১০-ই মুহাররমের রোজাঃ

১০-ই মুহাররমের রোজাঃ 

আশুরার রোজা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময়। এই ১০-ই মুহাররম যে শুধু বিষাদময় ঘটনার স্মৃতি বহন করে তাহাই নহে; এই দিন বহু উল্লেখযোগ্য সুখময় ঘটনার সহিতও জড়িত। এই দিনে হযরত মুসা (আঃ) বণী ইসরাইলসহ অত্যাচারী ফেরাউনের কবল হইতে রক্ষা পাইয়াছিলেন এবং ফেরাউন তাহার দলবলসহ নীল নদের পানিতে ডুবিয়া মরিয়াছে।

এই দিনে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) নমরুদের প্রজ্জলিত অগ্নিকুন্ড হইতে আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় রক্ষা পাইয়াছেন।

এই দিনে হযরত মুসাকে (আঃ) কালিমুল্লাহ খেতাবে ভুষিত করা হইয়াছে। তাহার উপর তাওরাত অবতীর্ণ হইয়াছে এবং আল্লাহতায়ালার তাজাল্লীতে এই দিনে তুর পাহাড় ভষ্মীভূত হইয়াছে।

এই দিনে হযরত আইয়্যুব (আঃ) রোগমুক্তি লাভ করিয়াছেন। এই দিনে হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের উদর হইতে নাজাত পাইয়াছেন। এই দিনে আল্লাহতায়ালা হযরত দাউদ (আঃ) এর ত্রুটি মার্জনা করিয়াছেন।

এই দিনে হযরত ঈসা (আঃ) সশরীরে আসমানে উত্থিত হইয়াছেন এবং এই ১০-ই মুহাররমেই তিনি আবার দুনিয়াতে আগমন করিবেন। এই দিনে হযরত নূহ (আঃ) এর নৌকা মহা তুফান ও প্লাবন হইতে রক্ষাপ্রাপ্ত হইয়া ‘‘জুদী” পর্বতের উপরে দাঁড়াইয়াছিল।
উক্তরূপ বহু আনন্দময় ঘটনার সাথেও ১০-ই মুহাররম জড়িত। আর সেই কারণে আশুরার রোজার প্রবর্তন হয় বহু পূর্ব হইতেই।

কিতাবে দেখা যায়, হযরত নূহ (আঃ) এই দিনে মহা প্লাবন হইতে নাজাত পাওয়ার কারণে শোকরিয়া আদায় স্বরূপ রোজা রাখিতেন। তাহার উম্মতেরাও এই দিনে রোজা রাখিত। হযরত মুসা (আঃ) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ায় এই দিনে শোকরিয়া আদায় স্বরূপ রোজা রাখিতেন এবং তদীয় উম্মত কুলকেও রোজা রাখিতে নির্দেশ দিতেন।

হাদীসের বর্ণনায় দেখা যায় একদা রাসূলে পাক (সাঃ) মদীনার ইহুদীদের নিকট থেকে জানিতে পারিলেন, এই আশুরার দিন মুসা (আঃ) ফেরাউনের বন্দীদশা হইতে বণী ইসরাইলীগণকে উদ্ধার করিয়াছিলেন এবং ফেরাউন সসৈন্যে ডুবিয়া মরিয়াছিল; সেই কারণে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মুসা (আঃ) এই দিনে রোজা পালন করিতেন এবং একই কারণে ইহুদীরা আশুরার রোজা রাখে।

তখন রাসূলে পাক (সাঃ) ইহুদীদের বলিলেন, ‘তোমাদের চেয়ে মুসা (আঃ) এর সাথে আমার সম্পর্ক নিকটতর।” দয়াল নবী (সাঃ) তখন হইতে আশুরার রোজা রাখা শুরু করিলেন এবং উম্মতকে এই দিনে রোজা পালনের আদেশ দিলেন। (মেশকাত শরীফ ও বোখারী শরীফ)

রমজানের রোজা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য নবী করীম (সাঃ) ফরয রূপে আদেশ করিয়াছিলেন। পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরয হওয়ার পরে আশুরার রোজা ফরয হওয়া রহিত হইয়া যায়। তখন থেকে আশুরার রোজা বহু ফজিলতপূর্ণ নফল রোজা হিসাবে পালিত হয়।

কাজেই আশুরার রোজার প্রবর্তন বহু পূর্ব থেকে। এই রোজার সাথে কারবালার ঘটনার কোন সম্পর্ক নাই।

রাসূলে পাক (সাঃ) ১০-ই মুহাররমে রোজা রাখিতেন এবং একদা ইন্তেকালের কিছুদিন পূর্বে তিনি বলিলেন, যদি আগামী বছর আমি জীবিত থাকি, তবে ৯-ই মুহাররমেও রোজা রাখিব।(মেশকাত শরীফ)

কিন্তু পরবর্তী মুহাররম পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন না। জীবিত থাকিলে হয়তো তিনি ৯ম ও দশম মুহাররমে রোজা রাখিতেন। তবে ইবনে আব্বাস (রাঃ) ছাহেবের বর্ণনায় দেখা যায় যে, রাসূলে পাক (সাঃ) উপদেশ প্রদান করিয়াছেন যে, তোমরা নবম ও দশম মুহাররমে রোজা রাখিবে এবং ইহুদীদের খেলাফ করিবে অর্থাৎ তাহাদের মত কেবল একটি রোজা রাখিবে না।

আমি ৯ম ও ১০ম মুহাররমে রোজা রাখি। ইহা বহু নেকিপূর্ণ নফল ইবাদত। তোমাদের প্রতি আমার নির্দেশ-তোমরা যাহারা পার, তাহারা আশুরা উপলক্ষ্যে দুইটি রোজা রাখিবে।

তথ্যসূত্রঃ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা-পদ্ধতি

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel