গাউছুল আযম বলা কি শিরক?
প্রথমত জানা জরুরি গাউছুল আযম আল্লাহর নাম বা উপাধি কিনা। এটি কি আল্লাহর জন্যই খাস?
না এটি আল্লাহর নাম বা উপাধি কোনটাই নয়। এটি আসমাউল হুসনা তথা আল্লাহর সুন্দরতম,গুনবাচক নাম সমূহের কোনটিই নয়। যুগশ্রেষ্ঠ কয়েকজন আল্লাহর ওলিদের নামের ক্ষেত্রে গাউছুল আযম বা গাউছে পাক শব্দ ব্যবহার করা হয়। গাউছুল আযম অর্থ হলো মহান সাহায্যেকারী বা মহান ত্রানকর্তা।
আউলিয়াকেরামদের স্তরগুলোর মধ্যে একটি স্তরের আউলিয়াদের গাউছুল আযম আহ্বান করা হয়। যিনি গাউছুল আযম তিনি সৃষ্টিজগত ও মাখলুকের প্রতি দয়া ও সাহায্য প্রদানকারী বিশেষ নির্বাচিত ব্যাক্তি।
দেখা যায় লেবাসধারী অনেক ভ্রান্ত মৌলভী বলে থাকে গাউছুল আযম বলা শিরক। এটি সম্পূর্ণ প্রমানহীন, ভিত্তিহীন, যুক্তিহীন কথা। আল্লাহর মহান ওলিরা আল্লাহ হতে প্রাপ্ত শক্তি, জ্ঞান ও ক্ষমতা বলে অবশ্যই সাহায্যকারী। এতে ভয় বা শিরকের ভয়ের কিছুই নাই।
পবিত্র কোরআন শরীফে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহর ওলিরা নবীদের ও সাহায্য করেছেন। অকল্পনীয় ক্ষমতা বলে রাণী বিলকিসের সিংহাসন সহ রাণী বিলকিসকে চোখের পলকে সোলায়মান (আঃ) এর সম্মুখে উপস্থিত করলেন এক ইনসানে কামেল বা আল্লাহর ওলি। (এই ব্যাক্তি নবী ছিলেন না। তাহলে এই ইনসানে কামেলকেও কি মুশরিক বলবেন?)
পবিত্র কোরআন শরীফে আরো দেখা যায় নবী হযরত ঈসা (আঃ) এর সাথে যারা হাওয়ারী ছিল তাদেরকেও আনসারী বলা বলা হয়েছে।
(এখন কি বলবেন? ঈসা (আঃ) এর একনিষ্ঠ যারা সহচর ছিলেন তারাও মুশরিক? নাউজুবিল্লাহ!)
ইমামুল আম্বিয়া মুহাম্মদ (সাঃ) খোদ নিজেই মদিনার সাহাবাদের লকব দিয়েছিলেন আনসার বা সাহায্যকারী।
(তাহলে রাসুল ও সেই সাহাবাদের শিরকের ফতোয়া দিবেন? নাউজুবিল্লাহ!)
মহান আল্লাহ তা’য়ালা তার প্রিয় হাবিবকে রউফুর রহিম তথা বড়ই দয়াবান বলে আহ্বান করেছেন। আমরা যদি রাসুল (দঃ) কে রউফুর রহিম বলে ডাকি শিরক হয়ে যাবে? (নাউজুবিল্লাহ)।
নিঃসন্দেহে আল্লাহর বিশেষ মাকামিয়াতের ওলিগনকে গাউছু আযম বলে আহ্বান করা যাবে।
বেলায়তে মোকাইদা যুগের আল্লাহর মহান ওলি হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর মহান লকব গাউছুল আযম। পরবর্তী সময়ের সকলের ওলি আল্লাহগন ওনাকে গাউছুল আযম বলে মেনে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়। আল্লাহ পাক স্বয়ং ইলাহামের মাধ্যমে হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) কে গাউছুল আযম পবিত্র লকবে আহ্বান করেছেন। হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) রচিত কিতাব “রেসালায়ে গাউছুল আযম” কিতাবে বর্ণণা করা হয়েছে। উক্ত কিতাবে দেখা যায়, যখনি মহান আল্লাহ তা’য়ালা ওনাকে এলহামে আহ্বান করেছেন, তখনি আল্লাহ তা’য়ালা আহ্বান করেছেন ইয়া গাউছুল আযম।
হাস্যকর হলেও সত্য, ভ্রান্ত আহলে হাদীস, ওহাবী নজদিদের দেয়া শিরকের ফতোয়া থেকে রেহাই পায়নি, ইসমাঈল দেহলভী, আশরাফ আলী থানবী, রশীদ আহমদ গাংগুহী, হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী, মৌলভী সানাউল্লাহ, অম্রিতস্বরী, এবং মিয়া নজির হোসাইন দেহলভী সহ অনেক দেওবন্দি আলেমগন। কেননা তারা তাদের কিতাবে “গাউছুল আযম” শব্দটি হযরত শায়খ মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর নূরানী সম্বন্ধেও লিখেছে। [ সূত্রঃ সেরাতে মুস্তাকিম (ফার্সি) পৃঃ ৫৬,১৩২,১৩২/ ফতোয়া-য়ে আশরাফিয়া ১ম খন্ড, পৃঃ০৯/ দাওয়ায়ে আবদিয়াত ৫ম খন্ড, পৃঃ১৭/ ফতোয়া-য়ে নযীরিয়াহ্ ১ম খন্ড পৃঃ২৩ ]।
জগৎ বিখ্যাত মোহাদ্দেস মোল্লা আলী ক্বারী মক্কী (রহঃ) তাঁর গ্রন্থ “নুজতাহুল খাতিরিল ফাতির ফি তারজিমাতে সাইয়েদীস শরীফ আবদুল কাদের (রাঃ)” কিতাবে উল্লেখ করেন-
অর্থঃ “শীর্ষস্থানীয় উলামা ও মাশায়েখগণের মাধ্যমে আমি (মোল্লা আলী ক্বারী) নিশ্চিতভাবে অবগত হয়েছি যে, সাইয়েদুনা ইমাম হাসান মুজতবা (আঃ) আনহু উম্মতের মধ্যে ফেতনা-ফ্যাসাদের আশংকায় যখন খেলাফত ত্যাগ করলেন (৬মাসের মাথায়) এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তাঁর (হাসান আঃ) নিজের মধ্যে এবং তাঁর বংশধরগণের মধ্যে গউছুল আযমের মর্তবা নির্ধারণ করে দিলেন। ফলে প্রথম কুতুবুল আকবর(গউছুল আযম) হলেন স্বয়ং ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুু। আর মধ্যখানে হলেন – হুজুর সাইয়েদুনা সাইয়্যেদ শায়খ আবদুর কাদের জিলানী এবং শেষ জমানায় হবেন হযরত ইমাম মাহদী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আজমাঈন।”