যাকাত আর সদকা এক বিষয় নয়।

যাকাত আর সদকা এক বিষয় নয়।

যাকাত:

কোরানিক দর্শন জানান দিচ্ছে, নবী রসুল, মুমিন-মুসল্লি, এতিম ও মিসকিন ব্যতীত কেউ যাকাত দিতে পারবে না। যাকাত দেওয়ার শর্তই হলো মুমিন (পরিতৃপ্ত/অভাবমুক্ত) অথবা মুসল্লি (যোগী) হতে হবে। মুমিন-মুসল্লিগণ যাকাত দানে সক্রিয় অথবা কর্মতৎপর অথবা সদা ব্যতিব্যস্ত থাকে। মুমিন – মুসল্লিগণ আমানু,  ইনসান ও নাসকে যাকাত প্রদান করে, তাদের মানুসিক ও আত্মবিকাশ সুনিশ্চিত করেন। যাকাত কোনো বস্তুগত উপাদান নয়। নফসকে পবিত্র করার জন্য যাকাত আবশ্যক। সকল নবি রসুলগণই যাকাত দিয়েছেন, এই যাকাত শতকরা আড়াই শতাংশ নয়, শতকরা আড়াই শতাংশ সাদকার ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য। কলুষিত নফসকে মুক্ত করতে নবি রসুল, মুমিন- মুসল্লিগণ যে আত্মিকজ্ঞান, মানুসিক, আধ্যাত্মিক, শক্তি – সামর্থ্য – মর্যাদা বৃদ্ধি করে ইনসানে কামেলে রূপান্তর করতে যাকাত দিয়ে থাকেন।

সাদকা:

সকল কিছুর মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মানুষ আল্লাহর দেওয়া ধন-সম্পত্তির আমানতদার। ধন- সম্পত্তি তথা মাল পবিত্র করার জন্য ইসলামি শরিয়াহ সাদকা ব্যবস্থা রেখেছেন। কারণ, মানুষ তো নিজেই নিজের মালিক নয়, মানুষ কি করে আল্লাহর দেওয়া সম্পদের মালিক হয়? মানুষ হতে পারে আল্লাহর দেওয়া ধন সম্পত্তির আমানতদার। আর ইনসান তথা মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি তথা খলিফা নয়, আল্লাহর খলিফা হলো আদম তথা মুমিন। তাই কোরান জানান দিচ্ছে নবি-রসুল, মুমিন- মুসল্লিগণকে কলুষিত নফসকে দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত কারার নিমিত্তে সাদকা প্রদান করতে। মালিকে নিসাব তথা মালের নির্ধারিত একটি অংশ কোরানে বর্ণিত নির্ধারিত খাতে বন্টন করার ব্যবস্থা রেখেছে ইসলামি শরিয়াহ।

মানব মানবীর মর্যাদা হবে জ্ঞান-প্রজ্ঞা, গুণে-কর্মে, আত্মিক ও মানুসিক সার্মথ্যে অনুযায়ী। জৈবিক প্রয়োজন তথা মৌলিক অধিকার বিষয়ে সকলেই সমান ইসলাম ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রচলিত ধর্মীয় দর্শন সাদকা তথা ইনকাম ট্যাক্স আর যাকাতকে এক করে দেখিয়ে ফেলেছে! এটাই মনে হয় মুসলিম জাতির দুর্ভাগ্য ও অভিশাপ। অথচ নবি-রসুল, মুমিন-মুসল্লিকে সাদকা দিতে হবে নফসকে জিনমুক্ত করার জন্য। প্রত্যেকটি মানুষ খান্নাসের দাসত্ব করে, এই খান্নাস নামক শয়তানের বন্ধন থেকে মুক্তি নিতে নিসাব পরিমান সাদকা দিতে হবে। নবি, রসুল, মুমিন, মুসল্লি, অলি, ফকির, এতিম, মজ্জুব, মিসকিন ও মুসাফির তাঁরা যাকাত দানে সক্রিয়।

সুতরাং নবি- রসুল, মুমিন- মুসল্লি, ফকির – মুসাফির, এতিম – মিসকিন তারা যাকাত দানে সক্রিয়, কারণ, তারা অভাবমুক্ত, যিনি অভাবমুক্তি তিনিই গণি তথা ধনী। কারণ, ধন-সম্পত্তি যারা জমা করে এবং গুণে বেছে রাখে ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য তারাই মরদুদ নামক শয়তান, তারাই তাগুত পূজারী, ধারাই শোষক, তারাই জালেম, তারাই ধনদাস, পুঁজির মোহে মোহগ্রস্ত, অথবা মালের নেশায় নেশাগ্রস্ত। এই নেশাগ্রস্তরা আল্লাহর সাথে কখনোই মেরাজ তথা সংযোগ তথা সালাত কায়িম করতে পারবে না। এই পুঁজিমোহে আসত্ত ধনদাসদের অন্তরে হুতামা প্রজ্জলিত। তারাই জাহান্নামী তারাই আজাবপ্রাপ্ত, তাদের মহানবি সালাম করতে, তাদের সেবা করতে, তাদের জানাযা করতে মহানবি বনি আদমকে নিষেধ করেছেন।

সুতরাং সারা জনম গরু-মহিষ, ভেড়া-বকরি মুক্তি দিয়ে গেলাম। কিন্তু নিজেই কলুর বলদ থেকে গেলাম, আপন নফসকে খান্নাস নামক শয়তান থেকে মুক্তি দিলাম না। খান্নাসের দাসত্বই করে গেলাম, আপন প্রবৃত্তির পূজাই করে গেলাম। মুক্তি নাই যে পর্যন্ত মানুষ তার নফস থেকে কলুষিত খান্নাস না তাড়াবে।

সুপ্রিয় পাঠক, বিস্তারিত জানতে পড়ুন কালান্দার জাহাঙ্গীর বা – ঈমান আল জাহাঙ্গীর রচিত অমরগন্থ “মারফতের গোপন কথা” নামক কিতাবটি তাহলে পরিষ্কার ধারণা পাবেন, ইনশাআল্লাহ।

নিবেদক : আর এফ রাসেল আহমেদ