‘রাসেখুনা ফিল ইলম’ তথা রহস্যময় বলয়ের অধিকারী।
যারা জ্ঞানে সুগভীর বোদ্ধিসত্তার অধিকারী তারাই রাসেখুনা ফিল ইলম। অর্থাৎ যারা সিনার জ্ঞানে জ্ঞানী তথা যারা সৃজনী প্রতিভার অধিকারী তারাই জ্ঞানে পরিপক্ক আব্দুহু মাকামের অধিকারী। তারাই জ্ঞান বিজ্ঞানের উদয় স্থল। তাদের বৃত্তের কেন্দ্র হতেই রহস্যময় বলয়ের প্রকাশ হয়ে থাকে। এই রহস্যময় জ্ঞানকে বলা হয় সিনার জ্ঞান তথা এলমুল কলব। এই সিনার জ্ঞান অর্জন করা ফরজে আইন। এই সিনার জ্ঞানকে বলা হয় ইলমে মারফত, ইলমে লাধুনী, ইলমে ইরফান, ইলমে বেলায়াত, ইলমে নববী, ইলমে বাতেন, ইলমে তাসাউফ, ইলমে নূর ও ইলমে তাওহীদ।
আর এই সিনার জ্ঞান অর্জন করতে হয়, দায়েমি সালাত তথা যোগসাধনা তথা ধ্যানসাধনা তথা মোরাকাবা মোশাহেদার মাধ্যমে। এই দায়েমি সালাতটি করতে হয় নির্জনে একাকী ব্যক্তিকেন্দ্রিক হেরাগুহাকে অনুসরণ করে। যারা এই নির্জন হেরাগুহার সাধনার মারফত মহানবীর মুর্দা সুন্নতটিকে জিন্দা করেন তারাই সুফি, ফকির, আলেম, আল্লামা, মাওলানা, আরিফ, আবদাল, মজ্জুব,মস্তান, যোগী, সাধু, সন্ন্যাসী, রসুল ও নবী।
তারাই কেতাবের ধারক ও বাহক। তারাই মহাজ্ঞানী তথা উম্মী। তারাই হেকমতওয়ালা, কল্যানওয়ালা, নিয়ামতওয়াত, এনামওয়ালা, ফজলওয়ালা, রূহওয়ালা, আত্মিকশক্তিওয়ালা, সালাতওয়ালা, জাকাতওয়ালা, সিয়ামওয়ালা, কোরবানীওয়ালা, হাজী, মুমিন, মুত্তাকী, মুহসিনিন ও সাবেরীন।
- ১: মহানবী সা:সাধনা করছেন হেরাগুহায় ১৫ বছর ১মাস ১৯ দিন (সময়ে অসময়ে)।
- ২: হযরত মুসা আ: তুর পাহারে
- ৩: গাউসুল আজম গাউসে পাক, বড়পীর ২৩ বছর জঙ্গলে সাধনা করেন।
- ৪: খাজা গরিবেনেওয়াজ ১৪ বছর সাধনা করেন।
- ৫: আলাউদ্দিন কালিয়ার সাবেরী ১২ বছর সাধনা করেন।
- ৬: শেখ ফরীদ ৩৬ বছর সাধনা করেন।
- ৭: সাধক কবি শাহজাহান শাহ সাড়ে চারবছর একটানা, তার আগে আট মাস, সাধনা করেন, পরে মজ্জুবী হালে কাটিয়েছেন।
- ৮: শরফুউদ্দীন ইয়াহিয়া মুনিরী ২৯ বছর সাধনা করেন।
- ৯: গৌতমবুদ্ধ ৩৫ বছর রোধীবৃক্ষের নিচে নির্বান লাভ করেন।
- ১০: মহাদেব কৈলাস পর্বতে।
- ১১: কালান্দার জাহাঙ্গীর নিজে ধ্যান সাধনা করেছেন এবং ধ্যানসাধনার সুফি মেডিটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
- ১২: কালান্দার মাওলা বেদম ওয়ারসী আল জাহাঙ্গীর ধ্যানসাধনার জীবন্ত মূর্তি। (২০ বছর সাধনা করেন)
- ১৩: দাতাগঞ্জে বকস ৪০ বছর সাধনা করেন।
তারা সবাই মাদারজাত অলি। তারা মাদার জাত অলি হয়েও সাধনা করেন, আর বাকিদের কথা বাদই দিলাম।
সাধনা যে কতটা গুরুত্ব ইসলামে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বস্তুবিজ্ঞানের রহস্য আর আত্মার বিজ্ঞানের রহস্য সাধনা ব্যতীত অর্জন অসম্ভব। সাধনা ব্যতীত আইনুল ইয়াকীন তথা দর্শনের ঈমান অর্জিত হয় না।(ব্যতীক্রম সংজ্ঞায় আসে না)। মুহাম্মদী শরিয়ার শিক্ষার মধ্য দিয়েই আমাদের সাধনার মারফত আত্মপরিচয় তথা দর্শনের ঈমান অর্জন করতে হবে।
ধ্যানসাধনারই ইসলামের সর্বপ্রথম কথা ও সর্বশেষ কথা। এর বাহিরে যা আছে তার আধা পয়সারও মূল্য থাকে না, সেগুলো আছে সে গুলো শুধু অনুকরণের বিদ্যা। ধ্যানসাধনাই বনি আদম তথা আদম সন্তানের মূল দর্শন। এই ধ্যানসাধনা ছাড়া যা কিছু আছে তার মধ্যে শয়তানের দর্শটাই প্রবল। শয়তানের দর্শনটিই মানব সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চলছে। এই রাসেখুনা ফিল এলমদের অনুসরণ করে আলবাব আর আবসার গণ। এই আলবাব আর আবসারগণ হলেন সত্যানুসন্ধানী, বিচক্ষণ ও বিজ্ঞানী শ্রেনির লোক। এই উলুল আলবাব আর উলুল আবসারগণই রাসেখুনা ফিল এলেমদের খোজে বের করে জনসম্মুখে পরিচয় করিয়ে দেন। যেমন হযরত মুসা কালামুল্লাহ আল্লাহর আবদান হযরত খিজিরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
– আর এফ রাসেল আহমেদ