বু আলী শাহ কলন্দরের খেদমতে আমির খসরুর হাজিরা।

বু আলী শাহ কলন্দরের খেদমতে আমির খসরুর হাজিরা।

সুলতান আলাউদ্দিন খালজীর হযরত বু আলী কলন্দর (রঃ) এর কদম বুচির অনেক আকাংখা ছিলো এবং হযরত বু আলী কলন্দর (রঃ) বাদশাহগনের পক্ষ হতে কোন হাদীয়া গ্রহণ করতেন না। সুলতান তাই হযরত আমির খসরু (রঃ) কে বু আলী কলন্দর (রঃ) এর নিকট হাদীয়া তোহফা দিয়ে প্রেরণ করেন। দিল্লী হতে পানিপথ যাওয়ার পথে তিনি স্বীয় মুর্শিদ হযরত মাহবুবে ইলাহী হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) এবং হযরত বু আলী কলন্দর (রঃ) এর খেদমতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি লাভ করেন।

হযরত মাহবুবে ইলাহী (রঃ) অনুমতি দানের সাথে হযরত আমির খসরু (রঃ) কে নিম্নলিখিত কথাগুলো হেদায়েত ফরমালেন। “হে খসরু! হযরত কলন্দর রঃ) যা কিছু তোমার উপর এরশাদ ফরমাবেন এগুলোকে নিজের নেক বখতি ও উন্নতির সোপান মনে করে গ্রহণ করে নিবে এবং কোন অবস্থাতেই অমান্য করবে না।”

এরপর তিনি রওয়ানা হলেন এবং যখন তিনি বু আলী কলন্দর (রঃ) এর দরবারে উপস্থিত হলেন তাকে দেখা মাত্রই বু আলী কলন্দর (রঃ) বললেন যে “আপনাকেই নাকি খসরু বলা হয়”। তখন আমির খসরু (রঃ) সেকালের নিয়মানুযায়ী নিজের টুপি হযরত বু আলী কলন্দর (রঃ)’র পবিত্র কদমে রেখে এবং হাত বেধে আদবের সাথে দঁড়িয়ে রইলেন এবং বললেন “জ্বী এই গোলামকে খসরু বলা হয়।”
হযরত বু আলী কলন্দর (রঃ) বললেন আমাকে একটি গজল শোনাও!

হযরত আমির খসরু (রঃ) নিচের গজলটি শোনালেন-

“আছেঁ গুয়ী হীছ সূখন জুজ ফেরাকে ইয়ার নিস্ত ছোঁ উমাইদে ওয়াছলে আঁ হাম ছুনাঁন দিশওয়ার দিস্ত”

অর্থ- “যে কথাই বলবো সেটা বন্ধুর বিচ্ছিন্নতার কথাই হবে সেটা ব্যাতিত অন্য কোন কথা নয়। কেননা তার সাথে মিলনের আকাঙ্খা রয়েছে, এটা তেমন কষ্টের কথা নয়।”

“আশেকাঁরা দর জাঁহা একছান নবাশদ রোজে গার, জাঁনকে আগাশতাহায়ে দশতে হাম ওয়ার নিস্ত।”

অর্থ- “আশেকের জন্য পৃথীবিতে একই ধরনের অবস্থা স্থায়ী থাকে না যেমনিভাবে আমার হাতের আঙ্গুল সমূহ এক নয়।”

“খলকারা বিদার বায়দ জুওদে যে আ-বে চেশমে মন, ইয়িঁঁ আজব আঁ ওয়াকতে মী গরিম কেহ কচ দিদার নিস্ত”

অর্থ- “সৃষ্টি জগতকে আমার চক্ষুর পানি দিয়ে জাগ্রত হওয়া চাই; আশ্চর্যের বিষয় হলো এমন সময় কাঁদছি যখন সকলেই অচেতন।”

“এক কদম বর নফছে নাহ্ দাঁন ওয়া দিগরে দর কুয়ে দোস্ত; হারছে বিনি দরস্ত বিন ইরিওয়া আঁনতে কারে নিস্ত”

অর্থ- “এক কদম নফছের উপর এবং দ্বিতীয় কদম বন্ধুর উপর রাখো; তুমি যাহা কিছু করবে তা ঠিক বলে জান, এটা বা সেটার প্রযোজন নেই।”

“বন্দ মী গুয়ী বরো যুন্নার বন্দ আয় বদফরস্ত বরতনে খসরু কদামী রগ কেহ আ যুন্নাহর নিস্ত”

অর্থ- “হে প্রতীমা পুজারী আমি আর কত বলব, যাও গিয়ে পৈতা বান্ধো খসরুর শরীরে এমন কোন রগ আছে যেখানে পৈতা বান্ধা হযনি?”

হযরত বু আলী কলন্দর (রঃ) শুনে অনেক আনন্দিত হলেন এবং বললেন এবার আমার গজল শুনো-

“ওয়াহীম খসরু ওয়া বর আ না আলে উসতুর আস্ত; খসরু কাছে কছে কেহ খালআতে তজরীত দর বরস্ত

অর্থ- “বাদশাহগনের মাথার তাজ এ ব্যাক্তির (খসরু) এ ব্যাক্তির দৃষ্টিতে জুতার সমতুল্য

অর্থ- “বাদশাহ হচ্ছেন ঐ ব্যাক্তি যিনি দুনিয়া ত্যাগের পোশাক পরিধান করেছেন।

“সী মুরগ দার বয়ে মুহিম মন ব ক্বফে ইশক, কো আরেফে কেহ বনজরে উ আরশে আকবরে আস্ত

অর্থ- “আমি প্রবোদক্ত পাখির ন্যায় কুহে কাহাফের দিকে সম্বোধিত ব্যাক্তি। এমন আল্লাহওয়ালা বান্দা কে আছে? যার দৃষ্টি আল্লাহর আরশের প্রতি অবিচল আছে।

“আক্বল কুল আস্ত ইলমে লাদুন্নী ব- আরেফাঁ ইরি আকল ওয়া ইলম দিচ্ছি দরছী মুহ দারাস্থ”

অর্থ- “আল্লাহর আরেফ বান্দাগণের আল্লাহ হতে প্রাপ্ত জ্ঞানের সামনে সাধারণের জ্ঞান অসম্পূর্ণ থেকে যায়, উক্ত জ্ঞান বুদ্ধি আল্লাহ হতে প্রাপ্ত এবং আল্লাহই তাদের অন্তরে জানিয়ে দেন।

“দরসে শরফ বনূরে আল-ওয়াহ আব জ্বদী লাও জমালী দোস্ত মুরা উরা বরাবর আস্ত

অর্থ- শরফুদ্দীন বু আলীর আব-জ্বদ তাখতীল লেখা দ্বারা হয় না, বন্ধুর সৌন্দর্যে্্যর তাখতী তার জন্য উপযুক্ত এবং উপযোগী।
হযরত আমির খসরু (রঃ) হযরত বু আলী কলন্দর (রঃ) এর উপরোক্ত শেযর শুনে এমনভাবে ক্রন্দন করলেন যে, তিনি আত্মহারা হয়ে যান, হযরত কলন্দর (রঃ) তখন পাঞ্জা্বী ভাষায় বললেন-

“খাসরু! ইয়িয়িঁ উন্দা ইয়িঁ ইয়া কুছ সামাজদাদী ইয়ী”

অর্থ- খসরু তুমি কাঁদছো কেন? তুমি কি আমার কথা বুঝেছ?

আমির খসরু হযরতবু আলী কলন্দর (রঃ) এর কদমে টুপি রেখে বললেন “হযরত আমি বুঝছিনা তাই কাাঁদছি।” অমির খসরু (রঃ) এর উত্তর শুনে হযরত বু আলী কলন্দর (রঃ) অনেক খুশি হলেন এবং সুলতান আলাউদ্দিন এর প্রেরিত তোহফা হযরত বু আলী কলন্দর (রঃ) এর খেদমতে পেশ করলেন।

সূত্রঃ পানিপথের আউলিয়া কেরামের বিরল কাহিনী ও মসনবীয়ে বু আলী কলন্দর (রঃ)।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel