পীর ও মুরিদের মধ্যে ভেদাভেদ কোথায়?
পীর ও মুরিদের মধ্যে ভেদাভেদ-
পীরের জাত-সিফাতের মুরিদ মিশে না যাওয়া অব্দি কেউই প্রকৃত মুরিদ হতে পারেনা। আর পীরের সাথে বিলিন হওয়া মানেই স্রষ্টার সাথে বিলিন হয়ে যাওয়া। সৃষ্টির সকল কিছুর মধ্যেই স্রষ্টার অবস্থান। এটা অনুধাবন করতে হলে অবশ্যই আমাদের স্রষ্টার আমানত রক্ষা করতে হবে। আর এই আমানত রক্ষা করার শিক্ষা কেবল পীরই দিতে পারেন।
স্রষ্টার দেওয়া আমানতের খেয়ানত না করার জন্য স্রষ্টার আদেশ হলো:- “আমা হতে গিয়েছো আমাতেই ফিরে এসো, আমার দেওয়া আমানত সহ। যদি আমানত রক্ষা করে আমার কাছে ফিরে আসতে পারো তাহলে আমার সাথে বিলিন হয়ে যাও। যদি বিলিন হওয়ার মতো সমূদয়গুন তোমার না থাকে, তবে ফিরে যাও।”
আমানত সম্পর্কে খাজাবাবা ফরিদপুরী বলেছেনঃ-
“মানুষের সমুদয় গুণাগুণ তথা কল্পন, দর্শন, শ্রবণ, চিন্তন, সৃজন, কথন-সবই আল্লাহতায়ালার দান। মানুষের হৃদয় বা কাল্ব-তাহাও আল্লাহতায়ালার আমানত বা দান। এই আমানতের খেয়ানত যে করিবে, তাহার পরিণাম ভয়াবহ।”
খাজাবাবা ফরিদপুরী আরো বলেনঃ—
“কল্পন, দর্শন, শ্রবণ, কথন, বর্ণন, সৃজন, মনন, ইত্যাদি সমুদয় শক্তি আল্লাহ পাকের, মানুষের নয়। মানুষকে এই গুণাবলী সমূহ আমানত স্বরুপ ধার দেওয়া হইয়াছে।”
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ষোষণা করেনঃ- “আমি আসমান, যমীন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করেছিলাম, তারা তাঁ বহন করতে অস্বীকার করল এবং তাতে শষ্কিত হল, কিন্ত মানুষ তা বহন করল; সে কত যালিম, কত অজ্ঞ” (সূরা- আহযাব, আয়াত- ৭২)।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ তায়ালা তিনার পবিত্রতম সত্তাকে মানুষের মাঝে আমানত স্বরূপ দিয়েছেন এবং আমরা দুনিয়াতে এসে, দুনিয়ার মোহে পড়ে তার দেওয়া আমানত খেয়ানত করে ফেলছি। স্রষ্টার দেওয়া গুন রক্ষা করাই হলো তার আমানত রক্ষা করা, সুতরাং এই আমানত রক্ষা করতে পারলেই স্রষ্টার জাতের সাথে বিলীন হওয়া যায়, নচেৎ তার সাথে ফানা হওয়া যাবেনা।
যেমন একজন কামেল তার স্রষ্টার সাথে বিলিন হয়ে গিয়ে নিজেকে ফানায় রুপান্তর করে। অতঃপর কোনো মুরিদ যদি তার পীরের সাথে ফানা হয়ে যায় তখন পীর ও মুরিদের মধ্যে পার্থক্য থাকেনা। তখন আল্লাহকে ডাকা আর পীরকে ডাকা কিংবা নিজেকে ডাকা একই কথা। (অর্থাৎ, অহেদ বা এক, আর অহেদের কোনো শরীক থাকেনা, মানে- মহা মিলন ঘটেছে, ঐক্যতার বন্ধন হয়েগেছে)।
এ প্রসংগে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রঃ) বলেন:-
“যখন তুমি সম্পূর্ণ ফানা হয়ে যেতে পারবে তখন ইচ্ছা হয় বলো তুমি আল্লাহ অথবা তিনি আল্লাহ একই কথা।”
“যে আল্লাহ আল্লাহ বলছে সে আল্লাহকে পায়নি(সেহেতু ইবাদত করছে) আর যে আল্লাহকে লাভ করেছে সে
আল্লাহকে আল্লাহ বলবে না (কারন, মহামিলন ঘটেছে, ঐক্যতায় প্রতিষ্ঠিত আছে)”।
“তুমি যদি খোদার মুখ দেখতে চাও তাহলে আমার চেহারার দিকে তাকাও। আমি তার আয়না, সে আমা হতে আলাদা নয়।”
লেখা: Nishat Wahid