এবেলা তোর ঘরের খবর জেনে নেরে মন, লালন সাঁইজির কালামের ব্যাখ্য

এবেলা তোর ঘরের খবর জেনে নেরে মন, লালন সাঁইজির কালামের ব্যাখ্য

“এবেলা তোর ঘরের খবর
জেনে নেরে মন।
কেবা জাগে কেবা ঘুমায়
কে কারে দেখায় স্বপন।”

তত্ব কথা: আপন মনকে, এবেলা তথা এই সময় বা নগদ সময়ে আপন দেহ ঘরের খবর নিতে বলা হয়েছে। কারণ মানুষ যখন নিদ্রা যায় তখন কে ঘুমায় আর কে জাগে থাকে? অর্থাৎ ঘুমানোর সময় নফস ও রুহ, কে কোন অবস্থায় থাকে? আর তখন কে কাকে স্বপন দেখায়? নফস ও রুহ এই দুই তত্বর রহস্য না জানা অবধি কাহারও পক্ষে এই স্বপন দেখার রহস্য উন্মোচন হবে না।ধরুন মানুষ জাহেরী ভাবে মরে গেলে তার নফস আর রুহ কে কোথায় থাকে? জগত সংসারে জীবিত মানুষ মরা মানুষকে যখন স্বপন দেখে তা কিসের ভিত্তিতে কিভাবে দেখে? তার খবর সমাজের কোন মোল্লা-মুন্সিদের কাছে নেই।

তার রহস্য জানতে হলে অবশ্যই নবীর তরিকতে দাখিল হতে হবে। তারপরেও কিঞ্চিৎ ধারনা দেই। নফস হলো জীবআত্মা আর রুহ হলো পরম আত্মা।মানুষ যখন ঘুমায় তখন তার দেহ অচেতন থাকে,কিন্তু কেন? এই জন্য ঘুম নফসের জন্য সাময়িক মৃত্যু অপরদিকে নফস যখন দেহ হতে চির বিদায় নেয় অর্থাৎ বাংলার প্রচলিত কথা মানুষ যখন মারা যায় তখন ঐ দেহের জন্য নফসের হয় পরিপূর্ণ মৃত্যু। মানুষ যখন ঘুমায় তখন তার নফস দেহকে সতেজ রাখে অর্থাৎ দেহকে জীবিত রাখে কিন্তু অচেতন থাকে।

এক্ষেত্রে নফস অচেতন বা ঘুমিয়ে থাকলেও রুহু জাগ্রত থাকে। আর এই জাগ্রত রুহ তখন পরিভ্রমণে বের হয়, তখন অন্য জনের রুহের সাথে সে জীবিত হোক বা জাহেরা মৃত্য হোক তার রুহের সাথে যখন দেখা স্বাক্ষাত হয় তখনই স্বপন দেখার বিষয়টি ঘটে। ফলে দুনিয়ায় বেঁচে থাকা মানুষ তখন জীবিত ও মৃত্য যাই বলি না কেন উভয় মানুষকেই স্বপনে দেখে-তবে ইহার স্থায়ীত্ব কাল দুনিয়াবী হিসাবের কয়েক সেকেন্ড মাত্র।আর বলা সম্ভব না।

“শব্দের ঘরে কে বারাম দেয়
নিঃশব্দে কে আছে সদায়
যে দিন হবে মহাপ্রলয়
কে কারে করে দমন।”

তত্ব কথা: শব্দের ঘরে কে বারাম দেয়? বারাম শব্দের অর্থ বিশ্রাম। নি:শব্দে কে আপন অজুদে, কি অবস্থায় কে সেখানে আছে সর্বদায়। যেদিন মহাপ্রলয় তথা রুহু দেহ হতে যখন চিরতরে বিদায় নেয়, তরিকতের ভাষায় তখনকার সময়কেই মহাপ্রলয় বলা হয়। শরিয়তের পরিভাষায় আজরাইল নাকি জান কবজ করে, যদি তাই হয় তাহলে জান রুপে দেহকে কে জীবিত রাখে আর কে কাকে দমন করে–ইহাই ফকির লালনের জীজ্ঞাসা?

“দেহের গুরু হয় কে বা
ভক্ত হয়ে কে দেয় সেবা
যেদিন তাহা জানতে পাবা
কোলের ঘোর যাবে তখন।”

তত্ব কথা: আপন অজুদে তথা দেহ ঘরে জগত গুরু রুপে কে বা আছে, আর কে বা ভক্ত হয়ে জগত গুরুর সেবা করছে? ফকির লালন এখানে পরম সত্যকে জানতে বলেছেন। তাই তিনি বলেছেন, যেদিন তাহা জানতে পাবা কোলের ঘোর তথা মনের ঘোর বা মনের ভ্রান্তি তখন যাবে চলে।

“যে ঘরামি ঘর বেঁধেছে
কোন খানে সে বসে আছে
সিরাজ সাঁই কয় তাই না বুঝে
দিন তো বয়ে যায় লালন।”

তত্ব কথা: যে ঘরামি তথা ঘরের জনক আপন অজুদে ঘর বেঁধেছে-সে কোন খানে বসে আছে? কোরআনেই সে ব্যপারে বলা আছে, সে দুরে নয় আমার শাহ রগের চেয়েও অধিক নিকটে সিনার মধ্যে-তথা লা মোকামে আছে।তাই ফকির লালন সাঁইয়ের গুরু দরবেশ সিরাজ সাঁই বলেছেন, ওরে লালন তুই এখনও বুঝলি না দিন তো বয়ে যায়।

– লালন সাঁইজির আরো কিছু গানের ব্যাখ্যা

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel