ফানা ও বাকা সিদ্ধ ওলীই প্রকৃত কামেল পীরঃ

    ফানা ও বাকা সিদ্ধ ওলীই প্রকৃত কামেল পীরঃ

    মারেফতের পথে তিনিই যােগ্য কামেল ও মােকাম্মেল ওলী, যিনি আল্লাহতে ফানা ও বাকা সিদ্ধ হইয়াছেন, বান্দার কালব-নাফস-রূহের হাল হকিকত বুঝিতে সক্ষম ও যাহার অসিলায় আল্লাহতায়ালার সিফাতে এজাফিয়া ও সিফাতে হাকীকীর নর আসিয়া ছালেকের নাফসের স্বভাব সংশােধন করিতে পারে, যিনি বান্দাকে সকল প্রকার দৈহিক ও পার্থিব প্রবণতা হইতে মুক্ত করিয়া আল্লাহতায়ালা পর্যন্ত পৌছাইতে পারেন। তিনিই মাের্শেদ হইবার যােগ্য। তিনি যেমন নিজে আল্লাহতায়ালার নূরের সহিত পরিচিত হইবেন, তেমনি বান্দাকেও সমস্ত নাফসানিয়াত হইতে উদ্ধার করিতে সক্ষম।

    তাহার অসিলা দ্বারা আল্লাহতায়ালার সিফাতে এজাফিয়া ও সিফাতে হাকীকীর নূর আগমন করে, আল্লাহতায়ালার নাম, গুণ ও শানের নূর আগমন করে, আল্লাহতায়ালার জাতের দর্শন পাওয়া যায়; তাহার সাহচর্যে ছালেকের পার্থিব প্রবণতার মৃত্যু হয় এবং তাহার সাহচর্যে ছালেকের দেহে খােদাপ্রদত্ত নূরের শরীর ওজুদ মাওহুব লাহু তৈরী হয়। তেমন সাধকই হেদায়েতের জন্য যােগ্য সাধক। তিনি আল্লাহতায়ালার সম্পর্কে যেমন জ্ঞাত, তেমনি সৃষ্টি জগতের বিষয় বস্তু সম্পর্কেও জ্ঞানী।

    হযরত মাওলানা রূমী (রঃ) ছাহেব তদীয় মসনবী শরীফে ঐরূপ গুণ সম্বলিত মাের্শেদ ছাড়া অন্য কোনাে ব্যক্তির নিকট মারেফাত বা খােদাতত্ত্ব জ্ঞান লাভের জন্য যাইতে নিষেধ করিয়াছেন। এক্ষেত্রে তিনি উপমা সহ বলিয়াছেন, দরিদ্রের অতিথি হইলে অনেক সময়ে আগন্তুকের জুতা। চুরি হওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে। অর্থাৎ দরিদ্র ব্যক্তি অতিথির জুতা চুরি করিয়া নিজের প্রয়ােজন মিটাইবার চেষ্টা করিয়া থাকে এমন ঘটনা বিরল নয়। যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার নূরের মধ্যস্থ হইতে পারেন না, যাহার অছিলায় আল্লাহতায়ালার সিফাতে এজাফিয়া, সিফাতে হাকীকীর নুর খােদাতালাশী ব্যক্তির রূহ, কালব ও নাফসে আসে না, তাহার নিকট খােদাপ্রাপ্তির জন্য সাধনা করিতে যাওয়া নিস্ফল।

    বরং তাহার নিকট খােদাপ্রাপ্তি সাধনা করিতে গেলে খােদাতালাশী ব্যক্তির নিজস্ব কোনাে নেক আমল থাকিলে তাহা নিস্ফল হইয়া যাইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে।। হযরত রূমী (রঃ) ছাহেব তাই খােদাতালাশী ব্যক্তিদের সাবধান করিয়াছেন, তাহারা যেন কামেল মাের্শেদ চিনিতে ভুল না করেন, যাচাই না করিয়া যেন কেহ আল্লাহতায়ালার সন্ধানের জন্য অপরিপক্ক বা প্রচারণা সর্বস্ব মাের্শেদের নিকট গমন না করে। প্রচারণা সর্বস্ব পীর যিনি বস্তুতঃ পার্থিব ধন বা গরিমা লিন্দু তাহার সংসর্গে থাকিলে ছালেকের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে হইবেই না, বরং ঐ প্রচারণা সর্বস্ব বা নাকেস ব্যক্তির অন্তরের কালিমা তাহার সংসর্গ লাভ কারী ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমিত হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে।

    পক্ষান্তরে কোন দানশীল বাদশাহের নিকট গেলে অতি সামান্য সৌজন্যের বিনিময়েও প্রচুর সহায় সম্পদ মিলিতে পারে। হযরত মাওলানা রূমী (রঃ) ছাহেব তদীয় মছনবী শরীফে উল্লেখ করিয়াছেন; বাগদাদের বাদশাহ হারুনুর রশিদের সময়ে তাহার রাজত্বের অধীন কোন এক গ্রামে অতিশয় দরিদ্র এক লােক বাস করিত। ঐ ব্যক্তির কোনাে সহায় সম্বল ছিল না। তাহার আশা রাজ দরবারে গমন করিয়া বাদশাহ হারুনুর রশিদের নিকট হইতে কিছু তােহফা সংগ্রহ করিয়া তাহা দ্বারা জীবন অতিবাহিত করা। তাহার নিজস্ব কোনাে সম্পদ ছিল না। মরুভূমির অঞ্চল বিধায় ঐ ব্যক্তি যে অঞ্চলে বাস করিত সেই অঞ্চলে সুপেয় পানিকেই যথেষ্ট মূল্যবান মনে করা হইতাে। বেচারা দরিদ্রলােক বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করিয়া এক মশক পানি বাদশাহের জন্য উপঢৌকন লইয়া বাদশাহ হারুনুর রশিদের দরবারে রওয়ানা হইল ।

    বাদশাহের দরবারে আসিতে আসিতে উক্ত পানি বিস্বাদ হইয়া গেল। দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তির প্রতি সহানুভুতি প্রদর্শনই বাদশাহের সৌন্দর্য ও গুণ। হারুনুর রশিদ পাত্রের দিকে লক্ষ্য না করিয়া বরং সেই দরিদ্র বেচারী যে তাহারই শরণাপন্ন হইয়াছে, নিজে নিঃসম্বল হওয়া সত্ত্বেও উপঢৌকন হিসেবে সামান্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহের চেষ্টা করিয়াছে-তাহাই লক্ষ্য করিলেন। ঐ দরিদ্র ব্যক্তির বিস্বাদ পানিই তিনি উপঢৌকন হিসেবে গ্রহণ করিলেন ও তাহাকে পর্যাপ্ত ধন দান করিয়া তাহার জীবন চলার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন।

    সুপেয় পানি কি, তাহা বােঝাইবার জন্য বাড়ী ফিরিবার পথে দজলা নদী তাহাকে দেখাইবার সুযােগ করিয়া দিলেন। এই গল্পের উপমা দিয়া হযরত মাওলানা রূমী (রঃ) ইহাই বুঝাইতে চাহিয়াছেন যে, প্রকৃত আধ্যাত্মিক ধনে ধনবান বাদশাহ, কামেল ও মােকাম্মেল পীরের শরণাপন্ন হইলে খােদাতালাশী ব্যক্তির আমল যতই নগন্য হউক না কেন, তাহাকে তিনি খােদাপ্রাপ্তি সাধনার পথে পৌছাইয়া দেন-বিস্বাদ পানির মত এখলাস বিহিন আমলের বদলে প্রকৃত এখলাস ও মহব্বত সহ আমলের সক্ষমতা দান করেন।

    টীকা।

    ১। জাত মতলােক- অনিদিষ্ট বা অমুখাপেক্ষী সত্ত্বা।

    ২। আহাদাত- একত্ব।

    ৩। আদামাত- শূন্যতা বা নিস্তী।

    ৪। অজুদ- অস্তিত্ব।

    ৫। ফিতরাত- স্বভাব।

    ৬। নাফসানিয়াত- আমিত্ব।

    সূত্র: শাহ্সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরীর [নসিহত :১২তম খন্ডের ] “ফানা ও বাকা” হতে তুলে ধরা হয়েছে।

    পীর-মুর্শিদ প্রশঙ্গে আরো কিছু দলিল ভিত্তিক পোস্ট নিচে দেয়া হলো:

    * পীর-মুর্শিদ ধরতে হবে এই প্রশঙ্গে কোরআনের অসংখ্য দলিল।
    * মহিলাদের বায়াত হওয়ার দলিল
    * খোদা প্রাপ্তির জন্য মুর্শিদ শর্ত
    * কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
    * কোরআনে কি পীর ধরার কথা উল্লেখ আছে? দলিল সহ তুলে ধরা হলো।
    * ফানার জন্য পীরের প্রয়ােজন : সংক্ষিপ্ত আলোচনা
    * পীর ওলিগণ শাফায়াত করিতে পারিবেন কিনা? তাহার দলিল।
    * রাবেতার যােগ্য পীরের পরিচয়ঃ
    * ফানা ও বাকা সিদ্ধ ওলীই প্রকৃত কামেল পীরঃ
    * কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
    * হুজুরী কালব বা কালবের একাগ্রতা অর্জনে মুর্শিদে কামেলের ভুমিকা

    আরো পড়ুনঃ
    Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

    Sufibad24.com | Telegram Channel