খোদা প্রাপ্তির জন্য মুর্শিদ শর্ত
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে সুরায় মায়েদা ৩৫নং আয়াতে কারিমায় ইরশাদ করেন,“ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানুত্তা-কুল্লাহা ওয়াবতাগু ইলায়হিল ওয়াসিলাতা ওয়া জাহিদু ফী সাবিলিহী লায়াল্লাকুম তুফলিহুন।” অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহ পর্যন্ত পৌছার জন্য ওসীলা (মাধ্যম) সন্ধান কর এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের রাস্তায় সাধনা কর, তবেই তোমরা মুক্তি লাভে সফল হবে।
উক্ত আয়াতে কারিমায় মুক্তি লাভের চারটি রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। যথাঃ ১) ঈমান গ্রহণ কর, ২) খোদা ভীতি অবলম্বন কর, ৩) অসীলা তালাস কর, এবং ৪) আল্লাহর পথে মাধ্যম পাওয়ার জন্য সাধনা কর। অনুরুপভাবে, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সুরায় তওবা ১১৯নং আয়াতে কারিমায় ইরশাদ করেন,
“ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানুত্তা-কুল্লাহা ওয়া কুনু মা’য়া সাদেক্বীন।”
অর্থঃ হে ঈমানদার গণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের বা কামেল অলীগনের সঙ্গ লাভ কর।
উক্ত আয়াতে কারীমায় ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বয়ান ১৬পারা ৩৯০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে,“নেক আমলের দ্বারা শুধু আবেদ হওয়া যায়, কিস্তু আরিফে বিল্লাহ বা খোদা প্রাপ্তি ও খোদার প্রেমে অসংখ্য মঞ্জিল গুলো অর্জন করার জন্য কামেল মুর্শিদের প্রয়োজন।
মুর্শিদে কামেল ব্যতীত মর্তবাগুলো অর্জন করা সম্ভব নয়। আর এই কারণেই লোকজন মাশায়েখে আউলিয়া ও আবরার তথা কামিল পীরের সহবতের জন্য অনেক দুর দূরান্তে সফর করে থাকেন।”
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তাঁর নেক বান্দাদের অনুসরণ করা অপরিহার্যতা প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ করেন,“ ওয়াত্তাবি সাবীলা মান আনাবা ইলাইয়্যা।” অর্থঃ যে ব্যক্তি আমার দিকে রুজু হয়েছেন, তাঁর পথকে অনুসরণ কর। (সুরায় লুকমান ১৫ আয়াত)
আল্লাহর দিকে রুজু হয়েছেন, আল্লাহর নির্দেশীত পথে নিজেদের জীবন গঠন করেছেন, মানবতার কল্যাণ, সত্যের প্রচার অসত্যের প্রতি জিহাদ, কুফুর, বিদায়াত মূলোৎপাটন, ন্যায় নীতির প্রর্বতন, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ করে ¯্রষ্টার সাথে যোগ সূত্র ও বন্ধন স্থাপন করেছেন, এমন বান্দারা চার শ্রেণীতে বিভক্ত। তাঁরা আল্লাহর মনোনীত আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য। তাদের পথে অনুসরণের জন্য আল্লাহ পাক আদেশ করেছেন।
আল্লাহর পক্ষ হতে অগনিত প্রেরিত নবী রাসূল বান্দার সাথে আল্লাহর যোগাযোগ স্থাপনের গুরু দায়িত্ত পালন করেছেন। প্রিয় নবী হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর আগমনের পরে নবুয়্যতের সমাপ্তি ঘটে, বিধায় সত্যিকারের অলি আল্লাহ বা কামেল অলী গণের প্রদর্শিত রাস্তা অনুসরণ ব্যতীত মুুক্তি লাভের বিকল্প নেই, তাদের প্রতি অবিশ্বাস গোমরাহীর নামান্তর।
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সুরায় কাহাফ ৬৫নং আয়াতে কারিমায় ইরশাদ করেন,
“ফাওয়াজাদা আবাদাম মিন ইবাদিনা আতাইনাহু রাহমাতাম মিন ইনদিনা ওয়া আল্লাম নাহু মিল্লাদুন্না ইলমা।”
অর্থঃ অতঃপর, তারা আমার এমন একজন বান্দা পেল যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করেছি এবং তাঁকে আপন ইলমে লাদুন্নী থেকে দান করেছি।
উক্ত আয়াতে কারিমায় খোদায়ী জ্ঞান বা ইলমে হাকিকত বা ইলমে গায়েব বা ইলমে লাদুন্নীর কথা বলা হয়েছে। অধিকাংশ তাফসীর গ্রন্থে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে,“আল্লাহর সেই প্রিয় বান্দা হল অদৃশ্য অলি হযরত খাজা খিযির আলাইহিচ্ছালাম তিনি আল্লাহর তরফ থেকে হযরত মুসা নবীকে হেকমত, এলমে গায়েব, এলমে মারেফাত, এলমে হাকিকত ও আধ্যাতিœক জ্ঞান, এক কথায় ইলমে লাদুন্নী শিক্ষা দিয়েছেন। যার বিস্তারিত বর্ণনা কোরআন শরীফে সুরায় কাহাফে রয়েছে।
