হোমপেজ আধ্যাত্মিক কবিতা রুমির অশ্রু -ড. এমদাদুল হক

রুমির অশ্রু -ড. এমদাদুল হক

552
রুমির অশ্রু -ড. এমদাদুল হক

রুমির অশ্রু
ড. এমদাদুল হক

রহস্যে ঘেরা ছিল শামসের জীবন। তিনি এক জায়গায় স্থির থাকতে পারতেন না। তাই লোকে তাকে পাখি বলে ডাকতো। একটি ভাঙা জগ, একটি ছেঁড়া মাদুর, মাথার নিচে দেওয়ার জন্য একখণ্ড ইট- এই ছিল তাঁর আসবাবপত্র। হাড়ি-পাতিল লাগতো না। শামসের আত্মজীবনী থেকে জানা যায়- বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হওয়ার আগেই প্রেম তার ক্ষুধা চুরি করেছিল। তিন-চারদিন না খেয়ে থাকতেন। কারো নির্দেশে না- ক্ষুধা ছিল না। কিন্তু স্বাস্থ্য ঠিক ছিল।

  • মা কাঁদতো- ‘কি হয়েছে তোমার’?
  • -‘কিছু না। আমাকে কি পাগল মনে হয়? আমি কি কারও কাপড় ছিঁড়ি, লাফালাফি করি?
  • – ‘কিন্তু তুমি তো কিছু খাও না’।
  • -শামস বলতেন- ‘আজ খাবো না, মা।’
  • – ‘কবে খাবে? আগামীকাল? পরশু’?- জিজ্ঞেস করতেন মা।
  • শামস এখন আর সেই খোকাটি নেই। বয়স হয়েছে- ষাট এর কাছাকাছি। প্রেম তার ক্লান্তিও চুরি করেছে। কাকে যেন খুঁজছেন, কী যেন খুঁজছেন।
  • এক রাতে রোদন করছিলেন তিনি- ‘হে প্রভু! আমি কি পাবো না তাঁকে, যাকে দিয়ে যেতে পারবো প্রেমের মশাল’?
  • আওয়াজ এলো- ‘তুমি যাকে খুঁজছো সে জালাল উদ্দিন রুমি’।
  • শামস ব্যাকুল হয়ে উঠলেন- ‘হে প্রভু, তাঁর মুখটি একবার তো দেখাও’!
  • -“বিনিময়ে তুমি কি দিবে?”
  • -‘আমার মাথা’- বললেন শামস।

কেন এই অদ্ভুত বিনিময় তা আমরা জানি না। তবে এইটুকু তো বুঝাই যায় যে, শর্তটি হলো- ‘তুমি খুঁজে পাবে তোমার প্রেমিক। কিন্তু তাঁকে সিদ্ধ শুদ্ধ করার জন্য বিসর্জন দিতে হবে তোমার জীবন’। শামস তাতেই রাজি। একজন শিষ্য পাওয়ার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে সম্মত হলেন গুরু। কী বিস্ময়কর ! আমরা জানি শিষ্য গুরু খুঁজে। আসলে ব্যাপারটি তা নয়- গুরুই শিষ্য খুঁজে। গুরুর গুরুত্ব নির্ভর করে শিষ্যের উপর।

ড. এমদাদুল হক

শামস তাবরিজের সূর্য ছিলেন ঠিকই, কিন্তু রুমি ছাড়া এই সূর্য মেঘের আড়ালেই থেকে যেতো। রুমির কবিতায় বারবার এসেছেন শামস। যারা রুমিকে চিনে তারা শামসকেও চিনে। রুমির সবচেয়ে বড় কাজ মসনবি নয়- আকার, ভাব ও প্রেক্ষাপট সবদিক দিয়েই ‘দিওয়ান-ই-শামস-ই-তাবরিজ’ অনেক বড়। ‘দিওয়ান-ই-শামস’ রুমির অশ্রু দিয়ে লেখা। কিন্তু কেউ ভাববে না যে এইগুলো তাঁর। রুমি নিজের নাম মুছে প্রায় কবিতার শেষে বসিয়ে দিয়েছেন শামসের স্বাক্ষর। এই হলো নিষ্কাম কর্ম- যা রুমি ও শামস দুজনকেই অমর করেছে। শামস রুমিকে খুঁজছিলেন। মাথা দেওয়ার পর রুমি শামসকে খুঁজেন। বিরহের অশ্রুতে রুমি রচনা করেন- ‘দিওয়ান-ই-শামস-ই-তাবরিজ’।

শামস নামক পাখিটি খুঁজতে খুঁজেতে কখন যেন রুমি নিজেই শামস হয়ে গেছেন। অতঃপর রুমি বলেন-

‘আমি কেন তাঁকে খুঁজব?
তিনি আর আমি তো একই
আমার মাঝেই তিনি,
আমি তো খুঁজি নিজেকেই’।