হযরত শাহ্ আলী বাগদাদী (রহ:) এর অলৌকিক কিছু কারামত
১। হাতের ইশারায় বৃক্ষে পরিনত:– হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) তাহার হাতের ইশারায় কারামত শক্তির প্রভাবে ১টি বটগাছে পরিনত করেন। বর্তমানে ঐ গাছটা সিন্নি গাছ নামে পরিচিত আছে। গাছটা আজও ৭০০ বছর ধরে বাবা শাহ্ আলির মাজারের বামপাশে মাথা উঁচু করে দারিয়ে আছে। বহু ভক্ত-আশেকান সেই গাছের নীচে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে মানত করেন। সেখানে ভক্ত-আশেকানদের মানত বাবা শাহ্ আলীর দয়ায় অপূর্ণ থাকে না।

২। সিন্নি গাছে ভয়াবহ আগুন:- কয়েক বছর আগে হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর এই সিন্নি গাছে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। টানা ৩দিন ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা করেও যখন আগুন নিভাতে পারছিলো না, তখন উপায় বুদ্ধি না হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর তৎকালীন খাদেমের কাছে পরামর্শ চাইলে বাবার খাদেম শাহ্ আলীর দরগার পানি দোঁহাই শাহ আলি বলে আগুনে ছুড়ে মারেন, সঙ্গে সঙ্গে সেদিন আগুন বাবার রহমতে নিভে যায়।
৩। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু মাজার শরিফ:- শাহ আলি বাবার মাজার খুব উঁচু। বাংলাদেশে এমন উঁচু মাজার আর ২য় টি নেই।
৪। হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) রহস্যজনক ওফাত:- কথিত আছে বাবা শাহ্ আলি একবার ৪০দিনের ধ্যানেমগ্ন হন। ধ্যানেমগ্ন হওয়ার আগে বাবা তার মুরিদদের ৪০দিন পূর্ণ হবার আগে ভুলেও যেন হুজরার দরজা না খোলার নির্দেশ দেন। বাবা হুজরার ভিতর আল্লাহর সাথে ফানা ফিল্লাহর নামাজে রত হন। ফানা ফিল্লাহর নামাজ তরীকার জগতে খুবই কঠিন নামাজ। সব আউলিয়ারা এই নামাজ পড়ার যোগ্যতা রাখেন না। উল্লেখ্য এই নামাজ পড়াকালীন সময় আল্লাহর তরফ থেকে অনেক ভয়ংকর সৃষ্টির সামনে পড়তে হয়, তাই এই নামাজ পড়াকালিন সময়ে কেউ যদি সামান্য মনোযোগ অন্যদিকে দেন, তাহলে আল্লাহর জালালি নূরে তার দেহ ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। বাবা শাহ্ আলির কথা মত সবাই বাবার ধ্যান শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রইলেন। কিন্তু ধ্যান শেষ হওয়ার ১ দিন আগে অর্থাৎ ৩৯তম দিনে বাবার হুজরা হতে অসম্ভব চীৎকার আসতে থাকে। বাবার মুরিদ্গন তখন উপায় না পেয়ে বাবার নিষেধ থাকা সত্তেও হুজরার দরজা ভেঙ্গে দেখেন বাবা শাহ্ আলীর দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে পড়ে আছে। সে সাথে একটি দৈববানী শুনতে পান যাতে বলা হয়, ‘যেখানে পড়ে আছে সেখানেই দাফন কর’। অতপর তাকে উক্ত মসজিদের ভিতরেই দাফন করা হয়। তখন হতে এ মসজিদটি তার দরগা শরীফে পরিণত হয়। কথিত আছে বাবা শাহ আলি এখনও তাহার খাটি আশেকদের সাথে দেখা দিয়ে থাকেন।
৫। ২০০ বছর জনশূন্য ছিল:- হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর মাজার পূর্বে এমন ছিলনা। পূর্বে শাহ্ আলী বাবার মাজার ছিল জনাকীর্ণ ও সকলের কাছে অজ্ঞাত। প্রায় ২০০বছর বাবার মাজার এমন অজ্ঞাত ছিল। পরবর্তীতে শাহ্ মুহাম্মাদ নামের একজন কামেল অলি তার দিব্য চক্ষুতে শাহ্ আলি বাবার রওজার খবর জানতে পেরে নিজের হাতে হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর মাজার পরিষ্কার করেন এবং সেই সাথে মাজার পাকা করার উদ্যোগ নেন। এরপর থেকে যতই দিন যায় বাবার মাজারের জৌলুশ আর কখনও কমতে দেখা যায় নি।
৬। বৃহস্পতিবারের মাহফিল:- প্রতি বৃহস্পতিবার হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) মাজারে বিরাট মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দেশের নামি দামি, বাউল, ফকির, সাধু সন্ন্যাসীরা ভক্তি মুলক গানে গানে হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) এর গুণগান করেন। উক্ত দিনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম দেখা দেয়। সেদিন এত মানুষের সমাবেশ ঘটে যে পুরা মিরপুর ১ নাম্বার রোডে জামলেগে যায়। হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) জিন্দা-অলি, আজও কোন ভক্ত যদি হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ) কে প্রেমভক্তিতে ডাকেন, তাহলে বাবা সাথে সাথে তাহার ডাকে সারা দিয়ে থাকেন।
হযরত শাহ্ আলী বাগদাদী (রহ:) এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
- হযরত শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ), ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম।
- জন্ম বাগদাদের ফোরাত নদীর তীরবর্তী একটি কসবাতে।
- দিল্লী হতে তিনি প্রথমে বাংলাদেশের ফরিদপুরে ‘গেদ্দায়’ নামক স্থানে আসেন।
- তিনি হযরত আলী আঃ এর বংশধর।
- বাগদাদের বাদশাহ সৈয়দ ফখরুদ্দিন রাজির জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন সৈয়দ শাহ আলী বোগদাদী।
- পূর্ব হতে কাদেরিয়া তরিকা এবং পরবর্তীতে সুফি শাহ মোহাম্মদ বাহারের আস্তানায় গিয়ে তার নিকট চিশতিয়া তরিকা গ্রহণ করেন।
- ১৫৭৭ সালে মোঘল আমলে ওফাতলাভ করেন।
- মাজার ও দরগাহ: ঢাকা, মিরপুর-১ এ অবস্থিত।
তথ্যসূত্র:
bn.wikipedia.org
saddamaryan.blogspot.com
বাংলাপিডিয়া।