সুফি ও যোগী

সুফি ও যোগী

সুফি ও যোগী, দুই ধারার অভ্যন্তরে পৃষ্ঠপোষকতার উপকরণ হলেও, তাদের গন্তব্য এক। পথ দুটো আলাদা, কিন্তু মূল লক্ষ্য একাত্মতা, এক সত্তার সাথে মিলন। সুফির প্রেমময়তা আর যোগীর নিরলম্ব কর্মযোগ, দুটোই একসাথে একত্বে ফিরে যাওয়ার যাত্রা। তারা একে অপরের মধ্যে ভেদাভেদ দেখেন না, কারণ তাদের অন্তরাত্মায়, তাদের অনুভূতির গভীরে শুধুই সেই এক সত্তা, সেই এক মহাশক্তি, যা অসীমের সাথে একাত্ম।

সুফি প্রেমে ভেসে যান, যেন দেহ থেকে আত্মা সরে গেছে, নিজেকে হারিয়ে খুঁজে পান সেই মহাশক্তির মধ্যে, যেখানে ঈশ্বর তার একমাত্র প্রকৃত রূপ। যোগী, তার কর্মের মধ্যে পরিশ্রমের মাধ্যমে, সে দেখেন তার ‘আমি’ সীমাবদ্ধ নয়, এটি অখণ্ড সত্যের একটি অংশমাত্র, যা সৃষ্টির সাথে অঙ্গীভূত। সুফি বলছেন “আমি ঈশ্বরের প্রেমে পাগল, একতার সাগরে ভাসছি”, আর যোগী বলে “আমি নিজেকে অতিক্রম করে, সেই এক অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে একাত্ম, তার অস্তিত্বই আমার অস্তিত্ব।”

এরা যেন দুটি নদী, দুটি আলাদা পথ ধরে এক মহাসমুদ্রে মিলিত হচ্ছে। সুফি তার হৃদয়ের গভীর থেকে সৃষ্টির প্রেমের আলোয় আলোকিত হন, যোগী তার শরীরের মধ্যে একাগ্রতা ও ধ্যানের মাধ্যমে সেই একই আলো খুঁজে পান। সুফি ‘মজনু’র মতো নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করেন, যোগী ‘ব্রতী’র মতো নিজেকে আত্মশুদ্ধির জন্য নিবেদিত করেন, তবে উভয়ের অন্তরে এক নিরব সত্য বাস করে — ‘আমি সেই’ — এক সত্তা, এক প্রেম, এক শক্তি।

এই দুই পথের অন্তর্নিহিত সমতুল্যতা, সেই এক মহাশক্তির এক রূপের অবলোকন—এটাই সৃষ্টির মূল রহস্য। এর মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, কোনো ভেদ নেই। তারা সেই একাত্মতার দিকে ধাবিত। সুফি যখন বলে, “আমি ঈশ্বরের প্রেমে মোহিত, আমি ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি,” যোগীও একই কথা বলে, “আমি সেই এক, আমি তারই রূপ।”

সুফি জানেন, “প্রেমের কোন রূপ নেই, প্রেমই একমাত্র রূপ।” এবং যোগী জানেন, “আমি না থাকলে, সে থাকবে, আমি থাকলে, সে আমার মধ্যে থাকে।”

এই দু’টি পথ, দু’টি একাকী যাত্রা-সুফির প্রেমযোগ এবং যোগীর কর্মযোগ — এক সঙ্গে মিলিত হয়ে সৃষ্টি করে এক অবিনশ্বর সত্যের সমন্বয়, যা সমস্ত জগতের সমগ্রতা ও একতার প্রমাণ দেয়।

—ফরহাদ ইবনে রেহান

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel