অতীত কর্মফল:
কোরানিক দর্শনের আলোকে অতীত কর্মফল:
কোরানিক দর্শন জানান দিচ্ছে সুরা- আল ওয়াকিয়ার ৪৫নং আয়াতে (ইননাহহুম কানু কাবলা জালিকা মুতরাফিন)। অনুবাদ: ইন্নাহুম(নিশ্চয়ই তাহারা) কানু (ছিল) কাবলা(পূর্বে) জালিকা(উহা) মুতরাফিন(বিলাসী).
অর্থাৎ- “নিশ্চয়ই তাহারা পূর্বে ছিল ওই বিলাসী জীবন যাপনকারী।”
ব্যাখ্যা:
অবশ্যই তাহারা অতীতে তথা পূর্বে অথবা আগে ছিল ওই বিলাসী জীবনের উপর, এই আয়াতটি বামপন্থীগণের পূর্ববর্তী জনম তথা আগের জীবনের ঘটনা আল্লাহপাক বর্ণনা করেন। (সুরা আল ওয়াকিয়া তিনটি দলের চরিত্র বা বেশিষ্ট্যের ঘটনা বর্ননা রয়েছে- (১) অগ্রগামী, (২) ডানপন্থী ও (৩) বামপন্থী।
পূর্ববর্তী জীবনে বামপন্থীগণ লোভ-মোহ কামনা বাসনার উপর বিলাসী জীবন যাপন করতেন।এ ই আয়াতে কারিমার দ্বারা পূর্ব জনমের জীবনকাহিনীর বৃত্তান্ত প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থাৎ বামপন্থীগণ তথা মন্দচরিত্রের লোকজন নিজেদের নফসের উপর জুলুম করেছেন বলে তিনস্তরের নিম্নস্তরের জম্ম নিয়েছেন। তারা নবী-রসুল, অলীদের বিধানের তোয়াক্কা না করে, নিজেদের খেয়াল খুশির উপর জীবন যাপন করেছিলেন। এবং নিজেদের ভোগ বিলাসে মত্তছিল। যার কারনে অর্জিত কর্মফল হিসাবে বর্তমানে বামপন্থী দলে এসে জম্মনিতে হল। প্রত্যেকের কর্মই তার নফসের উপর লিখিত হয়, এবং তার ফল তাকে অজিরেই জানিয়ে দেওয়া হয়।
সুফি কবি সাধক শাহজাহান শাহ মস্তান তার কবিতার ভাষায় কোরানিক দর্শনটি তুলে ধরেন এইভাবে- “যার যার কর্ম নিজের গড়া, ক্ষুদ্র বিজ্ঞ আছে যারা।” ইহা কোরানিক দর্শন, আপনি আমি মানলেও নফস তার অর্জিত কর্মফল ভোগ করবে আবার না মানলেও নফস তার অর্জিত কর্মফলই ভোগ করবে। কারণ ইহা নফসের অর্জিত তকদীর।
সুরা ইয়াসিনে ৫৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,- “সুতরাং আজ জুলুম করা হইবে না কোনো নফসের উপর এবং প্রতিফল দেওয়া হইবে না তোমরা যে আমল করিয়াছ তাহা ছাড়া।” ইহাই চিরন্তন সত্য, বিশ্বাস করুন চাই আর নাই করুন। মৃত্যু তথা কিয়ামত তথা নফসের বিবর্তনবাদ আপনি স্বীকার করলেও কিয়ামত তথা রূপান্তরবাদ আপনাকে অস্বীকার করবে না। জান্নাত আর জাহান্নামের সুখ ও দুঃখ ভোগ আপনার আমার নফস দেহধারন করেই ভোগ করতে হবে। মার্টির গর্তনামক মেজাজি কবরে আযাব হয় না আবার প্রশান্তিও নফস ভোগ করে না। নফস জীবন্ত দেহনামক কবরেই জান্নাত ও জাহান্নামের সুখ ও দুঃখ ভোগ করে।
মাটির গর্তে নফস থাকে না, থাকে নফসবিহীন মৃত লাশ। সুখ ও দুঃখ নফস ভোগ করে অর্জিত কর্মফলের মাত্রা অনুসারে কিন্তু রূহ ভোগ করে না। রূহ ভোগে উর্ধ্বে, রূহ উপভোগ করে। রূহ আল্লাহর আদেশ, রূহ আল্লাহর জাতনুর তথা রূহ স্বয়ং রাব্বুল আলামিন। শ্রীমদভগবত গীতায় বলা হয়েছে প্রারদ্ধ তথা অতীত কর্ম ভোগ বিনে খন্ডন হয় না। তারই সমাধানে বলা হয়েছে “জ্ঞানাগ্নিতে পুড়লে প্রাক্তন কর্মের বীজ আর অংকুরোগদম হয় না।” সাধনা লব্ধ জ্ঞানই অতীতপাপ নাশ করতে পারে। কর্ম অনুসারেই তকদীরের কলমটি লিখতে শুরু করে।
(সুরা আল ওয়াকিয়া ৫৬ঃ৪৬) কোরানিক দর্শন জানান দিচ্ছে- “ওয়াকানু ইউসিররূনা আলাল হিনসিল আজিম”
অনুবাদ: “ওয়া(এবং) কানু (ছিল) ইউসিররুনা(তাহারা লিপ্ত ছিল) আলা(উপরে) হিনসিল(মন্দকাজ) আজিম(বড়)” অর্থাৎ- “এবং তাহারা লিপ্ত ছিল বড় পাপের উপর।”
ব্যাখ্যাঃ
বড় বড় পাপ বা গুনাহ বলতে আমাদের ধারনা আপন নফসের উপর জুলুম করা, এতিম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, এতিমের হক মেরে দেওয়া, ধন সম্পদ গুনে বেছে রাখা, বার্ধক্য অবস্থায় আপন মাথাপিতা হতে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, আপন স্ত্রী ব্যতীত পরনারীর দিকে কুদৃষ্টি দেওয়া, আল্লাহর পাগল, মজ্জুব, অলীদের প্রতি আড়নয়নে দৃষ্টিপাত করা এবং তাদের উপর প্রকাশ্য ও গোপনে অত্যাচার নির্যাতন ও জুলুম করা। এসব অপকর্মে কারণে আসফালা সাফিলীনদে তথা অতি নিম্নস্তরের নেমে আসতে হবে। এবং তারা যদি নিজেদের অগ্রগামী ও ডানপন্থীদের সংস্পর্শে এসে সংশোধন না করে পরবর্তী জম্মে আরো নিম্নস্তরের নামিয়ে দেওয়া হবে তথা পরবর্তী জীবনের প্রভাত রচিত হবে কন্টকময়। অতীত কর্মের কারনে বর্তমান বামপন্থী দলে এসে জ্ম্ম নিতে হল।
সুতরাং কোরানিক দর্শনের মূল দর্শন হল কিয়ামত তথা জন্মান্তরবাদ তথা নফসের রূপান্তরবাদ দর্শন। নফসের রূপান্তর দর্শন কোরান এত নিখুত ও স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেছেন তা পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মদর্শনে বিশদব্যাখ্যা দিয়ে আলোচনা করে নি। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হল কোরানের বিকৃত অনুবাদ আর বিকৃত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে কোরানের আসল দর্শন চাপা দিয়ে ফেলে বকধার্মিকরা। তাই তথাকথিত মুসলিমরা সাওয়াবের জোয়াল নিয়ে কোথায় যাচ্ছে তারা নিজেরাই জানে না, হায়রে সাওয়াব আর নেকির জোয়াল!
– আর এফ রাসেল আহমেদ