আড়িয়াল খাঁ নদীতে গুদারা ঘাটে এক জাকের ভাই নৌকা চালিয়ে নিজের ও পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন।
জাকের ভাই বিশ্ব ওলী কেবলাজান হুজুর কে মহব্বত করতেন।
একবার উরস শরীফ সমাগত।
জাকের ভাই নিয়ত করলেন উরস উপলক্ষে অনেক জাকেরান আশেকান দরবার শরীফে আসবেন এই নদী পথে, তাই চার দিনের শেষ দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার তিনি উরস শরীফে যাবেন বাকি ৩ দিন যেহেতু অনেক মানুষ নৌকা পার হবে তাই বেশ কিছু আয় করা যাবে, যাতে করে তার সংসার টা ভাল ভাবে কয়েকদিন চালাতে পারবে।
এই নিয়ত করে সে নদীর ঘাটে জাকেরান-আশেকানগণকে পারাপার করতে লাগলো। তার আয় বেশ ভাল হচ্ছিল, মঙ্গলবার নৌকাযাত্রীর এত ভিড় ছিল যে, সে নিয়ত অনুযায়ী আর দরবার শরীফে যেতে পারলেন না। মনে মনে ভাবলেন উরস শেষে পীর কেবলাজানের কদমে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। কিন্তু উরস শেষে নদীর ঘাটে উরস থেকে ফিরতি যাত্রীদের চাপ পড়লো। তাই সে দরবারে যেতে পারলো না। এই ভাবে আরো ৩ দিন কেটে গেল। পরে নদীর ঘাটে যাত্রী কমে গেলে নৌকা নদীর ঘাটে ডুবিয়ে রেখে জাকের ভাই বাড়িতে চলে গেলেন আর কয়েকদিন বিশ্রাম নিলেন।
উরস শরীফের পরে দরবারে যাওয়ার কথা ভুলে গেলেন। পরে আবার যখন নদীর ঘাটে নৌকা উঠানোর জন্য পানিতে ডুব দিলেন তখন সে তার ডুবিয়ে রাখা নৌকা আর খুজে পেলেন না। হন্যে হয়ে আশ-পাশের ২/৩ গ্রামের নদীর পাড় ধরে অনেক খুঁজাখুঁজি করার পরেও নৌকা তার খুজে পাওয়া গেল না।
সে নিজে খুজলো, গ্রামের ছোট ছোট ছেলেরা মিলে ডুবিয়ে ডুবিয়ে খুঁজেও পাওয়া গেল না।
উপায় না দেখে জাকের ভাই নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।
ভাবলেন সে উরস কাজা করার কারনে তার এই সর্বনাশ হয়েছে। তার বিবেক কড়া নাড়লো।
কাল বিলম্ব না করে বাড়ি থেকে জামা কাপড় নিয়ে দরবার শরীফে চলে গেল। তখন আসর নামাজের পরে পীর কেবলাজান ৩ নম্বর হুজরা শরীফে জাকেরানদের সাক্ষাত দিচ্ছিলেন। উরস শরীফের কয়েকদিন পরের ঘটনা বলে দরবারে তেমন মানুষের ভিড় ছিল না।
মাঝি জাকের ভাই কেবলাজান হুজুর কে দেখার সাথে সাথে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বলতে লাগলেন,
“বাবা তুমি আমার নৌকা নিছ, আমার নৌকা ফিরিয়ে দাও।”
“আমি উরস শরীফে আসি নাই বলে তুমি আমার এত বড় ক্ষতি করতে পারো না। আমার নৌকা ফিরিয়ে দাও।”
কেবলাজান হুজুর তাকে কাছে ডাকলেন আর বললেন, “বাবা! কান্না বন্ধ করেন, আপনি উরসে না এসে ভুল করেছেন, “বাবা এক উরস শরীফ কাজা করলে পরবর্তি একবছর দুঃখ কস্ট ছাড়ে না।”
“যান বাবা আপনাকে বিদায় দিলাম বাড়ি গিয়ে গ্রামের লেংটা (নদীর পাড়ের ছেলেরা) পোলাপানদের ডেকে ২০ টাকা দিবেন আর তাদের বলবেন আপনার নৌকা খুঁজে দিতে।
তখন জাকের ভাই বললো, “বাবা পোলাপান দিয়াও খোজ করেছি।”
কেবলাজান বললেন তাদের হাতে ২০ টা টাকা দিয়া তার পরে আবার খুজে দিতে বলবেন।
ওরা খুজে দিবে। যান বাবা বাড়ি চলে যান। জাকের ভাই বিদায় হয়ে চলে গেলেন। বাড়ি পৌছাতে রাত হয়ে গেল, সকালে কেবলাজান হুজুরের কথা মোতাবেক লেংটা (নদীর পাড়ের ছেলেরা) পোলাপান ডেকে তাদের হাতে ২০ টাকা দিয়ে নৌকা খুজে দিতে বললেন। ছেলেরা বললো আমরা তো খুজলাম একবার পেলাম না তো? ২০ টাকা দিলেই কি খুজে পাবো? তখন জাকের ভাই বললেন,” আমার পীরের হুকুম তোদের ২০ টাকা দিয়া খুজতে বললে তোরা নৌকা খুজে পাবি”।
ছেলেরা পীরের হুকুম বলে টাকা নিয়া নদীতে নেমে ডুব দিলো, আশ্চর্য এক ডুবেই নৌকা খুজে পাওয়া গেল। নৌকা তুলে পরিস্কার করে জাকের ভাই আবার দরবারে চলে গেলেন। কেবলাজানের উপর তার রাগ হতে লাগলো পীর কেবলাজান তো তার ২০ টাকা খরচ না করালেও পারতো। কেন ২০ টাকা খরচ করাইলো তাই সে দরবারে গিয়ে কেবলাজান হুজুর কে কষে ধরবে তার ২০ টাকা ফিরত দিতে।
উল্লেখ্য যে, তখন ২০ টাকার মূল্য অনেক বেশি ছিলো। যাই হোক দরবারে গিয়ে পীর কেবলাজান হুজুর কে ৩ নম্বর হুজরা শরীফে পেলেন আর আবেগ ভরা প্রেমের অধিকার খাটিয়ে কেঁদে কেঁদে বললেন,” আমার নৌকা নিজে চুরি করে আমার ২০ টাকা খরচ করাইছ তুমি, আমার ২০ টাকা ফিরত দাও।”
কেবলাজান জালালি হালাতে জবাব দিলেন,” বাবা তুমি নিয়ত করেও উরস কাজা করেছ। আবার এসেছ ২০ টাকা চাইতে? যাও বাবা তোমার টাকা পাবে না। এটা তোমার উরস শরীফ কাজা করার কাফ্ফরা।
“বাবা এক বাবার ১০ টা ছেলের মধ্যে যদি ৯ জন ছেলে ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসে আর ঐ এক জন না আসে তাহলে সেই বাবার ঈদ পালন হয় না। এক ছেলের অনুপস্থিতি বাবার ঈদ কে মাটি করে দেয়। বাবা, আমার হাজার হাজার মুরিদ সন্তান। তাদের মধ্যে একজন না আসলে, আমারো তেমনি লাগে।”