
আল্লাহ্ সৃষ্টির মাঝে পাঁচ সংখ্যার আধিক্য।
আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে জনাবে পাক-পাঞ্জাতন (আঃ) গণের দায়িত্ব ও মর্যাদা কিরকম ভাবে সংযুক্ত তাহা আমার নিজস্ব চিন্তাধারা নিম্নে লিপিবদ্ধ করলাম। পাঠকবৃন্দের জ্ঞাতার্থে জনাব পাক-পাঞ্জাতন (আঃ) কাহাদের বলা হয় তাহাও লিখিলাম।
আমরা জানি যে পাক অর্থাৎ পবিত্র এবং পাঞ্জাতন অর্থাৎ পাঁচজন ব্যক্তি। আর এই পাঁচজন পবিত্র ব্যক্তি হইলেন:-
- ১। হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (দঃ),
- ২। হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ),
- ৩। হজরত মা ফাতেমা ( আঃ ),
- ৪। হজরত ইমাম হাসান (আঃ),
- ৫। হজরত ইমাম হোসেন (আঃ)।
এনাদেরকেই একত্রে এবং সংক্ষেপে পাক-পাঞ্জাতন ডাকা হয়। এনারাই হুজুর (দঃ)-এর ভাষায় তাহার আহালে বয়াত এবং এনারাই যে আল্লাহর মহা পবিত্র ব্যক্তি তাহা পাক কোরানের সুরা আল এমরানের ৬১ নং আয়াত খৃষ্টানদের সহিত হুজুর (দঃ)-এর মোবাহেলার বর্ণনাই তাহার সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ। মানব জীবনের সার্থকতাই হইল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করিতে হইলে তাহার প্রিয়তম রসুল (দঃ)- এর সন্তুষ্টি অর্জন করিতে হইবে এবং রসুল ( দঃ) এর সন্তুষ্টি লাভ করিতে হইলে তাহার আহালে বয়াতগদের সন্তুটি অর্জন করিতে হইবে এবং তাহা সম্ভব কেবল মাত্র তাহাদের প্রতি আমাদের গভীর অনুরাগ, ভক্তি এবং অনুসরণের মাধ্যমে। তাই তাহাদের জীবনের প্রতিটি ঘটনাকে সঠিকভাবে অনুসন্ধান করিয়া এবং তাহাতে অনুপ্রাণিত হইয়া আল্লাহর সৃষ্ট জীবের কল্যাণে নিজকে উৎসর্গ করিতে পারিলেই আল্লাহ এবং তাঁহার রসুল (দঃ) তথা পাক-পাঞ্জাতন (আঃ) দের সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হইবে।
পাঁচ সংখ্যার আধিক্য বিবরণ
- আল্লাহর সৃষ্টি পাঁচ ভাগে বিভক্ত যেমন:-
- ১। ফেরেস্তা, জ্বীন, মানুষ, জীবজন্তু ও বৃক্ষাদি।
- ২। জীব্রাইল, আজরাইল, মিকাইল, ইস্রাফীল ও আজাজীল (মনির আজাজীল ফেরেস্তা নয় তবু তাহার শক্তি কম নয়)।
- ৩। জমিন, আসমান, বায়ু, পানি ও অগ্নি।
- ৪। আল্লাহর মনোনীত প্রশাসক: রসুল, নবী, ইমাম, আলী, কুতুব।
- ৫। সত্য, মিথা, হিংসা, ক্রোধ ও সংযম।
- ৬। বিচার, আচার, সুচিন্তা, জনসেবা ও কৃতজ্ঞতা।
- ৭। চুরি, খুন-খারাবি, ঠগ, জুলুম ও ব্যভিচার।
- ৮। আকাশে — গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য্য ও মেঘ।
- ৯। জমিনে (পানি) — সাগর, নদী, খাল, বিল ও পুকুর।
- ১০। জমিনের অবস্থা—পাহাড়, বন, চাষজমি, ভিটাবাড়ী ও মরুভূমি।
- ১১। পানির অবস্থা— বিদ্যুৎ, খাদ্য মাছ, ঔষধযোগ্য জীব, মূল্যবান পাথর ও পানি (মানুষের জীবন)।
- ১২। জমিনের উপরে মানুষ, জীবজন্তু, তরুলতা, ফলানি ও ব্যবহারযোগ্য কাঠ-বাঁশ।
- ১৩। জীবজন্ত বন্য হিংস্র পশু, মানুষের মাঝে গরু-ছাগল, ঘোড়া।
- ১৪। হাতী, হাঁস-মুরগী ও উড়ন্ত পক্ষী- ১৪। মানব অংশ— দুই হাত, দুই পা ও এক মাথা।
- ১৫। হাতের আঙ্গুল- কনিষ্ঠা, অনামিকা, মধ্যমা, তর্জনী, বৃদ্ধাঙ্গুলি।
- ১৬। দুই হাতের তালু, দুই পায়ের তালু ও এক মাথার তালু।
- ১৭। মানব চেহারা চক্ষু, নাক, কান, মুখ ও কপাল।
- ১৮। মুখের আকার—দুই ঠোঁট, দুই মাড়ি ও এক জিহ্বা।
- ১৯। দেহের আকার দুই স্তন, পেট, পিঠ ও নাভী।
- ২০। মানব দেহের উর্বর জমি— মাথা ও মুখমণ্ডল, বুক, দুই কাল ও নাভীর নীচের অংশ।
- ২১। দেহের ভিতর মল, মূত্র, পিত্ত, রক্ত ও মণি।
- ২২। ধর্ম—প্রভুকে স্বীকার করা, কুচিন্তা ত্যাগ করিয়া সুচিন্তা করা, সত্য বলা, হালাল খাওয়া ও জনসেবা।
- ২৩। সৃষ্টির জীবন—জন্ম, ভূমিষ্ঠ, যৌবন, বার্ধক্য ও মৃত্যু।
- ২৪। রাজ্য পরিচালনা- -রাজা, প্রজা, মন্ত্রী, বিচার ও ব্যবস্থা।
- ২৫। সংসার জীবনের দায়িত্ব– মাতা-পিতা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি,আত্মীয়-স্বজন ও গোষ্ঠী-গোয়াতী (এই দায়িত্ব পালনের জন্য রাছুল (দঃ) উপদেশ এবং ইহাতেই আল্লাহ সন্তুষ্টি)।
- ২৬। গ্রাম্য সমস্যায় সালিসী পঞ্চায়েত।
- ২৭। যান বাহন অশ্ব, জাহাজ, নৌকা, গাড়ী ও বিমান।
- ২৮। ইসলামের ভিত্তি—কলেমা, রোজা, নামাজ, হজ্ব ও জাকাত।
- ২৯। দিনের সময় –ভোর, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা ও রাত্রি।
- ৩০। নামাজ – ফজর, জোহর, আছর, মাগরেব ও এশা।
- ৩১। আল্লাহর সংরক্ষিত – হায়াত, মউত, রিজীক, দৌলত ও সম্মান।
- ৩২। শিক্ষায় – পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা, আন্তর্জাতিক শিক্ষা, আক্ষরিক শিক্ষা ও ধর্ম শিক্ষা।
- ৩৩। শিক্ষা পীঠ — পাঠশালা, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।
- ৩৪। খনিজ পদার্থ – কয়লা, তেল, ধাতু, রত্ন ও রসায়ন।
- ৩৫। আল্লাহর প্রথম ও শেষ দিন সৃষ্টি, ধ্বংস, পুনরুত্থান, বিচার ও পুরষ্কার।
- ৩৬। আল্লাহর প্রথম ও শেষ দিনের পরে নতুন দিন – আল্লাহর সাথী।
- ৩৭। জান্নাতবাসী, দোজখবাসী, ফেরেস্তা ও হাউজে কাওছার।
উপরে বর্ণিত সকল কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা এবং এই ইচ্ছার প্রতীক ধাহারা তাহারাই জনাবে পাক-পাঞ্জাতন (আঃ) নামে আখ্যায়িত এবং তাঁহারাই আল্লাহর হাতের পাঁচ আঙ্গুল।
আল্লাহর প্রতীক হিসাবে জনাবে পাক পাঞ্জাতনের স্থান।
- ১। হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (দঃ) = আল্লাহরর ইচ্ছা পূরণের প্রতীক।
- ২। হযরত আলী (আঃ) = আল্লাহর শক্তি ও বিচারের প্রতীক।
- ৩। হযরত মা ফাতেমা (আঃ) = আল্লাহর সংযম ও সৌন্দর্য্যের প্রতীক।
- ৪। হযরত ইমাম হাসান (আঃ) = আল্লাহর শান্তির প্রতীক।
- ৫। হযরত ইমাম হোসেন (আঃ) = আল্লাহর সত্য ও ত্যাগের প্রতীক।
এনারাই আল্লাহর নূরের নূর ও সাথী। এনাদের উপরই তাঁহার সৃষ্টির ইচ্ছা ও দায়িত্ব দান করিয়াছেন। এনাদের মোকাবিলায় এই পৃথিবীতে অন্য কোন মানুষকে তুলনা করিতে পারিলে প্রিয় পাঠক, আমি আজীবন তাহার গোলামী করিব।
সূত্র- ঔঁ এবং আলী (আঃ)
নিবেদক: সৌরভ হোসেন