যমে আমিত্ত্ব কে বিলিন করার শক্তি অর্জন করাই তাসাউফ বা সুফিবাদ।

ওলীদের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা হচ্ছে স্রষ্টাকে কেন্দ্র করে। কিভাবে স্রষ্টার রেজামন্দি হাসিল করা যায়, কিভাবে স্রষ্টার দিদার লাভ করা যায় সে সম্পর্কে উপায় উদ্ভাবন করাই হচ্ছে ওলীদের নিয়মিত ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা। স্রষ্টার রেজামন্দি হাসিলের জন্য, স্রষ্টার দিদার লাভ করার জন্য স্রষ্টাকে ভালবাসতে হবে। স্রষ্টাকে ভালবাসার উপায় কি? স্রষ্টাকে ভালবাসতে হলে স্রষ্টার হুকুম-আহকাম পালন করতে হবে, স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভারবাসতে হবে, মোরাকাবা-মোশাহেদা করতে হবে, জিকির বা খোদাকে স্মরণ করতে হবে এবং নৈতিক উৎকর্ষ সাধন করতে হবে।

নৈতিক উৎকর্ষ কিভাবে অর্জন করা যায়? নৈতিক উৎকর্ষ অর্জন করা যায় দেহ ও মনকে সুন্দর করে, চরিত্রকে পুত ও পবিত্র করে। দেহ, মন ও চরত্রকে কিভাবে সুন্দর ও পবিত্র করা যায়? দেহ, মন ও চরিত্রকে সুন্দর ও পবিত্র করা যায় সকল প্রকার কু-প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে। কু-প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন কিভাবে করা যাবে? কু-প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করা যাবে কোরআন মজিদ কতৃক বর্ণিত, রসুল করিম (সঃ)-এর সুন্নাহতে প্রদর্শিত এবং ওলীদের আচরণে, ধ্যান ধারণা ও চিন্তা-চেতনায় প্রতিফলিত করে।

সুতরাং ‘তাসাউফ’ বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান হচ্ছে এমন একটি জ্ঞান যে জ্ঞানের দ্বারা খোদাকে চেনা যায়, খোদাকে পাওয়া যায়, আত্মাকে আলোকিত করা যায়। এটি এমন একটি জ্ঞান যে জ্ঞানের দ্বারা স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির প্রেমের সম্পর্ক স্থাপিত হয়, স্রষ্টাতে সৃষ্টি বিলীন হয়ে যায়, সৃষ্টি স্রষ্টার একত্বে মিশে যায়। ফলে ‘তাসাউফ’ বা আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি অজানাকে জানতে পারে, অদৃশ্যকে দর্শন করতে পারে।

এ জ্ঞানের বলেই খাজা-খিজির (আঃ) যা জানতে পেরেছিলেন হযরত মুসা (আঃ) এ জ্ঞানের অভাবে তা জানতে সক্ষম হননি। (সুরা কাহাফ, আল-কোরআন)। ‘তাসাউফ’ এমন একটি জ্ঞান যা খোদার নিকট থেকে কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি লাভ করা যায়। এ ‘তাসাউফ’ শক্তির বলেই হযরত মনছুর হাল্লাজ (রঃ) বলেছিলেন, “আনাল হক” অর্থাৎ আমি সত্য। এ ‘তাসাউফ’ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) বলেছিলেন, “আমার শান কত বড়”।

এলমে তাসাউফের সর্বশ্রেষ্ঠ বিকাশ প্রেমজ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে রসুল করিম (সঃ)-এর দাঁত মোবারক শহীদ হবার খবর শুনে হযরত ওয়ায়েজ করণী (রঃ) তাঁর বত্রিশটি দাঁত উপড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। তাসাউফ অনুসারে আল্লাহ প্রেমময়। আল্লাহ মানবের প্রেমাস্পদ। ধর্মের অপর নাম প্রেম। সুতরাং, মানব জীবনের পরম সম্পদ হচ্চে খোদার ভালবাসা অর্জন। সকল মানুষের লক্ষ্য হওয়া উচিত খোদার প্রেমে শক্তিশালী হওয়া কেননা মানবের সাথে খোদার সম্পর্ক হচ্ছে প্রেমের।

সুফীবাদ জীবনধর্মী আধ্যাত্মিকতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে সুফীবাদ বা তাসাউফ অনুযায়ী জগৎ বাস্তব এবং জগতে পরম সত্ত্বার স্থান আছে। আল্লাহর রহস্য বোঝার সাধ্য মানুষের নেই। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য আত্মশুদ্ধি, আত্মত্যাগ ও অহংকারবোধ বিসর্জনের মাধ্যমে আমিত্বকে বিলীন করার শক্তি অর্জনই হচ্ছে তাসাউফ বা সুফীবাদ।

সংগ্রহীত: SUFISM PHILOSOPHY (Facebook Group)