আল্লাহ এক এবং এককের বিষয়ে আলােচনা।
আহাদ শব্দটি অতি মারাত্মক এবং গুপ্তরহস্যপূর্ণ কথা। আহাদের সার্বিক অর্থ হলাে “তিনিই সব কিছু অথবা যা কিছু আছে সবটুকুই তিনি অথবা তিনিই অখণ্ড অথবা স্বয়ম্ভু (অ্যাবসােলিউট), অথবা একটি অণুও বলতে পারবে না যে, সে আল্লাহ হতে আলাদা সত্তা নিয়ে বিরাজিত, যদি বলতে পারে বলা হয়, তবে এই অণু যতই ক্ষুদ্র হােক না কেন, অসীম আল্লাহর সঙ্গে শেরেক করছে তথা অংশীত্বের দাবি নির্ভয়ে ঘােষণা করছে। সুতরাং এই অণু-পরমাণুও অখণ্ড সত্তা হতে আলাদা নয়। মহা এককের মধ্যেই নিমজ্জমান। তাই তিনি আহাদ।
তাই তিনি বলছেন যে, দুই পূর্ব এবং দুই পশ্চিমের যে দিকে তাকাওনা কেন, কিছুই দেখতে পাবে না কেবলমাত্র তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত। এই দুই পূর্ব এবং দুই পশ্চিম বলে ঘােষণার অর্থ হলাে, কোথাও তিনি ছাড়া কিছুই নেই। তা হলে আমাদেরকে ‘লা’ শব্দটি উচ্চারণ করতে কেন বললেন? লা’ দিয়ে কেবলমাত্র আপনার মধ্যে যে অংশীত্বের ভুল ধারণার ছায়া পড়ে আছে তা দূর করে দেওয়া। আয়নার ভিতরে আপনার মুখের ছবিটার মতই ‘লা’ – এর ভ্রান্ত ধারণা লুকিয়ে আছে। উহা দূর করতে বলা হচ্ছে।
কেবলমাত্র মুখের বলা লা’ শব্দটির কোনাে মূল্যই থাকত না যদি সত্যিই কোনাে অংশীদার থাকত। কারণ, যদি কোনাে অংশীদার সত্যি সত্যিই থাকত, সে যত ক্ষুদ্রই হােক না কেন, তার আকৃতি সব চাইতে ক্ষুদ্র পজিট্রনও যদি থাকত, তবে কখনােই তার অংশীত্বের দাবি ছেড়ে দিত না এবং দিতে পারে না। আসলে ‘লা’ – এর ভ্রান্ত ধারণার অপর নাম আমিত্ব তথা হাস্তি বা খুদি। এই আমিত্বের জন্ম কর্ম করার মধ্য হতে আসে না। কারণ, কর্ম কোনােদিন আমিত্বের বন্ধন হতে পারে না। কামনাটাই কর্মের বন্ধন। তাই কামনা আসলেই কর্ম কলুষিত হয় ।
আল্লাহ যেমন রহস্য, আদমও তেমনি রহস্য এবং আজাজিল তথা শয়তানও আল্লাহর একটি উদ্দেশ্যমূলক রহস্য। একের ভেতর তিনের গুপ্তরহস্য প্রকাশিত হলে রহস্যের সৌন্দর্য অতি প্রকটরূপে প্রকাশিত হয় এবং ইহার সৌন্দর্যে অবগাহন করতে পারলেই শেরেকরূপ পরদা দূরীভূত হয়। আজাজিল ওরফে শয়তান কিসের তৈরি? ইসলামি দর্শন বলছে, শয়তান এমন এক বিশেষ প্রকার আগুন দিয়ে তৈরি যে – আগুনের ধোঁয়া নেই তথা ধুম্রবিহীন অগ্নির দ্বারা সৃজিত।
কোনাে অস্তিত্বের নিজস্ব সত্তা নেই আল্লাহর অস্তিত্ব ছাড়া। কারণ, তিনি একের মধ্যেই একক। ধূম্রবিহীন অগ্নির মৌলিক কোনাে সত্তা যদি থেকে থাকে তবে উহাও কি একের ভিতর একক? যদি বলি হ্যা, তবে সৃজনের মধ্যেই স্রষ্টা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে প্রকাশিত ও বিকশিত হয়ে চলেছেন। আর এই প্রকাশ এবং বিকাশের ধারা প্রতিটি সেকেন্ডে যদি কয়েক হাজার কোটি ভাগ করা হয় এবং সেই ভাগে যতটুকু পরমাণুরূপ ক্ষুদ্রতম সময়ে কয়েক হাজার কোটি সম্পূর্ণ নতুন রূপ দেখিয়ে চলছেন এবং সেই ক্ষণিকতম সময়ে বিশাল রূপটি আর কোনােদিনও দেখান না, তাই তিনি সব সময় নব নব রূপে বিকশিত হয়ে চলেছেন। আর যদি বলি: না, ধূম্রবিহীন অগ্নি তার সম্পূর্ণ পৃথক সত্তায় সত্তবান – তা হলে ইহা শেরেকেরই নামান্তর। কিন্তু সৃষ্টিতে শেরেক বলতে কিছু নেই, আবার আছেও – শুনতে অনেকটা আত্মবিরােধী মনে হয়।
আসলে অতি গভীরে প্রবেশ করলে কোনাে আত্মবিরােধী ভাবধারার সমাবেশ তাে দূরে থাক, সবই একেরই অনেক রূপের মধ্যে তিনি একক রূপে খেলে চলেছেন।
মূলতঃ চরম সত্য কথা বলতে গেলে, তিনি ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই আমাদেরকে দেখতে এবং মর্মে – মর্মে বুঝতে চেষ্টা করার তাগিদ দিয়েছেন এই বলে যে: বলাে, আল্লাহ নিজেই আহাদ।
– ডাঃ বাবা জাহাঙ্গীর বা ঈমান আল সুরেশ্বরী ।