কারামতে খাজাবাবা ফরিদপুরী: পাকিস্তানী এক জাকের ভাইয়ের জীবন থেকে

যামানার মহা মুজাদ্দেদ বিশ্বওলী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের সারা দুনিয়ায় কোটি কোটি ভক্ত মুরিদান আছেন। তার মধ্যে পাকিস্তানের নাগরিক এক জাকের ভাইয়ের জীবন থেকে একটিঘটনা তুলে ধরলামঃ

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের নাগরিক এক জাকের ভাই দরবার শরীফে ছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে যাবার জন্য তিনি উদগ্রীব হয়ে পড়লেন কারন তার পরিবারের বাকি সদস্যরা পাকিস্তানে ছিল। ঐ জাকের ভাই হযরত পীর কেবলাজানের নিকট নালিশ করেন। কেবলাজান কিছুই বললেন না।

হঠাৎ এক শুক্রবার সকাল বেলা অন্য এক জাকের ভাই তার নিজস্ব প্রাইভেট গাড়ি নিয়া ঢাকা ফিরছিলেন। হযরত পীর কেবলাজান ছাহেব ঢাকাগামী জাকের ভাইকে ডেকে পাকিস্তানী নাগরিক জাকের ভাইকে দেখিয়ে বললেন, “বাবা, ওনাকে সাথে নিয়ে যান, ঢাকা শহরের যেখানে নামতে চায় সেখানে নামিয়ে দিবেন।”

ঢাকার জাকের ভাই হযরত পীর কেবলাজানের হুকুমে পাকিস্তানের নাগরিক জাকের ভাইকে গাড়িতে তুলে ঢাকার দিকে রওনা হলেন। পাকিস্তানের নাগরিক জাকের ভাই মনে মনে খুব রাগ করলেন, মনে মনে ভাবলেন, পীর কেবলাজান জানেন আমি বিদেশী, আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নেই। আমি পাকিস্তান যাবো, আমাকে খালি হাতে পাঠিয়ে দিলেন! নিজেও কিছু দিলেন না, জাকের ভাইকেও কিছু দিতে বলে দিলেন না।

এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঢাকা এসে পৌছালেন টের ই পেলেন না। ঢাকা শহরে ঢুকে গাড়ির মালিক জাকের ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, ভাইজান আপনি কোথায় নামবেন? কিংকর্তব্যবিমূঢ় পাকিস্তানের নাগরিক জাকের ভাই বললেন, “বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে”।

কিছু মনে বড় অশান্তি কোথায় যাবে, কিভাবে দেশে যাবে, কি খাবে নানান চিন্তা। সেই সাথে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে পাকিস্তানের নাগরকি হওয়ার কারনে জনরোষে পড়তে পারেন সেই ভয়ও ছিলো মনে মনে। বায়তুল মোকারম মসজিদের সামনে নামলেন। সকল দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে মসজিদে ঢুকলেন। অজু করতে লাগলেন। জুম্মার দিন বায়তুল মোকাররমে প্রচুর লোক সমাগম হয়। প্রবিনদের সাথে বাচ্চারাও আসে জুম্মা আদায় করতে।

জাকের ভাই যে পাশে বসে অযু করছেন তার পাশে এক ভদ্র লোক অজু করছেন সাথে ৪/৫ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে। ছেলেটি জাকের ভাই ও ভদ্র লোকের মাঝ খানে বসা ছিলো। ছেলেটি ওযু না করে বার বার পানি কল খুলে দিচ্ছে। আবার পানির মধ্যে থাপ্পর দিচ্ছে। পানিতে থাপ্পরের কারনে পানি ছিটা মাঝে মাঝে ই জাকের ভাইয়ের গায়ে গিয়ে পড়ছে। ছেলেটি বার বার এমন করার কারনে জাকের ভাই খুবই বিরক্ত হচ্ছেন (মাথায় নানান দুশ্চিতা থাকলে মানুষের যা হয়) এবং ছেলেটাকে এমন না করার জন্য বারন করেন। কিন্তু ছেলেটি কোনো কথাই শুনছে না শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর পানি নিয়ে দুষ্টামি করছে।

জাকের ভাই এক সময় চরম বিরক্ত হয়ে মেজাজ হারিয়ে ছেলেটির গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিলেন। চড় খেয়ে ছেলেটি কান্না করে তার বাবার কাছে বিচার দিতে লাগলো। বাচ্চাটির বাবা পাকিস্তানের নাগরিক জাকের ভাইকে কিছুই বললেন না! ছেলেটিকে আদর করে নামাজে দাঁড়ালেন। পাকিস্তানের নাগরিক জাকের ভাই খুব ভয় পেলেন। নামাজ শেষ করে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় বসে আছেন। তখন ঐ ছেলেটির বাবা নামাজ শেষ করে বললেন, “হুজুর আপনি আমার সাথে আসেন।” (হুজুর বলার কারন ছিলো জাকের ভাইয়ের মুখে দাড়ি পড়নে ছিলো কাবুলি পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি) ভদ্র লোকের কথা শুনার সাথে সাথে জাকের ভাই খুবই বিচলিত হয়ে পড়লেন আর ভাবলেন, আজ আর রক্ষা নাই।

ভদ্র লোক মসজিদের বাহিরে পাকিং করা গাড়িতে উঠে জাকের ভাইকে ও উঠতে বললেন। জাকের ভাই নিরুপায় হয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন। ভদ্রলোক বাসায় পৌছে সোজা ডাইনিং টেবিলে নিয়ে জাকের ভাইকে বসালেন। বললো আপনি খাওয়া -দাওয়া করেন। ক্ষুদ্রার্ত জাকের ভাই ভয় ভয় চোখে অল্প আহার করলেন।

খাবার গ্রহন শেষে ভদ্র লোক একটি সুন্দর কক্ষ দেখিয়ে বললেন আপনি কিছু সময় বিশ্রাম নেন। জাকের ভাই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁর সাথে আসলে কি হচ্ছে। মনে মনে ভাবলেন, হয়ত খাইয়ে দাইয়ে শেষে মেরে পুঁতে ফেলবে। সুন্দর নরম বিছানায় শুয়ে মনে মনে মৃত্যুর মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

বিকাল বেলা। ভদ্র লোক বাচ্চার মা ও বাচ্চাসহ কক্ষে প্রবেশ করলেন। বাচ্চাটির মা কেঁদে কেঁদে বললেন, “বাবা আপনার দয়ায় আমার বোবা ছেলে কথা বলেছে, আপনাকে কি প্রতিদান দিবো” (আল্লাহু আকবার)। তখন জাকের ভাই তার প্রতি খাতির যত্নের কারন বুজলেন।

তিনি তখন বুজলেন আপন পীর কিভাবে মুরিদ সন্তানকে দয়া করেন। মনে মনে পীর কেবলাজানের কদমে ভুল বুজার জন্য ক্ষমা চাইলেন। পরে ঐ ভদ্র লোকই তাঁকে পাকিস্তান যাওয়ার সকল ব্যবস্থা করেন দেন। কামেল পীরের দয়া সাধারন বুদ্ধিতে অনুমান করা যায় না। পীরের প্রতিটি কথায় রহস্য বিদ্যমান থাকে। হযরত দয়াল পীর কেবলাজান (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের খাস তাওয়াজ্জু আমাদের উপর বর্ষিত হোক।

গ্রন্থসূত্রঃ মহা মোজাদ্দেদ হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ)।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel