কি খুঁজি আমরা?
- সুখ?
- ঈশ্বর?
- সত্য?
—এগুলি শুধুমাত্র বৈষয়িক বা বাহ্যিক অনুসন্ধান নয়, বরং আমাদের আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রশ্ন। যখন আমরা কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, তখনই আমাদের বিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা ও সংকল্পের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই বিভাজনই মিথ্যাচারের শুরু—যেহেতু যে সুখ বা ঈশ্বর আমরা খুঁজে চলেছি, তা বাইরে কোথাও নেই। সত্য শুধু আমাদের ভিতরেই বাস করে।
কিন্তু আমাদের মন প্রভাবিত হয় বাহ্যিক দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা, ক্রমাগত কামনা ও অভিলাষের দ্বারা। সেই কারণেই, যখন আমরা সুখ বা ঈশ্বরকে বাহ্যিক জগতে খুঁজে পেতে চাই, তখন আমরা আসলে নিজে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। ঈশ্বরকে আলাদা করে দেখতে চাওয়া, সুখকে আলাদা করে অনুভব করার চেষ্টা করা, এবং জীবনের উদ্দেশ্য আলাদা কিছু হিসেবে ভাবা—এই সকল ধারণা আমাদের বিভ্রান্ত করে। বাস্তবে, সুখ বা ঈশ্বর, যাই আমরা খুঁজে পেতে চাই, তা আমাদের নিজের অস্তিত্বের মধ্যেই নিহিত।
“যে আমাকে খুঁজে, আমি তার শাহ রগের চেয়েও নিকটবর্তী”—এটি নিছক একটি উপমা নয়, এটি গভীর একটি আধ্যাত্মিক সত্যের প্রকাশ। ঈশ্বর বা সুখকে যদি আলাদা কিছু ভাবি, তাহলে তা আমাদের থেকে দূরে চলে যায়। অথচ, যখন আমরা আত্মসচেতন ও মুহূর্তে উপস্থিত হই, তখন আমরা বুঝতে পারি যে ঈশ্বর, সুখ এবং সত্য—এসব কিছু আমাদেরই অঙ্গ। যখন আমরা নিজেদের মধ্যে পূর্ণভাবে উপস্থিত থাকি, তখনই আমরা এই উপলব্ধির একাত্মতায় পৌঁছাতে পারি।
“তোমিই সেই”—এই উক্তি একদম চূড়ান্ত আত্মজ্ঞান। এটি বুঝতে হবে যে আত্মা বা ঈশ্বর বা সত্য কখনোই আমাদের বাহ্যিক কোনো উদ্দেশ্য বা উপসর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আমাদের ভেতরে লুকানো। সত্য, ঈশ্বর, সুখ—এই সব কিছু কখনোই বিচ্ছিন্ন নয়, বরং সব কিছু এক এবং একই।
আমরা যে কথা বলি, তা আসলে আমাদের অভ্যন্তরীণ সত্যের প্রতিফলন। কোন বাহ্যিক আচার বা উপাসনা এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারে না। বরং, যখন আমরা প্রতিটি মুহূর্তে আধ্যাত্মিক সচেতনতা অবলম্বন করি, তখনই আমরা বুঝতে পারি—আমিই সেই।
আমাদের জীবন এই অমোঘ সত্যের আবিষ্কারে অতিবাহিত হয়, যেখানে অতীত এবং ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র এক মুহূর্তের আড়ালে চাপা পড়ে। যে সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা চলি, তাতে আমরা ‘এখন’ এবং ‘এখানে’ উপস্থিত থাকলে—সে সময়েই আমাদের সত্ত্বার সত্য উপলব্ধি হয়।
তাহলে, জীবন বেদ এর মর্মবাণী হলো—“তোমার খুঁজে বের করার দরকার নেই, তুমি আছো ঐ সত্যের মধ্যে, যা কখনোই তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি।”
– ফরহাদ ইবনে রেহান