আপন পীরের প্রতি কিরূপ সম্মান করা কর্তব্য তাহার বর্ণনা
হজরত এমামে রব্বানী মােজাদ্দেদে আলফেছানী (রাঃ) মকতুবাত শরীফের প্রথম খণ্ড ২৯২ মকতুবে মঙ্গলকোট নিবাসী শায়েখ আবদুল হামীদ (রাঃ)-এর নিকট পীরের ‘আদব’ সম্মানের বিষয় যাহা লিখিয়াছেন, তাহার সার সংক্ষেপ এস্থলে কিঞ্চিৎ প্রদত্ত হইল। আল্লাহ-প্রেমিক, সত্য-সাধক ও খাটী মুরীদদিগের ইহা পালন করা একান্ত কর্তব্য। অন্যথায় আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভবপর নহে।
তিনি ফরমাইতেছেন যে কামেল পীরকে স্পর্শমণি তুল্য জানিতে হইবে। তাঁহাকে যথেষ্ট ভাবিয়া তাঁহার হস্তে পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করিবে, তাঁহার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির মধ্যেই স্বীয় মঙ্গলামঙ্গল জানিবে । নিজের যাবতীয় আকাঙ্ক্ষা তাঁহার ইচ্ছার অনুগত করিবে, যেন পীরের ইচ্ছার বিপরীত মুরীদের কোন স্পৃহা না থাকে। আদব-সম্মান পালন করা আধ্যাত্মিক পথের অতি আবশ্যকীয় বস্তু, অন্যথায় কোনই ফল ভাল হইবে না।
১.
স্বীয় পীর ব্যতীত অন্য কোন পীরের প্রতি লক্ষ্য করিবে না।
২.
পীর উপস্থিত থাকাকালীন তাঁহার অনুমতি ব্যতীত
নফল এবাদত ও জেকেরাদিতে লিপ্ত হইবে না।
৩.
পীরের সম্মুখে অন্য কাহারও প্রতি মনােযােগী হইবে না,
পূর্ণরূপে পীরের দিকে লক্ষ্য রাখিবে,
এমনকি জেকের-এর খেয়ালও করিবে না।
কিন্তু তিনি আদেশ করিলে তখনই খেয়াল করিবে।
৪.
ফরজ, ছুন্নত ব্যতীত তাঁহার সম্মুখে
অন্য কোন প্রকার নামাজ পাঠ করিবে।
যদি কোন ‘অজিফা ইত্যাদি থাকে
তবে তাঁহার নিকট হইতে অন্যত্র
সরিয়া যাইয়া পাঠ করিবে।
৫.
এমন স্থানে দাঁড়াইবে না যাহাতে তাহার ছায়া
পীরের উপর বা তাঁহার ছায়ার উপর পতিত হয়।
৬.
পীরের জায়নামাজের উপর পা রাখিবে না।
৭.
পীরের অজুর স্থানে অজু করিবে না।
৮.
পীরের বিশিষ্ট কোনও ভাও ব্যবহার করিবে না।
৯.
পীরের সম্মুখে তাঁহার বিনা এজাজতে
(আদেশে) পানাহার করিবে।
১০.
পীরের সম্মুখে অন্য কাহারাে সহিত
কথাবার্তা বলিবে না এবং কাহারাে প্রতি লক্ষ্য করিবে না।
১১.
পীরের অনুপস্থিতিকালে তিনি যে দিকে আছেন,
সেইদিকে পা লম্বা করিয়া
দিবে না এবং থুথু ফেলিবে না।
১২.
পীর যে কাৰ্য্য করিবেন তাহা দৃশ্যতঃ
ভুল মনে হইলেও
তাহাকে ঠিক বলিয়া জানিবে।
কারণ তিনি যাহা করেন তাহা
আল্লাহর নির্দেশে করিয়া থাকেন।
তাহাতে কাহারও বলার কিছু নাই।
১৩.
ক্ষুদ্র বৃহৎ সকল বিষয়ে স্বীয় পীরের অনুকরণ করিবে।
আহার নিদ্রাই হউক অথবা পােষাক-পরিচ্ছদই হউক
কিংবা নামাজ রােজাতেই হউক।
১৪.
তিনি যে ভাবে নামাজ পাঠ করেন,
সেই ভাবেই পাঠ করিতে হইবে।
১৫.
তাঁহার কাৰ্য দৃষ্টে ‘ফেকাহের’
মছ-আলা শিখিতে হইবে।
১৬.
তাঁহার কাৰ্যকলাপ ও গতিবিধির প্রতি এতেরাজ
বা সমালােচনা করিবে না
যদিও উহা অতি সামান্য হয় না কেন।
ইহাতে মহরুম ও পূর্ণ বঞ্চিত হওয়া ব্যতীত
কোনই ফল লাভ হইবে না।
১৭.
পীরের দোষ-ত্রুটি কখনও অনুসন্ধান করিবে না।
যেহেতু সৃষ্টির মধ্যে সকলের চেয়ে বদবত ঐ ব্যক্তি
যে অলী-আল্লাহ্গণের ছিদ্রান্বেষণ করে। আল্লাহ্ রক্ষা করুন।
১৮.
স্বীয় পীরের নিকট কখনাে ‘কারামত’ দেখিতে চাহিবে না।
যেহেতু কোন মােমেন কোন পয়গম্বরের
নিকট হইতে ‘কারামত’ দেখিতে চাহে নাই।
১৯.
পীরের প্রতি যদি কখনাে কোন সন্দেহের উদ্রেক হয়,
তবে অবিলম্বে তাহা। তাঁহার নিকট ব্যক্ত করিবে।
তিনি সমাধান করিয়া দিবেন।
যদি তাহাতে তাহার মনের তৃপ্তি না হয়,
তবে নিজেরই ক্রটি জানিয়া ক্ষান্ত থাকিবে।
২০.
স্বপ্নে যাহা কিছু পরিলক্ষিত হয়, তাহা পীরকে জানাইবে।
২১.
স্বীয় কাশফ বা আত্মীক বিকাশের প্রতি
কখনাে নির্ভর করিবে না।
অন্যথায় বিভ্রান্ত হইয়া যাইবে।
২২.
পীরের “আদেশ ব্যতীত তাঁহার
নিকট হইতে অন্যত্র চলিয়া যাইবে না।
২৩.
বিনা আবশ্যকে পীরের নিকট হইতে
বিদায় গ্রহণ করিবে না।
২৪.
পীরের শব্দের উপর নিজের ‘শব্দ উচ্চ করিবে না।
২৫.
পীরের সহিত উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলিবে না।
ইহা অত্যন্ত বেয়াদবী।
২৬.
যাহার নিকট হইতে যে কোন
ফয়েজ-বরকত লাভ হউক না কেন,
তাহা স্বীয় পীরের উপলক্ষে বলিয়া জানিবে।
ইহা একটি পদঙ্খলনের স্থান বটে।
তরীকার অর্থই ‘আদব’। কোন বে-আদব আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করিতে পারিবে না। আল্লাহ না করুন যদি কেহ ‘আদব রক্ষা করিতে না পারে, তবে সে বঞ্চিত হইবে।
২৭.
পীরের কোন বস্তু বা অন্য কোন দ্রব্য
তাঁহার তবারক হিসাবে প্রাপ্ত হইলে,
তাহা অজু সহ ব্যবহার করা কর্তব্য
এবং তাহা পরিধান করতঃ
‘জেকের’, ‘মােরাকাবা করা আবশ্যক।
হজরত মির্জা ছাহেব (রাঃ) তিনি তাঁহার পীরের টুপী তবারক প্রাপ্ত হইয়া ছিলেন। উক্ত টুপী তিনি রাত্রে ভিজাইয়া রাখিতেন এবং প্রাতে তাহা মর্দন করতঃ তাহার মলীন পানি পান করিতেন। তিনি ফরমাইয়াছেন যে, ইহাতে যেরূপ বাতেন উন্নতি হইয়াছিল, তাহা তাঁহার অন্য কোন আমল দ্বারা সাধিত হয় নাই।
মােজাদ্দেদ আলফেছানী (রাঃ)
মকতুবাত শরীফের প্রথম খণ্ড ২৯২।
পীর-মুর্শিদ প্রশঙ্গে আরো কিছু দলিল ভিত্তিক পোস্ট নিচে দেয়া হলো:
* পীর-মুর্শিদ ধরতে হবে এই প্রশঙ্গে কোরআনের অসংখ্য দলিল।
* মহিলাদের বায়াত হওয়ার দলিল
* খোদা প্রাপ্তির জন্য মুর্শিদ শর্ত
* কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
* কোরআনে কি পীর ধরার কথা উল্লেখ আছে? দলিল সহ তুলে ধরা হলো।
* ফানার জন্য পীরের প্রয়ােজন : সংক্ষিপ্ত আলোচনা
* পীর ওলিগণ শাফায়াত করিতে পারিবেন কিনা? তাহার দলিল।
* রাবেতার যােগ্য পীরের পরিচয়ঃ
* ফানা ও বাকা সিদ্ধ ওলীই প্রকৃত কামেল পীরঃ
* কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
* হুজুরী কালব বা কালবের একাগ্রতা অর্জনে মুর্শিদে কামেলের ভুমিকা