আটরশির পীর এবং মার্কিন অধ্যাপক ডক্টর কীটস্ এর সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও দেশ বরেণ্য জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ১৯৭৮ ইং সালের কোন এক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অধ্যাপক এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর “জন কীটস্” কে নিয়ে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে আসেন।

উদ্দেশ্য বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর সাহেব খাজাবাবা ফরিদপুরীর তরিকা প্রচারসহ বিশ্ব ব্যাপী তদীয় আধ্যাত্মিক প্রভাব ও বিশাল বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের পদ্বতি স্বচক্ষে দেখা। দরবারের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখে শুনে এক পর্যায়ে ডক্টর কীটস্ পীর কেবলাজানের সাথে সাক্ষাত করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে হযরত পীর কেবলা রাত ১০ টায় দেখা করার সময় দিলেন।

সাক্ষাতের স্থান তৎকালীন ৬নং বিল্ডিং এর নিচতলায়,পূর্বপাশ্বের ব্লকে। এ্যাডভোকেড মনিরুজ্জামান, ডাঃ আমিন, ও পীর কেবলাজানের ছোট জামাতা জনাব রাশেদুল হাসান ছিলেন সার্বিক তত্ত্বাবধানে।

নির্ধারিত সময় অনুযায়ী রাত ১০টায় হযরত কেবলাজান ১০নং ভবনে তাশরিফ আনলেন। সাদা লুঙ্গী, সাদা পাঞ্জাবী ও সাদা টুপী পরিহিত। কেবলাজান হুজুর একটি সাধারন চৌকির উপর অর্ধশায়িত বা আয়েশী ভংগীতে উপবিষ্ট।

আর বিদেশি মেহমান ডক্টর কীটস্ কে বসতে দেওয়া হলো একটি সোফায়। এ সময় হুজুর পাক অত্যন্ত মধুর কন্ঠে ডক্টর কীটস্ কে ইংরেজী ভাষায় অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেনঃ ”Please take your seat” অতঃপর হযরত হুজুর কেবলাজান একে একে ডক্টর কীটস্ এর নাম-ধাম, পেশা ও স্ত্রী-পুত্র-সন্তানাদিসহ তার সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়াদির খোঁজ-খবর নিলেন; আর এই আলাপ বা কথোপকথন পুরোটাই ছিল ইংরেজি ভাষায়।

আটরশির অজপাড়াগাঁয়ে সার্বক্ষণিক ধর্ম-কর্ম ও অধ্যাত্বিক জ্ঞান সাধনার এ বিশাল কর্ম শালায় যিনি লাখ-লাখ মুরীদের সন্তানদের নিয়ে আত্মমগ্ন থাকেন; যিনি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অর্ধশতাদ্বীকাল ধরে বাইরের জগত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ও নিভৃত জীবন-যাপন করছেন, তিনি আধুনিক বিশ্বের সর্বাধুনিক উচ্চশিক্ষিত একজন বিদেশি অতিথির সাথে এমন পরিচ্ছন্ন ও সাবলীল ইংরেজি ভাষায়তে স্বাচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন!! এ যেনো এক অবিশ্বাস্য এক অলৌকিক ঘটনা।

উপস্থিত সবাই আত্মবিমহিতের মত উভয়ের কথা শুনছেন।ঠিক এমন সময় ডক্টর কীটস্ হঠাৎ দাড়িয়ে গেলেন এবং কাঁপতে কাঁপতে এ্যাডভোকেট লাল ভাইকে বললেনঃ Mr.Zaman! Help me! Help me!”

ডক্টর কীটস্ তখন শুধু থরথর করে কাঁপছিলেন, কি হয়েছে তা বলতে পারছিলেন না। তার এ অবস্থা দেখে হুজুর পাক অত্যান্ত সহানুভুতি ও স্নেহের কন্ঠে বললেঃ “You are so tired! pleaase go and take rest” ডক্টর কীটস্ এর উদ্দেশ্য একথা বলে হযরত কেবলাজান হুজুর উঠে গেলেন।

পিছনে পিছনে ডক্টর কীটস সহ অন্যারাও অনুসরন করলেন ডক্টর কীটস্ এর প্রতিটি পদক্ষেপ তখনও টালমাটাল, কেমন যেন অসংলগ্ন। এসময় তিনি বিড়বিড় করে নিজে নিজেই বলতে লাগলেনঃ ”He is a great Holy Man! The greatest Holy Man in the world” ডক্টর কীটস্ একসময় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে বিশ্রামের জন্য তাকে দ্বিতীয় তলার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো।

সেখানে ডক্টর কীটস্ তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে কোন প্রকার সংকোচ না রেখেই সব কথা খুলে বললেন;

যার সারমর্ম হচ্ছে এইঃ “আমি তো বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর, তাই ইচ্ছা হলো হুজুরকে আমার শাস্ত্র মতে হিপ্নোটিজম তথা বশীকরণের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখতে। এই উদ্দেশ্যে আমি আমার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ শুরু করি।

কিন্তু যখন আমি তাঁর চোখের মধ্যে আমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম, তখন আমার মনে হলো– আকাশ থেকে এক আশ্চর্য নূরের জ্যোতি বা প্রলয়ংকারী আলোর স্রোত যেন তাঁর চোখের সাগরে নেমে এসেছে মহাপ্লাবনের ভয়াবহতা।

শুধু তাই নয়, পরক্ষনেই আমি আর এক বিশ্ময়কর ঘটনা দেখে ভয়ে আতংকে শিউরে উঠলাম। দেখলাম সেই জ্যোতির্ময় অলৌকিক চোখের মধ্যে ক্রুদ্ধ আগ্নেয়গিরির মত ফেনিয়ে উঠেছে এক ভয়াবহ প্রচণ্ড সাইক্লোন-যা আমাকে মুহূর্তের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।

হ্যাঁ আমি সেখানে দেখলামঃ Hurricanc of the pacific Ocean; আর আমি থরথর করে কাঁপতে শুরু করলাম, সাহায্য কামনা করলাম তোমাদের। ডক্টর কীটস্ রাতে আবার হুজুর কেবলার সাথে দেখা করতে চাইলেন।

হযরত কেবলাজান হুজুর তাকে পরের দিন সকাল ১০টার সময় দেখা করার সময় দিলেন। পরে দিন সকাল ১০টার সময় দক্ষিন হুজরা শরীফের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে ডক্টর কীটস্ কে বসতে দেওয়া হলো (ডক্টর কীটস এর ইচ্ছায়)।

এসময় ডক্টর কীটস্ হুজুর কেবলার কাছে সবিনয় আবেদন জানিয়ে বললেনঃ

ডক্টর কীটসঃ I want to change my religion just now, and I want to convert myself to a perfect in muslim.

হুজুর কেবলাঃ Not now, it will be done in coarse of time.

এবার উঠে ডক্টর কীটস অতি বিনয়ের সাথে হযরত কেবলাজান হুজুরের কদম মোবারক জড়িয়ে ধরে,

বললেন; I want your blessings, Holy man

ডক্টর কীটস্ কে হতবাগ করে দিয়ে এবার হুজুর কেবলাজান

বললেন; If you have belif in Jessu, my blessings will be with you

অতঃপর হুজুর কেবলা ডক্টর কীটস্ কে বিদায় জানিয়ে

বললেনঃ Keep contact with Darbar Sharif

এসময় ডক্টর কীটস্ আবেগাপ্লুত অশ্রুভেজা অবয়বে, নতশিরে, করজড়ে, অপরিসিম বিনয় ও আন্তরিকতার সাথে জামানার মহা ইমাম, মহা মুজাদ্দেদ, আখেরি মুরশেদ, বিশ্ব ওলী খাজাবাবা শাহ সুফি ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) সাহেবের কদম মোবারক ও হস্ত মোবারক বার বার চুমু খেলেন।

অত্যান্ত সাদামাটা, লুঙ্গী-টুপি ও পাঞ্জাবী পরিহিত এমন সাধারন একজন মানুষের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা জাতীয় অধ্যাপক, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর জন কীটস্ –এর মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক বিশাল ব্যাক্তিত্বের এরুপ নিঃসংকোচ আত্মসমর্পণ, ভক্তি ভালোবাসাও বিস্ময় আতিশয্য এমন দুনির্বান অশ্রু বিসর্জনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য একমাত্র ভুক্তভোগী আত্মার দর্শক ছাড়া অন্য কারো পক্ষে বোঝার সাধ্য নেই।

“এই ঘটনা বিশ্বওলি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) সাহেবের অসংখ্য-অগণিত কারামতের একটি।”

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel