হোমপেজ ইলমে মারেফত হে সাকী (পর্ব-০৩)

হে সাকী (পর্ব-০৩)

185
ছবি: সুফি দ্বীন মোহাম্মদ চিশতি নিজামী

হে সাকী (পর্ব-০৩)

১১.
হে সাকী!
তোমার পরিবেষ্ঠিত সরাবপানে তাকিয়ে আমার প্রেম টগবগিয়ে উথলিয়ে পেয়ালার দু’টি ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। যে প্রেম অসীম, যার কোনো সীমা রেখা নেই। নেই কোন শব্দ সংজ্ঞা। যা দ্বারা অনন্ত-অসীম প্রেমকে লিখনীর ভাষা-বাক্যে প্রকাশ করা যাইবে। তবে প্রেমের কিছুটা ভোবা উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে। প্রেমটি এরূপ যেমন লাইলির গলির কুকুরটিকে মজনু একদিন তাঁর নিজ এলাকায় পেয়ে ঐ কুকুরটির পায়ে পড়ে চুমোতে থাকে আর বলে এ তো আমার লাইলির-ই সুভাস। হযরত আমির খসরু যেমন তাঁর মাহাবুবে এঁলাহী নিজাম উদ্দীনের পায়ের খরম হতে মাহাবুবে এঁলাহী নিজাম উদ্দীনের প্রেমের ঘ্রাণ পেয়ে কাওয়ালকে তাঁর পুরো রাজ্য দিয়ে দেওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলে, এ কাওয়াল তোমার নিকট হইতে আমার মাহাবুবের শরীরের ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। পরে তাঁর মাহাবুবের খরম বুকে ধরে পাগলের ন্যায় চুমোতে থাকে। মহানবীর প্রেমে যেমন ওয়ায়েস কুরণী নিজের সকল দন্ত পাথর দিয়ে থেতলিয়ে ফেলে দেয়, প্রেমটা হচ্ছে ঠিক ঐ রকম।

১২.
হে সাকী!
পার্থিব জগতের মানুষদের মাঝে কি আজব নিয়ম দেখো। দরিদ্র শ্রেণীর যত মানুষ আছে তারা আরোও দারিদ্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে আর ধনি যত আছে তারা আরো ধনবান প্রাপ্ত হয়ে বিপুল ধনি হইতেছে। কিন্তু সাকী, তাদের উভয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যে খোদার নিকট পৌছানোর পথে একটি-ই ধাবিত অন্যটি সে পথ হইতে বিমুখ। খোদার নিকট পৌছানোর রাস্তা ২টি, একটি দরিদ্রতা অন্যটি প্রেম। কিন্তু অনেক সময় দরিদ্রতার পেশানলে দরিদ্র পথ হইতে অকেফহাল হয়ে পড়ে। তবে জেনে রাখো সাকী, খোদার অন্বেষণ করতে হলে দারিদ্রের পথ ও বেশ-ই বন্ধুর তালাশ করতে হয়। পার্থিব ধনীর ধনের গোলায় ধন-সম্পদ মওজুদ থাকে, খোদা নয়।

১৩.
হে সাকী!
তোমরা দেখিতেছ কিন্তু নজর করে দেখিতেছ না, ঐ যে বিশাল অট্টালিকায় ঘেরা প্রাসাদ দেখিতেছ তাহার গোলায় খাদ্য-শষ্য শূণ্য, অথচ তার কাছেই তোমরা ভিরছো সবাই। তোমরা কী দেখোনা পাশে প্রতিবেশী কৃষকের মটকায় রয়েছে পুরো বৎসরের খাবারের যব। যাতে করে তোমাদের বিচারে বিপদের সময় কে পাড়ি দিতে পারে? বালতির পানিতে মুখ করে সূর্য্যের কিরণ দেখার চাইতে মাথা উচু করে সূর্য্যের দিকে তাঁকাও দেখো পৃথিবী কত বিশাল এবং সূর্য্যের আলো’র কত তীব্রতা। যদি তোমার ঘারে পাঁকা বিষ ফোরা না থেকে থাকে। স্রষ্টার মহানুভবতা উপলব্ধি করতে শেখো মামুন।

১৪.
হে সাকী!
দরজার বাইরে তালা জুলিয়ে দাও, সাথে একটি শিকল দিয়ে বদ্ধ কর তোমার এ দোকানদারী, জেনো দরজার বাইরের খদ্দের তথা প্রতিবেশীগণ ভাবে আরে এ দোকানে তথা ঘর তো শূণ্য। এ ঘরে কেউ থাকে না। এ ভেবে তোমা থেকে দূরে সরে যায়। তাতে করে ক্ষাণিক প্রশান্তিও পাবে, এখন শান্ত হয়ে বন্ধু’র সামনে বসো, বন্ধু কি বলে শুধু তা মনযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আর বন্ধু’র আদেশ পালন করে যাও মামুন। দেখবে, জগতের সব শুণ্য লোক তোমার শহরে এসে ভির জমাবে, সমস্ত বনিক এসে তোমার তৈরী জিনিসপত্র নিয়ে ব্যবসা করবে। তুমি যে কুপে পড়ে অনবরত কাঁদছো, তোমার কান্নাতে বন্ধু শব্দটি যোগ কর, কেনোনা বন্ধু ভিন্ন এ অন্ধকার কূপ হতে কে আছে তোমায় টেনে তুলবে সুতরাং একমাত্র বন্ধু’র সাহায্য প্রার্থনা কামনা কর, তোমার ব্যধির একটাই দাওয়াই ইয়া দ্বীন বন্ধু দয়াময়। এ নাঁমেই তোমার শেফা মামুন।

১৫.
প্রেমের বিবর্তীত রূপ:-
একজন প্রেমিকের নিকট তাঁহার প্রেমেরও বিবর্তন ঘটে থাকে৷ যেমন, যদি প্রেমকে এ মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুর একটা সমষ্টি হিসেবে মনে করি। যাকে, গলিত শিষায় পরিনত করলে, তা পুণঃ সৃষ্টির মাধ্যমে এক অভিন্ন ও মনোরম-সৌন্দর্যমন্ডিত রূপে পুনঃ প্রকাশ ঘটানো। আর প্রেমের এহেন পুনঃ প্রকাশই হচ্ছে প্রেমের একটা বিবর্তীত রূপ তথা পূর্বের রূপের একটা বিবর্তন।

লেখা- সৈয়দ মামুন চিশতী

» হে সাকী (সব পর্ব)