সার কথা হল, আয়াতে কারীমায় অসীলা দ্বারা কামেল মুর্শিদকেই বুঝানো হয়েছে। যার মাধ্যমে রাসুলের নিকট বায়াতে রাসুল পর্যন্ত পৌঁছা যায়।
হযরত ইমাম মুসলিম বিন হাজ্জাজ রহমাতুল্লাহে আলাইহে সহীহ‘মুসলিম শরীফ’ এ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন,“নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,‘মান আতা ওয়া লায়ছাফী উনাকিহি বাইয়্যাতান মাতা মায়তাতা জাহিলিয়্যাতা ওয়া মান খানায়া ইয়াদাম মিন তায়াতিন লাকিয়াল্লাহু ইয়াওমাল কিয়ামাতি ওয়া ইজজাতা-লাহু।”
অর্থঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো এমতাবস্থায়, সে কোথাও বায়াতে রাসুল গ্রহণ করল না, তা হলে সে মৃত্যুবরণ করল মূর্খদের ন্যায়। আর যে ব্যক্তি বাইয়াত হয়ে আল্লাহ পাকের ইবাদতের জন্য হাতকে উঠালো সে কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাকের দিদার লাভ করবে এবং তাকে কোন রুপ বাধা বিঘেœর সম্মুখীন হতে হবে না।
হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহে বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,“যে ব্যক্তি নিজের যুগের ইমামের মারফত ছাড়াই মৃত্যুবরণ করল, সে জাহেলিয়াতের যুগের ন্যায় মৃত্যুবরণ করল।” (মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, মুসনাদে হাম্বল ৪র্থ খন্ড)
হযরত আলা উদ্দিন আলী মুত্তাকী আল হিন্দী উনার কানজুল উম্মাল ৩য় খন্ড ২০০ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন,“নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,‘যে ব্যক্তি সময়ের (যুগের) ইমামকে না চিনে বা না জেনে মারা যায়, সে জাহেলিয়াতের যুগের ন্যায় মারা যায়।”
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সুরায় বনী ইসরাইল ৭১নং আয়াতে কারিমায় ইরশাদ করেন,“ ইয়াওমা নাদ’উ কুল্লা উনা-সিম বি-ইমামিহিম……..” অর্থঃ আল্লাহ পাক বলেন, স্বরণ কর এই দিনকে আমি প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর ইমামের সাথে আহবান করবো।
উক্ত আয়াতে কারিমার ব্যাখ্যায়, কানযুল ঈমান ও খাযায়েনুল ইরফান এর ২য় খন্ড ৫২৬ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন,“হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এতে যুগের ঐ ইমামের কথা বলা হয়েছে, যার আহবানে দুনিয়ার মধ্যে লোকেরা চলে; চাই সেই ব্যক্তি সত্যের প্রতি আহবান করুক কিংবা মিথ্যার প্রতি আহবান করুক।
মোটকথা, প্রত্যেক সম্প্রদায় আপন ঐ নেতার নিকট একত্রিত হবে, যার নির্দেশে তারা দুনিয়ায় চলতো। আর তাদেরকেই তারই নামে ডাকা হবে। যেমনঃ হে ক্বাদেরীগণ, হে নকশেবন্দী গণ, হে চিশতীগণ, হে মুজাদ্দেদীগণ। আর যার কোন ইমাম নেই; তাকে ডাকা হবে এই বলে যে, হে শয়তানের অনুসারীগণ।
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সুরায় ফাতাহ ১০নং আয়াতে কারিমায় ইরশাদ করেন,
“ইন্নাল্লাজিনা ইউবায়েউনাকা ইন্নামা ইউবায়েউনাল্লাহা ইয়াদুল্লাহি ফাওকা আইদ
পীর-মুর্শিদ প্রশঙ্গে আরো কিছু দলিল ভিত্তিক পোস্ট নিচে দেয়া হলো:
* পীর-মুর্শিদ ধরতে হবে এই প্রশঙ্গে কোরআনের অসংখ্য দলিল।
* মহিলাদের বায়াত হওয়ার দলিল
* খোদা প্রাপ্তির জন্য মুর্শিদ শর্ত
* কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
* কোরআনে কি পীর ধরার কথা উল্লেখ আছে? দলিল সহ তুলে ধরা হলো।
* ফানার জন্য পীরের প্রয়ােজন : সংক্ষিপ্ত আলোচনা
* পীর ওলিগণ শাফায়াত করিতে পারিবেন কিনা? তাহার দলিল।
* রাবেতার যােগ্য পীরের পরিচয়ঃ
* ফানা ও বাকা সিদ্ধ ওলীই প্রকৃত কামেল পীরঃ
* কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
* হুজুরী কালব বা কালবের একাগ্রতা অর্জনে মুর্শিদে কামেলের ভুমিকা