কোরানিক জ্ঞান বনাম আরবি ভাষা।
কোরানিক দর্শনজ্ঞান আর আরবি ভাষা অভেদ নহে বরং প্রভেদ। কোরানিক দর্শন শিক্ষা দেন, স্বয়ং রহমাতুল্লিল আলামিন তথা রাব্বুল আলামিন। রাব্বুল আলামিন যাহাকে ইচ্ছা তাঁহাকে কোরানিক দর্শনজ্ঞান শিক্ষা দেন। এবং যিনি রাব্বুল আলামিন হইতে কোরানিক দর্শনজ্ঞান লব্ধ করিয়াছেন তিনিই রাসেখুনা ফিল এলেম তথা কোরানিক দর্শন জ্ঞানের সুগভীর বোধিসত্ত্বা। তিনিই রাব্বুল আলামিনের কাইফ কৌশল বুঝেন। রাব্বুল আলামিনের কৌশল তথা কোরানিক দর্শন জ্ঞান লব্ধ করিবার পহেলা শর্ত হইল তাহরাত এবং সংযম শক্তি। তাহরাত (পবিত্রতা) ও সংযম শক্তি হইল কোরানিক দর্শন জ্ঞান লব্ধ করিবার পহেলা অ্যালফাবেট। কেহ যদি রাব্বুল আলামিনের কাইফ কৌশল তথা কোরানিক দর্শন জ্ঞান হৃয়াঙ্গাম করিবার প্রয়াস থাকিয়া থাকে, তাহা হইলে তাহাকে আব্যশকপূর্বক তাহারাত ও সংযমশক্তি অর্জন করিতে হইবে।
যদিও আরবগণের ভাষা আরবি, আরবগণ আরবি ভাষায়ই কথা বলিয়া থাকেন। মহাপ্রভু মহানবী সা: হলেন রসুলে আরাবী, সুতরাং তাহার মাতৃভাষাও আরবি। কিন্তু রসুলের (জ্ঞান) অহি তথা কোরান। মহাপ্রভু মহানবী সা: যেহেতু আরাবী সেহেতু কোরানিক জ্ঞান তথা রূহুল আমিনের রহস্য তথা রসুলের মর্মভেদ আরবি ভাষারূপে প্রকাশিত হইয়াছে। প্রত্যেক রসুলের জ্ঞান অহি তথা কোরান। সুতরাং ভাষার প্রভেদ রহিয়াছে বটে কিন্তু রসুলগণের মধ্যে কোনো প্রভেদ নাই বরং অভেদ। অবশ্য মর্যাদাগত বিষয়ে তারতম্য রহিয়াছে। রাব্বুল আলামিন ভাষা শিক্ষা দেন না, রাব্বুল আলামিন কোরান, হিকমা, কেতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেন। জ্ঞানের (নূরের) বা কোরানের কোনো অক্ষর তথা প্রতীক নাই।
এই রহস্যময় জ্ঞান (নূর) কোরান পরিপূর্ণ মানবের কলবে তথা হৃদয়ে তথা অন্তরে তথা সিনাতে নাজেল বা উদয় হয়। এই জ্ঞান (নুর) বা কোরানের রহস্য প্রকাশ করিবার নিমিত্তে প্রতীক বা ভাষার আবশ্যক। ভাষা শিক্ষা করা কোনো জ্ঞান নয়, ভাষার মাধ্যমে জ্ঞানের গভীরতর স্পর্শ অনুভব তথা উপলব্ধি করাই হল জ্ঞান। তাই বলিয়া কোরান আরবি ভাষা হইয়া গেল না, কোরানিক দর্শন জ্ঞান আরবি ভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত হইয়াছে। আরবি ভাষা আরবদেশের স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটিতে পড়ানো ও শিক্ষা দেওয়া হইয়া থাকে। এবং আরবি ভাষার সুগভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করিয়া থাকে উচ্চতর ব্যাকরণসহকারে। তার পরেও ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে কোরানিক দর্শন জ্ঞান উপলব্ধি সবাই করিতে পারেন না।
যেহেতু মহাশক্তিধর আল্লাহরাব্বুল আলামিনই কোরানের শিক্ষক আমরারূপে, তিনি যাহাকে ইচ্ছা তাঁহাকেই কোরানের তালেব মনোনিত করিয়া থাকেন। এবং তাঁহাকে আমরারূপ ধারণ করে কোরানের রহস্য জ্ঞান শিক্ষা দেন। সুতরাং আরবি ভাষা কোরানের একমাত্র ভাষা নয়, কোরান আরবি ভাষায় প্রকাশিত হইয়াছে বটে। কোরান হল রসুল তথা মহাপুরুষের বিজ্ঞান। কোরান হল রুহুল আমিনের ভাষা। কোরান হল নূর। মহাপুরুষ তথা রসুল তথা অবতার যে ভাষায় প্রেরিত হন না কেন, সেই ভাষাতেই নূর প্রকাশ করিয়া থাকেন, তথা হিদায়তের নূর প্রদান করিয়া থাকেন। মূর্ত না থাকিলে বিমূর্ত ফুটিয়া উঠে না। মূর্ত বলে না, বলায়।
– আর এফ রাসেল আহমেদ