হোমপেজ ওলীদের কারামত ওলিরা নফসের তাড়নায় কিছু করেন না।

ওলিরা নফসের তাড়নায় কিছু করেন না।

821

ওলিরা নফসের তাড়নায় কিছু করেন না।

আল্লাহর ওলীরা নফসের তাড়নায় কখনও কোন কাজ করেন না। তার প্রমাণ নীচে ২জন ওলীর ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ পাবেনঃ-

একজন ওলী বিবাহ করে সন্তানের জনক হয়েও কখনও স্ত্রীর সাথে সহবাস করেননি। অন্যজন আহার খেয়েও ৩০ বছর অনাহারী।

হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার ‘ফাওয়ায়েদুল ফাওয়াদ’ কিতাবে অষ্টাদশ মজলিশে এরুপ বর্ণিত আছে: এক আল্লাহর ওলী, তিনি নদীর কিনারায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। অপর দিকে নদীর ওপারের কিনারায় বাস করতেন অন্য আর এক ওলী বা দরবেশ। একদিন তিনি কিছু খাদ্য একত্র করে তার স্ত্রীকে বললেন: এ খাদ্য তুমি নিজের মাথায় বহন করে নদী সাতরিয়ে ওপারে যে দরবেশ বাস করেন তাকে দিয়ে এসো।

তার স্ত্রী বললেন, নদীতে পানি খুব বেশী এবং স্রোতও অত্যাধিক। এ নদী পার হওয়া অসম্ভব ব্যপার। আমি কিভাবে এ নদী পার হবো? তখন ওলী বললেন, তুমি চলতে থাক যখন নদীর কিনারে পৌঁছিবে তখন নদীকে বলবে, হে নদীর পানি আমার স্বামী কখনও আমাকে সহবাস করেনি, এর বদলায় তুমি আমাকে নদী পার হওয়ার পথ করে দাও। স্ত্রী এ কথা শুনে তাজ্জব (অবাক) হয়ে গেলো। সে ভাবতে লাগলো এ লোক বলছে কি? তার সহবাসের মাধ্যমে আমার কয়েকটি সন্তানও রয়েছে অথচ এ বলছে যে সে আমাকে সহবাসই করেনি।

এ মিথ্যা কথা নদীকে কিভাবে বলবো? কিন্তু স্বামীর আদেশ অমান্য করারও কোন উপায় নাই। সুতারাং স্ত্রী তখন নদীর তীরে পৌঁছিলেন এবং নদীকে তার স্বামীর বলে দেওয়া কথা শুনালেন। নদীর পানি তার কথা শ্রবণ করা মাত্র দু’ভাগ হয়ে তার জন্য রাস্তা তৈরী করে দিলো। ওলীর স্ত্রী স্বাচ্ছন্দে নদী পার হয়ে ওপারে চলে গেলো এবং নদীর ঐ পারের দরবেশকে আহার প্রদাণ করলেন। দরবেশ খানা খেলেন এবং বললেন তুমি ফিরে যাও। স্ত্রী লোকটি বললো, আমি এ ভয়ংকর নদী পার হবো কি করে? আমার স্বামী আমাকে কিছু কথা শিখিয়ে দিয়ে ছিলেন বলে তার বরকতে নদী পার হয়েছি সত্য কিন্তু ফিরে যাওয়ার কোন প্রক্রিয়া তো জানি না। আমার পক্ষে ফিরে যাওয়া অসম্ভব ব্যপার।

দরবেশ বললেন, তোমার স্বামী তোমাকে কি কথা শিখিয়ে দিয়েছিলো? ওলীর স্ত্রী তখন দরবেশকে তার স্বামীর শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো শুনালো। দরবেশ তাকে বললো, এবার ফেরার পথে নদীকে বলো, হে নদী যে দরবেশ বিগত ৩০ বছর আহার করেনি তার সন্মানে আমাকে ওপারে যাওয়ার পথ করে দাও। দরবেশের মুখে এ কথা শ্রবণ করার পর ওলীর স্ত্রী আরও তাজ্জব (অবাক) হয়ে গেলো। সে ভাবতে লাগলো এই মাত্র লোকটি আমার আনা খাদ্য আমারই সন্মুখে আহার করলো, অথচ সে বলছে, ৩০ বছরের মধ্যে সে কোন দিন আহার করেনি।

সে তার কথার কোন প্রতিবাদ না করে নদীর কিনারায় পৌঁছে দরবেশের শিখানো কথা নদীর নিকট পেশ করলো। নদী তার কথা শ্রবণ করামাত্র পানির মধ্যে তার জন্য রাস্তা করে দিলো এবং সে নির্বিগ্নে নদী পার হয়ে গেলো।বাড়ি গিয়ে স্ত্রী তখন স্বামীর(ওলীর) গায়ে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, হে স্বামী তুমি অসংখ্যবার আমাকে সঙ্গম করেছো। তোমার কয়েক জন ছেলে সন্তানও রয়েছে অথচ তুমি বললে একদিনও সহবাস করোনি- এ কথার রহস্য কি? দয়া করে আমাকে খুলে বলো এবং ঐ দরবেশ আমার সন্মুখে খানা খেলো অথচ বললো ৩০ বছর যাবৎ সে আহার করেনি। এ রহস্যর ভেদও আমাকে খুলে বলো? আমি ভীষণ গোলক ধাঁধার মধ্যে রয়ে গেছি।

তিনি বললেন, তোমার দিক দিয়ে তুমি ঠিকই বলেছো। আমি তোমার সঙ্গে কখনও নফসের ইচ্ছা পূরণের জন্য সহবাস করিনি অর্থাৎ সহবাস দ্বারা মানুষ তৃপ্তি লাভ করে এবং যে তৃপ্তির আকাঙ্খায় বার বার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় যা নফসের খায়েসের কারণে ঘটে এবং তারা ঐ কর্মের মধ্যে বিলীন হয়ে যায় তখন তাদের আর কোন খবরই থাকেনা- আর এই নাম হচ্ছে সহবাস। কিন্তু তোমার সাথে আমার যে মিলন তা শুধু স্ত্রীর হক আদায়ের জন্যই হয়েছে। কেননা এটা হচ্ছে আল্লাহর আদেশ এবং আল্লাহর আদেশ পালন করা ইবাদত বন্দেগী হিসাবে গণ্য।

অতএব, তোমার সাথে আমার যে মিলন তাকে সহবাস বলা যাবে না, এটাও আল্লাহতালার ইবাদত বন্দেগীর মাঝে গণ্য হবে। আর ঐ দরবেশ যা বলেছে, তা এভাবে হিসাব করলে দেখতে পাবে সে মিথ্যা বলেনি। কেননা সে আহার করে শুধুমাত্র বন্দেগী করার শক্তি অর্জনের জন্য। নফসের খায়েস বা আত্ম তৃপ্তির জন্য নয়। অতএব যে বস্ত বন্দেগীর সহায়ক হিসাবে কাজ করে তাও বন্দেগী হিসাবে গণ্য করা হয়।

এখন বলতে পার যে দরবেশ আসলে আহার করেনি, তিনি বন্দেগী করেছেন। এছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আল্লাহর বীর ওলীগণ যা কিছু করেন একমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টির জন্যই করেন এবং তার আদেশ পালনের জন্যই করেন।

গ্রন্থসূত্রঃ-
‘ফাওয়ায়েদুল ফাওয়াদ’,
হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া