যাকাত বিষয়ের আলোচনা – ডা. বাবা জাহাঙ্গীর

এবার আমরা কোরান-হাদিসে উল্লেখিত জাকাত বিষয়টির উপর সংক্ষেপে আলোকপাত করবো। সাধারণ মুসলমান নামে যারা সমাজের বুকে পরিচিত তাদের কথা তো বাদই দিলাম। কিন্তু যারা ইসলামকে নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন তারাও জাকাত বলতে যে আড়াই টাকা মোটেই নয় এবং আড়াই টাকাকে কোরান-হাদিসের কোথাও জাকাত বলে নি সেটাও বড়ই দুঃখজনকভাবে আমাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত হয়ে রইল– যেন মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া মুক্তোর আর সন্ধানই কেউ ক্ষ্যাপার পরশমণি খোঁজার মতো খুঁজেও পেল না।

যারা ‘ধনী-গরিব আল্লাহ বানায়’ বলে আল্লাহর উপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিরপরাধ সেজে তথাকথিত সভ্যতা অনুশীলন আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান– তারাই দায়ী? এ রকম তথাকথিত সভ্যতার বাতাস সেবন করে যারা একবোঝা ডিগ্রির নরমুণ্ড গলায় পরে শিক্ষিত ও গবেষক বলে সমাজে পরিচিত, তাদের কাছে আসল বিষয়টি উদ্ধার করতে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে অরণ্যে রোদনের সামিল। বরং আসল বিষয়টাকে তারা এমনভাবে কবর-চাপা দিয়ে ফেলেছে যে, আসলটা মাথা উঁচু করে যদি কখনও উঁকি-ঝুকি মারতে চায় তখনই ভূত দেখে মারপিটের মতো ‘নকল-নকল’ বলে চেঁচিয়ে সমাজকে আরও বিভ্রান্তির অতল তলে তলিয়ে দেয়।

শতকরা আড়াই টাকাকে কোরান-হাদিস কোথাও জাকাত না বলে ‘সাদকা’ বলেছে। যেখানেই সম্পদের উপর করদানের প্রশ্ন , সেখানেই কোরান-হাদিসে ‘সাদকা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অনুবাদকারীদের মধ্যে এই শব্দ–পরিবর্তন বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয়। কোরান শরিফ ঘোষণা করেছে যে, হজরত লুত, হজরত ইব্রাহিম এবং প্রত্যেক নবিই জাকাত দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো, হজরত লুতের জন্ম আজ থেকে বহু বছর আগে। অন্যান্য নবিরা তো আরও বহু পুরাতন।

ইতিহাসই বলেছে, মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে পণ্যবিনিময় প্রথা তথা বারটার সিসটেম তথা এক্সচেইঞ্জ অব কমোডিটি ছিল এবং এই প্রচলন বেশ কিছুদিন মানবসমাজের বুকে পরিচিত ছিল। কিন্তু পণ্যবিনিময় প্রথার আগের ইতিহাসে আমরা দেখি আদিম সাম্যবাদ। এই আদিম সাম্যবাদ কয়েক হাজার বছর আগেই ছিল।

এখন বিরাটা প্রশ্নটি হলো, যখন পয়সারও প্রচলন ছিল না এবং পণ্যবিনিময় প্রথাও ছিল না তখন কোরান-এ বর্ণিত নবিরা কোন জাকাত দিয়েছেন, যদি জাকাতের অর্থ একান্তই মাল ও শতকরা আড়াইভাগ অথবা টাকা বলে প্রচার করা হলো? এতে কি আত্মবিরোধী কথার সমাবেশ হয় না? তবে কি শ্রদ্ধেয় আলেম ভাইয়েরা সোনার পাথরের বাটি এখানে খুঁজে পাচ্ছেন না? তবে যে সমস্ত তেলেসমাতি গবেষকরা ‘ডক্টরেট’ মুণ্ড গলায় ঝুলাবার লোভে সিক্ত, তার হাতিটাকে নদীতে টেনে হেঁচড়িয়ে ফেলে দিয়ে, নদীর রচনায় গবু দার্শনিকদের মতো ভাবগম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি করে পাণ্ডিত্যের বমি উদগীরণ করে।

এই বমির গন্ধে সমাজের সহজ, সরল, কাঁচা গলা মোমের মতো মানুষগুলোকে এমনিভাবে আক্রান্ত করে ফেলে যে, এরা আর সহজে কোনো প্রতিষেধক ঔষধ পায় না। আর যদি একান্ত ঔষধ মেলেই, তবে সেই ঔষধে প্রাণ বাঁচলেও, মরলে জাহান্নামে যেতে হবে বলে তেলেসমাতি গবেষকেরা ভয় দেখিয়ে ফেলেছেন। মরে যাও তাতে কোনো দোষ নেই, কিন্তু এই জাতীয় ঔষধ খেয়ে বাঁচাও মহাপাপ বলে আশা দিয়েছেন তেলেসমাতি গবেষকবৃন্দ।

আলোচনাঃ ডা. বাবা জাহাঙ্গীর ইকবাল ইবনে হেলাল গোলামে শাহ জালাল নূরী আল সুরেশ্বরী

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel